বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের চূড়ামত্ম বিজয় অর্জন করেছিলাম ৯ মাসের সশস্ত্র এক অকুতোভয় লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। সেই থেকে ডিসেম্বর প্রতি বছর আমাদের সামনে এসে হাজির হয় বিজয়ের এক বারতা নিয়ে। আমরা যথারীতি নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিজয়োৎসবে মেতে উঠি। কিন্তু আমরা কজনই বা গভীরভাবে ভেবে দেখি একাত্তরের ডিসেম্বরের মুক্তিযুদ্ধের সেই গৌরবজনক বিজয়ের রেশ কতটুকু ধরে রাখতে পেরেছি। সেই বিজয়ের দিনটির পরবর্তী সময়ে আমরা একে একে ৩৬টি বিজয় দিবস উদ্যাপন করেছি, আর মাত্র কয়দিন পর আরেকটি বিজয় দিবস পালন করতে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা কি হিসেব করে দেখেছি, জাতীয় জীবনে আমাদের সত্যিকারের বিজয় কতটুকু অর্জিত হয়েছে? সে হিসেব কষতে গেলে ব্যর্থতার নানা উপসর্গগুলোই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। আজো আমরা অর্থনৈতিকভাবে পরনির্ভরশীল এক জাতি। ভৌগোলিক স্বাধীনতা হয়তো অর্জিত হয়েছে, কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আসেনি। রাজনৈতিক স্বাধীনতা এখনো প্রহেলিকাসম। এখনো আমাদের অর্থনীতি ও রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ কার্যত বিদেশী নানা স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে। স্বাধীন পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের অর্থনীতি যেমন চলে না, তেমনি রাজনীতি বার বার লাইনচ্যুত হয় বিদেশীদের অঙ্গুলি হেলনে। জাতির ঘাড়ে যখন-তখন চেপে বসে অসাংবিধানিক অনিয়মতান্ত্রিক শাসন। এর পেছনে কারণ অনেক এবং নানাধর্মী। তবে সবচেয়ে বড় কথা আমরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল বলেই এমনটি ঘটছে। অতএব আমাদের বিজয়কে অর্থবহ করে তুলতে হলে সবার আগে প্রয়োজন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন। আর এক্ষেত্রে প্রধান হাতিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি। যেহেতু আমাদের দেশটি প্রকৃতিগতভাবে কৃষিপ্রধান, তাই স্বভাবতই জোরালো তাগিদ আসে ই-কৃষির। অথচ এই ই-কৃষির বিষয়টির ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান এখনো সূচনাপর্বে। ই-কৃষি জোরদার করতে না পারলে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ আত্মনির্ভরশীল জাতি গড়ে তোলা কতটুকু সম্ভব হবে, সে ব্যাপারে সংশয়-সন্দেহ প্রকাশের সমূহ কারণ রয়েছে।
ই-কৃষি নামের এ পদবাচ্যে ই প্রতিনিধিত্ব করে ইলেকট্রনিক শব্দটির। তাহলে ই-কৃষি বলতে আমরা বুঝবো ইলেকট্রনিক-কৃষি। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে কৃষকদের তথ্যসমৃদ্ধ করে তুলতে পারে ই-কৃষি। ই-কৃষির মাধ্যমে যখন একজন কৃষক আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেকে তথ্যসমৃদ্ধ করে তোলেন, তখন তিনি হয়ে ওঠেন বিশিষ্ট এক কৃষক। যার নাম দেখা যায় ই-কৃষক। তাহলে ই-কৃষক হচ্ছেন কৃষি, কৃষক ও তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ সমন্বয়ের অপর নাম। বাংলাদেশে ই-কৃষির ক্ষেত্রে কিছু কাজ শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। বেশ কিছু সংগঠন এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তা তাদের এ উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নিতে পারে যথার্থ গতিশীলতার মধ্য দিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা, সরকারি ও বেসরকারি খাতের এক্ষেত্রে ভূমিকা পালনের নানা ক্ষেত্র রয়েছে। তবে বেসরকারি খাত এক্ষেত্রে হতে পারে প্রতিনিধিত্বশীল শক্তি। যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে গেলে এদেশে ই-কৃষি ব্যাপকধর্মী সাফল্য বয়ে আনবে, সে দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের আছে। আর সে বিশ্বাসের সূত্রে আমরা বিজয় দিবসের এ মাসের কমপিউটার জগৎ-এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের বিষয়বস্ত্ত করেছি ই-কৃষি। আশা করি পাঠকরা ই-কৃষি সম্পর্কে বিসত্মারিত জানার সুযোগ পাবেন। সেই সাথে ই-কৃষিকে হাতিয়ার করে দেশের কৃষির সর্বোচ্চ উন্নয়ন নিশ্চিত করে আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াটুকুকে নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হবেন। সেই সমৃদ্ধিসূত্রে একাত্তরে অর্জিত আমাদের বিজয়কে অর্থবহ করে তুলবে আজ ও আগামী দিনের জন্য। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে সে প্রত্যাশা আমাদের পক্ষ থেকে রইল।
সম্প্রতি দেশে ঘোষিত হয়েছে জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা। আমরা জেনেছি, এই নীতিমালার বাসত্মবায়ন হলে সারাদেশে সাধারণ মানুষ আরো সহজে ও সসত্মায় ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের সুবিধা পাবে। এই নীতিমালায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্রডব্যান্ডের একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে এবং সেই সাথে ব্রডব্যান্ডসেবার মান নিয়ন্ত্রণের নীতিমালাও ঘোষিত হয়েছে। আমরা নতুন এই ব্রডব্যান্ড নীতিমালাকে স্বাগত জানাই। এছাড়া সম্প্রতি জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতিমালাও উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। এ পদক্ষেপটিও আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
এ মাসেই আমরা পালন করতে যাচ্ছি পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। পবিত্র এ ঈদোৎসব উপলক্ষে আমরা আমাদের লেখক, পাঠক, গ্রাহক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা, পৃষ্ঠপোষক ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা।