গ্রাফিক্স কার্ড নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে nVIDIA বিশ্বস্ত নাম। তাদের লোগোতে এন ছোট হাতের অক্ষরে দেখা যায়। গাণিতিক দৃষ্টিতে ছোট হাতের এনকে (n) বোঝানো হয় সীমাহীন সংখ্যা হিসেবে এবং পরের শব্দটি এসেছে Latin শব্দ videre থেকে, যার অর্থ হচ্ছে দেখা। তাই এই নামের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে বেস্ট ভিজ্যুয়াল এক্সপেরিয়েন্স বা ইমেজারেবল ডিসপ্লে। এনভিডিয়ার যাত্রা শুরু হয় তাদের প্রথম গ্রাফিক্স কার্ড NV1 দিয়ে। তারপর ধীরে ধীরে রিভা টিএনটি, জিফোর্স ১-৪, জিফোর্স এফএক্স, জিফোর্স ৬-৯ সিরিজের জয়জয়কারের পর বের হলো এনভিডিয়ার সেকেন্ড জেনারেশন গ্রাফিক্স কার্ড জিটিএক্স ২০০ সিরিজ।
এনভিডিয়ার নতুন এই সিরিজের জিপিইউ বানাতে কাজ করেছে তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা কোম্পানি TSMC (Taiwan Semiconductor Manufacturing Company)। ১.৪ বিলিয়ন ট্রান্সজিস্টরের সমন্বয় করা হয়েছে এর ৬৫ ন্যানোমিটারের প্রসেসে। ৫৭৬ বর্গ মিলিমিটারের এই চিপকে TSMC তাদের বানানো সবচেয়ে বড় আকৃতির জিপিইউ বলে উল্লেখ করেছে। কারণ জিফোর্স ৮৮০০ ও ৯৮০০-এর জিপিইউ চিপ এ৯২ ছিল ৩৩০ বর্গ মিলিমিটারের, যার তুলনায় নতুন জিপিইউ অনেকাংশে বড়।
নতুন এই পণ্যের স্লোগান একটি নয়, দুটি। তা হচ্ছে Beyond Gaming ও Gaming Beyond।
প্রথম স্লোগানে বোঝানো হচ্ছে নতুন জিপিইউগুলো প্রাইমারি থ্রিডি গেমস ও স্ট্যান্ডার্ড পিসি ডিসপ্লের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তার মানে হচ্ছে শুধু গেমের ক্ষেত্রেই নয়, নন গেমিং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর গ্রাফিক্স কোয়ালিটি আরো সাবলীল করে তুলবে এই জিপিইউগুলো। আর দিবতীয় স্লোগান দিয়ে বোঝানো হচ্ছে জিটিএক্স ২০০ সিরিজের জিপিইউগুলো নতুন গেমে ব্যবহার করা প্রযুক্তিগুলোর সাথে সফলভাবে কাজ করবে। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে- নতুন গেমিং ইফেক্ট, ডাইনামিক রিয়ালিজম, উঁচুমানের সিন ও ক্যারেক্টার ডিটেইলস, ন্যাচারাল ক্যারেক্টার মোশন, নিখুঁত ফিজিক্স ইফেক্ট ইত্যাদি ফুটিয়ে তুলতে এর জুড়ি মেলা ভার। এই সিরিজে বের হয়েছে দুটি কার্ড, তার নাম যথাক্রমে GTX 260 ও GTX 280। নিচে মডেল দুটির বর্ণনা তুলে ধরা হলো।
GTX 260 : ২০০ সিরিজের প্রথম গ্রাফিক্স কার্ড হচ্ছে GTX 260। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ৮৯৬ মেগাবাইটের GDDR3 মেমরি, সাথে রয়েছে ৪৪৮ বিটের মেমরি কন্ট্রোলার। এই কার্ডের মেমরি ক্লক হচ্ছে ৯৯৯ মেগাহার্টজ। GTX 260-এর চিপে ব্যবহার করা হয়েছে ১৯২টি প্রসেসিং কোর, যা ১২৪২ মেগাহার্টজে প্রসেস করার ক্ষমতা রাখে। এর ১৮২ ওয়াটের বিদ্যুত চাহিদা মেটানোর জন্য ২টি ৬ পিনের পাওয়ার কানেক্টর লাগবে।
GTX 280 : এই সিরিজের দিবতীয় কার্ডটি হচ্ছে GTX 280, যাকে বলা হচ্ছে এখন পর্যন্ত বানানো শক্তিশালী গ্রাফিক্স কার্ডগুলোর মধ্যমণি। ১১০৭ মেগাহার্টজ ক্লক স্পিডের ১০২৪ মেগাবাইটের GDDR3 মেমরির গ্রাফিক্স কার্ডটিতে রয়েছে ৫১২ বিট মেমরি কন্ট্রোলার ও ৬০২ মেগাহার্টজের গ্রাফিক্স ক্লক। চিপে ২৪০টি প্রসেসিং কোর থাকার কারণে এটি ১২৯৬ মেগাহার্টজে খুব সহজেই ডাটা প্রসেস করতে পারে। এই কার্ডের শক্তির চাহিদা অনেক বেশি। প্রায় ২৩৬ ওয়াটের বিদ্যুতের চাহিদা মোটানোর জন্য একে ১টি ৬ পিন ও ১টি ৮ পিনের পাওয়ার কানেক্টরের সাথে যুক্ত করতে হবে।
২০০ সিরিজের কার্ডে যে টেকনোলজিগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো হলো :
এনভিডিআর দ্বিতীয় প্রজন্মে ইউনিফাইড আর্কিটেকচার : এই আর্কিটেকচারে ফার্স্ট জেনারেশনের চেয়ে বেশি প্রসেসিং কোর থাকার কারণে শেডিংয়ের ক্ষমতা অবিশ্বাস্য গতিতে বেড়ে গেছে। যার ফলশ্রুতিতে গেমিং পারফরমেন্স ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
NVIDIA PhysX™-Ready : জিফোর্সের জিপিইউগুলোতে এই টেকনোলজির ব্যবহার গেমের পরিবেশের বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
3-way NVIDIA SLI Technology : এই টেকনোলজিতে ত্রিমুখী AFR (Alternate Frame Rendering) থাকার কারণে গেমের পারফরমেন্স খুব ভালোমানের হয়ে ওঠে ও খুব দ্রুততার সাথে উইন্ডোজ ভিসতায় তাল মেলাতে পারে। এই টেকনোলজির ফলে দুটি একই মান ও সিরিজের পিসিআই এক্সপ্রেস কার্ড পাশাপাশি বসিয়ে গ্রাফিক্স কার্ডের ক্ষমতা দিবগুণ করা যায়। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন হবে পর্যাপ্ত কুলিং ও পাওয়ার সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা।
NVIDIA CUDA Technology : CUDA (Compute Unified Device Architecture) টেকনোলজির ফলে জিপিইউর প্রসেসিং কোরের কার্যক্ষমতা বহুগুণে বেড়ে গেছে আগের চেয়ে।
NVIDIA PureVideo HD Technology : হাই ডেফিনেশন ভিডিও ডিকোডার ও পোস্ট প্রসেসিংয়ের সমন্বয়ে গঠিত এই টেকনোলজির গুণ হচ্ছে, এটি ছবিকে করে তোলে পরিষ্কার, স্বচ্ছ, নিখুঁত ও প্রাণবন্ত।
NVIDIA HybridPower Technology : পিসিতে পাওয়ারের ঘাটতি হলে যাতে কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য বানানো হয়েছে এই টেকনোলজি। যাদের পিসির পাওয়ার সাপ্লাই কম মানের তাদের জন্য এটি বেশ কাজে দেবে।
এই সিরিজের গ্রাফিক্স কার্ডগুলো বানানোর লক্ষ্য ও সুবিধাগুলো হচ্ছে :
ডিরেক্ট এক্স ১০ ও ওপেন জিএল ২.১-এর সাথে পুরোপুরি সমর্থন।
৮৮০০ জিটিএক্সের চেয়ে দিবগুণ ক্ষমতার অধিকারী।
রিব্যালেন্স আর্কিটেকচার ব্যবস্থা, যা পরবর্তী দিনের জটিল শ্রেডার ও বেশি মেমরির চাহিদা মেটাবে।
প্রতি ওয়াট ও প্রতি বর্গ মিলিমিটারের দক্ষতা বাড়িয়ে তাকে আরো কর্মক্ষম করার জন্য দেয়া হয়েছে উন্নত গঠন ব্যবস্থা।
পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যাতে শক্তির খরচ কম হয়।
সর্বোচ্চ ডিজিটাল রেজ্যুলেশন ২৫৬২×১৬০০।
সর্বোচ্চ ভিজিএ রেজ্যুলেশন ২০৪৮×১৫৩৬।
পিক্সেল শ্রেডার ৪ সমর্থিত।
বাস সাপোর্ট-পিসিআই-ই ২.০×১৬।
ডেডিকেটেড অন-চিপ ভিডিও প্রসেসর।
নয়েজ রিডাকশন ক্যাপাবিলিটি।
এডজ এনহ্যান্সমেন্ট।
ব্যাড এডিট কারেকশন।
ব্লু-রে ডুয়াল-স্ট্রিম হার্ডওয়্যার এসেলারেশন।
ডাইনামিক কন্ট্রাস্ট ও টোন এনহ্যান্সমেন্ট।
মাইক্রোসফট ভিডিও মিক্সিং রেন্ডারার (VMR) সমর্থন।
ডাইনামিক ক্লক ও ভোল্টেজ স্কেলিং।
HDTV ও Dual Link DVI ডিসপ্লে কানেক্টর ও মাল্টি মনিটর সুবিধা।
কার্ডগুলো লম্বায় ১০.৫ ইঞ্চি বা ২৬৭ মিলিমিটার ও প্রস্থে ৪.৩৭৬ ইঞ্চি বা ১১১ মিলিমিটার।
পুরোপুরিভাবে উইন্ডোজ ভিসতা সমর্থিত।
আগের জেনারেশনের গ্রাফিক্স কার্ডগুলোর মধ্যে ৮ সিরিজের মধ্যে অন্যতম ছিল ৮৮০০ আল্ট্রা ও ৯ সিরিজের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাবান গ্রাফিক্স কার্ড ছিল ৯৮০০ জিএক্স২, যাকে ১০০ সিরিজের গ্রাফিক্স কার্ড বলেও উল্লেখ করা হয়। দুই জেনারেশনের গ্রাফিক্স কার্ডের মধ্যে পরবর্তী জেনারেশনের গ্রাফিক্স কার্ডগুলো পারফরমেন্সের দিক থেকে দেড় গুণ এগিয়ে। তাদের মাঝে পার্থক্যের তালিকাটি এখানে দেয়া হলো।
পারফরমেন্সের কথা চিন্তা করলে GTX 260 কার্ডটি GTX 280-এর তুলনায় মাত্র ১৮% কম শক্তিশালী। কিন্তু দামের দিক থেকে GTX 260 ৮০% কম GTX 280-এর চেয়ে। GTX 260-এর দাম রাখা হয়েছে ৩৯৯ মার্কিন ডলার ও GTX 280-এর দাম রাখা হয়েছে ৬৪৯ মার্কিন ডলার। তাই GTX 260 কেনাটাই বেশি সাশ্রয়ী নয় কি?