মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের উইন্ডোজ ভিসতা বাজারে আসার আগেই এর নান্দনিক ফিচার ও অধিকমাত্রার সিকিউরিটি নিয়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল৷ মাইক্রোসফটের জিম অ্যালিচিন বলেন, উইন্ডোজ ভিসতার ক্ষেত্রে এন্টিভাইরাসের প্রয়োজন নাও হতে পারে৷ ভাইরাস সমস্যা দূর করতে মাইক্রোসফট বাজারে ছেড়েছে আগের উইন্ডোজ ভার্সনগুলোর তুলনায় অনেক নিরাপদ ভার্সন উইন্ডোজ ভিসতা, যা এন্টিভাইরাস ছাড়াই ব্যবহারকারীকে সুরক্ষা দেয়৷ উইন্ডোজ ভিসতা এন্টিভাইরাসের পরিপূরক হিসেবে ৩টি কাজ করে৷
সেগুলো হলো :
ইউজার অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোল
উইন্ডোজ ভিসতা পুরোপুরি এন্টি ম্যালওয়ার ফিচারসমৃদ্ধ৷ এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো ইউজার অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোল বা ইউএসি৷ সিস্টেমের পরিবর্তন করতে পারে এমন কোনো কাজ করতে গেলেই ইউএসি ইউজারকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে নিশ্চিত হয়৷ কেউ কোনো প্রোগ্রাম ইনস্টল করতে গেলে বা ডিভাইস ম্যানেজার ওপেন করতে গেলে অথবা অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের মতো কোনো কাজ করতে চাইলে সাথে সাথে স্ক্রিন কালো হয়ে আসে, সিস্টেম বিপদসঙ্কেত দেয় এবং একটি ডায়ালগ বক্স এসে ইউজারের পারমিশন আছে কি না জিজ্ঞাসা করে৷ তবে, কাজের মাঝে ইন্টারনেট ব্যবহার করাতে কেউ কেউ বিরক্তি বোধ করলেও কমপিউটারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ ভাইরাস, ট্রোজান, ওয়ার্ম এবং স্পাইওয়্যার বেশিরভাগ সময় ই-মেইল এটাচমেন্ট হিসেবে আসে এবং অভিজ্ঞ ব্যবহারকারী কখনই অজানা জায়গা থেকে এটাচমেন্ট হিসেবে আসা Exe ফাইলগুলোকে ওপেন করেন না৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, অনেকেই এগুলোতে ক্লিক করছেন৷ যদি ইউএসি এনাবল থাকে এবং একটি ডায়ালগ বক্স জিজ্ঞাসা করে আপনি কি সত্যিই প্রোগ্রামটি ইনস্টল বা এক্সিকিউট করতে চান? অথচ আপনি নিজেই জানেন, প্রোগ্রামটি আপনি রান করেননি৷ ইউএসি ইউজারের পারমিশন নিয়ে কোনো প্রোগ্রাম ইনস্টল করলে কমপিউটারের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমে যায়৷ তবে ইউএসির মূল কাজ হলো এটা পিসিতে চলতে থাকা সন্দেহজনক প্রোগ্রাম এবং প্রসেস বন্ধ করে দেয় এবং যেসব প্রোগ্রাম নিজে নিজে ইনস্টল হতে শুরু করে অথবা নিজেই অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ প্রিভিলেজ নিয়ে রান করে তাদের জন্য ফাঁ দ তৈরি করে৷
উইন্ডোজ ফায়ারওয়াল
উইন্ডোজ ভিসতার সাথে আরেকটি সিকিউরিটিবিষয়ক বৈশিষ্ট্য হলো উইন্ডোজ ফায়ারওয়াল৷ ভিসতার আপডেটেড ফায়ারওয়াল ইনকামিং এবং আউটগোয়িং উভয় ধরনের ট্র্যাফিক কন্ট্রোল করতে পারে৷ আগের ভার্সনগুলোতে শুধু ইনকামিং কাজগুলোকে ফিল্টারিং করা হতো, ফলে এতে অ্যাডওয়্যার থেকে মুক্ত থাকা গেলেও কমপিউটারে অবস্থিত স্পাইওয়্যার নিজে থেকে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়ে অন্য কমপিউটারের সাথে নিজেই সংযোগ স্থাপন করে ব্যবহারকারীর কমপিউটার থেকে ব্যক্তিগত তথ্যাবলী যেমন পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড ইনফরমেশন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সব তথ্য পাচার করে দিতে পারে ব্যবহারকারীর অগোচরেই৷ তাই ভিসতাতে ইনকামিং এবং আউটগোয়িং ট্র্যাফিক ফিল্টারিংয়ের কারণে অ্যাডওয়্যার এবং স্পাইওয়্যার থেকে মুক্ত থাকা যায়৷
অটোমেটিক উইন্ডোজ আপডেট
ভিসতায় উইন্ডোজ অটো আপডেট সিকিউরিটি সোয়াইটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ সিকিউরিটি প্রোগ্রামের মতো না হলেও এটি নিরাপত্তার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এ পর্যন্ত উদ্ভাবিত কোনো অপারেটিং সিস্টেম বা সফটওয়্যারই ১০০% ত্রুটিমুক্ত নয়৷ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে মাইক্রোসফট তাদের অপারেটিং সিস্টেমের ৬২টি গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটি চিহ্নিত করেছে৷ আর এ ত্রুটির সুযোগেই হ্যাকাররা কমপিউটারের ক্ষতিসাধনে তত্পর থাকে৷ তাই অপারেটিং সিস্টেমের নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুদিন পর পরই তাদের অপারেটিং সিস্টেমের সুরক্ষা বাড়াতে প্যাচ ফাইল বাজারে ছাড়ে ও নেটওয়ার্কে উন্মুক্ত করে দেয়৷ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কমপিউটার অটো আপডেট হয় এবং প্যাচ ফাইলগুলো উইন্ডোজের দুর্বল স্থানে অবস্থান করে অপারেটিং সিস্টেমের সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকে৷
কোনো পিসিতে এন্টিভাইরাস না থাকলে ভাইরাস প্রথমেই যে অংশের ক্ষতিসাধন করে তাহলো ইউজারের অ্যাকাউন্ট৷ ভাইরাস তার প্রয়োজনমতো ইউজারের অ্যাকাউন্টকে পরিবর্তন করে ইউজারকে অনেক স্বাভাবিক কাজ করতে বাধা দেয়৷ এন্টিভাইরাস এবং ইউজার অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোল ছাড়া যেকোনো কমপিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে৷ ভাইরাস ই-মেইল এটাচমেন্ট হিসেবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসচেতন ব্যক্তির মাধ্যমে কমপিউটারে প্রবেশ করলেও ভাইরাস রাইটারদের আরেকটি অত্যন্ত পছন্দনীয় এবং সহজে ভাইরাস বিস্তারের পথ রয়েছে৷ তাহলো, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয় ও অধিক ব্যবহারের কমার্শিয়াল সফটওয়্যার চুরি করে তার সাথে ভাইরাস সংযুক্ত করে ওয়েবসাইট, এফটিপি, পিয়ার টু পিয়ার, নেটওয়ার্ক, ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জার ও আইআরসির মাধ্যমে সারা বিশ্বে ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়া এবং ইউজারকে সফটওয়্যারগুলো ফ্রি ডাউনলোড করার অফার দেয়া৷ ইউজার জনপ্রিয় এসব সফটওয়্যার ফ্রি পাওয়ায় অত্যন্ত আগ্রহের সাথে ডাউনলোড করে কমপিউটারে ইনস্টল করে৷ ফলে ব্যবহারকারীর অগোচরেই ভাইরাস কমপিউটারে প্রবেশ করে এবং পরে তা থেকে ফ্লপি, সিডি, পেনড্রাইভ এবং সংযুক্ত কমপিউটারও আক্রান্ত হয়৷ এন্টিভাইরাস দিয়ে সফটওয়্যারগুলো স্ক্যানিং করা ছাড়া ইউজারের পক্ষে কোনোভাবেই জানার উপায় নেই সফটওয়্যারটি আক্রান্ত কি না৷ বিষয়টিকে জটিল করার জন্য ভাইরাস প্রায়ই নিজেদের পরিবর্তন করে৷ এন্টিভাইরাস ভাইরাসের প্রোগ্রাম কোড কি ধরনের কাজ করতে পারে তা পরীক্ষা করে৷ যদি তা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ধরনের কোনো কাজ করে বা ইউজারের ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশ করে তখনই সে এটাকে ভাইরাস হিসেবে ডিটেক্ট করে৷ যদি ভাইরাস এতটাই অধিকমাত্রায় নিজেদেরকে পরিবর্তন করে যে এন্টিভাইরাস তাদের শনাক্ত করতে না পারে, তাহলে প্রটেক্টেড কমপিউটারও ওই ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ সাধারণ বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ
ইউএসি ভিসতা ইউজারদের জন্য সব সময়ই ব্যাকগ্রাউন্ডে অ্যাকটিভেটেড থাকে৷ কেউ কোনো গেম ইনস্টল করতে চাইলে এমনকি কোনো ফাইল পড়ার জন্য ওপেন করতে চাইলেও ইউএসি ওই ফাইল ওপেন হওয়ার আগেই পারমিশন দেয় ফলে ফাইলটি ওপেন হয়৷ অনেক কম ব্যবহারকারীই আছেন যাদের Bank.exe সম্পর্কে ধারণা আছে৷ অভ্যাসের বশে বা সাধারণভাবে অনেকেই ফাইলটি রান করে থাকবেন৷ প্রকৃতপক্ষে সফটওয়্যার কিছুটা সুরক্ষা দেয় কিন্তু বাকিটা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা এবং সাধারণ জ্ঞানের ওপর৷
ইউএসি কখনই অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের পারমিশন ছাড়া কোনো কিছু ইনস্টল হতে দেয় না৷ তাই ইউএসির ডায়ালগ বক্সের দিকে প্রখর দৃষ্টি রাখুন এবং ইনস্ট্রাকশন অনুসরণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন৷ তাহলেই ভাইরাস থেকে অনেকটা মুক্ত থাকা যাবে৷ ক্ষতিকর প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে উইন্ডোজ ভিসতার সাথে ইউএসি খুব ভালো সুরক্ষা দেয়৷ তবে, যারা এন্টিভাইরাস ছাড়া উইন্ডোজ রান করে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হননি তাদের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই ইউএসি ব্যবহার না করলেও চলে৷
পরিশেষে, ইউজারদের সঠিক এটাচমেন্ট ওপেন করতে শেখা এবং কমপিউটার ব্যবহারে অভিজ্ঞ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাকগ্রাউন্ডে এন্টিভাইরাস রান করতে দেয়া উচিত৷ কোনো সময় ইউজার এন্টিভাইরাস ছাড়াই আক্রমণ থেকে বাঁচার অভ্যাস করতে পারলে ইউএসিই হতে পারে উত্কৃষ্ট৷
ফিডব্যাক : balaith@gmail.com