চকোলেট থেকে বয়সের হিসাব
ধরুন আপনি আর একদম শিশুটি নেই৷ অঙ্কে পাকা না হলেও ছোটখাটো অঙ্ক কষতে বেগ পেতে হয় না৷ হতে পারে আপনার বয়স সর্বোচ্চ ৯৯ বছর৷ যাদের বয়স ১ থেকে ৯৯ বছর, শুধু তাদের বয়সই হিসেব করে বের করা যাবে এখানে দেয়া নিয়মে৷ এর বেশি বয়সের কারো বয়স বের করতে গেলে হিসেবে গোলমাল হয়ে যাবে৷ তাই এ ব্যাপারে আগে থেকেই সাবধান৷ গণিতের জাদু ব্যবহার করে কারো বয়স বিজ্ঞের মতো জানিয়ে দিতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন :
০১. যার বয়স তার মুখ থেকে না শুনে গণিতের কৌশলী হিসেব-নিকেশ করে বের করে দিতে চাইলে, তাকে জিজ্ঞেস করেন তিনি গড়ে প্রতি সপ্তাহে কয়টি চকোলেট খান৷ মনে রাখবেন এ চকোলেট সংখ্যা যেনো ১-এর চেয়ে কম কিংবা ১০-এর চেয়ে বেশি না হয়৷ তবে তাকে সতর্ক করে দিন তিনি যেনো কিছুতেই এ সংখ্যা আপনার কাছে প্রকাশ না করে মনে মনে রাখেন৷
ধরুন সপ্তাহে ৮টি চকোলেট তিনি খান৷ এ সংখ্যাটি তিনি মনে মনে ধরলেন৷ কিন্তু আপনাকে জানালেন না৷
০২. মনে মনে ধরা চকোলেট সংখ্যার দ্বিগুণ করুন : ৮ * ২ = ১৬৷
০৩. এ গুণফলে ৫ যোগ করুন : ১৬ + ৫= ২১৷
০৪. এ যোগফলকে ৫০ দিয়ে গুণ করুন : ২১ * ৫০ = ১০৫০৷
০৫. এর সাথে যোগ করুন বর্তমান ইংরেজি সাল : ১০৫০ + ২০০৮ = ৩০৫৮৷
০৬. চলতি বছরে যদি আপনার জন্মদিন চলে গিয়ে থাকে তবে সর্বশেষ যোগফল থেকে ২৫০ বিয়োগ করুন৷ আর চলতি বছরে আপনার জন্মদিন সামনে থাকলে বিয়োগ করুন ২৫১৷ ধরুন আপনার চলতি বছরে জন্মদিন এখনো পার হয়নি : ৩০৫৮-২৫১=২৮০৭৷
০৭. এ থেকে বাদ দিন আপনার জন্মসাল৷ ধরুন আপনার জন্মসাল ১৯৫২৷ তাহলে ২৮০৭-১৯৫২=৮৫৫৷ সর্বশেষ বিয়োগফল হবে তিন কিংবা চার অঙ্কের একটি সংখ্যা৷ এখানে হয়েছে তিন অঙ্কের সংখ্যা ৮৫৫৷ এখানে শেষ দুটি অঙ্ক অর্থাত্ ৫৫ হচ্ছে আপনার বয়সের পরিমাণ৷ এর আগে থাকা ৮ সংখ্যাটি হচ্ছে আপনার মনে মনে ধরা চকোলেটের সংখ্যা৷ লক্ষণীয়, আপনি যদি শুরুতেই মনে মনে চকোলেট সংখ্যা এক্ষেত্রে ১০টি ধরতেন তবে সবশেষে যে অঙ্কটি পেতেন তা হতো ১০৫৫, যা থেকে সহজেই প্রথম দুটো অঙ্ক দিয়ে তৈরি করা ১০ হতো চকোলেট সংখ্যা আর শেষ দুটো অঙ্ক দিয়ে তৈরি করা ৫৫ হতো আপনার বয়স৷ কি, এভাবে কারো বয়স বলে দিতে পারাটা মজার নাকি?
আসলে এখানে অঙ্কের খেলাটা কোথায়?
আগেই বলেছি, যাদের বয়স ১ থেকে ৯৯ বছরের মধ্যে তাদের না বলা বয়স এভাবে বের করে দেয়া যাবে৷ চকোলেটের সংখ্যা এখানে টেনে আনা হয়েছে মজা করার জন্য ছাড়া আর কিছুই নয়৷ এখানে গণিতটা কিভাবে কাজ করে তাই দেখা যাক৷
এখানে চকোলেটের সংখ্যা নেয়া হয় ১ থেকে ১০-এর মধ্যে কোনো একটি৷ একে দ্বিগুণ করে ৫ যোগ করে যোগফলকে গুণ করা হয় ৫০ দিয়ে৷ এগুলো অঙ্কের কয়েকটি উল্টা-পাল্টা ধাপ ব্যবহার করা হয় যাতে আমরা সংখ্যাটিকে শতকের ঘরে পৌঁছে দিতে পারি৷ সে সংখ্যা ১০টি হতে পারে যথাক্রমে ৩৫০, ৪৫০, ৫৫০, ৬৫০, ৭৫০, ৮৫০, ৯৫০, ১০৫০, ১১৫০ কিংবা ১২৫০৷ এগুলোর সাথে চলতি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সালসংখ্যা ২০০৮ যোগ করলে যথাক্রমে সংখ্যা ১০টি দাঁড়াবে : ২৩৫৮, ২৪৫৮, ২৫৫৮, ২৬৫৮, ২৭৫৮, ২৮৫৮, ২৯৫৮, ৩০৫৮, ৩১৫৮ কিংবা ৩২৫৮৷ এগুলো প্রত্যেকটি থেকে ২৫০ অথবা এক্ষেত্রে জন্মদিন সামনে রয়েছে ধরে নিয়ে৷ ২৫১ বিয়োগ করলে যথাক্রমে সংখ্যা ১০টি পাবো : ২১০৬, ২২০৭, ২৩০৭, ২৪০৭, ২৫০৭, ২৬০৭, ২৭০৭, ২৮০৭, ২৯০৭ কিংবা ৩০০৭৷ এ থেকে আপনার জন্মসাল বাদ দিলে আপনি পাবেন আপনার বয়সের পরিমাণ, পাশাপাশি আপনার ধরে নেয়া চকোলেট সংখ্যা ১০০ গুণ৷ অতএব এ থেকে সহজেই বয়স ও চকোলেট সংখ্যা বলে দেয়া সম্ভব৷ গণিতের ভাষায় বলতে পারি : আপনার সর্বশেষ জন্মদিনের সাল + (১০০ * আপনার ধরে নেয়া চকোলেট সংখ্যা)-আপনার জন্মসাল = আপনার বয়স + (১০০ * আপনার পছন্দের চকোলেট সংখ্যা)৷
সবশেষে সতর্ক করে দিচ্ছি : যেসব মানুষের বয়স ১০০ বছরের চেয়ে বেশি, তাদের বেলায় এই নিয়ম খাটবে না৷
পাঁচটি ক্রমিক সংখ্যার যোগফল দ্রুত বের করা
পাঁচটি ক্রমিক সংখ্যা অর্থাত্ পর পর লেখা পাঁচটি ধারাবাহিক সংখ্যাকে কিভাবে দ্রুত যোগ করা যায়, তারই একটি সহজ কৌশল এখানে জানবো৷ কৌশলটি কাজে লাগিয়ে পাঁচটি ক্রমিক সংখ্যার যোগফল দ্রুত স্বল্পতম সময়ে বের করে দিয়ে বন্ধুবান্ধব এমনকি শিক্ষকদেরও অবাক করে দেয়া যায়৷ ধরা যাক ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪ ও ৫৫-এর যোগফল কত, তা বের করতে হবে৷ এ জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে৷
০১. দেয়া সংখ্যা ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪ ও ৫৫-এর ঠিক মাঝখানের সংখ্যাটি বেছে নিন৷ এখানে সে সংখ্যাটি ৫৩৷
০২. এই ৫৩-এর ডানে একটি শূন্য বসিয়ে দিন৷ সংখ্যাটি দাঁড়াবে ৫৩০৷
০৩. এবার পাওয়া সংখ্যা ৫৩০-কে ২ দিয়ে ভাগ করুন : ৫৩০ ণ্ড ২ = ২৬৫৷
০৪. সর্বশেষ পাওয়া ২৫৬ সংখ্যাটিই নির্ণেয় যোগফল৷ আলাদা আলাদাভাবে ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪ ও ৫৫ লিখে যোগ করেই দেখুন না ঠিক হলো কি না?
লক্ষণীয়, এ যোগফলটি বের করার আরেকটি সহজ নিয়ম বলে দিই৷ এই পাঁচটি ক্রমিক সংখ্যার প্রথমটি অর্থাত্ ৫১-কে ৫ দিয়ে গুণ করে, গুণফলের ১০ যোগ করে দিন, যোগফল দ্রুত ও সহজে পেয়ে যাবেন৷ আর হঁ্যা, যখন পাঁচটি ক্রমিক সংখ্যার প্রথম সংখ্যাটি জোড় সংখ্যা হয়, তখন অঙ্কটা করা আরো সহজ হয়৷ আরেকটি নিয়ম হলো, মাঝখানের সংখ্যাটির ৫গুনই হচ্ছে সংখ্যাগুলো যোগফল৷
কেন এমন হয়?
ধরা যাক, সবচেয়ে ছোট সংখ্যা (ক - ২)৷ অতএব বাকি চারটি সংখ্যা যথাক্রমে হবে (ক - ১), ক, (ক + ১) এবং (ক +
২)৷ তাহলে সবগুলোর যোগফল = (ক - ২) + (ক-১) + ক + (ক + ১) + (ক + ২) = ৫ক৷ ৫ক = ১০ক ণ্ড ২৷ আসলে প্রায় একইভাবে আপনি ৩, ৫, ৭, ৯, ১১ ইত্যাদিও ধরণের পাঁচটি সংখ্যাও যোগ করতে পারবেন৷ এক্ষেত্রে ক্রমিক বেজোড় সংখ্যাগুলো রয়েছে৷ এক্ষেত্রে মাঝপথে বেজোড় সংখ্যাটিকে মোট সংখ্যার দ্বিগুণ দিয়ে গুণ করে অর্ধেক করলেই কাঙিক্ষত যোগফল পাওয়া যাবে৷ যেমন এক্ষেত্রে যোগফল =৭ * ৫ * ২ ণ্ড ২ = ৩৫৷
.................................................................................
গণিতদাদু বলুন তো কার ছবি : ২৩
এ গণিতবিদের জন্ম ১৭০৪ সালে৷ মৃত্যু ১৭৫২ সাল৷ জন্ম ও শিক্ষা লাভ করেন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়৷ মাত্র ১৮ বছর বয়সে শব্দ সম্পর্কিত থিসিস উপস্থাপন করেন৷ মাত্র ২০ বছর বয়সে প্রার্থী হন জেনেভার একাডেমিডি ক্যালিভিন-এর ফিলোসপিচেয়ার পরে জন্য৷ বয়স কম থাকায় তাকে গণিতের কো-চেয়ার নিয়োগ দেয়া হয়৷ গণিতে চেয়ার পদে উন্নীত হন ১৭৩৪ সালে৷ ১৭৫০ সালে প্রকাশ করেন তার প্রধান গবেষণাপত্র৷ তিনি অনেক সম্মাননা পান৷ সদস্য ছিলেন লন্ডনের রয়েল সোসাইটির৷ বিশ্বের নানা দেশের আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের৷ তিনি সুপরিচিত ক্রেমার্স রুল ও ক্রেমার্স প্যাবডক্সের জন্য৷ তিনি এর কোনটারই মূল অবদায়ক ছিলেন না৷ তবে গণিতের অন্যান্য শাখায় তার অবদান ছিল৷ বলুন তো কে এই গণিত বিদ?