লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:৯৩
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সম্প্রসারণ কোন পথে
পনেরো কোটি লোকের বাংলাদেশে কমপিউটার আছে ক’জরে? বছরে কি পরিমাণ কমপিউটার বিক্রি হয়? হার্ডওয়্যারের বাজার কতো টাকার? সফটওয়্যারের বাজারই বা কতো টাকার? আমরা বছরে কতো টাকার সফটওয়্যার ও সেবা রফতানি করি?
এতগুলো প্রশ্নের মাঝে শুধু শেষ প্রশ্নটির একটি নির্ভরযোগ্য জবাব পাওয়া যায়৷ হয়তো একটু চেষ্টা করলে বাংলাদেশে আমদানিকরা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের পরিমাণ কি তা জানা যাবে৷ হয়তো সফটওয়্যার আমদানির তথ্যাবলীও জানা যাবে৷ কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির বাজারটির আকার কি সেটি জানা বা বুঝা খুবই কঠিন হবে৷ কার্যত অবশিষ্ট প্রশ্নগুলোর কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য কারো কাছে নেই৷
কিন্তু কেউ যদি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রকৃত পরিচয় জানতে চান তবে তার জন্য এই তথ্যগুলো আমাদের অবশ্যই প্রয়োজন৷
এবার ডিসেম্বর মাসে আমি যখন বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির নির্বাহী পরিষদের নির্বাচন করি তখন বার বার আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে একটি দাবির কথা শুনেছি, আমাদের কমপিউটারের বাজার বাড়াতে হবে৷ তারা বলেছেন, কাছাকাছি জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তানের তথ্যপ্রযুক্তি বাজার আমাদের তিন-চারগুণ৷ ভারতের সাথে কেউ তুলনা করার সাহস পান না৷ কেউ কেউ মনে করেন, নেপাল বা ভুটান আমাদের চাইতে শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছে৷ পাশের দেশ মিয়ানমার সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে এগিয়ে আসতে পারছে না বটে-তবে ই-গভর্নেন্স বা শিক্ষায় কমপিউটারের ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রযাত্রা ঈর্ষণীয়৷ আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সংকটটিও ভয়াবহ৷ দেশে বিপুলসংখ্যক কমপিউটার বিক্রেতা সৃষ্টি হয়েছে৷ কিন্তু কমপিউটারের বাজার না বাড়ায় প্রতিযোগিতা হয়ে উঠেছে গলাকাটা৷ আমাদের কমপিউটার ব্যবসায়ীরা তাই খুব সঙ্গত কারণেই বড় আকারের একটি বাজার সৃষ্টি করতে চান৷ আমাদের দেশের একজন বৃহৎ আমদানিকারকের মতে ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত আমাদের কমপিউটারের বাজার শতকরা ২০ থেকে ৫০ ভাগ বেড়েছে৷ ২০০৪ ও ২০০৫-এ সেই বৃদ্ধির গতি কমতে থাকে৷ তবে বাজার তখনও বাড়ছিলো৷ ২০০৬ সালে তথ্যপ্রযুক্তির বাজার ঋণাত্মকভাবে কমে যায়৷ ২০০৭-এ সেই বাজার বাড়লেও সেটি কেবল ২০০৬-এ কমে যাওয়াটা পরণ করতে সক্ষম হয়৷ এর অর্থ দাঁড়ায় ২০০৭ সালের শেষে আমাদের কমপিউটার বাজার ২০০৫ সালেই দাঁড়িয়ে ছিলো৷ তার মতে, ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে কমপিউটারের বাজার বেড়েছে৷ ফেব্রুয়ারির গতিও ভালো ছিলো৷ আমার নিজের বিবেচনায় মার্চ-এপ্রিল-মে-জুন এই চার মাসে বাজারের গতি আরো উর্ধমুখী থাকবে৷ এর একটি অন্যতম কারণ হলো, এই সময়ে সরকারের কেনাকাটা হয়ে থাকে৷ তবে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়কালে কমপিউটারের বাজার নাও বাড়তে পারে, হয়তো স্থিতিশীল থাকবে৷ এর কারণ সরকার এই সময়ে কেনাকাটা করে না৷ তবে অক্টোবর থেকে বাজারের উর্ধগতি অব্যাহত থাকবে বছরজুড়ে৷ অবশ্য এর প্রকৃত প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের সবাইকে কিছু ইনপুট দিতে হবে৷ আমি সঠিক তথ্য না জানলেও এটি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, ২০০৮ এবং ২০০৯ সালের মধ্যে আমাদের কমপিউটারের বাজার দ্বিগুণ করতে না পারলে ব্যবসায় হিসেবে এই খাত রুগ্ন হবে এবং জাতীয় উন্নয়ন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে৷ আমি দৃঢ়ভাবে এটিও বলতে পারি, উপযুক্ত পরিকল্পনা করা হলে এবং সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে ২০০৮ সালে শতকরা ৪০ ভাগ এবং ২০০৯ সালে শতকরা ৭০ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হতে পারে৷ কিন্তু এই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য কমপিউটার শিল্পকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে৷ সরকারকেও কিছু প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে৷
সরকারের করণীয়কে আমি কিছু অনুচ্ছেদে বর্ণনা করতে চাই৷ সচরাচর আমরা তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে বড় ধরনের রচনা লিখি এবং যা লিখি তার প্রায় কোনোটাই বাস্তবায়িত হয় না৷ সেজন্য আমাদের প্রয়োজন কম অথচ শক্তিশালী ও সূষ্ঠ কর্মসূচি৷ আমি নিচে আমাদের এই খাতের একটি ক্ষুদ্রতম এজেন্ডা প্রকাশ করছি৷
এখন ইন্টারনেট হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির সবচেয়ে বড় বাহন৷ সরকারকে যেকোনো মূল্যে ঘরে ঘরে ইন্টারনেট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে৷ সৌভাগ্যবশত এখন আমাদের হাতে সেই সুযোগ রয়েছে৷ বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হয়ে এখন অভ্যন্তরীণ ব্যাকআপও তৈরি করেছে৷ অন্যদিকে সরকার আর্ন্তজাতিকভাবে বিকল্প সাবমেরিন ক্যাবল লাইন হিসেবে মিয়ানমারের মাধ্যমে সি-মি-উই-৩-এ যুক্ত হতে যাচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিটি আনন্দদায়ক৷ এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে, ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের সময় নামমাত্র মূল্যে ও সাধারণ মানুষকে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ দিতে হবে৷ স্মরণ রাখা ভালো, আমাদের প্রাপ্ত ব্যান্ডউইডথের শতকরা ৮০ ভাগ এখন অপচয় হয়৷ সাধারণ মানুষের জন্য এই ব্যয় মাসিক ২০০ টাকা এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য মাসিক ৫০ টাকা ধার্য করা যেতে পারে৷ যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য কমপিউটার নেই সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি কমপিউটার কিনলে দু’টি ফ্রি এমন পদ্ধতিতে সরকারে পক্ষ থেকে কমপিউটার দিতে হবে৷ সারাদেশে টেলিসেন্টার বা ডিজিটাল পাড়াকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে৷ দেশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ ব্যান্ডউইডথ ব্যয় শন্যের কোটায় নামাতে হবে৷ ইন্টারনেটের লেনদেন বৈধ করতে হবে এবং আইসিটি অ্যাক্ট ২০০৬ কার্যকর করতে হবে৷ সরকার একশ ডলারের ল্যাপটপ কিনে বিতরণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে৷
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে শিক্ষা খাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে৷ অথচ এই খাতটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত হয়ে রয়েছে৷ আমার মতে ২০০৯ সালের মাঝে দেশের সব হাইস্কুলে কমপিউটার পৌঁছাতে হবে৷ ২০০৯ সালের মাঝে সব ছাত্রছাত্রীর জন্য কমপিউটার জ্ঞান বাধ্যতামূলক ও ২০১১ সালের মাঝে কমপিউটার সাক্ষরতা বাধ্যতামূলক ও ২০১৫ সালের মাঝে কমপিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ এজন্য আগামী বছরের পাঠক্রমে কমপিউটার সর্ম্পকিত তত্ত্বীয় জ্ঞান পাঠ্য করতে হবে৷ প্রতিটি ক্লাসের বিজ্ঞান বইতে এসব অধ্যায় যোগ করা যায়৷ ২০১১ সালে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপিউটার ল্যাব থাকা এবং প্রতিটি ছাত্র ও শিক্ষকের কমপিউটার জ্ঞানকে বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ অন্যদিকে ২০১৫ সাল থেকে প্রতিটি স্কুলের প্রতিটি ছাত্রের জন্য কমপিউটার শেখা বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ আমি নিজে মনে করি, এই সময়সীমা একটি বিলম্বিত সময়রেখা৷ কার্যত ২০১০ সালের মাঝে যদি আমরা কমপিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে পারি, তবেই এই জাতির সমৃদ্ধি হবে৷ কিন্তু যেহেতু সরকারের মাঝে, শিক্ষাবিদদের মাঝে, রাজনীতিবিদদের মাঝে বা জনগণের মাঝে সেই সচেতনতা নেই, এই কারণে আমি সময়সীমাকে ২০২০ সালে নিয়ে গেছি৷
এখন থেকে কমপিউটার শিক্ষিত নয় এমন কাউকে সব সরকারি চাকরি, পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনী ইত্যাদিতে যোগদান করতে দেয়া যাবে না৷ অন্ততপক্ষে এমনটি করতে হবেই যে সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে, বাছাই হবার পর কমপিউটার সাক্ষরতা বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ এই পর্যায়ে অপারেটিং সিস্টেম, অফিস অ্যাপিকেশন ও বেসিক ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানা বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ এখন যারা সরকারি চাকরিতে আছে তাদেরকেও দুই বছরের মাঝে কমপিউটারে দক্ষতা অর্জন বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ অন্যথায় প্রমোশন স্থগিত থাকবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া যায়৷ একটি ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও তথ্য সংরক্ষণ ডিজিটাল করতে হবে৷ এজন্য সর্বোচ্চ ২০১০ সাল পর্যন্ত সময় নেয়া উচিত৷
আয়কর রিটার্নসহ ব্যবসায়ের হিসাব-নিকাশ সংরক্ষণ ও লেনদেন বাধ্যতামূলকভাবে কমপিউটারকেন্দ্রিক করতে হবে৷ তবে কমপিউটারের নামে ক্যাশ রেজিস্টার ব্যবহারের পশ্চাদমুখী সিদ্ধান্ত বাস্বায়ন করা যাবে না৷ তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়ন খাতে আগামী ১০ বছর উন্নয়ন বাজেটের শতকরা ১০ ভাগ বরাদ্দ করতে হবে৷ সরকারের ২-৪ লাখ টাকা বিভাগ বা মন্ত্রালয়প্রতি বরাদ্দকে উত্সাহিত করে কোনোভাবেই আমরা একটি ডিজিটাল সরকার গড়ে তুলতে পারবো না৷ সেজন্য উন্নয়ন বাজেটের একটি বড় অংশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ করতে হবে৷
সরকারের এই কাজগুলোই দেশে কমপিউটারাইজেশনের জন্য যথেষ্ট নয়৷ বরং বেসরকারি খাতকে ব্যাপকভাবে এই খাতে অবদান রাখতে হবে৷ বেসরকারি খাত বা কমপিউটার ব্যবসায়ীদের কমপিউটার ব্যবহার করার জন্য কিছু অতি প্রয়োজনীয় কাজ করতে হবে৷
কমপিউটার গেমস, শিক্ষামূলক সফটওয়্যার, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ের সফটওয়্যার, কৃষি ও শিল্পের জন্য উপযুক্ত সফটওয়্যার ইন্টারনেটের জন্য স্থানীয় বা বাংলাভাষার কনটেন্ট তৈরি করে জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে৷ এটি এখানে উল্লেখ করা দরকার, সফটওয়্যার শিল্প এখন থেকে দুই যুগ আগে যেমনটি ভাবতো এখনও তেমনটি ভাবছে৷ সফটওয়্যার শিল্প মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷ সরকারও এ বিষয়ে নীরব৷ ফলে নতুন নতুন সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে না৷ প্রকৃতভাবে ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য উপযুক্ত সফটওয়্যার তাদের মতো করে তৈরি করা হয়নি৷ শিক্ষামূলক সফটওয়্যার বলতে গেলে বাজারে নেই-ই৷ এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তবে এক সময় সাধারণ মানুষ এই প্রশ্ন তুলবে, কমপিউটার কিনে কি ছেলেমেয়েকে কেবল গেম খেলতে দেখবো, না তারা ইন্টারনেটে পর্নো সাইটে প্রবেশ করবে? আমি মনে করি এই খাতে সরকারের যেমন পাঠ্যপুস্তক গুলোকে সফটওয়্যারে রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা করতে হবে, তেমনি বেসরকারি খাতকে অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের বাইরে নানা ধরনের সলিউশন নিয়ে হাজির হতে হবে৷ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই খাতে আমরা তেমন কোনো অগ্রগতি সাধন করতে পারিনি৷ অবিলম্বে এই খাতে বেসরকারি খাত এগিয়ে আসুক এটিই সকলের প্রত্যাশা৷
কমপিউটার খাতকে কমপিউটার পণ্য ও সেবার সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে হবে৷ ক্রেতা যেন কোনোভাবেই প্রতারিত না হয় বা সে যেন তার কমপিউটার নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয় তার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে৷ বেসরকারি খাত বা কমপিউটার বিক্রেতাদের পাইরেসি করে সফটওয়্যার বিতরণ করা বন্ধ করতে হবে৷ বলা যায়, সব ধরনের মেধাস্বত্বের পাইরেসি বন্ধ করতে হবে৷ অন্যদিকে কমপিউটারের নকল পণ্য বিক্রি বন্ধ করতে হবে৷
কমপিউটার প্রযুক্তিকে সারাদেশের মানুষের কাছে ‘তার জন্য প্রয়োজনীয়’ এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে৷ এখনও এই পণ্যটিকে বিলাস পণ্য বা বড় লোকের পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ এই ধারণাটিকে অমূলক প্রমাণ করার জন্য দেশব্যাপী সচেতনতামূলক কর্মকান্ড চালাতে হবে৷
যদি এমনটি হয়, সরকারি খাত ও বেসরকারি ব্যবসায়ীরা উভয়েই তাদের জন্য নির্ধারিত কাজ করেন তবে মাত্র দু’বছবে আমাদের কমপিউটার বাজার দ্বিগুণ হবে এবং এই ভিত্তির ওপর আমাদের একুশ শতকের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে৷
ফিডব্যাক : mustafajabar@gmail.com