• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > গণিতের অলিগলি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গণিতদাদু
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
গণিত
তথ্যসূত্র:
গণিতের অলিগলি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
গণিতের অলিগলি




উপপাদ্যটি পিথাগোরাস আবিষ্কার করেননি

শিরোনামটি দেখে অনেকেই অবাক হতে পারেন৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পিথাগোরাসের উপপাদ্য পিথাগোরাস আবিষ্কার করেননি৷ পিথাগোরাসের অনেক আগেই মিসরীয়রা পিথাগোরাসের উপপাদ্যের বিষয়বস্তু জানতো৷ জানতো চীন ও অন্যান্য অঞ্চলের মানুষও৷ পিথাগোরাসের উপপাদ্যের ইতিহাস ঘাঁটলে এ সত্যটিই আমাদের কাছে ধরা পড়ে৷ আর যেহেতু পিথাগোরাস এই জ্যামিতিক সত্যটির সাধারণীকরণ করেছিলেন এবং প্রথম এর সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে একে জনপ্রিয় করে তুলে ছিলেন, সেজন্যই এই উপপাদ্যটির নাম দেয়া হয় পিথাগোরাসের উপপাদ্য৷ এ উপপাদ্যে বলা হয়েছে : সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের ওপর অঙ্কিত বর্গ এবং অপর দুই বাহুর ওপর অঙ্কিত বর্গের সমষ্টির সমান৷ পিথাগোরাসের জীবনের সঠিক রেকর্ডপত্র মানুষ জানতে পারেনি৷ সঠিক কোথায়, কোন তারিখে এমনকি কোন সনে তার জন্ম তা ও সুনির্দিষ্টভাবে কারো জানা নেই৷ তার জন্ম প্রাচীন গ্রিসের স্যামোস দ্বীপে৷ ধারণা করা হয়, তার জন্ম ৫৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে৷ আর পিথাগোরাসের বহু শিষ্য ‘পিথাগোরিয়ান’সহ তাকে পুড়িয়ে মারা হয় ৪৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে৷ তখন তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর৷ কারো কারো মতে তিনি মারা যান ৯৯ বছর বয়সে৷ তিনি গণিতের ইতিহাসের প্রথম শহীদ বলে স্বীকৃত৷ ধরে নিতে পারি তিনি আজ থেকে ২৫৭৭ বছর আগে এ পৃথিবীতে আসেন এবং প্রায় শতবছর জীবনযাপন করে গেছেন৷ সে সময়টায় মানুষ নানা কুসংস্কারে ভোগতো৷ পালন করতো নানা ধর্মকর্ম৷ বিশ্বাস করতো নানা রহস্যে৷ তবে ধর্মচর্চা ছিল প্রবল৷ সংস্কারেও ছিল প্রবল বিশ্বাসী৷ জানা যায়, পিথাগোরাস তার এই উপপাদ্য প্রমাণে সাফল্য লাভ করে একটি ষাঁড় বলি দিয়েছিলেন৷ পিথাগোরাস ছিলেন অতিন্দ্রীয়বাদী বা মিস্টিক৷ তার ওপর তিনি ছিলেন প্রখ্যাত দার্শনিক ও গণিতবিদ৷ তবে গণিতই ছিল তার বড় সাধনা৷ গণিতের পাশাপাশি ভালোবাসতেন সঙ্গীত৷ গ্রহ-নক্ষত্রের আবর্তনের ফলে আকাশে ধ্বনিত মানুষের অশ্রুত সঙ্গীতকে পিথাগোরাস নাম দিয়েছিলেন ‘মিউজিক অব দ্য স্পিয়ার’৷ তিনি পিথাগোরারীয় ভ্রাতৃসংঘের (Secret brotherhood of the Pythagorians) গণিত দর্শন প্রচারক ছিলেন৷ তার দর্শন ও নীতিশাস্ত্র সম্বন্ধীয় শিক্ষা হচ্ছে : All is number ৷

পিথাগোরাসের বাবার নাম Nesarchus ৷ সম্ভবত তিনি ছিলেন একজন পলিনিসিয়ান৷ মায়ের নাম Pythais ৷ বাবা নেসারকাস ও মা পিথাইস এটুকু নিশ্চিত করেছিলেন যে, তাদের সন্তান সম্ভাব্য সর্বোত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন৷ তার প্রথম শিক্ষক ছিলেন Pherecydes ৷ এ শিক্ষকের মৃত্যু পর্যন্ত পিথাগোরাস তার কাছেই ছিলেন৷ আঠারো বছর বয়সে চলে যান লেসবোস দ্বীপে৷ সেখানে শিক্ষালাভ করেন, জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক অ্যানাক্সিমেন্ডার এবং এশিয়া মাইনর উপকূলের মিলিতাস নগরীর থেলিসের কাছে৷ থেলিসও ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ দার্শনিক ও গণিতজ্ঞ৷ এই থেলিস ভ্রমণ করেছিলেন মিসরে৷ তিনিই পিথাগোরাসকে মিসরে যাওয়ার পরামর্শ দেন৷ পিথাগোরাস মিসরে গিয়ে পৌঁ ছেন ৫৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে৷ তখন তার বয়স ২৩৷ সেখানে ২১ বছর অবস্থান করে মিসরীয় ধর্মগুরুদের কাছে জ্যামিতিসহ অনেক কিছুই শেখেন৷ বলা হয়, মিসর থেকেই তিনি পিথাগোরাসের উপপাদ্য সম্পর্কে মৌলিক ধারণাটা পেয়েছিলেন৷

মিসরীয়রা জানতো, ৩, ৪ ও ৫ একক দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ত্রিভুজের একটি কোণ হবে সমকোণ অর্থাত্ ৯০ ডিগ্রি৷ ঘটনাক্রমে মিসরীয়দের কাছে ছিলো সমান দূরত্বে ১২টি গিঁট দেয়া একটি দড়ি৷ এরা কোনো ঘর ও ভবন এবং পিরামিড তৈরির সময় সমকোণ কোনা তৈরি করতে এ দড়ি ব্যবহার করতো৷ মনে করা হয় এরা ৩, ৪ ও ৫ একক দৈর্ঘ্যের ত্রিভুজ সম্পর্কে জানলেও সব সমকোণী ত্রিভুজে এর সাধারণ ব্যবহার সম্পর্কে জানতো না৷ সেই সাধারণীকরণ, এর প্রমাণ উপস্থাপন ও জনপ্রিয় করে তোলার কাজটিই করেন পিথাগোরাস৷ সেজন্য এ উপপাদ্যটির নাম দেয়া হয় তার নামানুসারেই৷ চীনারাও এ উপপাদ্য সম্পর্কে পিথাগোরাসের বহু আগেই জানতো৷ খ্রিস্টপূর্বাব্দ একাদশ শতকের মানুষ চীনের Tschou-Gun এ সম্পর্কে জানতেন৷ তিনি সমকোণী ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতেন৷ উপপাদ্যটি ক্যালডিয়ানদের কাছেও জানা ছিল৷ আর এ সম্পর্কে পিথাগোরাসের হাজার বছর আগে জেনেছিল ব্যাবিলনীয়রা৷ ব্যাবিলনের একটি প্রাচীন মাটির ফলকের লিপিতে যা লেখা ছিল তার অর্থ দাঁড়ায় এমন : ‘৪ হচ্ছে দৈর্ঘ্য, ৫ হচ্ছে কর্ণ, এর প্রস্থ কত?’৷ সমাকোণী ত্রিভুজসংশ্লিষ্ট বিখ্যাত পিথাগোরাসের উপপাদ্যের সাথে তার নাম জড়ানোর যথার্থ কারণ তিনি এর সাধারণীকরণ, এর জ্যামিতিক ও বীজগণিতীয় প্রমাণ উপস্থাপন ও একে জনপ্রিয় করে তুলে ছিলেন৷ পিথাগোরাস সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলোর ওপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রগুলোর মধ্যে যে সম্পর্ক আমাদের জানান, তা জ্যামিতির ইতিহাসে অনবদ্য৷ ‘দুটি বর্গসংখ্যার সমষ্টি বর্গসংখ্যা হবে’ণ্ড এই সাধারণ সূত্র বা সত্য নির্ণ পিথাগোরাসর গণিতে অসাধারণ অবদান রাখেন৷ এ সূত্রের সাথেই সম্পর্কিত পিথাগোরাসের উপপাদ্য : একটি সমকোণী ত্রিভুজের ওপর অঙ্কিত বর্গ অপর দুই বাহুর ওপর অঙ্কিত বর্গের সমষ্টির সমান৷ যেমন ৩, ৪ ও ৫ একক দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ত্রিভুজ ও ৫, ১২ ও ১৩ একক দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ত্রিভুজে সমকোণী ত্রিভুজ হবে৷ কারণ, পিথাগোরাসের উপপাদ্যটি অন্যভাবে বর্ণনা করা যায় এভাবে : সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষুদ্রতর বাহুর দু’টির র্বi mgwó e„nËi evûi e‡M©i mgvb| †hgb 32 + 42 = 52 Ges ৫২ + ১২২ = ১৩২৷ যাই হোক ৫৫ বছর বয়সে তিনি জন্মভূমি স্যামোস দ্বীপে ফিরে আসেন৷ চালু করেন একটি গণিত স্কুল৷ কিন্তু ছাত্রছাত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না৷ তিনি স্কুলটি স্থানান্তর করেন দক্ষিণ ইতালির ক্রোটনে৷ সেখানে শিক্ষার্থীদের গণিত, সঙ্গীত, দর্শন এবং ধর্মের সাথে জ্যোতির্বিদ্যার সম্পর্ক বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হতো৷ বলা হয়, এ নগরীর কমপক্ষে ৬০০ নামী-দামী ব্যক্তিই এ স্কুলে পড়াশোনা করেছেন৷ থিয়ানা নামে এক মহিলাও ছিলেন এ স্কুলের ছাত্রী, যাকে তিনি ৬০ বছর বয়সে বিয়ে করেন৷ তিনি ছোটদের শিক্ষা দিতেন বড়দের শ্রদ্ধা করতে এবং শিক্ষার মাধ্যমে মানসিক উন্নতি সাধন করতে৷ তিনি জোর দিতেন ন্যায়ভিত্তিক সাম্যের প্রতি৷ এ স্কুলের শিক্ষার্থীদের শান্ত ও সুবোধ হওয়ার ব্যাপারে উত্সাহিত করা হতো৷ পিথাগোরিয়ানদের ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব ও পরস্পরের প্রতি আত্মত্যাগের সুপরিচিতি ছিল৷ জ্ঞান ও বিজ্ঞানের আলোকে এদের ধর্মপ্রাণ হওয়ার ব্যাপারেও আগ্রহী করে তোলা হতো৷ এরা সেক্রেট ব্রাদারহুডে বিশ্বাসী ছিল৷ এরা পদক্ষেপ নিয়েছিল সঙ্গীত, সৃষ্টিকর্তা, মহাবিশ্ব, ধর্ম ইত্যাদির গাণিতিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতে৷ পিথাগোরিয়ানরা বিশ্বাস করতো সব সম্পর্ককে সাংখিক সম্পর্কে রূপান্তত করা সম্ভব৷ এক পর্যায়ে তাকে ক্রোটন থেকে তারেনতুমে নির্বাসনে যেতে হয়৷ ষোল বছর পর সেখান থেকে ফিরে আসেন৷ বসবাস করতে থাকেন মেটাপনটাসে৷ এখানে ৪ বছর বসবাসের পর ৯৯ বছর বয়সে তার কতিপয় শিষ্যসহ তাকে পুড়িয়ে মারা হয়৷ স্যামোসে রয়েছে তার একটি স্মৃতিস্তম্ভ৷ সেখানে তার মূর্তি ও ফলক কার্যত একটি সমকোণী ত্রিভুজ তৈরি করেছে৷ এর বেদিতে স্থানীয় ভাষায় যা লেখা আছে তার অর্থ দাঁড়ায় : Pythagoras the Samosan কিংবা Pythagoras of Samos ৷
গণিতদাদু
...............................................................................

বলুন তো কার ছবি : ২২



ছবির এই গণিতবিদের জন্ম কর্নওয়ালে৷ শিক্ষালাভ করেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ পরে নিয়োগ পান লাউনডিন অধ্যাপক হিসেবে এবং পরিচালক হন ক্যামব্রিজের মানমন্দিরের৷ ১৮৪৫ সালে তিনি ইউরেনাসের দূরবর্তী গ্রহের অবস্থান পরিমাপ করেন৷ নেপচুন গ্রহ প্রদর্শনে তার সাহায্য প্রার্থনা ইংরেজ জ্যোতির্বিদদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছিল খুবই কম৷ লেভেরিয়ার ১৮৪৬ সালে স্বাধীনভাবে কিছু হিসাব-নিকাশ প্রকাশ করেন৷ লোভারিয়ারের পরামর্শের সূত্র ধরে জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান গ্যালে নেপচুন আবিষ্কার করেন৷ ছবির গণিতবিদ ১৮৫৫ সালে গড় গতি সম্পর্কে একটি স্মারক প্রকাশ করেন৷ বলুন তো ছবির এই গণিতবিদের নাম কি?
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - জানুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস