গত এক যুগ ধরে ভিয়েতনামে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ইনফরমেশন টেকনোলজি ও সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামসমূহ ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে৷ সরকার দেশব্যাপী গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষে পোস্ট অফিস, টেলিকম ও কালচারাল পয়েন্ট প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরকে সমন্বিত করেছে৷ এ ধরনের সরকারি হস্তক্ষেপ ২০১০ সালের মধ্যে ভিয়েতনামে ইন্টারনেট এক্সেস তিনগুণ করার লক্ষ্যমাত্রাকে সাফল্যমণ্ডিত করবে৷ এর ফলে ভিয়েতনামের ৮ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাবে৷২০০৬ সালে ভিয়েতনাম সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল, সে দেশের ব্যাপক উন্নয়নের জন্য ইনফরমেশন টেকনোলজি কলেজে ২০ কোটি ডলার খরচ করা হবে৷
ভিয়েতনামে গেম ও অনলাইন চ্যাট খুবই জনপ্রিয়৷ বিপুলসংখ্যক তরুণ অনলাইন চ্যাট ও গেমে সময় কাটায়৷ ভিয়েতনামে তরুণ সমাজের জীবনমান উন্নয়নে তা প্রধান প্রতিবন্ধক৷ এই প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে অ্যাপ্লিকেশন ইনফরমেশন টেকনোলজি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকে বেগবান করার উদ্যোগ নেয় সে দেশের সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ৷ কেননা, বর্তমানে সেদেশে তরুণদের কাছে প্রধান আকর্ষণ হলো অনলাইন গেম ও চ্যাটরুম৷ সুতরাং এ ধরনের ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে উন্নত করা দরকার, যাতে করে এরা আইসিটি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে এক্সেস করতে পারে এবং সে অনুযায়ী তাদের জীবনে রাখতে পারবে উল্লখযোগ্য অবদান৷
গৃহীত উদ্যোগ
আইসিটিফরডি আন্দোলনে সম্পৃক্ত সম্ভাব্য বিশ্ববিদ্যালয় শনাক্ত করা এবং তাদের ডেভেলপ করা অন্যান্য প্রোগ্রামের অভিজ্ঞতার আলোকে Thai Nguyen University of Agriculture and Forestry (TUAF)এবং Cornell University ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলের পর্বতময় এলাকায় উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিউনিটিভিত্তিক টেলিসেন্টারের ভূমিকা তুলে ধরার কার্যক্রম নিয়েছে৷ পর্বতময় অঞ্চলের কৃষক ও গ্রামীণ জনগণের উন্নয়নের লক্ষে এ প্রজেক্ট পরিচালিত হবে যাতে করে এ অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত জনগণের কল্যাণ সাধিত হয়৷
এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কমিশন (এপিইসি)-এর মূল সমর্থক এডুকেশন ফাউন্ডেশন৷ এর নিজস্ব এজেন্ডা হলো ইনফরমেশন টেকনোলজিকে প্রতিপালন করা যাতে করে সুবিধাবঞ্চিত দুর্দশাগ্রস্ত তরুণদের প্রতি মনোযোগ দিতে পারে৷ এডুকেশন ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় টিইউএএফ চালু করেছে কমিউনিটিভিত্তিক গ্রামীণ টেলিসেন্টার ইনকিউবেশন কার্যক্রম, যা বিভিন্ন ধরনের রিসোর্সের সমর্থন যোগাবে৷ টিইউএএফ-কর্নেল আইসিটিফরডি প্রজেক্টে যুক্ত করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ইনফরমেশন টেকনোলজির উদ্যোগকে৷ এগুলো এপিইসি ডিজিটাল অপরচ্যুনিটি সেন্টার (এডিওসি) ইনফরমেশন ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইনস্টিটিউট এবং ভিআইএ টেকনোলজি সমর্থনপুষ্ট৷ এগুলোর হেডকোয়ার্টার তাইওয়ানে৷
ক. সুবিধাবঞ্চিত তরুণ-যুবকদের জন্য ট্রেনিং প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা৷ সরকারি ও বেসরকারি রিসোর্সে এক্সেসের জন্য ইনফরমেশন টেকনোলজি কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা দেখানো হয়েছে এতে৷
খ. আইসিটি ট্রেনিং ও টেলিসেন্টারে ইন্টার্নশিপ প্রদান করা, যাতে করে দেশব্যাপী বিভিন্ন কমিউনিটি লেভেলে যেমন পোস্ট, টেলিকম এবং কালচার পয়েন্টে কাজ করার জন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে এবং ভিয়েতনামে ইনফরমেশন টেকনোলজির পরিবেশ সম্প্রসারিত হয়, যেমন কৃষি ও বাণিজ্য ক্ষেত্র৷
গ. টেলিসেন্টারের মাধ্যমে দেয়া বিভিন্ন ধরনের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও দূরশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা, যাতে করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব হবে৷ যেমন কৃষি ও বাণিজ্য ক্ষেত্র৷
ঘ. ইউজার-ফ্রেন্ডলি আইসিটিসংশ্লিষ্ট বিষয় উন্নয়ন করা যেগুলো পরিবারসংশ্লিষ্ট৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, গভর্নেন্স ইত্যাদি৷ টেলিসেন্টারের মাধ্যমে এ বিষয়গুলোকে দ্রুত এক্সেসযোগ্য করা৷
প্রজেক্ট ব্যাকগ্রাউন্ড
এই আইসিটিফরডি প্রজেক্টের লক্ষ্যস্থল হলো ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলের পর্বতময় (এনএমএ) এলাকা, যা পনেরোটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত৷ এই প্রজেক্টের আওতাভুক্ত অঞ্চল ১ লাখ ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা ভিয়েতনামের মোট আয়তনের ৩৪%৷ এ অঞ্চলে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বসবাস করে, যা ভিয়েতনামের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ৷ প্রায় ৩৫টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এ অঞ্চলে বাস করে৷ আঞ্চলিক জটিলতার কারণে এনএমএ ভিয়েতনামের সবচেয়ে গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত এ অঞ্চলকে বেছে নিয়েছে৷ ভিয়েতনাম সরকার দেশে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য ২০০৫-২০২০ সাল পর্যন্ত যেসব আইসিটি অ্যাপ্লিকেশন ও পরিকল্পনা অগ্রাধিকার দিয়েছে আইসিটিফরডি প্রজেক্টের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও একই রকম৷ প্রত্যন্ত অঞ্চল ও সুবিধাবঞ্চিত ভিয়েতনামের জনগণের জন্য আইসিটিফরডি প্রজেক্টের সাপোর্ট ভিয়েতনাম সরকারের গৃহীত বেশিরভাগ পদক্ষেপের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যা দেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করবে৷
বাস্তবায়ন ও কাজ
আইসিটিফরডি প্রজেক্টকে এপিইসিইএফ অনুমোদন করার পর টিইউএএফ-এ গঠন করা হয় প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্Uশেন কমিটি (পিআইসি)৷ প্রজেক্টের সহব্যবস্থাপক হলো টিইউএএফ, কর্নেল ইউনিভার্সিটি এবং প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্Uশেন কমিটির মাধ্যমে আঞ্চলিক পার্টনার৷ আইসিডিফরডি প্রজেক্ট ম্যানেজার, একজন টিইউএএফ-এর উর্ধতন কর্মকর্তা পিআইসি প্রতিনিধদের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড তদারক করে৷
অংশগ্রহণকারীদের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হয়৷ প্রজেক্টের শুরুতেই অংশগ্রহণকারীদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়৷ প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্Uশেন কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে বৃহত্তর পরিকল্পনা ও ইস্যুভিত্তিক পলিসি প্রণয়ন করা৷ কমিউন ইমপ্লিমেন্Uশেন গ্রুপের লক্ষ্য হলো অধিকতর গ্রাউন্ড লেভেলের কর্মকাণ্ড৷ প্রজেক্ট বাস্তবায়নের প্রস্তাবনাটি করা হয় ইউনিভার্সিটি ও টেলিসেন্টারের জন্য সমন্বিত সিস্টেম তৈরিকে কেন্দ্র করে, যাতে করে ভিয়েতনামের পর্বতময় অঞ্চলে কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন সাধন করা যায়, যাতে করে সুবিধাবঞ্চিত জনগণের কল্যাণ সাধন করা যায়৷
অনলাইন ও অফলাইন সার্ভিস
অংশগ্রহণকারী কমিউন বা সংঘসমূহ এবং ইন্টারনেট কানেকটিভিটির খরচ কমে যাওয়ায় আইসিটি ইনফরমেশন সিস্টেমকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে করে অনলাইন ও অফলাইন উভয় ইনফরমেশন রিসোর্সে সহজে এক্সেস করা যায়৷ সংঘের টেলিসেন্টারে তথ্য অনুসন্ধান করতে কোনো ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারে লোকাল মিডিয়া, যেমন কমপিউটারের হার্ডডিস্কে সংরক্ষিত তথ্য, অডিও ক্যাসেট, সিডি বা ডিভিডি অথবা ব্যবহার করতে পারে ইন্টারনেট যাতে করে তার প্রয়োজনীয় তথ্যের উত্স খুব সহজেই পেতে পারে যেগুলো টেলিসেন্টারের অফলাইন ইনভেনটরিতে পর্যাপ্ত নয়৷ তথ্য আহরণের ক্ষেত্রে লাইভ অনলাইন এক্সেস সিস্টেমের তুলনায় অফলাইন এক্সেস সিস্টেম আর্থিকভাবে বেশ ব্যয় সাশ্রয়ী৷ অফলাইন কমিউনিকেশন রিসোর্স প্রতিমাসে টিইউএএফ-এর বিশেষজ্ঞরা আপডেট করেন৷
প্রজেক্ট শুরু করা
প্রজেক্ট শুরু করার আগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন করা প্রয়োজন৷ এগুলোর মধ্যে কোনো একটি সিলেক্ট করে সংঘকে বিশেষ ধরনের ধরনের শর্ত পূরণ করতে হয়৷ এগুলো নিম্নরূপ :
০১. সংঘসমূহকে হতে হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে, ০২. লঘু সম্প্রদায় শ্রেণী হবে ৭০ শতাংশের বেশি, ০৩. গৃহস্থ্য দরিদ্র্যের হার হবে জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ন্যুনতম ২৫ শতাংশের বেশি , ০৪. পাবলিক কমিউনিকেশন সিস্টেমে দুর্বল অ্যাক্সেস ব্যবস্থা৷
এই শর্তের ভিত্তিতে তিনটি প্রদেশের ছয় বিভাগে ছয়টি সম্প্রদায়কে বেছে নেয়া হয়৷ প্রদেশ তিনটি হলো Thai Nguyen, Tuyen, Quang ও Bac kan৷ এই প্রজেক্টে সম্পৃক্ত করা বিষয়গুলো হলো- প্রজেক্টসংশ্লিষ্ট এলাকায় ডাটাবেজ গড়ে তোলার জন্য জরিপ পরিচালনা করা, স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে ওয়ার্কশপের আয়োজন করা, কমিউনিটি লেভেল তথ্যের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা, আইসিটির ধরন এবং টেলিসেন্টারের জন্য যা প্রয়োজন তা শনাক্ত করা এবং টিইউএএফ-এ কমিউনিকেশন সেন্টারকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে সুসজ্জিত ও সেটআপ করা, যা গ্রামীণ কমিউনিকেশন সিস্টেমের জন্য হাব হিসেবে থাকবে৷ এক বছরের কম সময়ের মধ্যে প্রজেক্টে সেটআপ করা হয় কমিউন টেলিসেন্টার এবং সেন্টারের কর্মীদের প্রশিক্ষণ, ছাত্র, কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক এবং সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ট্রেনিং প্রোগ্রাম ও বিষয়বস্তু তৈরি করা এবং প্রকাশ করা হয় কমিউনিকেশন রিসোর্স যেমন দূরশিক্ষণ প্যাকেজ, ওয়েবপেজ, সিডি ইত্যাদি৷ টেলিসেন্টার ক্ষুদ্র এন্টারপ্রাইজ অপারেট করে, যার সার্ভিস চার্জ খুবই সামান্য, যাতে করে তারা বৈদ্যুতিক চার্জ ও ইন্টারনেট ফি নিজেরাই পরিচালনা করতে পারে৷ এক্ষেত্রে প্রজেক্ট চালু করার জন্য গ্রামীণ জনগণকেই প্রধান সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
সুবিধাবঞ্চিত যুবকদের জন্য কমিউনিকেশন রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট
কমিউনিকেশন ও টেলিসেন্টারের জন্য টিইউএএফ-এর বিপুলসংখ্যক প্রভাষক ও গবেষককে সক্রিয় করে, যাতে করে তারা ডেভেলপ ও প্রকাশ করতে পারে কমিউনিকেশন রিসোর্স৷ এর ফলে ডেভেলপ হয় এক বিশাল ইলেকট্রনিক লাইব্রেরি যেখানে ৫৮০০০ কমিউনিকেশন মেটেরিয়াল ডেভেলপ করা হয়৷ আর এসব মেটেরিয়ালে রয়েছে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ রক্ষা, জেন্ডারবিষয়ক তথ্য৷ আইসিটিফরডি প্রজেক্টের মূল লক্ষ্য হলো সুবিধাবঞ্চিত যুবসম্প্রদায়৷ তাই টিইউএএফ সুবিধাবঞ্চিত এই যুবকদের বৃত্তিদানের উদ্দেশ্যে কিছু শর্ত আরোপ করে এই প্রজেক্টে৷ শর্তানুযায়ী যাদের বয়স ১৬-৩০ বছরের মধ্যে, তারাই শুধু এ সুবিধা পাবে৷ এ প্রজেক্ট সুবিধায় আরো সম্পৃক্ত করা হয়েছে তাদেরকে যারা স্কুল শিক্ষা চালিয়ে যায়নি, শিক্ষার আলো যাদের কাছে পৌঁছেনি তাদেরকে৷
প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করার উদ্দেশ্য হলো- প্রশিক্ষকরা যাতে কমিউনিকেশন রিসোর্সে এক্সেসের জন্য তাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আরো বিস্তৃত করতে পারে৷ ভিয়েতনামের ১০টি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের যুবকদের প্রশিক্ষিত করা হয়, যারা সংঘের টেলিসেন্টার অপারেট করবে৷ এদেরকে কমিউন ইনফরমেশন অফিসার (সিআইও) বলা হয়৷ এজন্য যুবকদের কমপিউটারে প্রাথমিক জ্ঞান ও টেলিসেন্টার ম্যানেজমেন্টের জ্ঞানদান করা হয়৷ এর ফলে আট মাসের মধ্যে (২০০৬ সালে) ১১টি ট্রেনিং সেন্টারে ২২০ জন লঘু সম্প্রদায়ের সুবিধাবঞ্চিত যুবক প্রাথমিক আইসিটি শিক্ষা লাভ করে যারা ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলীয় পর্বতময় এলাকার অধিবাসী৷ অন্যান্য বেসিক আইসিটি ট্রেনিংগুলো কমিউনিকেশন রিসোর্স ব্যবহার করে পরিচালিত হয়৷ কমিউন টেলিসেন্টার ও টিইউএএফ কর্মীদের দিয়ে পরিচালিত হয় মাইক্রোসফট অফিস স্যুট৷ এসব টেলিসেন্টারে ২৬০ জন সুবিধাবঞ্চিত যুবককে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেয় কমিউন ইনফরমেশন অফিসার এবং টিইউএএফ-এর আইসিটি বিশেষজ্ঞ৷ ১১৬ জন্য মহিলা প্রশিক্ষণ কোর্সেও অংশ নেয়৷
প্রজেক্টের তাত্ক্ষণিক প্রভাব
এই প্রজেক্ট রান করার জন্য প্রাথমিক টিইউএএফ ও কর্নেলকে সহজশর্তে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কমিশন (এপিইসি)৷কেননা, তারা তাদের লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হাওয়ায় এ সহায়তা প্রদান করে৷ টিইউএএফ-এর এ কার্যক্রমের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় সমর্থিত টেলিসেন্টারের সুফল তাত্ক্ষণিকভাবে পাওয়া না গেলেও এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী৷ তবে ২০০৭-এর ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ প্রজেক্টের সুবিধাবঞ্চিত যুবকরা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্যে এক্সেস করতে পারছে৷
বিশ্ববিদ্যালয় ও সুবিধাবঞ্চিত কমিউনিটির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের ফলে ভিয়েতনামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত যুবকরা আপডেটেড তথ্যে এক্সেসের সুযোগ পাচ্ছে৷ এটি ভিয়েতনামের একটি অন্যতম প্রধান সফল মডেল৷ ভিয়েতনামের মিনিস্ট্রি অব সায়েন্স টেকনোলজি প্রায় ৫০০০ ইউএস ডলার ব্যয়ে সেটআপ করে একটি টেলিসেন্টার৷ এক্ষেত্রেও কমিউনিকেশন রিসোর্স তৈরি করে যথাযথ প্রশিক্ষণ দান করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনে ভূমিকা রাখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো৷
লক্ষণীয় বিষয়
টিইউএএফ-প্রজেক্টের বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিসেন্টার মডেলটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে৷ এতে সম্পৃক্ত হয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সংঘসমূহ৷
বেসিক আইটি জ্ঞানের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আঞ্চলিক টেলিসেন্টার অপারেটরদের ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্টই হলো টেলিসেন্টার অপারেশনের সফলতার প্রধান ফ্যাক্টর৷
টার্গেট কমিউনের টেলিসেন্টার অপারেটরদের টেলিসেন্টার পরিচর্যার ব্যাপারে প্রশিক্ষিত হতে হবে যাতে করে অপারেশন চলাকালীন কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তারা নিজেরাই তা সমাধান করতে পারে৷
সুবিধাবঞ্চিত যুবকদের প্রয়োজনীয় তথ্যে এক্সেসের জন্য অফলাইন কমিউনিকেশন রিসোর্স খুবই সুবিধাজনক৷ কেননা, ভিয়েতনামে ইন্টারনেট (অনলাইন কমিউনিকেশন) খুবই ব্যয়বহুল, বিশেষ করে যেখানে তাদেরকে ডায়ালআপ ফোনলাইন ব্যবহার করে ইন্টারনেট সংযোগ নিতে হয়৷ এই কারণে প্রতিটি টেলিসেন্টারে ইনস্টল করা হয় ই-লাইব্রেরি যা গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রদের জন্য বেশ
উপকারী ও সুবিধাজনক কমিউনিকেশন সোর্স৷
নিজস্ব আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ হিসেবে টেলিসেন্টার অপারেট করতে হবে, যাতে করে অপারেশনের অস্তিত্বের জন্য সব ধরনের ব্যয় নির্বাহ করতে পারে এবং অর্থনৈতিক সাপোর্ট পাওয়ার জন্য তাদেরকে উদ্ভাবনীমূলক কার্যকলাপ প্রদর্শন করতে হবে টেলিসেন্টার কোনো ক্ষতি না করে৷
টেলিসেন্টারে আইসিটির কারিগরি সুবিধা থাকতে হবে এবং তা হতে হবে দারিদ্র্য অবকাঠামোর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ৷ অর্থাত্ কোনো এয়ারকন্ডিশন, অনিয়মিত বিদ্যুত্ ব্যবস্থা, কোনো ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে পারবে না৷
শেষ কথা
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭৪ সালে ভিয়েতনাম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত হলেও তারা আজ তথ্যপ্রযুক্তিকে পুঁজি করে যে সফলতা পেয়েছে তা অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত৷ শুধু তাই নয়- ইন্টেল, ক্যাননসহ অনেকের ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টও সেখানে স্থাপন করা হয়েছে৷ অথচ ভিয়েতনামের আগে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এখানকার আইসিটির অবস্থা খুবই করুণ৷ আইসিটিকে অবলম্বন করে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার যে ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব, তা এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের সরকারগুলোর উপলব্ধিতে আসছে না৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদানে সীমাবদ্ধ৷ ভিয়েতনাম বা ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য নিয়মিতভাবে কনটেন্ট ডেভেলপ করে আসছে৷ সেখানে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সে ধরনের কোনো উদ্যোগই দেখা যায় না৷ আমরা প্রত্যাশা করি, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু সিলেবাসে সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আইসিটিতে প্রশিক্ষিত করতে ভূমিকা রাখবে৷
ফিডব্যাক: mahmood_sw@yahoo.com