অজানা দশ সংখ্যার জাদুকরী যোগফল
এখানে আমরা জানবো সংখ্যার নিয়ে একটি মজার বিষয়। এর নাম আমরা দিতে পারি Fibnacci Number Trick। যারা Fibonacci Number-এর সাথে পরিচিত, তারা সহজেই ধরতে পারবেন কেনো এ নামটি আমরা এখানে ব্যবহার করতে পারি। এ বিভাগে Fibonacci সংখ্যার পরিচিতি এর আগে আলোচিত হয়েছে বলে সেদিকে আর যেতে চাই না। বরং চেষ্টা করি আলোচ্য সংখ্যার মজাটি পুরোপুরি উপভোগের। এ খেলাটি শিখে নিয়ে যেকেউ বন্ধু-বান্ধব বা অন্য যেকোনো জনের কাছে নিজের গণিত জানার ক্ষমতা জাহির করতে পারবেন চমকপ্রদভাবে। নিচের ধাপগুলো মনোযোগ দিয়ে অনুসরণ করুন।
এক : কোনো এক বন্ধুকে বলুন তার পছন্দমতো যেকোনো দুটি সংখ্যা মনে মনে বেছে নিতে। তবে তাকে সেই সাথে পরামর্শ দিন সংখ্যা দুটি যেনো খুব বড় না হয়। কারণ, সংখ্যা যত বড় হবে হিসাব করা তত কঠিন হবে। ধরুন, সংখ্যা দু’টি নেয়া হলো ১৬ এবং ২১। তাহলে আমরা পেলাম প্রথম সংখ্যা ১৬ এবং দ্বিতীয় সংখ্যা ২১।
দুই : এখন বন্ধুটিকে বলুন সে এ সংখ্যা দুটি কী, তা যেনো আপনাকে না জানায়। সে যেনো আপনাকে না দেখিয়ে একটি কাগজে সংখ্যা দুটি লিখে নেয়।
তিন : এখন এই প্রথম সংখ্যা ১৬ ও দ্বিতীয় সংখ্যা ২১-এর নিচে তৃতীয় আরেকটি সংখ্যা লিখি, যা হবে প্রথম ও দ্বিতীয় সংখ্যার যোগফল। তাহলে তৃতীয় সংখ্যা পেলাম (১৬+২১) বা ৩৭। এ সংখ্যাটিও যেনো বন্ধুটি আপনাকে না দেখিয়ে কাগজে লিখে রাখে।
চার : এর নিচে একইভাবে লিখতে বলুন চতুর্থ সংখ্যা, যা হবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংখ্যার যোগফলের সমান। তারও পরে লিখবেন পঞ্চম সংখ্যা, যা হবে তৃতীয় ও চতুর্থ সংখ্যার যোগফলের সমান। এভাবে দশম সংখ্যা পর্যমত্ম প্রতিটি সংখ্যা বের করতে হবে আগের দুটি সংখ্যার যোগফল নিয়ে। আর দশটি সংখ্যা লেখা হবে পুরোপুরি আপনার অজান্তে।
পাঁচ : এভাবে তাহলে আমরা এক্ষেত্রে সংখ্যা দশটি পাবো নিম্নরূপ :
প্রথম সংখ্যা = ১৬, দ্বিতীয় সংখ্যা = ২১, তৃতীয় সংখ্যা = ১৬ + ২১ = ৩৭, চতুর্থ সংখ্যা = ২১ + ৩৭ = ৫৮, পঞ্চম সংখ্যা = ৩৭ + ৫৮ = ৯৫, ষষ্ঠ সংখ্যা = ৫৮ + ৯৫ = ১৫৩, সপ্তম সংখ্যা = ৯৫ + ১৫৩ = ২৪৮, অষ্টম সংখ্যা = ১৫৩ + ২৪৮ = ৪০১, নবম সংখ্যা = ২৪৮ + ৪০১ = ৬৪৯ এবং দশম সংখ্যা = ৪০১ + ৬৪৯ = ১০৫০
ছয় : এভাবে পাওয়া সংখ্যা দশটির যোগফল কত তা আপনাকে না জানিয়ে গোপনে বের করে কাগজে লিখে রাখতে বলুন। এবং তাকে বলুন, সে যোগফলটাই নাটকীয়ভাবে আপনি তাকে জানিয়ে দেবেন।
সাত : তবে এই গণিতের জাদুকরী কাজটি করতে আপনাকে আপনার বন্ধুর কাছ থেকে একটু সাহায্য নিতে তো হবেই। তাকে বলুন সে যেনো আপনাকে সপ্তম সংখ্যাটি কত, শুধু তাই যেনো আপনাকে দয়া করে জানিয়ে দেয়।
আট : বন্ধুটি আপনাকে জানালেন, সপ্তম সংখ্যাটি হচ্ছে ২৪৮। আর আপনি এ ২৪৮ সংখ্যাটি নিয়ে একটু চিমত্মা করার ভাব দেখিয়ে মাথা চুলকিয়ে ঝটপট বলে দিলেন, সংখ্যা দশটির যোগফল হচ্ছে ২৭২৮। আপনার বন্ধুটিও দেখলেন, সত্যিই তো সঠিক যোগফলটাই বলা হলো। বন্ধুটি অবাকও হলেন, কী করে তা সম্ভব হলো? আর এত তাড়াতাড়িই বা কিভাবে আপনি সে যোগফলটা বের করে দিলেন?
আসলে : আপনি যোগফলটা পেয়ে গেছেন বন্ধুর দেয়া সপ্তম সংখ্যাটিকে ১১ দিয়ে গুণ করে। ২৪৮ ১১ = ২৭২৮। এখানে ২৪৮ সংখ্যা মোটামুটি একটি ছোট সংখ্যা। হয়তো সে কারণেই এর-১১ গুণ বের করাটাও আপনার জন্য খুব একটা কঠিন হয়নি। কিন্তু বন্ধুটি যদি শুরুতেই বড় দুটি সংখ্যা নিয়ে খেলাটি শুরু করতো তবে সপ্তম সংখ্যাটি তখন ২৪৮-এর তুলনায় অনেক অনেক বড় হতো, যাকে ১১ দিয়ে গুণ করে গুণফল সহজে বের করাটা তত সহজ হতো না। তবে এ নিয়ে ভাববার কোনো কারণ নেই। ১১ নিয়ে গুণ করার কৌশলটা খুব কঠিন নয়, একটু জেনে নিয়ে ভাবনাহীনভাবে খেলাটি বন্ধুদের মাঝে দেখিয়ে সহজেই বাহবা আদায় করে নিতে পারেন। যেহেতু এভাবে যেকোনো দুইটি সংখ্যা নিয়ে খেলাটি শুরু করি না কেনো, সব সময় সংখ্যা দশটির যোগফল হবে সপ্তম সংখ্যাটির ১১ গুণ। তাই প্রতিটি খেলায়ই আপনাকে সপ্তম সংখ্যাটিকে ১১ দিয়ে গুণ করে সংখ্যা দশটির যোগফল বলে নিতে হবে। অতএব ১১ দিয়ে কোনো সংখ্যার সংক্ষেপে কৌশল গুণফল বের করার বিষয়টি জানা দরকার।
সহজেই অনুমেয়, কোনো সংখ্যাকে ১১ দিয়ে গুণ করতে গেলে দেয়া সংখ্যাটির নিয়ে একই সংখ্যা এক ঘর বাম দিকে বসিয়ে যোগফল বের করলেই তা পাওয়া যাবে। যেমন দেয়া উদাহরণের সপ্তম সংখ্যা ২৪৮-এর ১১ গুণ সংখ্যাটি পেতে পারি এভাবে :
২৪৮
২৪৮
২৭২৮
এভাবে ২৪৮ সংখ্যাটি পর পর না লিখেও ১১ দিয়ে গুণফলটি বের করতে পারি কয়েকটি ধাপে। কাঙ্ক্ষিত গুণফলে একদম ডানদিকে বসবে ২৪৮-এর ৮। এর বামে বসবে (৪+৮) এর যোগফল ১২-এর ডানদিকের ২ ও হাতে থাকবে ১। তাহলে গুণফলের একদম ডানপাশের সংখ্যা দুটি হলে ২৮। এবং ২ ও ৪-এর যোগফলের সাথে হাতের ১ যোগ করে পাওয়া ৭ বসবে আগের ২৮-এর বামে। অতএব গুণফলের ডানদিকের তিনটি অঙ্ক হবে ৭২৮। এখন ২৪৮ সংখ্যাটিতে একদম বামের ২-এর বামপাশে আর কোনো অঙ্ক না থাকায় গুণফলে সর্ববামে তা বসিয়ে কাঙ্ক্ষিত গুণফলের ফল পাবো ২৭২৮।
এবার ধরা যাক, যদি সপ্তম সংখ্যাটি হয় ৫৩২৪১৭। তবে একে ১১ দিয়ে গুণ করে গুণফল বের করতে পারবো এভাবে :
৫৩২৪১৭
৫৩২৪১৭
৫৮৫৬৫৮৭
বড় দুটি সংখ্যা নিয়ে খেলা শুরু করলে যে দশটি সংখ্যা পাওয়া যাবে, সেগুলোর সমষ্টি একটি বড় সংখ্যা হবে। সেক্ষেত্রে সপ্তম সংখ্যাটিতে ১১ দিয়ে গুণ করে, এই সমষ্টি সংখ্যাটি বের করতে এ পন্থা অবলম্বনই শ্রেয়ে।
কেনো এমন হয় : এবার দেখা যাক কেনো এ খেলাটিতে সব সময় সপ্তম সংখ্যাটির ১১ গুণই হয় সংখ্যা দশটির গুণফল। বীজগণিতের সাধারণ জ্ঞান খাটিয়ে আমরা তা দেখে নিতে পারি। ধরা যাক, প্রথমে আপনার বন্ধুর নেয়া সংখ্যা দুটি ছিল ক এবং খ। অতএব খেলাটিতে আমাদের সংখ্যা দশটি হবে নিম্নরূপ :
প্রথম সংখ্যা = ক, দ্বিতীয় সংখ্যা = খ, তৃতীয় সংখ্যা = ক + খ, চতুর্থ সংখ্যা = খ + (ক + খ) = ক + ২খ, পঞ্চম সংখ্যা = (ক + খ) + (ক + ২খ) = ২ক + ৩খ, ষষ্ঠ সংখ্যা = (ক + ২খ) + (২ক + ৩খ) = ৩ক + ৫খ, সপ্তম সংখ্যা = (২ক + ৩খ) + (৩ক + ৫খ) = ৫ক + ৮খ, অষ্টম সংখ্যা = (৩ক + ৫খ) + (৫ক + ৮খ) = ৮ক + ১৩খ, নবম সংখ্যা = (৫ক + ৮খ) + (৮খ + ১৩খ) = ১৩ক + ২১খ, দশম সংখ্যা = (৮ক + ১৩খ) + (১৩ক + ২১খ) = ২১ক + ৩৪খ, সংখ্যা ১০টির যোগফল = ৫৫ক + ৮৮ক = ১১ (৫ক + ৮খ)
সহজেই অনুমেয় এখানে সপ্তম সংখ্যাটির ১১ গুণ হচ্ছে সংখ্যা দশটির যোগফল। আর এটাই হচ্ছে এ খেলার গাণিতিক রহস্য।
গণিতদাদু।
................................................................................।
বলুন তো কার ছবি : ৩৩
এই মহিলা গণিতবিদের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট শহর হিলবোরোতে। জন্ম ১৯২৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। মধ্যবিত্ত পরিবারের সমত্মান তিনি। বাবা ছিলেন পুরকৌশলী। মা হাইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় গণিতের প্রতি আকৃষ্ট হন। গণিত গবেষক আর.এল. মুরের অধীনে তার বিকাশ। মুর টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপনা করতেন। ১৯৪৯ সালে এই মহিলা গণিতবিদ ডক্টরেট ডিগ্রি পান। এরপর ১৯৫৩ সাল পর্যমত্ম পড়ান ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার বছরেই বিয়ে করেন সহযোগী গণিতবিদকে। এরপর দু’জনই চলে যান রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্থায়ীভাবে বসবাস করেন মেডিসনে। তিনি প্রাথমিকভাবে কাজ করেন সেট থিওরির ওপর। তিনি কমপক্ষে ৭০টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে এ বিষয়ে। তিনি নামকরা শিক্ষক ছিলেন। তত্ত্বাবধান করেছেন প্রচুরসংখ্যক পিএইচডি কোর্সের ছাত্রের। সংশ্লিষ্ট ছিলেন প্রচুরসংখ্যক গণিত সংগঠনের সাথে। কোনো কোনো সংগঠনের দায়িত্বশীল পদেও ছিলেন। তাকে বলা হতো ‘ফুলটাইম মাদার’ ও ‘প্রমিনেন্ট ম্যাথেমেথিশিয়ান’। বলুন তো কে এই মহিলা গণিতবিদ।