• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বেসিস সফটএক্সপো ২০০৮
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: কজ রিপোর্টার
মোট লেখা:৩৭৯
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
কমপিউটার মেলা
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বেসিস সফটএক্সপো ২০০৮

গেট,গেইন,গ্রো-এ স্লোগান নিয়ে গত ১৪-১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাশে-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত হলো বেসিস সফটএক্সপো ২০০৮৷ এ মেলার আয়োজক বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস তথা বেসিস৷ এ মেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন হার্ডওয়্যার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি ও ফ্রান্স থেকে আসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়৷ পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলায় পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি সেমিনার, কর্মশালা এবং বিজনেস ম্যাচ মেকিংসহ নানা ধরনের আয়োজন ছিল৷



প্রদর্শনী :

বেসিস সফটএক্সপো ২০০৮-এ অংশ নেয়া সফটওয়্যার ও আইটি এনাবল্ড সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার এবং আইটি সার্ভিসের পরিচয় দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরে৷ সফটওয়্যার মেলা হলেও এ মেলায় দুয়েকটি হার্ডওয়্যার প্রদর্শনীর স্টলও ছিল৷ এ মেলায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠান ছিল ১৫০টিরও বেশি৷

কমপিউটার সোর্স মেলায় এইচপি ও ফুজিত্সু ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ধরনের ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কমপিউটার প্রদর্শন করে৷ এসব পণ্যের মধ্যে ছিল এইচপি কমপ্যাক প্রেসারিও ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের নোটবুক এবং ফুজিত্সু ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ধরনের ল্যাপটপ কমপিউটার৷

মাইক্রোসফট বাংলাদেশ তাদের স্টলে মাইক্রোসফট ডায়নামিকস সিআরএম (কাস্টমাররিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট) ৩.০ সফটওয়্যারের পরিচিতি তুলে ধরে৷ এ সফটওয়্যারের রয়েছে তিনটি মডিউল৷ একেকটি মডিউল একেক ধরনের কাজে ব্যবহার হয়৷ মডিউল তিনটি হচ্ছে যথাক্রমে সেলস্‌, কাস্টমার সার্ভিসেস ও মার্কেটিং৷ বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর এ সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তার কাস্টমারদের সাথে লাভজনক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে৷



ইন্টারন্যাশনাল অফিস মেশিনস সফটওয়্যার মেলায় ই-ব্রিজ ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ই-ব্রিজ রি-রাইট, ই-ব্রিজ জব সেপারেটর এবং বিজম্যান প্রসেস লাইট নামের চারটি সফটওয়্যার প্রদর্শন করে৷ প্রথম তিনটি সফটওয়্যার তোশিবার তৈরি এবং শেষের সফটওয়্যারটি বিজম্যান সিস্টেমসের তৈরি৷ প্রতিটি সফটওয়্যারই অফিস অটোমেশনের কাজে ব্যবহার করা যায়৷

জেনুইটি সিস্টেমস তাদের তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও আইএসপি ব্যবসায়ের পরিচিতি দর্শকদের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি জিপ্লেক্স সফটসুইচ ও জিপ্লেক্স কলসেন্টার নামের দুটি সফটওয়্যারের পরিচিতি তুলে ধরে৷ এ দুটি সফটওয়্যার ভিওআইপি ও কলসেন্টারের কাজে ব্যবহার হয়৷

কারেন্সি চেকার নামের একটি সফটওয়্যারসহ বেশ কয়েকটি সফটওয়্যার প্রদর্শন করে ভিজুয়্যাল ম্যাজিক কর্পোরেশন৷ কারেন্সি চেকার সফটওয়্যার নকল মুদ্রা শনাক্ত করার কাজে ব্যবহার হয়৷

সফটএক্সপো ২০০৮-এ আপলোড ইওরসেলফ সেল-টু-নেট নামের এসএমএস ব্যাংকিং সফটওয়্যার প্রদর্শন করে৷ এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যাংকের গ্রাহকরা এসএমএসের মাধ্যমে তাদের যেকোনো ব্যাংকিং লেনদেন করতে পারবেন৷ ব্রাইটওয়ার্কস এমন একটি টুল, যা নিজে নিজে প্রোগ্রাম লিখে৷ এটি দিয়ে প্রোগ্রামিং জ্ঞানশূন্য যেকেউ বিজনেস অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরি করতে পারবেন৷ মেলায় এরকম একটি নতুন সফটওয়্যার পণ্যের পরিচয় দেয় ডেফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়৷

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চাকরির সাইট বিডিজবস্‌ ডট কম মেলায় চাকরিদাতা ও চাকরিপ্রার্থীদের দেয়া তাদের বিভিন্ন সার্ভিস সম্পর্কে দর্শকদের অবহিত করে৷

মাইক্রোসফটের সনদ পাওয়া বাংলাদেশের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান পিক্সিসনেট মেলায় তাদের ডেভেলপারদের তৈরি মজার মজার বিভিন্ন গেম প্রদর্শন করে৷সামহয়ারইন....সফটএক্সপোতে তাদের তৈরি এসেনিক বিডি, আওয়াজ, সামহয়ারইন ঢাকা এবং ব্লগসাইটের বর্ণনা দেয়৷

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলোর মধ্যে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের তৈরি বিভিন্ন প্রকল্প প্রদর্শন করে৷ এসব প্রকল্পের মধ্যে ছিল সং চুজার ফর ক্যাবল টিভি ইউজার ইউজিং মোবাইল অর ল্যান্ডফোন, মোবাইল ম্যানিয়া, ইন্টেলিজেন্ট হোম, ইংলিশ টু বাংলা ইন্টারপ্রিটিং উইজার্ড, সুটেম আপ (থ্রিডি ফার্স্ট পারসন শূটিং গেম), অ্যা িন্টভাইরাস, ড্রাইভিং সিম্যুলেটর, ইন্টেলিজেন্ট রোবট, ফ্যাসিলিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফএমএস) ও স্পীচ এনাবল্ড অপারেটিং সিস্টেম কন্ট্রোল৷ মেলায় প্রদর্শিত রোবটভিত্তিক প্রকল্পটি সবার নজর কাড়ে৷

আমেরিকান আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের তৈরি বিভিন্ন প্রকল্প উপস্থাপন করে সফটএক্সপোতে৷ এসব প্রকল্প হলো অটোমেটিক ইলেকট্রিক মিটার রিডিং, ম্যাজিক ব্লু হ্যাক, ব্লুটুথ মাল্টিপ্লেয়ার গেম, ভার্চুয়াল মোবাইল ফর পিসি (উইন্ডোজ) এবং রাইমস সফটওয়্যার৷

এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ প্যাভিলিয়ন/স্টলে নিজেদের পণ্য প্রদর্শন করে এবং পণ্যের পরিচিতি, তাদের গ্রাহক আর নিজেদের প্রতিষ্ঠানের অবস্থান সম্পর্কে দর্শনার্থীদের অবহিত করে৷ সেমিনার : সফটএক্সপোর অনেক আকর্ষণীয় বিষয়ের মধ্যে একটি হলো সেমিনার৷ প্রতিটি সেমিনারের বিষয়ই ছিল সময়োপযোগী৷ এবারেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি৷ বেসিস সফটএক্সপো ২০০৮-এ মোট ১৬টি সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷

১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের গ্রীনভিউ হলে ই-লার্নিং ইন বাংলাদেশ : কনসেপ্ট টু বিজনেস কেস শীর্ষক এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চৌধুরী৷ মূল প্রবন্ধে তিনি বাংলাদেশে ই-লার্নিংয়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন৷ এ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ রেগুলেটরি রিফর্ম কমিটির চেয়ারম্যান ড. আকবর আলী খান বলেন, বাংলাদেশের অনেক কিছুর মতো আইসিটি নিয়েও সরকারের ভ্রান্তি রয়েছে৷ তারা মনে করে তথ্যপ্রযুক্তি নীতি ব্যয়সাপেক্ষ এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার৷ আসল বিষয় হলো এটাকে ব্যয়সাধ্য করে তোলা হয়েছে৷ বাংলাদেশে ই-লার্নিংয়ের জন্য দরকার পাবলিক ও প্রাইভেট পার্টনারশিপ৷ বেসরকারি খাতকে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট করা গেলে এটা অনেক ভালো কাজ করবে৷ বেসিস সভাপতি রফিকুল ইসলাম রাউলির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরো অংশ নেন ডি.নেটের নির্বাহী পরিচালক ড. অনন্য রায়হান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মশিউর রহমান, চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ প্রমুখ৷

১৭ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত হয় রোল অব পলিটিশিয়ানস ফর মেকিং অ্যান আইটি এনাবল্ড বাংলাদেশ শীর্ষক এক গোলেবিল বৈঠক৷ এ বৈঠকের সঞ্চালক ছিলেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম৷ আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবের হোসেন চৌধুরী, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মোফাজ্জল করিম, সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বেসিসের পরিচালক শাফকাত হায়দার, বিকল্প ধারার মাহি বি চৌধুরী, বেসিসের পরিচালক টিআইএম নূরুল কবির, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, ডাটা সফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব জামান, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আহমেদ ইমরান, ইমার্জিং মার্কেট জিওভি ৩-এর ডিরেক্টর এলিজাবেথ মুলার প্রমুখ৷ গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেসিস সভাপতি রফিকুল ইসলাম রাউলি৷

মাহফুজ আনাম দেশ পরিচালনায় রাজনীতিবিদদের আইটি সম্বন্ধে জানার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় অধিষ্ঠিত হওয়া একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া৷ এতে নির্বাচনের মাধ্যমে আসতে হয়৷ তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনা একটি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াও বটে৷ এ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আইসিটি৷ কাজেই জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে রাজনীতিবিদদের আইটি সম্বন্ধে বুঝতে হবে৷ মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আইটি বিষয়ে রাজনীতিবিদদের দায়িত্বশীল করতে হবে৷ তবে এটা আসতে হবে উচ্চ পর্যায় থেকে৷ মোফাজ্জল করিম বলেন, আইটি আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে গেছে৷ একে সত্যিকার অর্থেই আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে৷ প্রত্যেক দলের মেনিফেস্টোতে আইটি বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে৷ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তার বক্তব্যে বলেন, আইটিকে শুধু ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর স্বার্থে দেখলে চলবে না, একে জাতীয় স্বার্থে দেখতে হবে৷ সাইফুল ইসলাম আইটিতে রাজনীতিবিদদের কেনো প্রয়োজন, তা উল্লেখ করে বলেন, একটি জাতির ও দেশের বিনির্মাণে আইটির ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ গণতন্ত্রের জন্যও আইটির প্রয়োজন৷ আর তাই দেশকে আইটিসমৃদ্ধ করতে রাজনীতিবিদদের দরকার৷ শাফকাত হায়দার বলেন, সরকার আইটি খাতকে সব সময়ই থ্রাস্ট সেক্টর বলে আসছে, কিন্তু এটা বাস্তবায়নের জন্য তেমন কোনো পরিকল্পনা হাতে নেয়নি৷ এ বিষয়ে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ সাবের হোসেন চৌধুরী তার বক্তব্যে রাজনীতিবিদদের মনোভাব পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এনালগ মাইন্ডসেট দিয়ে আজকের দিনের ডিজিটাল বাস্তবতা উপলব্ধি করা যাবে না৷ এজন্য সব কিছুর আগে আমাদের মনোভাবের পরিবর্তন জরুরি৷ তিনি তার বক্তব্যে একটি সমন্বিত ডিজিটাল রোডম্যাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেন৷ মাহি বি চৌধুরী তার বক্তব্যে প্রতিটি দলের মেনিফেস্টোতে আইসিটি নিয়ে একটা অংশ রাখার দাবি জানান এবং কলসেন্টার ও আইপি টেলিফোনিকে টেলিকম সেক্টর থেকে আইসিটি সেক্টরে নিয়ে আসার কথা বলেন৷ টিআইএম নূরুল কবির আইসিটি পলিসিকে কার্যকর করার দাবি জানিয়ে আইসিটি কিভাবে প্রান্তিক মানুষের ভাগ্যের উন্নতি ঘটাচ্ছে সেসব বিষয়ে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেন৷ আইসিটিতে মানুষের অংশ নেয়ার বিষয়ে জোর দিয়ে মানবসম্পদভিত্তিক অবকাঠামো তৈরির কথা বলেন রাশেদ খান মেনন৷ তাছাড়া স্থানীয় সরকারকে কিভাবে এতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে নজর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি৷ আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, দুর্নীতি দূরীকরণে আইসিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷ আইসিটির জন্য একটি রোডম্যাপ দরকার উল্লেখ করে তিনি একে নিয়মিতভাবে রিভিউয়ের আহ্বান জানান৷ তবে তিনি সবার আগে রাজনীতিবিদদের বিষয়টি অনুধাবনের কথা বলেন৷

আইটি আউটসোর্সিং সাকসেস : কেস স্টাডিজ অন জয়েন্ট ভেঞ্চারস অ্যান্ড ওডিসি শীর্ষক অপর এক গোলেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ আহমেদ৷ এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিক্সিসনেট, সামহয়ারইন...., গ্রাফিক পিপল, এম অ্যান্ড এইচ ইনফরমেটিকস (বিডি)-এই চারটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানির প্রতিনিধিরা৷ প্রধান অতিথি বলেন, বেসিস সফটএক্সপো এবং এর সব আয়োজন নিশ্চিতভাবে দেশী কোম্পানির এবং বিদেশী গ্রাহক ও সহযোগীদের মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করতে যাচ্ছে৷ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারীদের প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন৷

রোডম্যাপ ফর ডেভেলপিং এইচআর পুল ফর সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি শীর্ষক এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসিসের কোষাধ্যক্ষ এ. কে. এম. ফাহিম মাশরুর৷ এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান৷ বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রমুখ৷ প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি দ্রুত বাড়ানো এবং সরকারের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নির্দেশ করে যে, আগামী দিনে সরকারের আরো আইটি দক্ষ জনশক্তি দরকার হবে৷ তিনি বলেন, সরকার একটি বড় সংগঠন এবং সরকার যদি ই-গভর্নেন্স, ই-কমার্স এবং অন্যান্য সেক্টরের জন্য সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করে তাহলে তার শুধু প্রযুক্তিসচেতন লোকবলই দরকার হবে না, কারিগরি-দক্ষ লোকজনও দরকার হবে৷

সফটওয়্যার অ্যান্ড আইটি সার্ভিসেস আউটসোর্সিং ইন ডেনমার্ক শীর্ষক অপর এক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনিশ রাষ্ট্রদূত ইনিয়ার হেবোগার্ড জেনসেন৷ এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ডেনমার্কের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠন আইটি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব ডেনমার্ক (আইটিবি)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরিক ইজডি৷ মূল প্রবন্ধে তিনি ডেনমার্কে আউটসোর্সিংয়ের প্রেক্ষাপট ও সম্ভাবনার বিষয়টি তুলে ধরেন৷ প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, আইসিটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা প্রচুর৷ বাংলাদেশ এমন একটি স্থান, যেখানে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে৷ আমি মনে করি, আইসিটির ক্ষেত্রে চীন, ভিয়েতনাম কিংবা ভারতের চেয়েও বাংলাদেশ কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে আছে৷ বাংলাদেশের সাথে আমরা সব সময় কাজ করতে আগ্রহী৷

সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপিউটার বিতরণ :

বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সফটএক্সপোর শেষ দিনে বেসিসের উদ্যোগে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপিউটার বিতরণ করা হয়৷ এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান৷

আরো কিছু তথ্য :

মেলার প্রথম তিন দিনে ডেনমার্কের ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের ১২০টি সফটওয়্যার কোম্পানির প্রতিনিধদের সাথে ম্যাচমেকিং মিটিং করেন৷ ইতোমধ্যে এরা ১৫টি পাইলট প্রকল্প জমা নিয়েছে৷ এছাড়াও ২০টির মতো বাংলাদেশী কোম্পানির সাথে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের সুযোগ হয়েছে৷ জাপানের ৭টি অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান মেলা চলাকালীন ৪১টি বাংলাদেশী কোম্পানির সাথে ব্যবসায়িক আলোচনায় অংশ নেয়৷ এরা আশা প্রকাশ করেছে এখান থেকে তাদের সঠিক অংশীদার খুঁজে পাবে৷ এছাড়াও আরো অনেক বিদেশী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশী অনেক কোম্পানির সাথে ব্যবসায়িক আলোচনা করে৷

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ দেশের সফটওয়্যার খাতের সবচেয়ে বড় মেলা পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত ইনগেবজর্গ স্রোফিং৷ মেলা পরিদর্শনকালে তিনি বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাত সম্পর্কে আগ্রহ দেখান৷ গণিত অলিম্পিয়াডের প্রায় ৫০০ প্রতিযোগী বেসিস আয়োজিত এ মেলা পরিদর্শন করে৷ গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসা এই ৫০০ প্রতিযোগী বেসিসের আমন্ত্রণে তাদের বাবা-মাসহ মেলা পরিদর্শন করে৷

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান :

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ বেসিস সফটএক্সপোর উদ্বোধন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ৷ অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন৷ বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী মানিক লাল সমাদ্দার এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ইনিয়ার হেবোগার্ড জেনসেন৷ প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং সমৃদ্ধ দেশ গঠনে আইসিটির কোনো বিকল্প নেই৷ এজন্য সরকার আইসিটিকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে৷ তিনি আইসিটির ব্যবহার বাড়িয়ে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল তথা এমডিজি অর্জনের সাথে সাথে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান৷ আইসিটির উন্নয়নে তিনি বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন৷ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইনিয়ার হেবোগার্ড জেনসেন বাংলাদেশকে চীন, ভিয়েতনাম এবং ভারতের মতো আইসিটির ক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, আইসিটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামর্থ্য ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে৷ আমরা এদেশের সাথে যৌথ অংশীদারিত্বে কাজ করতে চাই৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বেসিস সভাপতি রফিকুল ইসলাম রাউলি এবং সফটএক্সপো ২০০৮-এর আহ্বায়ক ও বেসিসের পরিচালক টিআইএম নূরুল কবির৷

সহযোগী প্রতিষ্ঠান :

বেসিস সফটএক্সপো ২০০৮ সফল করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করে৷ এগুলোর মধ্যে মূল স্পন্সর ছিল মাইক্রোসফট এবং বিপিসি৷ মিডিয়া সহযোগী ছিল ডেইলী স্টার এবং রেডিও টুডে৷ অফিসিয়াল আইএসপি ছিল স্মাইল৷ অফিসিয়াল পানীয় ছিল সি-লেমন এবং ইভেন্ট ম্যানেজার ছিল বেঞ্চমার্ক৷ এবারের মেলার আন্তর্জাতিক সহযোগী ছিল ডেনিশ আইটি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন, ডেনিশ ফেডারেশন অব স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম সাইজড এন্টারপ্রাইজ এবং প্যারিস ইন্ডাস্ট্রিজ অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ৷ বেসিস সফটএক্সপো ২০০৮-এর থিম কান্ট্রি ছিল ডেনমার্ক৷

বেসিস সফটএক্সপো ২০০৯ :

সমাপনী দিনে মেলার আহ্বায়ক টিআইএম নূরুল কবির ২০০৯ সালের সফটএক্সপোর তারিখ ঘোষণা করেন৷ ২০০৯ সালের সফটএক্সপো আয়োজিত হবে ২৭-৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে৷
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - মার্চ সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস