• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > মিশন ২০১১ যাত্রা হলো শুরু
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
টেলিসেন্টার
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
মিশন ২০১১ যাত্রা হলো শুরু



২০১১ সালের মধ্যে সারাদেশে ৪০ হাজার টেলিসেন্টার স্থাপনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্ক৷ এ বিষয়টিরই আদ্যোপান্ত নিয়ে আমাদের এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ৷



২০১১ সালের মধ্যে সারাদেশে ৪০ হাজার টেলিসেন্টার স্থাপনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে গত ৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের মিশন ২০১১৷ মূল উদ্দেশ্য গরিব ও প্রান্তিক মানুষের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক টেকসই তথ্য ও জ্ঞান ব্যবস্থা বিনির্মাণ৷ তবে বিরাজমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র ৪ বছরে সারাদেশে ৪০ হাজার টেলিসেন্টার স্থাপনের বিষয়টিকে বাস্তবভিত্তিক মনে করছেন না অনেকেই৷ প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ একে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ তার পরেও তিনি মনে করেন, এটা অর্জন অসম্ভব নয়৷ বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্ক তথা বিটিএন কর্মকর্তারাও মনে করেন, পরিকল্পনাটি উচ্চাভিলাষী মনে হলেও কাজটি যে শুরু করা গেছে এটাও বড় একটি বিষয়৷



বাংলাদেশে টেলিসেন্টার আন্দোলনকে জোরদার করতেই গঠন করা হয়েছে বিটিএন৷ এটি সমমনা সংগঠনসমূহের একটি জোট বা কোয়ালিশন৷ এর মূল দর্শন একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, যেখানে গরিব ও প্রান্তিক মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে তাদের জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়ন করতে পারে৷ ২০১১ সালে স্বাধীনতার ৪০তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশের গরিব ও প্রান্তিক মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক একটি টেকসই তথ্যজ্ঞান ব্যবস্থা উপহার দিতে চায় এই বিটিএন৷ এজন্য স্থানীয় উদ্যোগকেই এরা প্রধান চালিকাশক্তি মনে করছে৷ মাঠপর্যায়ের সংগঠনসমূহকে বিভিন্ন ধরনের কার্যকর সহায়তা দেবে এরা৷

টেলিসেন্টার হচ্ছে এমন স্থান যেখানে মানুষ ব্যবহার করতে পারবে কমপিউটার, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য প্রযুক্তি৷ এসবের মাধ্যমে এরা তথ্য সংগ্রহ এবং অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হবে ও নিজেদের ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াবে৷ বিশ্বব্যাপী টেলিসেন্টার উদ্যোগকে সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান টেলিসেন্টার ডট অর্গ-এর মতে, টেলিসেন্টার হলো কমিউনিটি গ্যাদারিং প্লেস, যেখানে মানুষ জানবে কিভাবে কমপিউটার, ইন্টারনেট এবং রেডিওর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়৷

প্রায় প্রতিটি দেশেই টেলিসেন্টার রয়েছে৷ নামের ক্ষেত্রে অবশ্য ভিন্নতা দেখা যায়৷ যেমন- টেলিসেন্টার ভিলেজ নলেজ সেন্টার, ইনফোসেন্টার, কমিউনিটি টেকনোলজি সেন্টার, কমিউনিটি মাল্টিমিডিয়া সেন্টার, ইনফরমেশন কিয়স্ক বা স্কুল বেজড টেলিসেন্টার ইত্যাদি নামে পরিচিত৷ বাংলাদেশে টেলিসেন্টারকে কমিউনিটি মাল্টিমিডিয়া সেন্টার, কমিউনিটি ইনফরমেশন সেন্টার, রুরাল নলেজ সেন্টার, পল্লী তথ্যকেন্দ্র ইত্যাদি নামে ডাকা হয়৷

একটি টেলিসেন্টারে ঠিক কী কী থাকতে হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷ স্থানীয় মানুষেরা যে ধরনের সেবা চায় তার ওপরই বিষয়টি নির্ভরশীল৷ এই টেলিসেন্টারগুলো মানুষের জ্ঞান উন্নয়ন দক্ষতা বাড়ানো, স্থানীয় জ্ঞানার্জন ও স্থানীয় কনটেন্ট তৈরি, অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি, চিকিৎসক ও অন্যান্য পেশাজীবীর সাথে সংযোগ স্থাপন, বিচ্ছিন্নতা দূর করা, ডিজিটাল ডিভাইডের ক্ষেত্রে সেতুবন্ধন তৈরি এবং তরুণদের কাছে সহজে পৌঁছতে সক্ষম হবে৷ তবে টেলিসেন্টারের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা৷

টেলিসেন্টার মানুষকে যে ধরনের সেবা দিতে পারে তার মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের তথ্য সরবরাহ, ভিডিও ডকুমেন্টারি, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ইস্যুভিত্তিক প্রচারণা, পানি ও মাটি পরীক্ষা, উচ্চতা ও ওজন পরিমাপ, আলোকচিত্র, কম্পোজ, স্ক্যানিং, ফটো স্ক্যানিং, যন্ত্রপাতি ধার দেয়া, রক্তচাপ পরিমাপ, চাপ পরিমাপ, সরকারি ফরম সরবরাহ, ই-মেইল সেবা, ফোন সেবা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম যোগান দেয়া, ডিভি ফরম পূরণ করে দেয়া ইত্যাদি৷ মিশন ২০১১-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বিটিএনের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছেন, উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের বিভিন্ন বিকল্প অনুসন্ধান করে চলেছে৷ গত ৫ বছরে বাংলাদেশে দ্রুতগতিতে বেড়েছে মোবাইল সেলুলার টেলিফোনের প্রবৃদ্ধির হার৷ উন্নয়নের গতি জোরদার করতে সারাবিশ্বে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখন টেলিসেন্টার ব্যবহারের আগ্রহ বাড়ছে৷ এটি মূলত বহুমুখী তথ্য সেবাদানকারী কেন্দ্র, যেখানে ব্যবহার হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি পণ্য৷ গত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়ে উঠেছে এ ধরনের হাজার হাজার টেলিসেন্টার, যেখানে ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি এবং ব্যবহারকারীরা পাচ্ছে নানা ধরনের সেবা৷ যদিও এসব টেলিসেন্টারের বেশিরভাগই লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়নি৷



তহবিল, ব্যবস্থাপনা এবং টেলিসেন্টার ব্যবহার : সারাবিশ্বে টেলিসেন্টারগুলোর বেশিরভাগই স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা করছে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো৷ সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের ডিজিটাল ডিভিডেন্ডস প্রোজেক্ট দুই শতাধিক টেলিসেন্টারের ওপর জরিপ চালিয়েছে৷ এতে দেখা যায় ৬২ শতাংশ টেলিসেন্টারে তহবিল যোগান এবং ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো৷ এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ফাউন্ডেশন, আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও এবং সুশীল সমাজের সংগঠনসমূহ৷ ২৪ শতাংশ টেলিসেন্টার করা হয়েছে লাভের উদ্দেশ্যে এবং ১৪ শতাংশ সরকারের প্রকল্প৷

এই টেলিসেন্টারগুলোর ৩৭ শতাংশ এশিয়া এবং ৩৩ শতাংশ আফ্রিকায়৷ এসব টেলিসেন্টারের কার্যক্রমের মধ্যে কমপিউটার প্রশিক্ষণটা খুবই জনপ্রিয়৷ ৫৩ শতাংশ টেলিসেন্টার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷ শিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে ১৯ শতাংশ, ই-গভর্নেন্স ১২ শতাংশ এবং তরুণদের জন্য কার্যক্রম রয়েছে ১২ শতাংশ টেলিসেন্টারের৷ এছাড়াও রয়েছে সাধারণ কিছু কর্মসূচি৷

বাংলাদেশে টেলিসেন্টার : টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরে ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে প্রথম টেলিসেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেয় গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স৷ বাংলাদেশে এটা ছিল টেলিসেন্টার স্থাপনের একটি প্রাথমিক উদ্যোগ৷ গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স সেখানে স্থাপন করে ভিলেজ কমপিউটার অ্যান্ড ইন্টারনেট প্রোগ্রাম৷ ডায়ালআপ সংযোগের মাধ্যমে সেই কেন্দ্র থেকে দেয়া হয় ইন্টারনেট এবং ই-মেইল সেবা৷ কিন্তু ব্যয়বহুল হওয়ায় এসব ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল খুবই কম৷ কমপিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স অবশ্য জনপ্রিয়তা অর্জন করে৷ গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স থেকে যন্ত্রপাতি লিজ নিয়ে দুইজন প্রশিক্ষণার্থী পাশের গ্রামে একটি সেন্টারও স্থাপন করে৷ টেলিসেন্টার থেকে ওয়ার্ড প্রসেসিং, ডকুমেন্ট স্ক্যানিং এবং ঢাকার বাজারদর সম্পর্কেও তথ্য জানা সম্ভব হয়৷

বাংলাদেশে অনেক টেলিসেন্টারে নতুন প্রযুক্তির সংযোজন ঘটেছে৷ তারপরও বেশ কিছু বিষয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রসারে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে৷ এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি৷ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে গড়ে ১ হাজার জনের বাস৷ পল্লী অঞ্চলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে গড়ে ৩ হাজার লোক বাস করে৷ দেশের বেশিরভাগ এলাকা সমতল ভূমি হওয়াও একটি বড় সুবিধা৷ এর ফলে সারাদেশে অপেক্ষাকৃত কম বিনিয়োগে ওয়্যারলেস যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে৷

বাংলাদেশে আইসিটি ব্যবহারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে৷ এর মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষার নিম্ন হার৷ এর অভাবে কমপিউটার শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা ঠিকমতো বুঝতে না পারাও সমস্যা তৈরি করছে৷ কেননা, কমপিউটারে বেশিরভাগ তথ্যই পাওয়া যায় ইংরেজিতে৷ কমপিউটারের উচ্চমূল্যও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে৷ তাই শেয়ার করে কমপিউটার ব্যবহারের উদ্যোগ বেশিরভাগ মানুষের জন্য কাজে আসবে৷

উপরের বিষয়গুলো থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যেকোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা পাবলিক অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটকে সফল করতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চাহিদা পূরণ করা প্রয়োজন৷ এই কাজটি করবে একজন ব্যক্তি, যাকে বলা হবে ইনফরমিডিয়ারি বা ইনফরমেশন ওয়ার্কার অর্থাত্ তথ্যকর্মী৷ প্রান্তিক ব্যবহারকারী ও কমপিউটারের মধ্যে অবস্থান করবে সে৷ এই তথ্যকর্মীর ভূমিকা হবে প্রান্তিক ব্যবহারকারীকে তথ্য অনুবাদ এবং বুঝিয়ে দেয়া৷ এই তথ্যকর্মীর অবশ্যই তথ্যের উৎস সম্পর্কে জানতে হবে এবং ভালো যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হবে৷ এই তথ্যকর্মী যদি যথাযথভাবে নির্বাচন করা না যায়, তাহলে টেলিসেন্টার প্রকল্প ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে৷ বাংলাদেশে পল্লী তথ্যের সাফল্যের তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই ইনফরমিডিয়ারি বা তথ্যকর্মী৷ বিশেষ করে যেসব টেলিসেন্টার টেলিমেডিসিন সেবা দেবে তাদের ক্ষেত্রে তথ্যকর্মী মহিলা নাকি পুরুষ হবে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ মহিলা ব্যবহারকারীরা একজন পুরুষ তথ্যকর্মীর সাথে নিজের স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কথা বলতে নিশ্চয়ই উত্সাহী হবে না৷ মোবাইল টেলিসেন্টার : বাংলাদেশে মোবাইল সেলুলার ফোনভিত্তিক তথ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে গ্রামীণ টেলিকমের মোবাইলফোনলেডিজ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে৷ এই একই ধররে ধারণার ওপর ভিত্তি করে দেশের কিছু কিছু এলাকায় মোবাইল টেলিসেন্টার কার্যক্রম চলছে৷ এসব টেলিসেন্টার বাড়ি বাড়ি গিয়ে আইসিটি সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে৷ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে তথ্যকর্মীরা মোটরসাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে ল্যাপটপ নিয়ে এবং স্থায়ী টেলিসেন্টারের মতোই সেবা দিচ্ছে৷ মালয়েশিয়ায় মোবাইল ইন্টারনেট ইউনিট একটি বাসে ২০টি নেটওয়ার্ক কমপিউটার নিয়ে পল্লী ও নগরাঞ্চলের স্কুলগুলোতে গিয়ে আইসিটি শিক্ষা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে৷

সফটওয়্যার :

কপিরাইট রয়েছে এমন সফটওয়্যার ব্যবহার টেলিসেন্টারগুলোর জন্য অতিরিক্ত অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে৷ তাই উন্নয়নশীল দেশগুলোর টেলিসেন্টারগুলোতে ফ্রি অ্যান্ড ওপেন সোর্স সফটওয়্যার (এফওএসএস) ব্যবহার ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ এফওএসএস ব্যবহার মিশন ২০১১ বাস্তবায়নকে অপেক্ষাকৃত সহজ করে তুলবে৷ এই ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহারে অপারেটর এবং ব্যবহারকারীরা অভ্যস্ত হয়ে উঠলে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের অফিস-আদালতেও এফওএসএস ক্রমাগত জনপ্রিয় হতে থাকবে৷

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় টেলিসেন্টারের ব্যবহার : দুর্যোগপূর্ব প্রস্তুতিকালে এবং দুর্যোগোত্তর ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে টেলিসেন্টার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছরের ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে যে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর বয়ে গেছে, তার আগেই মংলায় ডি ডট নেটের পল্লী তথ্যকেন্দ্র ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে৷ তথ্যকেন্দ্রের তথ্যকর্মীরা স্থানীয়দের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতেও সহায়তা করে৷

বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণের ক্ষেত্রে চমত্কার ব্যবস্থা রয়েছে৷ সরকার এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথভাবে পরিচালিত সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রামের আওতায় ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে৷ এরা সাধারণত ওয়্যারলেস বা রেডিওর মাধ্যমে বার্তা পেয়ে থাকে৷ সারাদেশে ক্রমবর্ধমান মোবাইল টেলিফোনের কারণে এসএমএস এবং কমিউনিটি রেডিওসহ অন্যান্য মাধ্যমে সতর্কবার্তা পৌঁ ছে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যায়৷ বার্তা দিতে হবে স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষায়, প্রমিত বাংলায় নয়৷ কারণ প্রমিত বাংলা বহু পল্লী অঞ্চলের মানুষের কাছে সহজ বোধগম্য নয়৷

বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রেও দুর্যোগ মোকাবেলা কার্যক্রমে জনসচেতনতা বাড়াতে টেলিসেন্টার তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷

বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্ক :

গত ১০ বছর ধরে পল্লী অঞ্চলে আইসিটি সুবিধা পৌঁছে দিতে বহু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ যদিও আজ পর্যন্ত এর কোনো তাত্পর্যপূর্ণ প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে না৷ এই সব উদ্যোগে সফল হতে হলে স্থানীয় মানুষের চাহিদা অনুধাবন করতে হবে৷ কোনো ধরনের প্রযুক্তি চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা সুফল বয়ে আনবে না৷ বরং স্থানীয় মানুষের চাওয়া-পাওয়ার ভিত্তিতে তাদেরকে যথোপযুক্ত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সুবিধা দিতে পারলে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়বে৷ এমন বহু অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, যা পেতে অনলাইন ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না৷ সিডিসহ অন্যান্য সূত্র থেকেই ব্যবহারকারী সব তথ্য পেতে পারে৷ ডি ডট নেট তার পল্লী তথ্য প্রকল্পের আওতায় বহু গ্রামে গবেষণা চালিয়েছে৷ একই সাথে বাগেরহাটের রামপালে আমাদের গ্রাম প্রকল্পও চালিয়েছে অনেক গবেষণা৷ দেশে নতুন টেলিসেন্টার স্থাপনের ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে৷

নীতিমালা সংস্কার :

টেলিসেন্টারের সংখ্যা দ্রুত বাড়াতে এবং কোনোরকম ঝুটঝামেলা ছাড়াই তাদেরকে যথাযথ কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিতে আইসিটিসংশ্লিষ্ট নীতিমালায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হবে৷ বিরাজমান আইনী পরিবেশ পুনর্মূল্যায়ন করার উদ্যোগ নিতে হবে৷ আর এটি করা গেলে টেলিসেন্টার স্থাপন ও ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হবে না৷

২০১১ সাল নাগাদ সারাদেশের মানুষের তথ্যের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে মিশন ২০১১-এর যাত্রা শুরু হয়েছে তার আওতায় সারাদেশে গড়ে তোলা হবে টেলিসেন্টার৷ এই টেলিসেন্টার আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং আমাদের সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে৷ এই কাজটি অবশ্যই করতে হবে সরকার, বেসরকারি খাত, এনজিও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজের সংগঠনসমূহের সাথে মিলেমিশে৷ এই কাজে সবচেয়ে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হবে ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয় তথ্য যথাযথভাবে সংগ্রহ করে দেয়া৷ সহজ বোধগম্য করার এই তথ্য হতে হবে বাংলায়৷ টেলিসেন্টারের তথ্যকর্মী বা অপারেটরকে প্রশিক্ষণ দেয়াও হবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রশিক্ষণদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এসব তথ্যকর্মীর প্রশিক্ষণ নেয়া প্রয়োজন৷ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ডি ডট নেটের সাথে যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা করছে৷ এই প্রশিক্ষকরাই তথ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে৷

বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, এই ধরনের টেলিসেন্টারকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা কঠিন৷ তবে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে৷ এসব তরুণকে সামাজিক উদ্যোগে জড়িত হওয়ার জন্য প্রণোদনাও দেয়া যাবে৷

মূল প্রবন্ধ পাঠ ও মিশন ২০১১ উদ্বোধনের পর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের প্লেনারি প্লাজায় বাংলাদেশে টেলিসেন্টার চর্চার ওপর প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়৷ উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তপন চৌধুরী৷ প্রদর্শনীতে বিভিন্ন সংগঠন অংশগ্রহণ করে৷ এদের মধ্যে রয়েছে-

গ্রামীণফোন কমিউনিটি ইনফরমেশন সেন্টার : ওয়েবসাইট : www.seba-bd.org/cic এবং www.gpcic.org ৷
আলোকিত গ্রাম : ওয়েবসাইট : www.alokitogram.com ৷
ঘাট : ঘাট সব ধরনের তথ্যসেবা এবং পরামর্শ দানকারী একটি তথ্যকেন্দ্র৷ ওয়েবসাইট : www.ghatbd.com ৷

ডিজিটাল নলেজ ফাউন্ডেশন : ডিজিটাল নলেজ ফাউন্ডেশন তথা ডিকেএফ অলাভজনক, অরাজনৈতিক, বেসরকারি এবং চ্যারিটেবল সোসাইটি৷ ওয়েবসাইট : www.digital knolwdge.org ৷

ওয়াইপিএসএ : ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন তথা ওয়াইপিএসএ চট্টগ্রামভিত্তিক একটি এনজিও৷ ওয়েবসাইট : www. shipbreakingbd.info ৷
ই-হাট : ওয়েবসাইট www.bracnet.net ৷
বিএনএনআরসি : বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন৷ ওয়েবসাইট : www.bnnrc.net ৷
গ্রামীণ টেলিকম : ওয়েবসাইট : www.grameentelecom.net.bd ৷
আমাদের গ্রাম : ওয়েবসাইট : www.amadergram.org
বিডিজবস ডট কম : ওয়েবসাইট : www. bdjobs.com ৷
ব্র্যাক নেট : ওয়েবসাইট : www.wimaxforum.org
উইন ইনকর্পোরেট : ওয়েবসাইট : www.winbd.net
ডি.নেট : ডেভেলপমেনট রিসার্চ নেটওয়ার্ক-এর ওয়েবসাইট : www.dnet-bangladesh.org ৷
এছাড়া রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল, ইক্যুইটি বিডি ডট অর্গ, রাইট টু ইনফরমেশনসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান প্রদর্শনীতে অংশ নেয়৷

মিশন ২০১১ কারা বাস্তবায়ন করবে?

বিভিন্ন মডেলের তথ্য ও জ্ঞানকেন্দ্র স্থাপনে যেকোনো ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসতে পারে৷ সরকারি, বেসরকারি খাত, এনজিও, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেকে ইতোমধ্যে নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও সম্পদের মাধ্যমে তথ্য ও জ্ঞানকেন্দ্র স্থাপন করেছে৷ অনেক প্রতিষ্ঠান সরাসরি আবার অনেকে স্থানীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ উদ্যোগে তথ্য ও জ্ঞানকেন্দ্র স্থাপন করেছে৷ সুতরাং মিশন ২০১১ বাস্তবায়নে স্থানীয় উদ্যোগই প্রধান চালিকাশক্তি৷ মিশন ২০১১ সফল করতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্ক (বিটিএন) নামে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক তথ্য ও জ্ঞানব্যবস্থা বিনির্মাণ আন্দোলনে নিয়োজিত সমমনা সংগঠনগুলোর একটি কোয়ালিশন গঠন করা হয়েছে৷ এই নেটওয়ার্ক মিশন ২০১১ বাস্তবায়নে নিয়োজিত মাঠপর্যায়ের সংগঠনগুলোকে নানারকম কার্যকর সহায়তা প্রদান করবে৷ এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিনিময়ের একটি সুযোগ তৈরি করা, যাতে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধাগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়৷

২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে সমমনা ৭টি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিটিএন প্রতিষ্ঠা লাভ করে৷ বর্তমানে বিটিএনের সহযোগী সংগঠন রয়েছে : টেলিসেন্টার ডট অর্গ, ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ইরি)৷

বিটিএনের সদস্য কারা?

বিটিএন একটি বহুমুখী অংশীদারিত্বমূলক প্লাটফরম, যেখানে এনজিও, বেসরকারি খাত, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উন্নয়ন সহযোগী, সরকার এবং ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোক্তা একসাথে মিলে তথ্যপ্রযুক্তির সাথে অন্যান্য সম্পদের সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে দরিদ্র-বঞ্চিত মানুষের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে৷ এ নেটওয়ার্কে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, যারা তথ্যপ্রযুক্তিকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর কাজে ব্রতী তারা যোগ দিতে পারবেন৷

বিটিএনের কার্যক্রম

মিশন ২০১১-কে সাফল্যমণ্ডিত করতে যা যা করণীয় বিটিএন তা করবে৷ টেলিসেন্টার আন্দোলনকে শক্তিশালী, টেকসই এবং অংশীদারিত্বমূলক করতে বিদ্যমান ও নতুন টেলিসেন্টার উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হবে৷ এ লক্ষ্যে বিটিএন দুই ধরনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে-তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক তথ্য ও জ্ঞানব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম ও তৃণমূল পর্যায়ের টেলিসেন্টারের নানা রকম সেবা প্রদান করা যেন টেলিসেন্টারগুলো টিকে থাকতে পারে এবং কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে পারে৷

এই দ্বিমুখী কার্যক্রমকে সফল করতে ৬টি বিষয়ভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে৷ টাস্কফোর্স, টাস্কফোর্সের নেতৃত্বদানকারী সংস্থাগুলো হলো টেলিসেন্টার সংক্রান্ত নীতি : সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন (এসডিএনএফ), মানবসম্পদ উন্নয়ন : ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা),টেলিসেন্টারভিত্তিকবিষয়বস্তু ও সেবাসমূহ : ক্যাটালিস্ট, কারিগরি ও রেফারেন্স সহায়তা : ডি. নেট, প্রচার ও কর্মসূচি আয়োজন : ডিজিটাল নলেজ ফাউন্ডেশন (ডিকেএফ) ও সম্পদ সংগ্রহ : ডি. নেট৷

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতও আইসিটিকে উন্নয়নের হাতিয়ার করতে শুরু করে ৫ বছর মেয়াদী মিশন ২০০৭ কার্যক্রম৷ ২০০২ সালে শুরু হওয়া এই মিশন শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি সফল হয়নি৷ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপকহারে এই খাতে কাজ করতে এগিয়ে না আসাতেই এমনটি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷ ২০০৭ মিশনের লক্ষ্য ছিল প্রতিটি গ্রামে ১টি জ্ঞানকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা৷ দেশটির গ্রাম রয়েছে ৬ লাখ ৩৭ হাজার বা পঞ্চায়েত রয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার৷ মিশন ২০০৭ সফল না হলেও কাজ এগিয়েছে বহুদূর৷ এটাই বা কম কি! কোনো লক্ষ্যমাত্রা না থাকলে এটুকুও অর্জন সম্ভব হতো না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷
.................................................................................

টেলি-পেশাজীবীদের হাত হবে পরিবর্তনের বাহক



ড. ফখরুদ্দীন আহমদ,
সাবেক প্রধান উপদেষ্টা,
তত্ত্বাবধায়ক সরকার

প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ মিশন-২০১১ সফল করতে টেলিযোগাযোগ খাতে সব পেশাজীবী এবং অংশীদারদের পরিবর্তনের বাহক হিসেবে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, এটা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির নতুন যুগে নিয়ে যেতে পারে৷ মিশন ২০১১ সফল করতে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য তিনি বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্ককে (বিটিএন) ধন্যবাদ জানান৷ তিনি বলেন, ২০১১ সালের মধ্যে ৪০ হাজার টেলিসেন্টার স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী হলেও যদি কর্মশক্তি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায় তাহলে নিশ্চিতভাবে এটা অর্জন সম্ভব৷

ড. ফখরুদ্দীন আহমদ ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দরিদ্র এবং প্রান্তিকদের জন্য টেকসই তথ্য এবং জ্ঞানপদ্ধতি বিনির্মাণে মিশন ২০১১-এর উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন৷

বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা তপন চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন৷ স্বাগত বক্তব্য দেন বিটিএন চেয়ারপার্সন আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী৷ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন৷ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে টেলিসেন্টার চর্চার ওপর নির্মিত একটি মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদন প্রদর্শিত হয়৷ ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি রেনেটা লক ডেসালিয়েন, বিটিআরসির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মঞ্জুরুল আলম, গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপের সদস্য প্রফেসর সুব্বিয়া অরুণাচালাম এবং আইডিআরসির সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ড. বশিরহামাদ সাদরাচ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন৷

ড. ফখরুদ্দীন আহমদ মিশন ২০১১-এর উদ্যোগকে একদিকে উন্নয়নের অগ্রাধিকারের বিষয়ে অন্যদিকে শহরে বস্তিবাসী ও গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী দরিদ্র্য ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য তথ্য ও জ্ঞানপদ্ধতি নির্মাণে যুক্ত হওয়াকে সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেন৷

তিনি আশা করেন, দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নের জন্য আইসিটির অফুরন্ত শক্তির স্ফুরণে মিশন ২০১১ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে৷ তিনি বলেন, এই মিশন সফলের চাবিকাঠি হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণ৷ ড. ফখরুদ্দীন বলেন, দেশব্যাপী সুপরিকল্পিত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নেটওয়ার্ক উন্নয়নে আইসিটি প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে এবং এর ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন কার্যক্রমও গতিশীল হবে৷ মধ্যমমেয়াদে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং দীর্ঘমেয়াদে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে এটি সাহায্য করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন৷

তিনি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের জাতীয় কৌশলের অন্যতম দিকনির্দেশনা হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিবছর কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষকে কর্মবাজারে প্রবেশ করানো৷ দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, বহুমুখী বিকল্প জীবিকার মাধ্যমে দরিদ্রের ক্ষমতায়ন৷ প্রথমত : আইসিটি হচ্ছে নিয়োগ লাভের নতুন ক্ষেত্র, দ্বিতীয়ত : আইসিটি হচ্ছে বাজারে দরিদ্রের ভূমিকা জোরদারে সহায়ক এবং শেষ পর্যন্ত আইসিটি হচ্ছে দরিদ্রদের নিয়ে বৃহত্তর নাগরিকবৃন্দের সাথে রাষ্ট্রের দূরত্ব হ্রাসের সেতুবন্ধ৷

.................................................................................।

টেলিসেন্টার কর্মসংস্থান বাড়াবে ও দারিদ্র্য কমাবে



অনন্য রায়হান
মহাসচিব, বিটিএন ও সিইও, ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ নেটওয়ার্ক

টেলিসেন্টারের সাফল্যের মূল চালিকাটি স্থানীয় প্রাণবন্ত কনটেন্ট৷ যাদের জন্য টেলিসেন্টার করা, তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় যে সমস্যাগুলোতে পরে সে সমস্যাগুলোর সমাধান টেলিসেন্টারে যাতে পায় তা নিশ্চিত করা৷ যারা সমস্যাগুলো নিয়ে আসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা নিরক্ষর৷ সে কারণে টেলিসেন্টার সেবাগুলোর ডিজাইন এমনভাবে করার কথা আমরা বলছি যাতে এমন একজন কর্মী টেলিসেন্টারে থাকেন যিনি বিভিন্ন উৎস থেকে কনটেন্ট সংগ্রহ করতে পারেন এবং এ কনটেন্টগুলো পরামর্শ দেয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে কনটেন্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর টেলিসেন্টারের জন্য৷ বিটিএন যেটা খেয়াল করছে- বাংলাদেশে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান এখন কনটেন্ট তৈরি করছে এবং যথেষ্ট ভালো কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে৷ প্রথম দিকে শুধু টেক্সট এবং ফটোগ্রাফি দিয়ে কনটেন্ট তৈরি হতো৷ এখন অনেকে মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট তৈরি করছে৷ কারণ, অনেক ক্ষেত্রে টেক্সট পড়ে শুনানো হয় সমস্যা নিয়ে আসা একজন ব্যক্তিকে৷ তখন সে শুনে অনেক কিছু, কিন্তু পরক্ষণে ভুলে যায়৷ যদি সে ভিডিওতে দেখে অর্থাত্ ভিজ্যুয়ালি দেখে, তখন সে মনে রাখতে পারে এবং বুঝতে পারে সহজে৷ বিটিএনের উদ্দেশ্য হলো কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে কী ধরনের কনটেন্ট আছে, এগুলো প্রথমত খুঁ জে বের করা৷ সেটা দেশী প্রতিষ্ঠানের কাছে হোক কিংবা বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছেই হোক৷ আর সেক্ষেত্রে যেসব কনটেন্ট ফ্রি আছে সেগুলো তাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে পারে বিটিএন, তা সিডির মাধ্যমেও হতে পারে আবার অনলাইন এক্সেসের মাধ্যমেও হতে পারে৷ কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান আবার কনটেন্ট বিক্রি করে৷ সেক্ষেত্রে বিটিএনের কাজ হবে সে কনটেন্টগুলো সরাসরি কিনে বিটিএন সদস্যদের মধ্যে শেয়ার করা৷ অথবা বিটিএন সদস্যরা যাতে বিশেষ ছাড়ে কনটেন্টগুলো কিনতে পারে সে ব্যবস্থা করা৷ তবে একটা আশার কথা, অনেক প্রতিষ্ঠানই ওপেন কনটেন্ট প্রয়োজনীয়তার কথা উপলব্ধি করছে৷ সেক্ষেত্রে তাদের বিজনেস মডেলটাকে এমনভাবে তৈরি করছে, যাতে এন্ড ইউজারকে বিনামূল্যে কনটেন্টটা দেয়া যায়৷ আর কনটেন্ট তৈরির জন্য যে অর্থ প্রয়োজন, সেটা অন্য কোনো উৎস থেকে যোগাড় করা৷ তাই বিটিএনের কাজ হবে মূলত কনটেন্টের উৎস সম্পর্কে টেলিসেন্টার নিয়ে যারা কাজ করবে তাদের জানানো এবং কম মূল্যে কিংবা বিনামূল্যে যাতে সরবরাহ করা যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে উত্সাহিত করা৷ বিটিএন নিজে কখনোই কনটেন্ট তৈরি করবে না৷

যেহেতু কনটেন্টের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সমস্যা সমাধান করা মূল উদ্দেশ্য, সেহেতু বিটিএন অবশ্যই চায় বাংলা কনটেন্টকে প্রমোট করতে৷ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ইংরেজিতে অনেক ভালো ভালো কনটেন্ট রয়েছে৷ কিন্তু সেগুলো বাংলা ভাষায় সহজলভ্য নয়৷ সেক্ষেত্রে দুভাবে কাজ করা যেতে পারে৷ একটি হলো তাড়াতাড়ি ইংরেজি ভাষায় কনটেন্টটাকে সহজলভ্য করা এবং পাশাপাশি কনটেন্ট প্রস্তুতকারক সংস্থাকে আহ্বান জানানো ইংরেজিটাকে বাংলা ভার্সনে রূপান্তর করার জন্য৷

বিদ্যুতের ব্যবহার কতটুকু কমিয়ে আনা যায় সেটিও কিন্তু টেলিসেন্টার টিকে থাকার অন্যতম ফ্যাক্টর৷ অর্থাত্ বিদ্যুত্ খরচ কতটা কমিয়ে আনা যায় তা ভাবতে হবে৷ একটি কমপিউটার চালাতে ২০০ ওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়৷ যেহেতু আগামী ৫ বছরে বিদ্যুত্ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না তাই বিদ্যুতের ব্যাপারে বিটিএনকে আরো নিবিড়ভাবে মনোযোগ দিতে হবে৷ কাঠামো এবং প্রযুক্তির যে বিবর্তন ঘটছে তা মনে রাখতে হবে৷ যেমন একটি কমপিউটার যে বিদ্যুত্ খরচ করে তারচেয়ে কম বিদ্যুত্ খরচ করে এমন ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে৷ যেমন আসুসের ছোট পিসি, ইন্টেলের ক্লাসমেইট পিসি, কিংবা নেগ্রোপন্টের ওয়েল পিসি৷ প্রত্যেকটি পিসির মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিদ্যুত্ সাশ্রয় এবং বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার৷ যেমন ওয়েল পিসির সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এটি ব্যবহারের জন্য মেইন লাইন বিদ্যুতের পরিবর্তে ব্যাটারির মাধ্যমে চার্জ করা যায় এবং ক্র্যাঙ্ক ঘুরিয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদন করে সেখান থেকে পিসি চালানো সম্ভব৷ আসুসেরটি ব্যাটারিচালিত৷ এটি আট ঘণ্টা পর্যন্ত সাপোর্ট দিতে পারে এবং এ ধরনের পিসিতে যে ধরনের জ্বালানি লাগে, সেটি মূলত সৌর উৎস থেকে সংগ্রহ সম্ভব৷ সেক্ষেত্রে মাত্র দশ হাজার টাকা খরচ করে বিকল্প সৌর প্যানেল থেকে বিদ্যুত্ উৎস বের করা সম্ভব৷ মূলত সৌর এবং গাড়িচালিত ব্যাটারি থেকে জ্বালানি সরবরাহ সম্ভব৷

বাংলাদেশে যখন আমরা বিটিএনের উদ্বোধন করলাম সেক্ষেত্রে যেটা আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো তাহলো টেলিসেন্টারের ধারণাটিতে সরকারসহ যেসব গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব সেক্টর রয়েছে তাদের কাছে টেলিসেন্টার কনসেপ্টটিকে পরিচিত করে তোলা এবং তাদেরকে কিভাবে বিটিএনের সাথে সম্পৃক্ত করা যায় তা নিশ্চিত করা৷ এই উদ্দেশ্য আমাদের অত্যন্ত সফল হয়েছে৷ ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় উদ্বোধনের পর পরবর্তীতে মালয়েশিয়াতে মিশন ২০১১-এর দ্বিতীয় উদ্বোধন করা হয়, সেখানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার উপস্থিত ছিলেন৷ এর মূল লক্ষ্য ছিল সেখানে বিটিএনকে ভালোভাবে পরিচিত করে তোলা, যাতে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে উত্সাহিত হয়৷ যেমন ইতোমধ্যেই মাইক্রোসফট আনলিমিটেড উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, মাইক্রোসফট আনলিমিটেড প্রটেনশিয়ালের মাধ্যমে বিটিএনের সদস্যদের কিভাবে সহায়তা দেয়া যায় তা তারা ভেবে দেখবে৷ বিটিএনের বেশ কয়েকটি সদস্য জিকেথ্রির সদস্য৷ যেমন : আমাদের গ্রাম, ডি.নেট, বিএনএনআরসি৷ এবারই তারা জিকেথ্রিতে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ ডি.নেট পল্লী তথ্য নামে এটি বই প্রকাশ করে জিকেথ্রিতে৷ বইটির মাধ্যমে দাতারা বুঝতে পারবে কেনো টেলিসেন্টারে বিনিয়োগ করতে হবে৷ ডি. নেট তার গবেষণা থেকে দেখিয়েছে টেলিসেন্টারে ১ টাকা বিনিয়োগ করা হলে সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ৪ টাকা মুনাফা অর্জন সম্ভব৷ জিকেথ্রিতে অংশগ্রহণের ফলে সদস্যদের সাফল্য প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষভাবে হয়েছে\ যার সুফল আগামীতে পাওয়া যাবে৷ সেইসাথে বিটিএনের সদস্যরাও উপকৃত হবে৷ জিকেথ্রির যে মূল উদ্দেশ্য তা হচ্ছে শেয়ারিং নলেজ অ্যান্ড বিল্ডিং এ পার্টনারশিপ৷ খুব কম খরচে টেলিসেন্টার করতে গেলে একজন কর্মী, একটি সাইকেল, একটি মোবাইল ফোন দিয়ে টেলিসেন্টারের কাজ শুরু করা যায়৷ সেই সাথে ডিজিটাল ক্যামেরা ও একটি ফটোপ্রিন্টার থাকলে বাসায় বসেই টেলিসেন্টার পরিচালনা করা যাবে৷ সরকার যদি ভিওআইপি বৈধ করে এবং ইন্টারনেট সার্ভিস যদি সহজলভ্য হয় তাহলে ভিওআইপি সার্ভিস থেকে যে আয় হবে সে আয় গ্রামের একটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পক্ষেও অর্জন সম্ভব নয়৷ সুতরাং এরকম মোবাইল কর্মী যদি প্রতি গ্রামে একজন করে থাকে তাহলে ৮০ হাজার গ্রামে শিক্ষিত মহিলা বা পুরুষের কর্মসংস্থান সম্ভব৷ আর ট্র্যাডিশনাল টেলিসেন্টার যেখানে একটি রুম থাকবে, একটি কমপিউটার থাকবে, সেখানে কমপক্ষে তিনজন কর্মীর কর্মসংস্থান সম্ভব৷ অর্থাত্ ৪০ হাজার টেলিসেন্টারের মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে৷ এছাড়া টেলিসেন্টারের আরেকটি দিক হচ্ছে ট্রেনিং সেন্টার, সেটার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণকে স্বকল্প কর্মসংস্থানের জন্য তথ্য সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাবে৷ এর মাধ্যমে আরো অনেক নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে৷ সুতরাং তথ্যপ্রযুক্তিকে শুধু গ্রামে নিয়ে যাওয়া এটিই কিন্তু উদ্দেশ্য নয়৷ এতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং গ্রাম পর্যায়ে দূর হবে দারিদ্র্য৷ আরেকটি বিষয় হচ্ছে, যদি ৪০ হাজার টেলিসেন্টার হয়, তাহলে গড়ে যদি প্রতিটিতে তিনটি করে কমপিউটার থাকে তাহলে ১ লাখ ২০ হাজার কমপিউটারের নতুন বাজার সৃষ্টি হবে গ্রামে৷ সেই সাথে প্রিন্টারসহ যাবতীয় হার্ডওয়্যারের ব্যবসায় বাড়বে৷ উপজেলাগুলোতে গড়ে উঠবে হার্ডওয়্যার সার্ভিসিং সেন্টার৷ যদি ২০১১ সালের মধ্যে আমরা ৪০ হাজার টেলিসেন্টারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হই তাহলে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান ২ লাখ হবে এবং পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১০ লাখ৷

বিটিএন কিন্তু একটিও টেলিসেন্টার করবে না৷ টেলিসেন্টার স্থাপন করবে বিটিএনের সদস্যরা বা বাইরের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান৷ সম্প্রতি মিশন ২০১১ উদ্বোধন হওয়ার পরে এনজিও ফাউন্ডেশনের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে এবং তারা আগামী দুই বছরের মধ্যে ১৫শ এনজিও সেন্টার স্থাপনের জন্য সাহায্য দেবে বলে জানিয়েছে৷ পিকেএসএফের প্রায় দশ হাজার ক্ষুদ্রঋণ প্রদান সেন্টার রয়েছে৷ পিকেএসএফ চাইছে দশ হাজার সেন্টারে টেলিসেন্টার কনসেপ্ট চালু করতে৷ এতে ঋণ গ্রহীতারা তাদের ব্যবসায়গুলোর জন্য সঠিক তথ্য পাবে, পরবর্তীতে ব্যবসায় ভালো হবে এবং ঋণ পরিশোধও সহজলভ্য হবে৷ ব্র্যাকের যে ১২শ গণন্দ্রে রয়েছে ইতোমধ্যে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলোকে টেলিসেন্টারে রূপান্তর করার৷ ঢাকা আহছানিয়া মিশন উদ্যোগ নিয়েছে তাদের যে আড়াই হাজার জ্ঞানকেন্দ্র রয়েছে সেগুলোকে টেলিসেন্টারে রূপান্তর করার৷ ইতোমধ্যে আমরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেছি যে সরকারের পাঁচ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ এবং পাঁচ হাজার পোস্ট অফিস এগুলোতেও যাতে টেলিসেন্টার হয়৷ আমরা আশা করছি সরকার ০৮-০৯ বাটেই অর্থ বরাদ্দ দেবে টেলিসেন্টার স্থাপনের জন্য৷ ইউএনডিপি কারিগরি সহায়তা দেবে এই সেন্টারগুলোতে৷

এছাড়া গ্রামীণফোনও ৩০ হাজার টেলিসেন্টার স্থাপন করার পরিকল্পনা করছে৷ এমনও ঘটতে পরে বিভিন্ন উদ্যোগে টেলিসেন্টারের সংখ্যা ৪০ হাজারও ছাড়িয়ে যেতে পারে৷ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও টেলিসেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে৷ প্রাথমিকভাবে তারা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার আশপাশের মানুষের জন্য পাঁচটি সেন্টার দিয়ে শুরু করবে৷ বিটিআরসিও আইটিইউর অর্থ সহায়তায় নিজ উদ্যোগে টেলিসেন্টার করবে৷ কারিগরি সহায়তা নেবে বিটিএনের সদস্যদের কাছ থেকে ৷

দুই বছরে ১০০ জ্ঞানকেন্দ্র স্থাপন করবে আমাদের গ্রাম

দেশে ২০১০ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ১০০ জ্ঞানকেন্দ্র স্থাপন করবে আমাদের গ্রাম৷ বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের মিশন ২০১১তে সারাদেশে ৪০ হাজার টেলিসেন্টার স্থাপনের যে পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের গ্রামের ১০০ জ্ঞানকেন্দ্র সেই লক্ষ্যমাত্রারই অংশ৷ ২০০৩ সাল থেকে বাগেরহাটের রামপালে কাজ করছে আমাদের গ্রাম জ্ঞানকেন্দ্র৷ সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি) এতে অর্থায়ন করছে৷ বাগেরহাটের মতো অন্যান্য জেলাতেও জ্ঞানকেন্দ্র প্রসারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ প্রাথমিক পর্যায়ে এই প্রকল্পে পল্লী ডাটাবেজ প্রোগ্রাম এবং গ্রামীণ তরুণদের জন্য বেসিক আইটি শিক্ষা কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে৷ পরে আরো কিছু সেবা জ্ঞানকেন্দ্রের আওতায় পরিচালিত হবে

শেষ কথা

বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক তথ্য ও জ্ঞান ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যার্জনের যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, তা বাস্তবায়ন করতে সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি৷ লক্ষ্যার্জনের পথে একটি অন্যতম বাধা হলো তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক তথ্য ও জ্ঞানকেন্দ্রগুলোতে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগের অভাব৷ এই সমস্যার আশু সমাধান প্রয়োজন৷ অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধ্যমে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হবে৷ জানা যায়, বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের মিশন ২০১১ কর্মসূচির ৪০ হাজার জ্ঞানকেন্দ্র স্থাপনে প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে ৪০০ কোটি টাকা৷ টেলিসেন্টারগুলোতে ১ জন করে জনবল থাকলেও মোট জনবল প্রয়োজন ৪০ হাজার৷ এদেরকে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে৷ আর ৩ জন করে থাকলে কর্মসংস্থান হবে ১ লাখ ২০ হাজার লোকের৷ ৩টি প্রযুক্তিপণ্য থাকলে মোট প্রয়োজন হবে ১ লাখ ২০ হাজার কমপিউটার, একই সংখ্যক প্রিন্টার, স্ক্যানার, ডিজিটাল ক্যামেরা ইত্যাদি৷ এসব কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে গ্রামের লাখ লাখ মানুষ৷ দারিদ্র্য বিমোচনে যারা রাখবে অগ্রণী ভূমিকা৷ মানুষ যাতে টেলিসেন্টারের দেয়া তথ্য সহজে বুঝতে পারে তাই কনটেন্ট হতে হবে স্থানীয় ভাষা, তথা বাংলায়৷ সিডির মাধ্যমেও সেবা দেয়া যেতে পারে৷ যেখানে বিদ্যুত্ নেই সেখানে বিকল্প ব্যবস্থায় সেবা সম্প্রসারণের চেষ্টা করতে হবে৷ নইলে কখনোই সফল হবে না মিশন ২০১১৷ যেসব প্রতিষ্ঠান এখনো বিটিএনের ব্যানারে আসেনি তাদেরকে আসতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷ টেলিসেন্টারকে শুধু লাভের হাতিয়ার করলে পল্লী অঞ্চলের মানুষ প্রয়োজনীয় সেবা পাবে না৷ তাই লাভের পাশাপাশি কল্যাণের বিষয়টিকেও বিবেচনায় রাখতে হবে৷ সর্বোপরি মিশন ২০১১-কে সফল হতে হলে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দাতা সংস্থাগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - জানুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস