• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > হজ ব্যবস্থাপনায় আইটির ব্যবহার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: জাবেদ মোর্শেদ
মোট লেখা:১৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইটি
তথ্যসূত্র:
হজ্জ্ব
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
হজ ব্যবস্থাপনায় আইটির ব্যবহার

হজ ব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে হাজী বাছাই ও রেজিস্ট্রেশন, মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া করা, বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করা, পিলগ্রিম পাস এবং ভিসা ইস্যু করা, ইমিগ্রেশন, মেডিক্যাল চেকআপ, সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স, বহির্গমনপূর্ব আবাসনের ব্যবস্থা করাসহ হাজীদের সব সমস্যার সমাধান করা। ঢাকার উত্তরাতে অবস্থিত হজ অফিস সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় এ কাজগুলো করে থাকে।

হজ ব্যবস্থাপনায় আইটি ব্যবহারের সূচনা

ই-গভর্নেন্স প্রজেক্টের আওতায় হজ মন্ত্রণালয় ২০০২ সালে হাজীদের, তাদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধব, এজেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন তথ্যভিত্তিক সেবার জন্য একটি ওয়েবসাইট চালু করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ২০০২ সালের ২৩ জানুয়ারি বেসরকারি আইটি সেটআপের সহায়তায় প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। সরকারের হজ মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির অভিজ্ঞতা থেকে দেখে যে, হজ ব্যবস্থাপনায় আইটির ব্যবহার সেবা সক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, বেসরকারি হজ এজেন্টদের মনিটরিং, দেশে-বিদেশে হাজীদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সাথে যোগাযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দেয়। হজ মন্ত্রণালয় বেসরকারি আইটি কোম্পানি হাতিল আইটি-কে এ কাজে নিয়োগ করে। এরা ২০০২ সালের ২ ডিসেম্বর কমপিউটারভিত্তিক হজ তথ্যসেবা ব্যবস্থা চালু করতে সক্ষম হয়। তখন থেকে আজো ওয়েবসাইটটি (www.bdhajjinfo.org) নিয়মিত আপডেট করা হচ্ছে।



হজ ব্যবস্থাপনা ও তথ্যপ্রযুক্তি

আপাতদৃষ্টিতে হজ ব্যবস্থাপনাকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর মনে না হলেও এর প্রতিটি ধাপে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার। যখন থেকে একজন হাজী হজ পালনের উদ্দেশ্যে সরকার নির্ধারিত ফরমটি পূরণ করেন, তখন থেকে হজ পালন শেষে ফিরে না আসা পর্যন্ত প্রত্যেকটি ধাপে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তার নিজের পাসপোর্ট অর্থাৎ পিলগ্রিম পাস তৈরি, ভিসা লজমেন্ট, ইমিগ্রেশন ইত্যাদি সম্পন্ন করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটিকে আমরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে পারি।

পিলগ্রিম পাস প্রিন্ট

প্রথমে হজ পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের ওএমআর শিট থেকে একটি ওএমআর মেশিনের মাধ্যমে তার যাবতীয় তথ্য ও ছবি একটি লোকাল সার্ভারে পাঠানো হয়। এরপর এটিকে ম্যানুয়ালি যাচাই-বাছাই করে কমপিউটারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রিন্ট সার্ভারে পাঠানো হয়। প্রিন্ট সার্ভার থেকে হাজীদের জন্য পিলগ্রিম পাস প্রিন্ট করে হজ অফিসে প্রয়োজনীয় দাফতরিক কাজের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর সব হাজীর যাবতীয় তথ্যসংবলিত একটি কপি লোকাল সার্ভার থেকে বহির্গমন বিভাগকে দেয়া হয় এবং একটি কপি ইন্টারনেটে আপলোড করা হয়। লোকাল সার্ভারে বদলি হাজীদের তথ্যও আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা হয় এবং ওয়েবে আপলোড করা হয়।

ভিসা লজমেন্ট

সৌদি সরকারের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে ভিসা লজমেন্ট সম্পন্ন করতে হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও রয়েছে আইটির ব্যবহার।

ওয়েবের মাধ্যমে তথ্য হালনাগাদ করা ও রক্ষণাবেক্ষণ

হজ ফ্লাইট শুরু হয়ে গেলে ওয়েবে তাদের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য সার্বক্ষণিকভাবে আপডেট করা হয়। একজন হাজী কবে ঢাকা থেকে রওনা হলেন, কবে মক্কা পৌঁছলেন, কবে মদিনা পৌঁছলেন ইত্যাদি। হাজীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যও সার্বক্ষণিকভাবে ওয়েবে আপডেট করা হয়। ওয়েবসাইটটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ম্যাপ, বিশেষ করে হাজীদের বাড়ি শনাক্ত করার ম্যাপটি খুবই উপকারী। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সাধারণত ওয়েবে থাকা তথ্য থেকেই কোনো হাজীকে শনাক্ত করা হয়। কোনো হাজীর মৃত্যু ঘটলে বা অন্য কোনো দুর্ঘটনার তথ্যও তাৎক্ষণিকভাবে ওয়েবে আপলোড করা হয়।

এসএমএসের ব্যবহার

অত্যন্ত সফলভাবে এ বছর থেকে হজ ব্যবস্থাপনার তথ্যপ্রযুক্তি সিস্টেমে এসএমএসের ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে শুধু গ্রামীণফোন গ্রাহকরা তাদের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে হাজীদের সর্বশেষ অবস্থান ও শারীরিক অবস্থা জানতে পারছেন। ভবিষ্যতে অন্যান্য মোবাইলের মাধ্যমেও এটি সম্ভব হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে হাজীদের সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় রিপোর্ট তৈরি করা হয় এ ব্যবস্থার মাধ্যমে মাধ্যমে।

ওয়েবসাইটটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর শক্তিশালী সার্চ ইঞ্জিন। এই সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে খুব সহজেই ন্যূনতম তথ্য দিয়েই একজন হাজীকে শনাক্ত করা সম্ভব। ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে হাজীরা বা তার আত্মীয়-স্বজনরা সহজেই বার্তা বিনিময় করতে পারেন। হাজীরা বা তার আত্মীয়-স্বজন যেকেউই সহজেই যেকোনো অভিযোগ ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে জানাতে পারেন।

জনবল

হজ ব্যবস্থাপনা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাকে মূলত দুইটি টিমের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। পিলগ্রিম পাসের জন্য রয়েছে একটি টিম। ওয়েব দেখাশোনার জন্য মূলত দুইটি টিম কাজ করে থাকে, যার একটি বাংলাদেশে এবং অপরটি সৌদি আরবে অবস্থান করে কাজ সম্পন্ন করে থাকে।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ক্ষেত্রে প্রজেক্টটি একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে বিভিন্ন মহলে। এটি একটি সরকারি প্রজেক্ট হওয়া সত্ত্বেও গত সাত বছর ধরে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও মান উন্নয়নের জন্য কাজ করছে হাতিল আইটি নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

উপসংহার

এই ওয়েবসাইটটি আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত হয়েছে, যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে করেছে উজ্জ্বলতর। আমরা মনে করি, এ সাইটটিতে আরো নতুন নতুন ফিচার ও ফাংশনালিটি যোগ করে, ই-গভর্নেন্স সার্ভিস ডেলিভারির ক্ষেত্রে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

কজ ওয়েব


ফিডব্যাক : jabedmorshed@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - ডিসেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস