শোককে শক্তিতে পরিণত করে যথাসময়ে শেষ হলো সিটিআইটি মেলা ২০০৯
বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস)-এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কমপিউটার ও কমপিউটার পণ্যের মার্কেট বিসিএস কমপিউটার সিটি। প্রতিটি ঘরে কমপিউটারের সুফল পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে বিসিএস কমপিউটার সিটি। কমপিউটার সিটি হিসেবে যাত্রার শুরু থেকেই ক্রেতাসাধারণের কাছে এটি একটি বিশ্বস্ত ও দেশের সবচেয়ে বড় আইসিটি মার্কেট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এটি সিটিআইটির ৮ম বার্ষিক মেলা। এবারের মেলার স্লোগান হচ্ছে IT leads the flow of change.
বিসিএস কমপিউটার সিটি আয়োজিত বার্ষিক মেলা প্রতিবার অনুষ্ঠিত হয় বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নতুন নতুন আঙ্গিকে। এবারের বিসিএস কমপিউটার সিটির বার্ষিক উৎসব ‘সিটিআইটি ২০০৯’ অনুষ্ঠিত হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে জওয়ানদের হত্যাযজ্ঞের কারণে সৃষ্ট অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মাঝে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার পরিবর্তে ব্যাপক উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে।
ঢাকার লালবাগ কেল্লার আদলে সাজানো মেলার সামনের অংশ
২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের হত্যাযজ্ঞের কারণে মেলা শুরু করা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল তা সিটিআইটি কমিটির সুচিমিত্মত সিদ্ধামেত্ম কেটে যায়। কিন্তু জরুরি কেবিনেট মিটিংয়ের কারণে প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী মো: ফারুক খান এবং বিশেষ অতিথি বিজ্ঞান ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তাই এবারের কমপিউটার সিটির বার্ষিক কমপিউটার মেলা উদ্বোধন করেন এফবিসিসিআই সভাপতি আনিসুল হক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই পরিচালক আফতাবুল ইসলাম, বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জববার, এটিএন বাংলার প্রোগ্রাম অ্যাডভাইজার নওয়াজেশ আলী খান এবং চীনা দূতাবাসের প্রতিনিধি ইয়ান ইরফান। বিসিএস কমপিউটার সিটির সভাপতি মজিবুর রহমান স্বপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মেলার আহবায়ক এএসএম মুক্তাদির।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি আনিসুল হক বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে চেষ্টা আমাদের আছে, তা কখনোই সম্ভব হবে না, যদি আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তিতে উন্নত হতে না পারি। তিনি আরো বলেন, কমপিউটার শুধু হার্ডওয়্যারসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি নয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।
মেলার অভ্যন্তরের একাংশ
বিশেষ অতিথি এফবিসিসিআই-এর পরিচালক আফতাবুল ইসলাম বলেন, খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থানের পরই বর্তমান তরুণ সমাজের চাহিদা হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। আর এ চাহিদা মেটাতে হলে প্রয়োজন উচ্চগতিসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট।
মোস্তাফা জববার বলেন, বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছে, কিন্তু পেপার বেইজড সরকার দিয়ে কখনোই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ডিজিটাল সৈনিক দরকার, আর তার জন্য দরকার ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা।
কমপিউটার এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে আয়ের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশ এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। এজন্য কমপিউটার ও কমপিউটারসংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম কমানোর কথা বলেন নওয়াজেশ আলী খান।
ইয়ান ইরফান তার বক্তব্যে বলেন, কমপিউটারপ্রযুক্তি সাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সিটিআইটির মতো প্রযুক্তিমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দর্শক ও ক্রেতাসাধারণকে আকৃষ্ট করতে সিটিআইটি আয়োজিত প্রতিটি মেলাই শুরু হয় আকর্ষণীয় সাজে, যার একটির সাথে আগেরটির মিল পাওয়া যায় না। এবারও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। ঢাকা শহরের ৪০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মেলাকে পুরনো ঢাকার স্থাপত্যের আঙ্গিক দিতে মেলার সামনের অংশ লালবাগ কেল্লার আদলে উপস্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেলার প্রাঙ্গণজুড়ে ১৬০টি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের প্রযুক্তিপণ্য প্রদর্শন করে।
বিডিআর সদর দপ্তরের দুঃখজনক ঘটনায় শোকের ছায়া পড়ে সিটি আইটি মেলাতে। জাতীয় শোক ঘোষণার পর বিসিএস সিটির প্রবেশদ্বারে টানানো হয় শোকের কালো ব্যানার। বিসিএস কমপিউটার সিটিতে জাতীয় পতাকা ছিল অর্ধনমিত। কালো ব্যাচ ধারণ করেন কমপিউটার সিটির সব দোকান মালিক ও মেলার আয়োজকরা। শুধু তাই নয়, এ দুঃখজনক ঘটনায় নিহতদের স্মরণে রোববার বিকেলে কমপিউটার সিটির চতুর্থ তলায় নামাজের স্থানে আয়োজন করা হয় মিলাদ মাহফিল। এতে স্টল মালিক ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা ছাড়াও মেলায় আগত দর্শকরাও অংশ নেন। বিডিআর হত্যাযজ্ঞে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মেলার সাউন্ডবক্সের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। কমপিউটার মেলার বিনোদনমূলক সব আয়োজন বাদ দেয়া হয়। শোককে শক্তিতে পরিণত করে এক ভিন্ন মাত্রায় কোনো সময়সূচী পরিবর্তন না করেই আয়োজকরা সাফল্যের সাথে সমাপ্ত করলেন এবারের এ মেলা।
সিটিআইটি কমপিউটার মেলায় প্রতিবারের মতো এবারও বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যে বিশেষ ছাড় ছিল, যা ক্রেতাসাধারণকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে। প্রায় প্রতিটি স্টলে পণ্য কিনলেই পাওয়া যায় বিভিন্ন উপহার ও মূল্য ছাড়। সিটিআইটি ২০০৯-এ বিভিন্ন স্টলে উল্লেখযোগ্য কিছু ছাড় বা উপহার সমাগ্রী দেয়া হয়।
সিটিআইটি মেলায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা
মেলা উপলক্ষে এইচপির যেকোন মডেলের ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কিনলে ক্রেতাকে কুপন দেয়া হয়। এর পুরস্কার হিসেবে ছিল সিঙ্গাপুর, মালেয়েশিয়া, ব্যাংকক, কাঠমন্ডু ও কক্সবাজারের বিমান টিকিট।
মেলার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রদর্শন ও বিক্রি করে আসুসের বিভিন্ন পণ্য যেমন নোটবুক, ই-পিসি, মাদারবোর্ড। আসুস ব্র্যান্ডের নোটবুকের মডেল ও কনফিগারেশনভেদে ২০০০-৩০০০ টাকা ছাড়সহ দেয়া হয় গিফট বক্স। গ্লোবাল ব্র্যান্ড ব্রাদার ব্যান্ডের ১২টি মডেলের লেজার ও মাল্টিফাংশন প্রিন্টার প্রদর্শন ও বিক্রি করে আকর্ষণীয় দামে। প্রতিটি প্রিন্টারের সাথে ছিল আকর্ষণীয় উপহারসামগ্রী। উল্লেখ্য সিটিআইটি ২০০৯-এর আরেক অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হলো ব্রাদার আসুস ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেল ও কনফিগারেশনের ডেস্কটপ পিসিতে ছাড় দেয় ১০০০-২০০০ টাকা। মেলা উপলক্ষে গ্লোবাল প্রতিটি আসুস পিসির সাথে বিনামূল্যে দেয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যার, অ্যান্টিভাইরাস, পেনড্রাইভ ইত্যাদি পাঁচটি উপহার। এছাড়া আসুস ব্র্যান্ডের বিভিন্ন সাইজের এলসিডি মনিটর বিক্রি করে আকর্ষণীয় দামে।
সিটিআইটি ২০০৯-এর কো-স্পন্সর এসারের বিজনেস ও সার্ভিস পার্টনার এক্সিকিউটিভ টেকনোলজিস মেলা উপলক্ষে এসার ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেল ও কনফিগারেশনের নোটবুক বিশেষ ছাড় দামে এবং ১৫০০ টাকার সমমানের গিফট প্যাক উপহার দেয়া হয়। গিফট প্যাকে ছিল অরিজিনাল ই-স্ক্যান অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার, এসারের ডায়েরি ও ল্যাপটপে ব্যবহারোপযোগী অপটিক্যাল মাউস। এসারের সব পণ্য এসারের আইডিবির রিসেলার রিশিত কমপিউটার, রায়ানস কমপিউটার, টেকনোএজ কর্পোরেশন, কমপিউটার ভিলেজ, এডভেন্ট টেকনোলজিসে পাওয়া যায়।
মেলার আরেক পৃষ্ঠপোষক স্যামসাংয়ের পরিবেশক ইনডেক্স আইটি মেলা উপলক্ষে স্যাংমসাংয়ের দুটি নতুন মডেলের এলসিডি আকর্ষণীয় দামে বিক্রি করে। এ মডেল দু’টিতে রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ওয়েব ক্যামেরা ও স্পিকারের সুবিধা। স্যামসাং একটি ডিজিটাল ফটোফ্রেমও নিয়ে এসেছে। এছাড়া ইনডেক্সআইটি বিভিন্ন কনফিগারেশনের ডেস্কটপ পিসি বিক্রি করে ১৬০০০ টাকা থেকে তদুর্ধ টাকায়।
এ মেলার আরেক স্পন্সর ট্রানসেন্ট ইউনাইটেড কমপিউটার সেন্টারের মাধ্যমে আকর্ষণীয় দামে বিভিন্ন ক্ষমতার পেনড্রাইভ, বহনযোগ্য হার্ডড্রাইভ, মেমরি কার্ড ইত্যাদি বিক্রি করে।
ফ্লোরা লিমিটেড মেলা উপলক্ষে তাদের বাজারজাত করা প্রায় প্রতিটি পণ্যে ছাড় বা বিশেষ অফার ঘোষণা করে। ফ্লোরা এইচপি কম্প্যাক নোটবুকে কনফিগারেশন ও মডেল ভেদে ৪০০০-৫০০০ টাকা ছাড়সহ ব্যাগ ফ্রি হিসেবে দেয়। ডেল নোটবুকের ক্ষেত্রে মডেল ও কনফিগারেশন ভেদে ১০০০-৭০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড়সহ ব্যাগ ফ্রি।
অলিম্পাস ডিজিটাল ক্যামেরার ক্ষেত্রে ৫% ছাড়, নিকন ডিজিটাল ক্যামেরা বিক্রি করে বিশেষ ছাড় দামে। ইপসনের বিভিন্ন মডেল ও কনফিগারেশনের ইঙ্কজেট, স্ক্যানার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, অল-ইন ওয়ান প্রিন্টার বিশেষ ছাড় দামে বিক্রি করে। যেকোনো মডেলের ফ্লোরা পিসির সাথে ফ্রি দেয়া হয় ইপসন স্টাইলাস টি১০ ইঙ্কজেট প্রিন্টার, ইন্টেল ব্যাগ ও ভারবাটিম সিডি-আর।
স্মার্ট টেকনোলজি তাদের অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে অফার করে এইচপি প্যাভিলিয়ন ও এইচপি কম্প্যাকের বিভিন্ন মডেলের নোটবুক, যার সাথে ক্রেতাকে দেয়া হয় স্ক্র্যাচকার্ড যেখানে রয়েছে এয়ার টিকেট। তাছাড়া স্পিকার কীবোর্ড, ওয়েবক্যাম, মাউস ও ক্যাসিংয়ের মধ্যে ডিলাক্স ব্র্যান্ডের যেকোনো তিনটি পণ্য কিনলে একটি ডিলাক্স মগ ফ্রি।
মাল্টিলিং মেলা উপলক্ষে প্রেসারিও এইচপি কম্প্যাক ও এইচপি প্যাভিলিয়ন সিরিজের বিভিন্ন মডেল ও কনফিগারেশন ভেদে নোটবুকে ২০০০-৩০০০ টাকা ছাড় দেয়। মাল্টিলিংক মেলা উপলক্ষে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড পিসির ক্ষেত্রেও অফার করে বিশেষ মূল্য। কম ভ্যালী লি. তাদের স্টলে বিভিন্ন মডেল ও কনফিগারেশনের ম্যাট্রিক্স পিসি বিক্রি করে ১০০০-১৫০০ টাকা ছাড়ে। ইন্টেল অ্যাটম প্রসেসরবিশিষ্ট এমএসআই উইন্ড পিসি বিক্রি করে আকর্ষণীয় দামে। এছাড়া কম ভ্যালী বেনকিউ ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেল ও কনফিগারেশনের জয়বুক নোটবুক বিক্রি করে আকর্ষণীয় দামে।
সিটিআইটি-২০০৯-এ বাংলাদেশে ক্যানন সিস্টেম প্রোডাক্টের একমাত্র পরিবেশক ছিল জেএএন অ্যাসোসিয়েটস। তাদের বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে ক্রেতাদের ব্যাগ, এসডি মেমরি কার্ড, কলম, ক্যালকুলেটর, টি-শার্ট ও জ্যাকেট উপহার হিসেবে দেয়া হয়। আকর্ষণীয় মূল্য ছাড়ও ছিল। কোনো কোনো পণ্যে ৩০% পর্যন্তও ছাড় পাওয়া যায়। ক্যাননের ক্যামেরা, প্রিন্টার, স্কানার ও ক্যামকর্ডার কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতারা এ সুযোগ পান। শুধু সিটিআইটি মেলা চলাকালীন এ অফার প্রযোজ্য।
A470, A580, A590, IXUS80সহ বিভিন্ন মডেলের ডিজিটাল ক্যামেরা পাওয়া যায় এবারের মেলায়। ইওএস মডেলের এসএলআর ও ডিএসএলআর ক্যামেরার পাশাপাশি FS11, FS100, FS10 মডেলের ক্যামকর্ডারও বিক্রি হয় আকর্ষণীয় দামে।
পিক্সমা সিরিজের বিভিন্ন মডেলের বাবলজেট প্রিন্টারসহ ক্যাননের সব ধরনের প্রিন্টার ও স্ক্যানার বিক্রি হয় মেলায়।
মেলায় এইচপি বা ফুজিৎসু ব্র্যান্ডের নোটবুক কিনলে কমপিউটার সোর্স আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পারফিউম উপহার দেয়। শুধু তাই নয়, মেলা উপলক্ষে মডেল ও কনফিগারেশনভেদে ফুজিৎসু ব্র্যান্ডের নোটবুক যথেষ্ট ছাড় দামে বিক্রি করে কমপিউটার সোর্স। রিশিত কমপিউটার মেলা উপলক্ষে তাদের স্টলে আকর্ষণীয় দামে বিভিন্ন মডেল ও কনফিগারেশনের ডেস্কটপ পিসি বিক্রি করে। তাদের স্টলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের পাশাপাশি সনি ব্র্যান্ডের ডিজিটাল ক্যামেরাও পাওয়া যায় আকর্ষণীয় দামে।
কমপিউটার ভিলেজ তাদের স্টলে বিভিন্ন মডেল ও কনফিগারেশনের ডেস্কটপ পিসি বিক্রি করে বিশেষ ছাড় দামে।
হাসি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেল ও কনফিগারেশনের নোটবুক বাজারজাত করছে এভারমার্চ বাংলাদেশ। মেলায় এরা এদের পণ্যে বেশ ছাড় দেয়। এদের স্টলে নোটবুক ছাড়া রয়েছে অল-ইন-ওয়ান কমপিউটার ডেস্কটপ মনিটর। এবারের মেলার নতুন অতিথি হলো পোশ বুক নামে ছোট আকারের নোটবুক। ছোট আকারের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মডেল ও কনফিগারেশনের এ নোটবুক বিক্রি হয় আকর্ষণীয় দামে। লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেমচালিত হলেও উইন্ডোজেও চালানো সম্ভব এতে। এটি মেলায় আনে রাজ টেক।
মেলায় রায়ান কমপিউটারস লেনেভো ব্র্যান্ডের বেশ কয়েকটি মডেলের ল্যাপটপ বিক্রি করে। রায়ান ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেল ও কনফিগারেশনের ডেস্কটপ পিসি বিক্রি করে বেশ মূল্য ছাড় দিয়ে। সান কমপিউটার সুপারস্টারে এসার, তোশিবা, এইচপি, ডেল, লেনেভো, সনি প্রভৃতি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ বিক্রি হয় ছাড় দামে। বিশেষ কম মূল্যে অর্থাৎ ১৬-১৭ হাজার টাকার মধ্যে ক্লোন পিসি বিক্রি করেছে বিজনেসল্যান্ড, ইনডেক্স আইটি, ওনিক্সস কমপিউটার সিস্টেম, ইন্টারন্যাশনাল কমপিউটার নেটওয়ার্ক, ড্রিমল্যান্ড, অ্যাঞ্জেল কমপিউটার, সুপিরিয়র ইলেক্ট্রনিক্স, অরবিট কমপিউটার, নেট স্টার, টেকনোকেয়ার প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান। এবিসি কমপিউটার প্রতিটি ডেস্কটপ পিসির সাথে ব্ল্যাক ও কালার কার্ট্রিজসহ এইচপি প্রিন্টার ফ্রি দেয়। রিশিত কমপিউটার মনিটর ছাড়া ডেস্কটপ পিসি বিক্রি করে মাত্র ১২,১০০ টাকায়। ডেফোডিল কমপিউটারে অফার ছিল মূল্য ছাড়ের সাথে বাসায় গিয়ে বিক্রয়োত্তর সেবা।
এবারের মেলায় বিভিন্ন ক্ষমতার পেনড্রাইভ, বহনযোগ্য হার্ডড্রাইভ, মেমরি কার্ডের ব্যাপক চাহিদা ছিল। ৪ থেকে ৮ গি.বা. পেনড্রাইভের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। মেলায় ট্রানসেন্ট, এডাটা, টুইনমোস, অ্যাপাসার, কিংস্টোন, নোটটাচ ইত্যাদি ব্র্যান্ডের পেনড্রাইভের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি।
কমিপউটার সোর্স এ মেলায় নিয়ে আসে ওয়েস্টার্ন ডিজিটালের ১৬০ গি.বা. থেকে ১ টেরাবাইটের বহনযোগ্য হার্ডড্রাইভ। ইউনাইটেড কমপিউটার সেন্টার ট্রানসেন্টের বেশ কয়েকটি মডেলের বহনযোগ্য হার্ডড্রাইভ এনেছে। পকেটে বহণযোগ্য এসব স্টোরেজ মিডিয়ার ধারণক্ষমতা ১৬০ থেকে ৫০০ গি.বা। রায়ান কমপিউটার এনেছে বহনযোগ্য নোটটাচ হার্ডডিস্ক।
মেলায় মেমরি কার্ডেরও ব্যাপক চাহিদা দেখা যায়। অন্যতম মেমরি কার্ড প্রস্ত্ততকারী প্রতিষ্ঠান ট্রানসেন্ড, মাইক্রো, এমএমসি ইত্যাদি। এসব মেমরি কার্ডের ধারণক্ষমতা ১ থেকে ১৬ গি.বা. পর্যন্ত।
এবারের মেলায় কমপিউটার ও ফ্যাশন প্রযুক্তি পণ্যগুলোতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়সহ প্রতিদিন ভিন্নধর্মী আয়োজনের মধ্যে ছিল নতুন পণ্য পরিচিতি, তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সেমিনার, সেলিব্রেটি আসর, ক্যুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। তাছাড়া মেলায় আগত দর্শকদের জন্য ছিল প্রতিদিনের টিকেটের ওপর রাফেল ড্রয়ের মাধ্যমে একটি এলসিডি মনিটর জিতে নেবার সুযোগ।
সিটিআইটি ২০০৯-এর অন্যান্য আয়োজন
মেলা কমিটি ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়াও বিসিএস সিটিআইটি ২০০৯-কে আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামের আয়োজন করে। এ মেলাকে ঘিরে অন্য যেসব আয়োজন ছিল তা নিম্নরূপ :
* কমপিউটার সিটির টেরাসে (তৃতীয় তলায় খোলা প্রাঙ্গণে) ইন্টারনেটে ভোট দেয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্য নির্বাচনে আমাদের কক্সবাজার ও সুন্দরবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রচারণা চালায় ‘জাগো বাংলাদেশ জাগো’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
* সিটিআইটি মেলার তৃতীয় তলায় বাংলাদেশ ওপেনসোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) মুক্ত সফটওয়্যার প্রদর্শন করে। মুক্ত বিশ্বকোষ বাংলা উইকির পাশাপাশি মুক্ত সফটওয়্যার সিডি পাওয়া যায় বিডিওএসএনের স্টলে।
* মেলা উপলক্ষে বিশেষ মূল্যে বিজয় বাংলা সফটওয়্যার বিক্রি করে আনন্দ কমপিউটার্স লিমিটেড।
* কমপিউটার সিটির দ্বিতীয় তলায় সন্ধানী ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ইউনিটের উদ্যোগে চলে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী। সেই সাথে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা মাত্র ২০ টাকায় নিজ নিজ রক্তের গ্রুপ জেনে নেয়ার সুযোগ পায়।
* কমপিউটার সিটির তৃতীয় তলার টেরাসে দর্শনার্থীদের জন্য স্কাইবিডির সৌজন্যে বিনামূল্যে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের সুযোগ ছিল।
সম্মাননা স্মারক প্রদান
সিটিআইটি ২০০৯-এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার ছিল মেলার কেন্দ্রীয় মঞ্চে বিশিষ্টজনদেরকে সম্মাননা দেয়া। মেলার প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিশিষ্টজনকে সম্মাননা দেয়া হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনকে সম্মাননা দেয়া হয়। এ সময তার সহধর্মিণী গুলবদননেছা মনিকা, জেএএন অ্যাসোসিয়েটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ এইচ কাফী, বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সভাপতি মোস্তাফা জববার ও বিসিএস কমপিউটার সিটির সভাপতি মজিবুর রহমান স্বপন উপস্থিত ছিলেন।
ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনকে সম্মাননা দেয়া হচ্ছে
১ মার্চ ২০০৯-এ মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সমন্বয়ক লে. জেনারেল (অব) হারুন-অর-রশিদ বীরপ্রতীককে সম্মাননা দেয়া হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিটিআইটি সভাপতি মজিবুর হমান স্বপন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে কমপিউটারের ভূমিকা বিষয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার আদিত্য, চেয়ারম্যান, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কমপিউটার সমিতির সভাপতি মোস্তাফা জববারকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ সময় তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের নিজস্ব সম্পদ, আমাদের দেশের মানুষ ও নতুন প্রজন্মকে কাজে লাগাতে হবে। সবাইকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ডিজিটাল সৈনিক হিসেবে কাজ করতে হবে।
মেলার ৮ম দিনে ২০৭০০ ফুট উঁচু লাংসিসা রি পর্বতজয়ী নর্থ আলপাইন ক্লাবের পর্বতারোহীদের সম্মাননা দেয়া হয়। এ সম্মাননা গ্রহণ করেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মূসা ইব্রাহীম। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি ফয়েজ উল্ল্যাহ খান, বাইসাইকেলে বিশ্বভ্রমণকারী স্পেনের নাগরিক আলভোরানিল এবং নর্থ আলপাইন ক্লাবের সদস্য।
সমাপনী অনুষ্ঠান
দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এবারের মেলায় প্রথমে লোকসমাগম কম হলেও পরে তা জমে ওঠে। মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় সিটিআইটির তৃতীয় তলায় উন্মুক্ত স্থানে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান। এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এশিয়ান ওশেনিয়ান কমপিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অর্গানাইজেশনের (অ্যাসোসিও) সহসভাপতি ও বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ এইচ কাফি, বিসিএসের বর্তমান সভাপতি মোস্তাফা জববার, কমপিউটার সিটির সভাপতি মজিবুর রহমান স্বপন ও মেলার আহবায়ক এএসএম আবদুল্লাহ মোক্তাদির প্রমুখ।
সিটিআইটি মেলা ২০০৯-এর আয়োজনে স্পন্সর ছিল এসার, আসুস, ব্রাদার, স্যামসাং ও ট্রানসেন্ট। মেলার মিডিয়া পার্টনার এটিএন বাংলা, রেডিও ফূর্তি ও দৈনিক ইত্তেফাক।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mahmood_sw@yhahoo.com