জার্মানিসহ ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে সম্পূর্ণ টিউশন ফি ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে৷ এই পর্বে সুইডেনে ভর্তি ও ভিসা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য উপস্থাপন করা হলো৷
বর্তমানে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন একটি৷ বাংলাদেশ থেকে আয়তনে প্রায় তিনগুণ, কিন্তু জনসংখ্যা মাত্র ৯৫ লাখ৷ প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে দেশটি৷ স্যাটেলাইট থেকে শুরু করে বড় বড় জাহাজ, ভলভো, স্ক্যানিয়া ও সাব নির্মাতারাও বানাচ্ছে বিলাসবহুল গাড়ি৷
এখন থেকে ৬০ বছর আগে এদের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রায় বাংলাদেশের মতো ছিল৷ তখন ডায়রিয়া কিংবা হাম জাতীয় রোগে মারা যেত অসংখ্য লোক৷ সুইডিশরা কঠোর পরিশ্রম, মেধা, সততা ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আজ অনেক উন্নত৷
মিডসুইডেন ইউনিভার্সিটি
প্রযুক্তি উন্নয়নের অন্যতম বাহন৷ শতকরা ১০০ ভাগই শিক্ষিত এদেশের লোকজন৷ প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে ব্যক্তিগত ফোন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট৷
যে যে বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে
মূলত পোস্ট গ্র্যাজুয়েটেই বেশি পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে৷ কারণ, আন্ডার গ্র্যাজুয়েটে সুইডিশ মাধ্যমে পড়ালেখা করতে হয়৷ তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে ব্যাচেলর করার সুযোগ রয়েছে৷ আর পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের পুরোটাই ইংরেজি মিডিয়াম৷ সুইডেনের ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির অনেক বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করা যায়৷ বিষয়গুলো হলো :
মাস্টার্স ইন কমপিউটার নেটওয়ার্ক, মাস্টার্স ইন কমপিউটার সিকিউরিটি , মাস্টার্স ইন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স ইন আইসিটি এন্টারপ্রেনারশিপ, মাস্টার্স ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, মাস্টার্স ইন ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন্স, মাস্টার্স ইন টেলিকমিউনিকেশন্স, মাস্টার্স ইন ই-কমার্স, মাস্টার্ন ইন আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট, মাস্টার্স ইন আইটি, মাস্টার্স ইন কমপিউটার গ্রাফিক্স, মাস্টার্স ইন আইটি অ্যান্ড মিডিয়া ও মাস্টার্স ইন সিস্টেম অ্যান্ড চিপ ডিজাইন৷
পড়ার সময়ের সুযোগসুবিধা
সুইডেনের সব বিশ্ববিদ্যালয়ই সরকারি৷ সেখানে রয়েছে পড়াশোনার প্রচুর সুযোগসুবিধা৷ প্রত্যেক ছাত্রের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ, দিন-রাত যেকোনো সময়ে লাইব্রেরি, গ্রুপরুমে লেখাপড়ার সুযোগ৷ প্রত্যেক ছাত্রেরই রয়েছে খণ্ডকালীন চাকরির অনুমোদন৷ তবে গ্রীষ্মকালীন তিন মাস ও শীতের ছুটিতে ফুলটাইম চাকরি করা যায়৷
এছাড়া সুইডেন সেনজেনভুক্ত হওয়ায় ইউরোপের প্রায় ৩০টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করা যাবে৷ লেখাপড়া শেষ করে চাকরির জন্যও আবেদন করতে পারেন সুইডিশ প্রতিষ্ঠানগুলোতে৷ যেমনণ্ডএরিকসন, ভলভো, স্ক্যানিয়া, সাবসহ অসংখ্য বিশ্বখ্যাত কোম্পানিতে৷
ভর্তি প্রক্রিয়া
বছরে দুটি সেমিস্টারে দুবার ভর্তির সুােগ রয়েছে৷ সেমিস্টারগুলো হলো অটাম (আগস্ট-ডিসেম্বর) ও স্প্রিং (জানুয়ারি-মে)৷বেশিরভাগবিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত অটাম সেশনে বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়৷ অটাম সেশনে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে৷ সবকিছু ঠিক থাকলে অফার লেটার পাওয়া যাবে মে-জুন মাসে৷ ভিসার জন্য আবেদন করার পর ভিসা প্রসেসিং সময় লাগবে ৫-৮ সপ্তাহ৷ সুইডেনের ভর্তি ও ভিসা প্রক্রিয়া একটু ধীরগতির৷ আর জানুয়ারি সেশনে ভর্তির জন্য আবেদন করতে হবে সেপ্টেম্বর মাসে৷ ভর্তির আবেদনে কোনো ফি লাগে না৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কোনো টিউশন ফি নেই, তবে শুধু ছাত্র ইউনিয়নে প্রতি সেমিস্টারে সামান্য কিছু ফি লাগবে৷
ভর্তির আবেদন করবেন যেভাবে
প্রায় প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে সরাসরি আবেদনের সুযোগ রয়েছে৷ অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাবমিট করার পর একটি অ্যাপ্লিকেশন নম্বর পাওয়া যাবে৷ সেটি প্রিন্ট করে যাবতীয় কাগজপত্রসহ নোটারি করে ইউনিভার্সিটি বরাবর হার্ডকপি পাঠাতে হবে৷ ভার্সিটি কাগজপত্র পাওয়ার পর ই-মেইলের মাধ্যমে প্রেরককে জানাবে৷ এছাড়া যাবতীয় যোগাযোগ ই-মেইলের মাধ্যমেই হবে৷ ভর্তির জন্য কাগজপত্র মনোনীত হলে আপনার দেয়া ঠিকানায় অফার লেটার ও যাবতীয় কাগজপত্র চলে আসবে৷ ভর্তির যাবতীয় নিয়মকানুন, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা প্রভৃতি তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই পাওয়া যাবে৷
ভিসা প্রসেসিং
অফার লেটার পাওয়ার পর যাবতীয় কাগজপত্রসহ সুইডেন অ্যাম্বেসিতে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে৷ গুলশান-২ নম্বরে গ্রামীণফোন অফিসের পাশে সুইডেন এম্বেসি অব িস্থত৷ ভিসা পাওয়ার জন্য নিজের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা চাই৷ অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স সর্বনিম্ন ৯ লাখ টাকা রাখতে হবে৷ কারণ সুইডেনে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক ছাত্রের মাসিক থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত বাবদ ৭৩০০ ক্রোনার খরচ পড়ে৷ যা বাংলাদেশী টাকায় প্রত্যেক মাসে ৭০ হাজার৷ তাই এক বছরে মোট ৯ লাখ টাকা দেখাতে হবে৷ ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য www.swedenabroad.com/dhaka সাইটে পাওয়া যাবে৷
ভর্তির যোগ্যতা
পোস্ট গ্র্যাজুয়েটে আইসিটি বিষয়ক প্রোগ্রামে ভর্তির যোগ্যতাগুলো হলো :
ক) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ,
খ) কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে তিন বা চার বছরের স্নাতক ডিগ্রী,
গ) আইএলটিএস অথবা টোফেল৷ তবে স্নাতক ইংরেজি মাধ্যমে হলে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আইএলটিএস স্কোর প্রয়োজন নেই,
ঘ) কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তার সনদপত্র৷
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ঠিকানা
সুইডেনে অধ্যয়নের পুরো তথ্যের জন্য www.studyinsweden.se ও www.studera.nu সাইট দেখে নিতে পারেন৷ নিচে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেয়া হলো :
স্টকহোম ইউনিভার্সিটি : www.su.se কেটিএইচ : www.kth.se
উপশালা ইউনিভার্সিটি : www.uu.se
হেমস্টেড ইউনিভার্সিটি : www.hh.se বিটিএইচ : www.bth.se
উমিও ইউনিভার্সিটি : www.umu.se
ইউনিভার্সিটি অব লুন্দস : www.lu.se
চালমার্স ইউনিভার্সিটি : www.chalmers.se
মিডসুইডেন ইউনিভার্সিটি : www.mh.se
কার্লস্টেড ইউনিভার্সিটি : www.hks.se
জনশপিং ইউনিভার্সিটি : www.hj.se
ফিডব্যাক : mofaisal@gmail.com