• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বেহালা বাজাবে রোবট
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
রোবট
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বেহালা বাজাবে রোবট

গত কয়েক দশক ধরে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে রোবটপ্রযুক্তি৷ উদ্ভাবন হয়েছে গৃহস্থালির কাজকর্ম থেকে শুরু করে মানবদেহে অপারেশন করতে সক্ষম এমন সব নানা আকৃতির রোবট৷ মানুষের জীবনযাত্রাকে এরা করছে সহজ৷ অর্থনৈতিক কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এদের পদচারণা জোরালো না হলেও উন্নত দেশগুলোতে এসব রোবট পালন করছে তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা৷ আগামীতে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মানুষের পরিবর্তে এদের ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে প্রযুক্তিবিদদের৷ তাই গবেষণা থেমে নেই৷ রোবট নিয়ে ক্রমাগত চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা৷



এমনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথ ধরে সম্প্রতি টয়োটা মোটর করপোরেশন উদ্ভাবন করেছে এমন ধরনের রোবট, যা ভায়োলিন অর্থাৎ বেহালা বাজাতে পারে৷ আপনার অবসরে বা ইচ্ছায় যখন তখন সে নেমে যাবে বেহালা হাতে৷ পছন্দমতো সুর বাজিয়ে শোনাবে সে৷ রোবটটির উচ্চতা ৫ ফুট৷ রং সাদা৷ চমত্কার ও সঠিক পদ্ধতিতে সে বেহালার তারে চাপ দিতে পারে৷ কর্ড ধরতে পারে৷ আর অন্য হাতে বাজাতে পারে যন্ত্রটি৷ টয়োটা এর আগে উদ্ভাবন করেছে গাইডের কাজ করতে পারে এমন রোবট৷ এদের হাতের আঙ্গুলগুলো এতোই নমনীয় যে, এরা তূর্য বাজাতে সক্ষম৷ বাঁশির ওপরে যেভাবে আঙ্গুল খেলা করে, এই রোবটেরাও সেভাবে আঙ্গুল ওঠানামা করাতে পারে৷

টয়োটার প্রেসিডেন্ট কাতসুয়াকি ওয়াতানাবে বলেছেন, তার বিশ্বাস আগামী বছরগুলোতে তার কোম্পানির মূল ব্যবসায় হবে রোবটিক্স৷ তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকেই এরা তাদের রোবট, হাসপাতাল টয়োটাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থাপনা এবং অন্যান্য স্থানে পরীক্ষা করে দেখা শুরু করবেন৷ এরা আশা করছেন, ২০১০ সাল নাগাদ এরা বাণিজ্যিকভিত্তিতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবেন বিভিন্ন কাজে পারদর্শী ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির রোবট৷ কোম্পানির ভাষায় এরা হলো পার্টনার রোবট৷

সম্প্রতি টোকিওতে টয়োটার একটি শোরুমে সাংবাদিকদের কাছে ওয়াতানাবে বলেছেন, এরা এখন এমন রোবট তৈরি করতে চান যারা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বহুলভাবে ব্যবহৃত হবে৷ তিনি এবং তার সহকর্মীরা বলেন, গাড়ি তৈরি কারখানায় রোবটপ্রযুক্তি আগে থেকেই ব্যবহার হচ্ছে৷ বিশেষ করে বিভিন্ন সেন্সর এবং প্রি-ক্র্যাশ সেফটি সিস্টেমের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বহু গাড়িতে ব্যবহার হচ্ছে৷ ফলে রোবটিক্স বিষয়টি কোম্পানির জন্য নতুন কিছু নয়৷ এটাকে ন্যাচারাল এক্সটেনশন বলতে চাইছেন তারা৷

অনেক পরিকল্পনার মধ্যে হুইল চেয়ারের মতো দেখতে মোবাইলিটি রোবট তৈরির উদ্যোগও তাদের রয়েছে৷ গাড়ি যেমন ঘরে ঘরে মানুষ পৌঁছে দেয়, এই রোবটও তেমনি হাসপাতাল বা বাসাবাড়িতে বিছানা থেকে বিছানায় গিয়ে সেবা সম্প্রসারণ করবে৷ এই রোবটের একটি প্রাথমিক সংস্করণও সম্প্রতি প্রদর্শন করা হয়েছে৷ এক ব্যক্তিকে নিয়ে রোবটটি দেখিয়েছে নানা কসরত৷ এর রয়েছে মোটরচালিত দুটি চাকা৷ স্কুটার যেভাবে ঘুরে, এরাও তেমনিভাবে কোনো রোগী বা অসুস্থ ব্যক্তিকে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে বয়ে নিয়ে যেতে পারবে৷ এরা উঁচু এবং নিচু পথেও স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে৷ উঁচু থেকে নিচুতে নামতে বা নিচু থেকে উঁচুতে ওঠার সময় কোনো বাম্প বা ঝাঁকির সৃষ্টি হয় না৷ আসলে চাকাগুলো এমনভাবে তৈরি যে, এ ধরনের ক্ষেত্রে চাকা নিজ উদ্যোগেই নিজেকে সমন্বয় করে নেয়৷ ফলে এই রোবটে যে অবস্থান করে সে এ ধরনের পরিস্থিততে কিছুই টের পায় না৷

রোবটপ্রযুক্তি জাপানে ইতোমধ্যেই দৃঢ় অবস্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছে৷ তাছাড়া দেশটির সরকারও চাইছে ব্যবসায় বাণিজ্যে রোবটের ভূমিকা আরো বেড়ে যাক৷ সেজন্য বিভিন্ন কোম্পানি এবং গবেষকদের সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ বার্তাও পাঠানো হয়েছে৷ অনুরোধ করা হয়েছে, কোম্পানি এবং গবেষকরা যেনো রোবটপ্রযুক্তি নিয়ে তাদের কাজ অব্যাহত রাখে এবং জাতি গঠনে রোবটিক্স যেনো একটি দৃঢ় ব্যবসায়িক স্তম্ভ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷ জাপানের হোন্ডা মোটর কোম্পানি, হিটাচি লিমিটেড, ফুজিত্সু লিমিটেড এবং এনইসি করপোরেশনের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই রোবটপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে চলেছে৷ সেই হিসেবে রোবটিক্স বিশ্বে টয়োটার আসা অপেক্ষাকৃত নতুন৷

যেহেতু প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে পিছিয়ে আছে টয়োটা, তাই এরা এই খাতে এখন চালিয়ে যাচ্ছে আগ্রাসী ভূমিকা৷ প্রথমেই এরা এদের রোবটিক টিমকে চাঙ্গা করে তুলেছে৷ গত আগস্টে জোট বেঁধেছে সনি করপোরেশনের সাথে৷ এখন টয়োটা চাইছে সনির সাথে মিলেমিশে এক আসনের বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবটযান উদ্ভাবন করতে৷

টয়োটা বলেছে, রোবটপ্রযুক্তি নিয়ে এরা এখন জোরদার কাজ করে চলেছে৷ তাদের লক্ষ্য নিত্যনতুন উদ্ভাবনা৷ বাণিজ্যিকভাবে যার চাহিদা হবে ব্যাপক এবং লাভজনক৷ এই লক্ষ্যে এরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্রুপ কোম্পানিসমূহের সাথে কাজ করছে৷ অটো এনালিস্ট কোজি ইন্ডো বলেছেন, টয়োটা যে মিশন নিয়ে এগুতে শুরু করেছে, অর্থাৎ রোবটিক্স নিয়ে যেভাবে কাজ শুরু করেছে তার সাফল্য নিশ্চিত করে বলা যায় না৷ সাফল্য যে তারা পাবেই সে ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ তবে রোবটিক্সে টয়োটার আসাকে তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন৷

রোবট দিয়ে গৃহস্থালির কাজ করানো এখন মামুলি ব্যাপার হলেও রোবট দিয়ে বেহালা বা অন্য কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানোর ধারণাটা কিন্তু অসাধারণ৷ এই অসাধারণ কাজটিই করছে টয়োটা৷ সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে শরীরটা যখন এলিয়ে দেবেন চেয়ার বা বিছানায়, তখন বেহালায় যদি সুর ঝংঙ্কার তোলে কোনো রোবট, অসাধারণ কোনো করুণ রাগ যদি ঝরে পড়ে, কল্লোলিত হয় তাহলে নিশ্চয়ই মুছে যাবে সারাদিনের ক্লান্তি৷ বেহালার করুণ সুর দেহে আনবে অন্যরকমের এক প্রশান্তি৷ এমন একটি রোবট পেতে হয়তো খুব বেশিদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে না৷ শুধু টয়োটাই নয়, অন্যান্য কোম্পানির নানা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনাও বয়ে আনবে মানুষের কল্যাণ৷ বেহালা বাদক রোবটের পর আমরা হয়তো পাবো অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজাতে সক্ষম রোবট৷ আরো পরে হয়তো আসবে গায়ক রোবট- যারা বাজাবে, গাইবে৷ সঙ্গীত শিল্পে বিন্টির হবে তাদের আধিপত্য৷ তখন মানুষ শিল্পী বা বাদকেরা কি হুমকির মুখে পড়বে? কিভাবে টিকে থাকবে তারা যন্ত্রের প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে? তাও কিন্তু ভাবা দরকার৷

ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - জানুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস