কমপিউটার জগৎ প্রতেবদক-
জমজমাট আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ২৫-২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম ল্যাপটপ মেলা ল্যাপটপ পার্টি ২০০৮৷ মেলার উদ্বোধন করেন বাণিজ্য ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বেটার বিজনেস ফোরামের সদস্য প্রফেসর ড. এম এ তসলিম, একই ফোরামের অপর সদস্য সাঈদ মাহমুদুল হক এবং বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার৷
উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন- এটি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ৷ ল্যাপটপ এখন আমাদের ব্যস্ জীবনের একটি অন্যতম অপরিহার্য উপাদান, যা এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে আবারও মনে করিয়ে দিলো৷ আশা করি আয়োজক কমিটি এ ধরনের আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন৷ মোস্তাফা জব্বার বনে, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিতে নানা ধরনের ঘটনা ঘটেছে কিন্তু শুধু ল্যাপটপের ওপর মেলা এবারই প্রথম, যা তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একটি উলেখযোগ্য ঘটনার সচনা করলো৷ তিনি প্রধান অতিথিকে উদ্দেশ করে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন ল্যাপটপ প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং শিশুদের জন্য বিশেষ ল্যাপটপ তৈরি করছে৷ আমাদেরকে সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে৷
মেলার আকর্ষণীয় কিছু মডেল
ফ্লোরা লিমিটেড, মাল্টিলিংক, কমপিউটার সোর্স প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান এ মেলায় তাদের স্টলে বিভিন্ন মডেলের এইচপি কম্প্যাক প্রেসারিও নোটবুক বেশ আকর্ষণীয় দামে বিক্রি করে৷ শুধু তাই নয়, এদের মডেলগুলোর কনফিগারেশন ও দাম ক্রেতাসাধারণকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে৷
মেলায় এসার এম্পায়ার ও এক্সটেনসার বিশেষ ককেটি মডেলের ল্যাপটপ নিয়ে তাদের স্টলকে সজ্জিত করেছিল যেগুলোর দাম মডেল ও কনফিগারেশন ভেদে ৪৪৮০০ টাকা থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত ছিল৷ তোশিবা তাদের স্টল সুসজ্জিত করেছিল স্যাটেলাইট সিরিজের কয়েকটি মডেলের ল্যাপটপ, টেকরা ও প্রোটেজি নোটবুক দিয়ে৷ এগুলোর দাম মডেল ভেদে শুরু হয়েছে ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা থেকে৷ স্মার্ট টেকনোলজিস্ গিগাবাইটের W45IU মডেল সহ আরো বিভিন্ন মডেলের ল্যাপটপ নিয়ে আসে।
আসুস মেলায় মাত্র সাড়ে ২৭ হাজার টাকা ট্রিপল ই মডেলের ল্যাপটপ দিয়ে ব্যাপক সাড়া জাগায়৷ ট্রিপল ই (eee pc) মলের পিসি ইজি টু লার্ন, ইজি টু ওয়ার্ক, ইজি টু প্লে -এর ব্যানারে ছোট আকারের এই ল্যাপটপটিই এ মেলায় সবচেয়ে কম দামের পিসি হওয়ায় সবার দৃষ্টি কাড়ে৷ এটি বাজারজাত করছে গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রা. লি.৷
মেলায় ডেল-এর আকর্ষণীয় ল্যাপটপটি ছিল ডেল ল্যাটিচুড-৪৩০৷ কোর টু ডুয়ো প্রসেসর সম্মৃদ্ধ ছোট আকারের এই ল্যাপটপটির দাম রাখা হয়েছিল ৯৫ হাজার টাকা৷
এইচপি এক লাখ ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করে এইচপি প্যাভিলিয়ন টিএক্স 1209GBD (HP Pavilion tx 1209au) মডেলের আকর্ষণীয় মডেলের ল্যাপটপ৷ এর এলসিডি স্ক্রিনটি সুবিধামতো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাখা যায়৷ একই ধরনের সুবিধাসম্বলিত ফুজিত্সু মডেলের আরো একটি আকর্ষণীয় ল্যাপটপ হচ্ছে- ফুজিত্সু লাইফবুক টি৪২২০৷ এর দাম ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা৷
আসুসের আর২এইচভি মডেলের ছোট আকারে টাচ স্ক্রিন সুবিধাসম্বলিত নোটবুকটিও সবার নজর কাড়ে৷ এতে রয়েছে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য বিল্টইন ৩.৫জি মডিউল৷
কম্প্যাকের কম দামী বেশ কয়েকটি মডেল মেলায় মধ্যবিত্ত ব্যবহারকারীদের নজর কাড়ে৷ কম্প্যাক ৩৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকার অধিক দামের বেশ কয়েকটি মডেলের ল্যাপটপ মেলায় প্রদর্শন করে৷
মেলায় ডেফোডিল নিয়ে আসে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড ডেফোডিল পিসি এর বিভিন্ন মডেলের কনফিগারেশনের নোটবুক৷ ল্যাপটপ পার্টি ২০০৮-এ মেলার মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে চীনে তৈরি ল্যাপটপ হ্যাসি৷ হ্যাসি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ বাংলাদেশে বাজারজাত করছে এভারমার্চ বাংলাদেশ৷ দামে সস্তা ও মানসম্পন্ন কনফিগারেশনের জন্য প্রথম ধাপেই ব্যাপক সাড়া ফেলে হ্যাসি৷
হ্যাসির ডব্লিউ ২২০ এন মডেলের ল্যাপটপটি কম দামের এবং আকারে বেশ ছোট হওয়ায় এটি ছিল ক্রেতাদের অন্যতম একটি আকর্ষণীয় ল্যাপটপ৷ কিংস নারে আরো একটি ব্র্যান্ড এ মেলার মাধ্যমে দেশের বাজারে ব্যাপক পরিচিতি পায়৷
কিংস ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের ল্যাপটপ বাজারজাত করছে টেকভ্যালী কমপিউটারস লি.৷
আকর্ষণীয় বিভিন্ন অফার
মেলায় প্রতিটি পণ্যের সাথেই ছিল বিশেষ ছাড় এবং আকর্ষণীয় উপহার সামগ্রী৷ টেকনোলজিক্যাল স্পন্সর ইন্টেল মেলায় বিক্রি হওয়া ইন্টেলের হার্ডওয়্যারযুক্ত প্রতিটি পণ্যের ওপরই দিয়েছিল আকর্ষণীয় উপহার৷ আসুস তাদের বিক্রি করা প্রতিটি ল্যাপটপের সাথেই দিয়েছিল কুপন৷ আর এই কুপনের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে বিজয়ীরা পেয়েছেন আকর্ষণীয় নোটবুক পিসি৷ এ ছাড়াও আসুস প্রতিটি ল্যাপটপের সাথে দিয়েছে দুই বছরের রোমিং ওয়ারেন্টি, যা বিশ্বের ৫৫টি দেশে কার্যকর৷ ফ্লোরা লিমিটেড দুইটি ল্যাপটপ কিনলে সাথে দিয়েছে একটি করে ইপসনের কালার প্রিন্টার ফ্রি৷ এসার তাদের প্রতিটি পণ্যের সাথে গিফ্ট হিসেবে দিয়েছে মাউস, ব্লু-টুথ এবং পেনড্রাইভ৷ এ ছাড়াও প্রতিটি ল্যাপটপের ওপর এরা অফার করে ৭ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ছাড়৷ কমট্রেড অফার করে তাদের বিভিন্ন পণ্যের ওপর ২৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড়৷ গিগাবাইট প্রত্যেকটি ল্যাপটপের সাথে ফ্রি দেয় একটি করে ওয়েবক্যাম৷ কমপিউটার সোর্স প্রতিটি পণ্যে দিয়েছে ৫ শতাংশ ছাড়৷ এ ছাড়াও তাদের স্টল থেকে ফুজিত্সু মডেলের ল্যাপটপ কিনলে ফ্রি দেয়া হয় একটি ওয়েবক্যাম৷
মেলার শেষ দিন বিকেলে তোশিবা তাদের ৫০ হাজার টাকার ল্যাপটপ বিক্রি করে মাত্র ৪২ হাজার ৯০০ টাকায়৷ তোশিবা এল ৪০ মডেলের এই ল্যাপটপটি কেনার সুযোগ ছিল বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত৷ মেলায় তোশিবা ল্যাপটপ ক্রেতাদের একটি করে কুপন দেয়া হয় যাতে লটারীর মাধ্যমে একজন বিজয়ীকে নির্বাচিত করা যায়৷ তোশিবা তাদের কার্যালয়ে গত ৩০শে জানুয়ারী সাংবা িদকদের উপসিথতিতে সাফায়েত শাহরিয়ারকে বিজয়ী নির্বাচিত করে একটি তোশিবা স্যাটেলাইট এল-৪০ এ৫০২ নোটবুক প্রদান করে৷ মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রির তালিকায় রয়েছে আসুসের ট্রিপল ই মডেলের ল্যাপটপ৷ এ ছাড়াও শীর্ষ তালিকায় ছিল আসুসের এফথ্রিই মডেল৷
মেলার অন্যান্য দিক
প্রতিদিনই মেলায় ছিল ব্যতিক্রমী টেক ফ্যাশন শো৷ মেলায় আসা আকর্ষণীয় পণ্যগুলো নিয়ে জনপ্রিয় মডেলরা ফ্যাশন শো আকারে প্রদর্শন করে সেসব পণ্য৷ এধরনের একাধিক ফ্যাশন শোর আয়োজন ছিল এ মেলায়৷
যাদের নিয়ে জমলো মেলা
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি মেকার কমিউনিকেশন-এর উদ্যোগে মোট ১০টি প্যাভিলিয়ন এবং ৬টি স্টল দিয়ে সজ্জিত হয়েছিল ল্যাপটপ পার্টি ২০০৮৷ অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছিলো- তোশিবা, কমট্রেড, টেকনোএজ কেয়ার, ফ্লোরা লিমিটেড, গিগাবাইট, রিশিত কমপিউটার, ইন্টেল কর্পোরেশন, আসুস, এসার, মাল্টিলিংক ইন্টারন্যাশনাল, এইচপি, এভারমার্চ বাংলাদেশ, ডেফোডিল, টেকভ্যালী, এবং কমপিউটার সোর্স লিমিটেড৷ মেলায় এইচপি, ইন্টেল, গিগাবাইট, তোশিবা, আসুস, এসার, ডেল, হ্যাসি, ফুজিত্সু, কিংস ও ডেফোডিল প্রভৃতি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের ল্যাপটপ বিক্রি হয়৷
মেলার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিল এসার, আসুস, এইচপি ও তোশিবা এবং মেলায় কারিগরি সহায়তা দেয় ইন্টেল৷ মেকার-এর একদল নিবেদিতকর্মীর সহযোগিতায় এমন একটি সফল আয়োজন সম্ভব হয়েছে বলে জানান আয়োজক কমিটি৷