বৈচিত্র্যময় পরিবেশ ও প্রাণিকুল নিয়ে গড়ে উঠেছে আফ্রিকার বিশাল সাম্রাজ্য। এই মহাদেশে যেমন রয়েছে ধু ধু প্রান্তর, তেমনি রয়েছে বিস্তর বনভূমি। সুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত এই সাম্রাজ্যে বিচরণ করে বেড়ায় নানা জাতের তৃণভোজী প্রাণী। তাদের মধ্যে রয়েছে জেব্রা, ওয়াইল্ড বিস্ট, গ্যাজেল, বাফেলো, ইম্পালা নামের হরিণ, জেমসবক নামের প্রাণী। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বা ডিসকভারি চ্যানেলে এই দৃশ্য হয়তো অনেকেই দেখে থাকবেন। কিন্তু পিসির সামনে বসে গেমের দুনিয়ায় যদি সামনে ভেসে আসে এই রকমের কোনো প্রেক্ষাপট, তবে ব্যাপারখানা কেমন লাগবে, একবার ভাবুন তো? চোখের সামনে বিশাল তৃণভূমি, তার মাঝে এঁকেবেঁকে গেছে সরু পথ, মাঝে মাঝে দু-একটা বড় গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, তার মাঝে একা পথ হেঁটে যাচ্ছেন, ভাবতেই দেহে বয়ে যায় এক রোমাঞ্চকর অভিযানের শিহরণ। এরকম পরিবেশেই বানানো হয়েছে ফারক্রাই ২ নামের গেমটি।
ফারক্রাই সিরিজের ২য় পর্ব এটি। ফারক্রাই নামের ফার্স্ট পারসন শূটিং গেমটি বের হয়েছিল ২০০৪ সালে। গেমটি ডেভেলপ করেছিল জার্মানির বিখ্যাত গেম ডেভেলপার কোম্পানি ক্রাইটেক আর পাবলিশ করেছিল ইউবিসফট নামের প্রতিষ্ঠান। মুক্তি পাওয়ার চার মাসের মাথায় প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার কপি বিক্রি হয়েছিল, আর এখন তা ১ মিলিয়নের কোঠা ছাড়িয়ে গেছে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি, কারণ গেমটি বাজারে বের হবার সাথে সাথেই ফারক্রাই ভক্তরা ভিড় করেছেন গেম বিপণিগুলোতে। এবারেও গেমটি পাবলিশ করেছে ইউবিসফট কিন্তু ডেভেলপ করেছে তাদেরই গেম ডেভেলপিং কোম্পানি ইউবিসফট মন্ট্রেইল। গেমের ডিজাইনার হচ্ছেন ক্লিন্ট হকিং। প্রথম বিপুল জনপ্রিয়তার ফলে গেমটি কন্সোলেও ভিন্ন নামে বের হয়েছিল। এক্সবক্সের জন্য গেমটি বের করা হয়েছিল ফারক্রাই-ইনস্টিনক্ট নামে এবং উইই কন্সোলের জন্য বের হয়েছিল ফারক্রাই-ভেনজেন্স নামে। ফারক্রাই নামে একটি মুভিও মুক্তি পেয়েছে, যার প্রধান চরিত্র জ্যাক কারভারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন টিল শোয়েইজার।
প্রথম গেমের কাহিনীতে ছিল প্রাক্তন স্পেশাল ফোর্সের সদস্য জ্যাক কারভার নামের চরিত্র। একজন নিখোঁজ সাংবাদিক তরুণীর খোঁজে গিয়ে মার্সেনারিদের হামলায় আক্রান্ত হয় জ্যাক। সে আশ্রয় নেয় দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের এলাকা মাইক্রোনেশিয়ার এক দবীপে। সেখানে তার মোকাবেলা হয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পারদর্শী এক পাগল বৈজ্ঞানিক ক্রিগারের সাথে। কিন্তু ফারক্রাই ২ গেমটি ফারক্রাই সিরিজের সিক্যুয়াল হলেও এতে কাহিনীর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। এই গেমে নতুন কাহিনীর সাথে সাথে আনা হয়েছে নতুন কিছু চরিত্র। এই গেমে রয়েছে অনেক চরিত্র, পছন্দমতো যেকোনোটিকে নিয়ে খেলা যাবে। এদের মধ্যে রয়েছে মার্টি, ওয়ারেন, পল, জসিপ, ফ্রাঙ্ক, হাকিম, আন্দ্রে, কুরবানি সিংসহ আরো অনেকে। গেমের কাহিনীতে গেমারকে খেলতে হবে সুদূর সেন্ট্রাল আফ্রিকায় একজন মার্সেনারির বেশে। জ্যাকাল নামের এক ধুরন্ধর অস্ত্র ব্যবসায়ীকে খুঁজে বের করে তাকে মেরে ফেলাটাই হবে আপনার কাজ। কিন্তু এর মাঝে পুরো করতে হবে আরো নানা মিশন। গেমটি ওপেন ওয়ার্ল্ডভিত্তিক, তাই নিজের ইচ্ছেমতো খেলার স্বাধীনতা রয়েছে। একটি স্থানে যাওয়ার অনেক পথ ও মাধ্যম রয়েছে, তাই যার যেভাবে খুশি খেলতে পারবেন। গেমে আপনাকে সাহায্য করার জন্য কিছু চরিত্র থাকবে আপনার বন্ধু হিসেবে। গেমে অস্ত্রগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেমন- হ্যান্ড টু হ্যান্ডে রাখা হয়েছে ম্যাচেটি নামের ধারালো ছুরি; প্রাইমারিতে রাখা হয়েছে লং রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, শটগান; সেকেন্ডারিতে দেয়া হয়েছে পিস্তল, বোম্ব ও স্পেশাল ক্যাটাগরিতে দেয়া হয়েছে এমজি ও আরপিজি নামের ভারি অস্ত্র। এছাড়া ক্যাম্প, বাঙ্কার, জিপ, বোটের সাথে লাগানো হেভি মেশিনগান তো রয়েছেই। বাহন হিসেবে পাবেন অনেক ধরনের কার, জিপ ও বোট।
গেমের অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা এলে প্রথমেই আসে গেমের রিয়ালিটির কথা। গেমে গুলি লেগে আহত হলে ছুরি দিয়ে কেটে গুলি বের করা, ক্ষতস্থান পুড়িয়ে নেয়া বা পেইন কিলার ইঞ্জেকশন নেয়ার ব্যাপারটি অসাধারণ। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে সময়মতো ট্যাবলেট খেতে হবে। চলন্ত গাড়ি থেকে ডাইভ দিয়ে নামা যাবে, পানিতে সাঁতার কাটা যাবে, গাড়ি ঠিক করা যাবে, পুরনো অস্ত্র জ্যাম হয়ে গেলে সারিয়ে নেয়া যাবে, সুযোগ পেলে একটু ঘুমিয়েও নেয়া যাবে। অনন্য গেমে এত সুবিধা নেই বললেই চলে। গেমে সেফ হাউজে বিশ্রাম নেয়া যাবে ও ওয়েপন শপ থেকে অস্ত্র কেনা যাবে। গেমে রয়েছে দারুণ ডিজিটাল ম্যাপ, এতে অনেকগুলো মোডে দেখা লোকেশনগুলো যায়। প্রতিটি যানবাহনে রয়েছে জিপিএস মেশিন যাতে পথ না হারিয়ে যান। আরো রয়েছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের ব্যবস্থা।
প্রথম গেমটি বানানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল ক্রাইইঞ্জিন নামের গেম ইঞ্জিন, যা ছিল তখনকার সময়ের উঁচুমানের গেম ইঞ্জিনগুলোর একটি। ক্রাইইঞ্জিন ২-এর ওপরে বানানো হয়েছিল ক্রাইসিস নামের গেমটি। ফারক্রাই-২ গেমটি তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে নতুন গেম ইঞ্জিন এবং এর নাম দেয়া হয়েছে ‘দুনিয়া’। অসাধারণ এই গেম ইঞ্জিনের জাদুর ছোঁয়ায় গেমের পরিবেশ পেয়েছে অপরূপ বাস্তবতা। আফ্রিকার পরিবেশের আমেজ তুলে ধরার জন্য এতটুকু কার্পণ্য করেননি গেম ডেভেল-পাররা। তাদের শ্রম বৃথা যায়নি একথা বলতে বাধ্য হবেন, যখন আপনি গেমের গ্রাফিক্স ও সাউন্ডের মান নিজ চোখে দেখবেন ও কানে শুনবেন। প্রতিটি বস্তু ও গেমের পরিবেশ এতটাই নিখুঁত করে তুলে ধরা হয়েছে যে মনে হবে না গেম খেলছেন। মনে হবে দুর্দান্ত কোনো অ্যাকশন ও অ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর মুভি দেখছেন পর্দার সামনে বসে। এই গেমের সাথে সংযোজন করা হয়েছে ম্যাপ এডিটর নামের এক সফটওয়্যার, যার ফলে আপনি নিজে ম্যাপ তৈরি করে তা খেলতে পারবেন।
গেমের যেমন উঁচুদরের গ্রাফিক্স কোয়ালিটি তেমন ভালোমানের পিসি কনফিগারেশন হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কি? কিন্তু গেমটির চাহিদার কথা মাথায় রেখে গেম চালাতে যে কনফিগারেশন হওয়ার কথা ছিল, তার চেয়ে কিছুটা কমই রাখা হয়েছে। কারণ গেমের জন্য ন্যূনতম দরকার পেন্টিয়াম ৪, ৩.২ গি.হা. বা এএমডি এথলন ৩৫০০+ মানের প্রসেসর, ১ গি.বা. র্যা ম, পিক্সেল শ্রেডার ৩.০ সংবলিত ২৫৬ মে.বা. মেমরির গ্রাফিক্স কার্ড ও ৬ গি.বা. হার্ডডিস্ক স্পেস। গেমটি ভিসতায় চালাতে ২ গি.বা. র্যা ম লাগবে। এটিআই রেডনের ক্ষেত্রে ১৬৫০ মডেল বা তার চেয়ে ভালোমানের হলে ভালো হয়। সবার সুবিধার্থে জানানো যাচ্ছে, জিফোর্সের ক্ষেত্রে পিক্সেল শ্রেডার ৩.০ সাপোর্টেড কার্ড হচ্ছে ৭ সিরিজের কার্ডগুলো, কিন্তু ৬ সিরিজের ৬৮০০ মডেলটিও পিক্সেল শ্রেডার ৩.০ সমর্থন করে।
ফিডব্যাক : shmt_21@yahoo.com