এ মার্চেই পালন করব পাই দিবস
এটি মার্চ মাস৷ সাধারণত বিশ্বের অগণিত গণিতপ্রেমী মানুষ এ মাসের ১৪ তারিখে পালন করে পাই দিবস৷ সবার আগে আসুন জেনে নেই পাই-এর পরিচয়৷ ধরুন ২২-কে ৭ দিয়ে ভাগ করতে বলা হলো৷ দেখা যাবে ২২-কে ৭ দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায় না৷ অসীম দশমিক স্থান পর্যন্ত ভাগ করলেও কখনো এর শেষ পাওয়া যায় না৷ তবে আসন্ন ২ দশমিক স্থান পর্যন্ত ধরলে আমরা এর একটা মান পাই৷ দেখা গেছে তখন ২২/৭ = ৩.১৪ হয়৷ আর এটি একটি মজার ধ্রুব সংখ্যা৷ ধ্রুব সংখ্যা হচ্ছে সেই সংখ্যা যার মান সবসময় একই থাকে৷ কখনো কম, কখনো বেশি হয় না৷ যেমন ৩.১৪ সবসময়ই ৩.১৪৷ কখনোই এর মান অন্য কোনো সংখ্যার সমান হবে না৷ গণিতে এই ২২/৭ বা ৩.১৪ ধ্রুব সংখ্যাটির প্রচুর মজার মজার ব্যবহার রয়েছে৷ তাই এটি একটি মজার গাণিতিক ধ্রুবক বা ম্যাথামেথিক্যাল কনস্ট্যান্ট৷ যারা বিজ্ঞান বা বিশেষ করে গণিতের ছাত্র, তারা এ ধ্রুবকটি সম্পর্কে খুবই সুপরিচিত৷ এর নাম দেয়া হয়েছে ধে বা য, আর এই পাই হছে একটি গ্রীক বর্ণের বা অক্ষরের নাম৷ আলফা, বিটা, গামা ইত্যাদির মতো এই পাই একটি গ্রীক বর্ণ৷ য বলতেই আমাদের মানসপটে ভেসে আসে গাণিতিক ধ্রুবক ২২/৭ বা ৩.১৪৷
এ পাই কে একটি বিশেষ ধ্রুবক বিবেচনা করার পেছনে রয়েছে যথার্থ যুক্তি৷ কারণ, এই ধ্রুব সংখ্যা ৩.১৪ বা পাই-এর মধ্যে লুকিয়ে আছে গণিতের অনেক মজার মজার রহস্য৷ কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে৷ যেমন একটি বৃত্তের ব্যাসের দৈর্ঘ্যকে যদি য (২২/৭ বা ৩.১৪) দিয়ে গুণ করি, তবে আমরা জেনে যাব এই বৃত্তের পরিধি কত৷ তেমনি বৃত্তের ব্যাসার্ধের বর্গকে য দিয়ে গুণ করলে বৃত্তের ক্ষেত্রফল জানা যাবে৷ একইভাবে কোনো গোলকের ব্যাসার্ধের ঘনফলকে (৪/৩) য দিয়ে গুণ করে গোলকের আয়তন বের করতে পারব৷ তেমনি একটি কৌণিকের ব্যাসার্ধের বর্গকে উচ্চতা দিয়ে গুণ করে এ গুণফলকে য দিয়ে গুণ করলে কৌণিকের আয়তনের ৩ গুণের সমান হবে৷ আবার সিলিন্ডারের ব্যাসার্ধের বর্গকে প্রথমে উচ্চতা দিয়ে ও পরে য দিয়ে গুণ করলে সিলিন্ডারের আয়তন পাওয়া যাবে৷ এভাবে আরো অনেক গাণিতিক ফর্মূলায় পাই এর মজার মজার সম্পর্ক রয়েছে৷ বিজ্ঞানের নানা বিষয়ের নানা ফর্মূলায় আছে পাই এর বিশেষ স্থান৷ তাই য ধ্রুবকটি জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে একটি বিশেষ স্থান পেয়ে গেছে৷
এরই মধ্যে জেনে গেছি য তথা ২২/৭-এর দুই দশমিক স্থান পর্যন্ত আসন্ন মান ৩.১৪৷ দশমিকের আগের সংখ্যা ৩-কে বছরের মাস সংখ্যা ধরলে ৩ দিয়ে বছরের তৃতীয় মাস মার্চ সংখ্যাকেই নির্দেশ করে৷ আর দশমিকের পর ১৪-কে মাসের তারিখ ধরলে ৩.১৪ ধ্রুবকটির সাথে ৩ মার্চ তারিখটির একটা মিল খুঁজে পাই৷ এ চিন্তাটি মাথায় রেখেই বিশ্বের অনেক জায়গায় গণিতপ্রেমীরা প্রতিবছর পাই দিবস পালন করে।
আমেরিকায় তারিখ লেখার ফরমেটে প্রথমে মাসের সংখ্যা ও পরে তারিখ সংখ্যা লেখা হয় বলে ৩.১৪ বা ৩-১৪ বা ৩/১৪ দিয়ে ১৪ মার্চ তারিখকেই বুঝায়৷ কিন্তু ইউরোপীয় তারিখ লেখার ফরমেটে আগে তারিখ সংখ্যা এবং পরে মাস সংখ্যা লেখা হয়৷ ফলে ২২/৭ দিয়ে ২২ জুলাই তারিখ বুঝায়৷ তাই সেখানে ২২ জুলাইয়ে পালন করা হয় Pi Approximation Day ৷ তবে বিশ্বব্যাপী পাইদিবস বলতে ১৪ মার্চ দিনটিই প্রাধান্য পায়৷ পাই দিবস উদ্যাপতে ১টা ৫৯ মিনিট সময়টিও বিশেষ স্বীকৃতি পেয়েছে৷ বিশ্বের মানুষ দিনের বেলা ১টা ৫৯ মিনিটে এ পাই দিবস উদ্যাপন করে। আবার কেউ কেউ রাত ১টা ৫৯ মিনিটেও তা পালন করে থাকে৷ রাত ১টা ৫৯ মিনিটের সময়ই হোক কিংবা দিনের বেলা ১টা ৫৯ মিনিটের সময়েই হোক, ঠিক ১টা ৫৯ মিনিটেই কেনো এ দিবসটি পালন করা হয়? এর জবাব অবশ্যই আছে৷ আমরা আগে জেনেছি, দুই দশমিক স্থান পর্যন্ত পাই এর আসন্ন মান হচ্ছে ৩.১৪৷ আর এর মান যদি দশমিকের পর ৫ ঘর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিই, তবে এর মান দাঁড়ায় ৩.১৪১৫৯৷ এর শেষের তিনটি অঙ্ক হচ্ছে ১৫৯৷ আর এ থেকেই বেছে নেয়া হয়েছে ১টা ৫৯ মিনিট৷ বুঝতে অসুবিধা হয় না, এমনি এমনি এই ১টা ৫৯ মিনিট সময়টি বেছে নেয়া হয়নি৷ এ সময়টা রাতে বা দিনেই বেছে নেয়া হোক, তাতে লাভ বা ক্ষতি কোথায়৷ আসলে গণিতকে ভালোবেসে য ধ্রুবকটি সম্পর্কে বেশি বেশি করে জানাটাই হচ্ছে বড় কথা৷ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, য দিবস আমরা কিভাবে পালন করতে পারি৷ এদিনে পাই এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারি৷ ব্যবস্থা করতে পারি য নামের ধ্রুবক সংখ্যাটির সহজ-সরল পরিচয় সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার৷ বিজ্ঞান ও গণিত ক্লাবগুলো সবার কাছে গণিতে পাই এর অবদান তুলে ধরতে পারে৷ পাই নিয়ে তৈরি করতে পারি গল্প ও কবিতা৷ কোন কোন সূত্রে পাই-এর ব্যবহার কিভাতে হয়েছে, তাও জেনে নিতে পারি৷ পাই কী কী সুন্দর নিয়ম মেনে চতে তা জেনে আমরা চেষ্টা করতে পারি নিজেদের পাই-এর মতো সুন্দর করে তুলতে- নিয়মশৃঙ্খলার অনুশীলন করে৷ স্কুল-কলেজের ছাত্ররা পাই সর্ম্প KZUzKz Rv‡b, †m wel‡q Pj‡Z cv‡i cÖwZ‡hvwMZvi আয়োজন৷ পাই দিবসে য চিহ্ন আকাঁ গেঞ্জি বা টি-শার্ট পরে মিছিল করে কার্যত পাই ধ্রুবকটিকে আরো জনপ্রিয় করে তুলতে পারি৷ নিকটজনদের উপহার দিতে পারি য চিহ্ন আকাঁ মগ৷ য সংখ্যাটির নানা বৈশিষ্ট্য তথা মজার মজার দিক উন্মোচন করে কার্যত আমরা মানুষের কাছে গণিতের মজার জগতটাই খুলে দিতে পারি৷ আসুন না এই মার্চেই পালন করি পাই দিবস৷
.................................................................................
বলুন তো কার ছবি : ২৪
এ গণিতবিদের জন্মস্থান রাশিয়ার ওকাটাবো। বিখ্যাত রুশ গণিতবিদ৷ ব্যাপক অবদান রাখেন সংখ্যাতত্ত্ব, বীজগণিত, প্রবাবিলিটি তত্ত্ব, বিশ্লেষণ ও ফলিত গণিতে৷ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন বাড়িতেই৷ ১৮৩৭ সালে গণিত ও পদার্থবিদ্যায় ভর্তি হন মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ গণিতে স্নাতক হন ১৮৪১ সালে৷ এ বছরই রৌপ্যপদক পান নিউটনণ্ডৠাপসন ইন্টারেক্টিভ মেথডের একটি ভুল পরিমাপ করে৷ ১৮৪৯ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি পান পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷ ১৮৫০ সালে সেখানে হন গণিতের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও ফুল প্রফেসর হন ১৮৬০ সালে৷ শৈশবেই গণিতের প্রতি ছিল তার অন্য ধরনের আকর্ষণ৷ ১৮৭০ সালে উদ্ভাবন করেন একটি ক্যালকুলেটর মেশিন৷ ১৮৯৪ সালের ৮ ডিসেম্বরে মারা যান রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে৷ বলুন তো কে এই গণিতবিদ?