কৃষকের দোরগোড়ায় তথ্যসেবা পৌঁছে দেবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সেবা বিভাগ অর্থাৎ এআইএস। দেশের ১০টি জেলার ১০টি গ্রামে ‘কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র’ (এআইসিসি) গড়ে তোলা হয়েছে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। এআইসিসি গড়ে উঠেছে আইসিএম/আইপিএম ক্লাবভিত্তিক যা গ্রাম পর্যায়ে অবস্থিত এবং স্থানীয় একদল কৃষকের নেতৃত্বে পরিচালিত।
বক্তব্য রাখছেন মতিয়া চৌধুরী
আইসিএম/আইপিএম ক্লাবগুলো হলো ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার চিনিসপুর, নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার বারহাট্টা ইউনিয়ন, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ফকিরেরহাট, রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলার মুগরইল, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার নিয়ামতপুর, সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার জামালগঞ্জ, চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার হাটহাজারী, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্মণপুর, কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর এবং খুলনা বিভাগের যশোর জেলার বাঘারপাড়া ক্লাব।
বক্তব্য রাখছেন স্থপতি ইয়াফেস ওসমান
এআইএস-এর এই উদ্যোগে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম। এটুআই ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত এবং তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবস্থিত। এআইসিসি এটুআই-এর একটি কুইক উইন ইনিসিয়েটিভ। এআইসিসি এটুআই প্রোগ্রামে কুইক উইন ইনিসিয়েটিভ হিসেবে বিবেচিত হয় ২০০৮ সালের মে ও জুন মাসে। ওই সময়ে এটুআই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘ই-গভর্নেন্স সার্ভিসেস’ শীর্ষক একাধিক কর্মশালা আয়োজন করে। এই কর্মশালায় বাংলাদেশ সরকারের সব মন্ত্রণালয় থেকে সচিবরা উপস্থিত হন। সচিবরা কর্মশালায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে একটি করে ই-সার্ভিস নির্বাচন করেন যা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব। কৃষি মন্ত্রণালয় কুইক উইন হিসেবে এআইসিসি নির্বাচন করে।
এআইসিসি মডেল
এআইসিসির মডেল হলো পাবলিক প্রাইভেট পিপলস পার্টনারশিপ (পিপিপিপি)। অর্থাৎ এআইসিসি স্থাপিত হবে কোনো আইসিএম/আইপিএম ক্লাবে। এআইসিসি পরিচালনা করবে ওই ক্লাবগুলো। ক্লাবগুলোর অবকাঠামোসহ এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও ওই ক্লাবগুলোর। পাশাপাশি ক্লাবগুলো এআইসিসিতে তাদের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে জামানত হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ রাখছে। ক্লাব ও এআইএস-এর মধ্যে এ জন্য একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর করা হয়। ইউএনডিপি এআইসিসিতে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করার পাশাপাশি জীবিকাভিত্তিক ডিজিটাল তথ্যভান্ডার তৈরি করে দিচ্ছে। এআইসিসিতে যে ডিজিটাল তথ্যভান্ডার থাকবে তা যাচাই করার ভূমিকা পালন করছে এআইএস। টেকসই এআইসিসি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ক্লাবগুলোর জন্য যে ক্যাপাসিটি ও দক্ষতা দরকার তা নিশ্চিত করছে এআইএস। এটুআই এতে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।
আইসিএম/আইপিএম ক্লাবগুলো দায়িত্ব নিয়েছে এআইসিসি-কে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে টেকসই করে গড়ে তোলার। দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে ক্লাবের সদস্য অর্থাৎ কৃষকরা সিদ্ধান্ত নেয় তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো এআইসিসির মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বিশেষ করে কৃষকের দোরগোড়ায় তথ্যসেবা নিশ্চিত করা। তাদের বিশ্বাস, এর মধ্য দিয়ে কৃষকদের জন্য দ্রুত, সহজে ও হয়রানিমুক্ত তথ্যসেবা নিশ্চিত হবে এবং এর ফলে কৃষকদের সার্বিক জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। ক্লাবগুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যাপক তথ্যসচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে- এর লক্ষ্য হলো কৃষকদের মধ্যে এআইসিসির ওপর গভীর মালিকানাবোধ গড়ে তোলা।
কৃষকদের জন্য তথ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো এআইসিসি-কে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা। এ জন্য তাদের পরিকল্পনা হলো এআইসিসি পরিচালনা ব্যয় মেটানো হবে এআইসিসির বাণিজ্যিক সেবা থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে। তবে এক্ষেত্রে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা হলো-স্থান ও পরিবেশভেদে প্রাথমিক অবস্থায় শুধু বাণিজ্যিক সেবার আয় দিয়ে সব ব্যয় মেটানো সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে এআইসিসিতে কোনো না কোনোভাবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ অনিবার্য। অবশ্যই তা ‘ভর্তুকি’ নয়। অভিজ্ঞতা হলো ‘ভর্তুকি’ উদ্যোক্তা মানসিকতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করে। এই বিবেচনা থেকেই ক্লাবগুলো বাণিজ্যিক সেবার পাশাপাশি এআইসিসিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে আর একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তা হলো-‘পারিবারিক তথ্যসেবা কার্ড’-এর প্রচলন করা। অর্থাৎ এআইসিসিকে টেকসই করার ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা।
এই কার্ডের সফল অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় সিরাজগঞ্জ জেলার মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদ ও দিনাজপুর জেলার মুশিদহাট ইউনিয়ন পরিষদে ইউএনডিপির অর্থায়নে পাইলট প্রজেক্ট ‘ইউনিয়ন পরিষদভিত্তিক কমিউনিটি ই-সেন্টার’ (সিইসি) থেকে। এই দুই ইউনিয়ন পরিষদে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও ইউনিয়ন পরিষদ যৌথ আলোচনার মাধ্যমে ‘পারিবারিক তথ্যসেবা কার্ড’ প্রচলন করে। সেখানে কৃষক ও অন্যান্য পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কার্ড সংগ্রহ করে সিইসিকে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে। একটি কার্ড একটি পরিবারের জন্য, তবে কোনো কোনো পরিবার একাধিক কার্ডও সংগ্রহ করে। প্রতিটি কার্ডের মূল্য ১০০ টাকা। কোনো দরিদ্র পরিবার একবারে ১০০ টাকা পরিশোধ না করতে পারলে তা কয়েক ধাপে পরিশোধ করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা শোনার পর প্রতিটি ক্লাব ‘পারিবারিক তথ্যসেবা কার্ড’ তৈরির পরিকল্পনা করছে।
ডিজিটাল তথ্যভান্ডার
এআইসিসিতে অফলাইন ও অনলাইনের বিশাল ডিজিটাল তথ্যভান্ডার রয়েছে। এআইসিসিতে কেবল কৃষিবিষয়ক তথ্য পাওয়া যাবে এমনটা নয়, বরং তা অনেক বেশি জীবিকাভিত্তিক তথ্যসেবায় সমৃদ্ধ। অফলাইন তথ্যভান্ডার থেকে এনিমেশন, ভিডিও, অডিও ও টেক্সট-এই চার ফরমেটে তথ্য পাওয়া যায়। এর বাইরে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিশেষজ্ঞ মতামত, তাৎক্ষণিকভাবে হেল্প ডেস্ক থেকে সেবা পাবার সুযোগ। অনলাইনে এআইএসের ওয়েবসাইটসহ অন্যান্য লিঙ্ক তো আছেই।
সিডিতে (অফলাইন) প্রধানত কৃষিবিষয়ক তথ্য পাওয়া যায়। যেমন-মাঠ ফসলের (ধান, গম, ফল, শাকসবজি প্রভৃতি) বিভিন্ন জাত, এর আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি, সার-কীটনাশক প্রয়োগ পদ্ধতি, আগাছা দমন ব্যবস্থা, ফসলে পোকামাকড়ের সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্পর্কিত তথ্য, হাঁসমুরগি, গবাদিপশু, মৎস্যবিষয়ক বিভিন্ন তথ্য যেমন- বিভিন্ন জাত, খাদ্য, চাষ পদ্ধতি, রোগের ধরন, রোগ দমন। দেখা যায়, কৃষির পাশাপাশি বিভিন্ন লিঙ্গ ও বয়সের মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ে তথ্য জানতে আসে। এআইসিসিতে স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় যেমন-চোখ, দাঁত, শ্বাসতন্ত্র, হাড়ের অসুখ, স্নায়ুতন্ত্র, নাক-কান-গলারোগ, হৃদরোগ, মূত্রতন্ত্র, যৌনরোগ, চর্মরোগ, স্ত্রীরোগ, গর্ভকালীন সমস্যা, শিশুরোগ, সংক্রামক ব্যাধি, মানসিকরোগ, প্রাথমিক চিকিৎসা, শৈল্য চিকিৎসা, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি প্রভৃতি। তথ্য পাওয়া যায় এসব রোগের লক্ষণ, রোগ প্রতিরোধ, হাসপাতাল, চিকিৎসক, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত। রয়েছে শিক্ষাবিষয়ক তথ্য যেমন-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ভর্তি তথ্য, শিক্ষা বৃত্তি, শিক্ষা ঋণ প্রভৃতি। আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক তথ্য, ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন ও পরিচালনা সম্পর্কিত তথ্য এবং সর্বশেষ বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কিত তথ্যও পাওয়া যায়। এর বাইরে এআইসিসি থেকে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন তথ্য, লাগসই প্রযুক্তিবিষয়ক তথ্য, আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক তথ্য, অকৃষি উদ্যোগবিষয়ক তথ্য পাওয়া সম্ভব।
এআইসিসিতে বিভিন্ন সেবা পাওয়া যায় যা পেতে মানুষকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়, হতে হয় প্রতারিত। এসব সেবার মধ্যে রয়েছে-বিভিন্ন সরকারি ফরম, সরকারি সার্কুলার, বিধি, বিজ্ঞপ্তি এবং বিভিন্ন ডকুমেন্ট। রয়েছে জন্ম নিবন্ধনকরণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ করার ব্যবস্থা। পাওয়া যায় নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট, এমপিওভুক্তির তথ্য, ভিজিএফ/ভিজিডি কার্ডের তালিকা, এসএসসি/এইচএসসি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সরকারি পরীক্ষার ফল, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের তালিকা ও কর্মপরিধি, পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন জরিপ, বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা এবং এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও কর্তব্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ, কর্মসংস্থানবিষয়ক তথ্য এবং ইন্টারনেট ও মোবাইলের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মতামত জানার সুযোগ।
বাণিজ্যিক সেবা ও প্রয়োজনীয় উপকরণ
দ্রুত ও সুলভ মূল্যে মানুষ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সেবাও নিতে পারে এআইসিসি থেকে। যেমন-ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইল আদান-প্রদান, ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংবাদপত্র পাঠ, ভিডিও কনফারেন্স, মোবাইল ফোন ব্যবহার, মোবাইল রিচার্জ, কমপিউটার কম্পোজ ও প্রিন্ট, ছবি তোলা, লেমিনেটিং, স্ক্যানিং করা, ভিডিও প্রদর্শনীর আয়োজন, কমপিউটার প্রশিক্ষণ এবং আত্মকর্মসংস্থান সম্পর্কিত বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ। উল্লিখিত এসব তথ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি এআইসিসিতে পর্যাপ্ত উপকরণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপকরণগুলো হলো ২টি ডেস্কটপ কমপিউটার, ১টি ল্যাপটপ, ১টি মডেম, ১টি মোবাইল ফোন, ১টি প্রিন্টার, ১টি ওয়েব ক্যামেরা, ১টি ডিজিটাল স্টিল ক্যামেরা, ১টি স্ক্যানার, ১টি সাউন্ড সিস্টেম, ১টি জেনারেটর এবং ১টি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর।
এআইসিসি অফলাইন তথ্যভান্ডারের সব তথ্য বিনামূল্যে সরবরাহ করবে। সব বাণিজ্যিক সেবা এআইসিসি ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে তা সংগ্রহ করতে হবে। তবে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের পরামর্শ সেবা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। সব তথ্য ও সেবার মূল্য তালিকা (বিনামূল্য ও পরিশোধযোগ্য) করে তা এআইসিসির নোটিস বোর্ডে লাগানো থাকবে।
উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ উদ্বোধন : ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনা
আগেই বলেছি এআইসিসি পরিচালনা করবে একদল উদ্যোক্তা- যারা স্থানীয় কৃষক। এই কৃষকদের জন্য ‘কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ’ অনুষ্ঠিত হয় ২-৬ এপ্রিল, ২০০৯। প্রশিক্ষণ আয়োজন করে কৃষি তথ্য সার্ভিস বিভাগ এবং তা অনুষ্ঠিত হয় মিল্কি অডিটরিয়াম খামারবাড়ি ঢাকায়। প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে এটুআই ও এআইএস যৌথভাবে। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে নির্বাচিত ১০টি এলাকার ৩০ নারী-পুরুষ প্রতিনিধি, যাদের মধ্যে ২০ জন উদ্যোক্তা এবং ১০ জন সরকারি কৃষি মাঠকর্মী।
প্রশিক্ষণ উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, মন্ত্রী পরিষদ সচিব এম আবদুল আজিজ, কৃষি সচিব সি কিউ কে মুসতাক আহমেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এম. সাঈদ আলী এবং ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টেফান প্রিজনার। প্রশিক্ষণের চতুর্থ দিনে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার। প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান শওকত মোমেন শাহজাহান এমপি।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে দেশে তা এআইসিসির মাধ্যমে আরো গতিশীল হবে। আমি নিশ্চিত এই কার্যক্রম শুরু হলে কৃষকরা আমাদের চিন্তাকে ছাড়িয়ে অগ্রসর হবেন যা এখন আমরা ভাবতেও পারছি না। মাত্র দশটি এলাকায় শুরু হচ্ছে এজন্য কুণ্ঠিত হবার কিছু নেই। এটা শুরু। এর শেষ অনেক বিস্তৃত যা আমাদের দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়ে যাবে। আমি বিশ্বাস করতে চাই এসব এআইসিসি যখন নিজেরা তথ্য সৃষ্টি করতে পারবে তখন আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয়ে বর্তমানে আমরা যেভাবে তথ্য পাই তার চিত্র পাল্টে যাবে। তখন অনেক তথ্য সহজে ও সঠিকভাবে পাওয়া সম্ভব হবে। সকলকে সতর্ক করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, তবে যেটি খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো- এ সব এআইসিসির অবকাঠামো নির্মাণ করার জন্য কোনো ধানী জমি নষ্ট করা যাবে না। প্রয়োজনে পরবর্তীতে নতুন এআইসিসি করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ভবনকে ব্যবহার করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এদেশের মানুষের আরো অনেক অধিকার পাবার কথা ছিল। কিন্তু তারা তা পায়নি। দেশের অধিকাংশ মানুষের শিক্ষা না থাকলেও তাদের মনটা খোলা। এই খোলা মনের জায়গাটাতে যদি আমরা বীণা বাজাতে পারি, আমাদের সুর যদি তাদের মন ছুঁয়ে যায়, তবে এই অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ২০২১ সালের আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জন সহজ হবে বলে আমি মনে করি।
‘মানুষের বিশ্বাস ডিজিটাল প্রযুক্তি, এনে দেবে কৃষকের উন্নতি মুক্তি’
বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান স্বরচিত কবিতার ছন্দে বলেন, ‘মানুষের বিশ্বাস ডিজিটাল প্রযুক্তি, এনে দেবে কৃষকের উন্নতি মুক্তি’। তিনি বলেন, এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেবার পর আমার প্রথমেই মনে হয়েছিল প্রযুক্তি যদি কৃষকের কাজে না আসে তাহলে সেই প্রযুক্তির কোনো প্রয়োজন আছে কি-না। এটা বুঝতে আমি কাপাসিয়ার গ্রামের বাজারে একটি টেলিসেন্টার দেখতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি, কৃষকরা সেখানে ওয়েবসাইট থেকে খবর জানার চেষ্টা করছে। টেলিমেডিসিন দেখতে গিয়েছিলাম। ডাক্তার ঢাকায় বসেন কিন্তু রোগী চট্টগ্রামে। রোগী প্রেসক্রিপশন পেয়ে তা ক্যামেরায় তুলে ধরলেন যা দেখে ডাক্তার বুঝতে পারলেন যে তিনি প্রেসক্রিপশন ঠিকমতো পেয়েছেন। এটা দেখে আমার মনে হয়েছে, ‘ডিজিটালপ্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে দিন, তারই বড় নিদর্শন টেলিমেডিসিন’।
আরো এআইসিসি গড়ে তোলা প্রসঙ্গে এআইএস পরিচালক বলেন, ১০টি এলাকায় আমরা শুরু করছি, তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো আগামী ২০২১ সালের আগেই দেশের ৮৭ হাজার গ্রামে এআইসিসি গড়ে তোলা। এই সব কেন্দ্রের জন্য যে ডিজিটাল তথ্যভান্ডার দরকার তার কিছু আমরা তৈরি করেছি এবং বর্তমানে ইউএনডিপির অর্থায়নে আরো ডিজিটাল তথ্যভান্ডার তৈরি হচ্ছে, যা এআইসিসিগুলোতে পৌঁছে দেয়া হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষকদের একটি উল্লেখযোগ্য দাবি ছিল বিটিভিতে প্রতিদিন এবং বেশি সময় ধরে কৃষি খবর প্রচার করা। উদ্যোক্তারা জানান, মাটি ও মানুষ প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রচার করা উচিত- যখন মানুষ তাদের কাজ শেষ করে আরামে দেখতে পারবে। কৃষি সংবাদে বাজার মূল্য সম্পর্কেও তথ্য প্রচার করা জরুরি। সকলের প্রস্তাব ছিল যত দ্রুত সম্ভব একটি কৃষি চ্যানেল তৈরি করা।
কৃষি সচিব এআইসিসির টেকসই বিষয়ে কথা বলেন। তিনি মনে করেন, এআইসিসি-কে টেকসই হতে হবে নিজে নিজেই। এজন্য উদ্যোক্তাদের কিছু কিছু সেবার বিনিময়ে অবশ্যই অর্থ নিতে হবে মানুষের কাছে। এআইসিসি যদি এই প্রকল্প শেষ হবার পর নিজেরা দাঁড়াতে না পারে তাহলে তার অর্থ দাঁড়াবে আপনারা কোনো দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারেননি। ফলে এটা আপনাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। আমার বিশ্বাস, এই চ্যালেঞ্জ আপনারা সহজেই এবং অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে অর্জন করবেন।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : manikswapan@yahoo.com