২০০৭ সালে হঠাৎ করে প্রযুক্তি জগতে একটা গুজব রটে গেল যে, গুগল করপোরেশন এপলের আইফোনের সাথে প্রতিযোগিতা করতে একটি স্মার্টফোন বাজারে ছাড়তে যাচ্ছে। সবার মনে তখন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্থান হতে লাগল, গুগল কি হার্ডওয়্যারের ব্যবসায় শুরু করতে যাচ্ছে? গুগল কি আইফোনের মতো ডিভাইসসমূহের জন্য স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে? কোম্পানিটি কি হার্ডওয়্যারের জন্য মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভর করবে? এরকম অনেক প্রশ্নের অবসান ঘটাল অবশেষে গুগল নিজেই। এর প্রধান নির্বাহীরা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, গুগল শুধু ‘অ্যান্ড্রইড’ নামের একটি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি গুগলের অ্যান্ড্রইড অপারেটিং সিস্টেমচালিত একটি মোবাইল বাজারে ছাড়া হয়েছে। আর এ মোবাইলের হ্যান্ডসেট তৈরি করেছে হাইটেক কমপিউটার করপোরেশন (এইচটিসি) নামের তাইওয়ানভিত্তিক একটি কোম্পানি। যুক্তরাষ্ট্রে অ্যান্ড্রইডচালিত এ ফোনের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হলো টি-মোবাইল। টি-মোবাইল হচ্ছে পৃথিবীর একটি প্রতিষ্ঠিত মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে অ্যান্ড্রইড দারুণভাবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে চলছে, তাই হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী অনেক কোম্পানিই সম্প্রতি অ্যান্ড্রইডচালিত ফোন তৈরির পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে। উল্লেখ্য, গুগলের এ ফোনটির নাম দেয়া হয়েছে জি১। আমাদের এ নিবন্ধে গুগল ফোনের চমকপ্রদ কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে।
টাচ স্ক্রিন :
গুগল ফোনে রয়েছে টাচ স্ক্রিন সুবিধা। একটি আঙ্গুলের ছোঁয়ায় আপনি পুরো ফোনটি ব্রাউজ করতে পারবেন।
লক ও আনলক :
গুগল ফোন ব্যবহার করে আপনি আপনার তথ্যগুলো প্রাইভেট করে রাখতে পারবেন এবং দুর্ঘটনাকবলিত/ অনাকাঙ্ক্ষিত কল করা থেকে ফোনটিকে বিরত রাখতে পারবেন। এটি আপনার সেট করা কোনো একক প্যাটার্ন অনুসারে আপনার ফোনের স্ক্রিন লক করে দেবে। ফলে আপনি সহজেই আপনার ফোন এবং তথ্যকে নিরাপদ রাখতে পারবেন।
কোয়ার্টি কীবোর্ড :
গুগল ফোনের সাথে যুক্ত হয়েছে চমৎকার গঠনের একটি কোয়ার্টি কীবোর্ড। গুগল ফোনের ট্র্যাক বল এবং টাচ স্ক্রিন ব্যবহার করে এই কীবোর্ডের মাধ্যমে আপনি সহজেই ওয়েব ব্রাউজ করতে পারবেন, ই-মেইল টাইপ করতে পারবেন কিংবা টেক্সট লিখতে পারবেন। ফোনটি অনুভূমিকভাবে রেখে স্লাইডটি খুললেই কীবোর্ডটি দেখতে পাবেন।
ওয়ান টাচ গুগল সার্চ :
ওয়েব জগতের সাথে সম্পর্কিত যেকেউ আজকাল কোনো সমস্যার সমাধান খুঁজতে গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেন। গুগল ফোনের সাথে গুগল সার্চিং সুবিধা যোগ করা হয়েছে। এ ফোনে রয়েছে একটি গুগল সার্চ বার। সেখানে আপনার আঙ্গুলের একটি স্পর্শেই পেয়ে যাবেন গুগল সার্চিং অপশন।
ভয়েসের মাধ্যমে গুগল সার্চ :
এটি হাত ব্যবহার না করে কোনো কিছু সার্চ করার মাধ্যম। এ মাধ্যমটি যোগ করা হয়েছে গুগল ফোনে। এর মাধ্যমে আপনি কীবোর্ড ব্যবহার ব্যতীত শুধু আপনার ভয়েস ব্যবহার করে গুগল সার্চিং সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। কোনো কিছু সার্চ করার জন্য আকাঙ্ক্ষিত আইটেমটির নাম স্পষ্টভাবে ফোনের সামনে মুখে বললেই চলবে।
কন্টেক্সুয়াল সার্চ :
ধরুন, আপনি কোনো নির্দিষ্ট ফরমেটের ফাইল খুঁজছেন কিংবা কোনো একজন বন্ধুর কন্ট্যাক্ট অ্যাড্রেস খুঁজছেন। গুগল ফোনের কন্টেক্সুয়াল সার্চ অপশন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই এ ধরনের কাজ করতে পারবেন।
সহজলভ্য গুগল অ্যাপ্লিকেশন :
গুগল ম্যাপ, জিমেইল, ইউটিউব, গুগল ক্যালেন্ডার, গুগল টক- গুগলের এসব অ্যাপ্লিকেশনের কথা আমরা ওয়েব ব্যবহারকারীরা জানি। গুগল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে মাত্র এক আঙ্গুলের স্পর্শেই এসব অ্যাপ্লিকেশন অ্যাকসেস করা যাবে।
থ্রি-জি নেটওয়ার্ক এবং ওয়াই-ফাই অ্যাকসেস :
গুগল ফোনে রয়েছে উচ্চগতির থ্রি-জি নেটওয়ার্ক এবং ওয়াই-ফাই অ্যাকসেস সুবিধা। এতে টু-জি এবং এজ (EDGE) নেটওয়ার্কেও কাজ করা যায়।
৩.২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা :
গুগল ফোনের সাথে যুক্ত রয়েছে ৩.২ মেগাপিক্সেলবিশিষ্ট একটি ক্যামেরা, যার মাধ্যমে অনেক ভালোমানের ছবি তোলা যাবে। এ ফোনে ১ গিগাবাইট মেমরি রয়েছে (উল্লেখ্য, এতে ৮ গিগাবাইট পর্যন্ত মেমরি যোগ করা যাবে)। এখানে একটি বিল্ট-ইন অটোফোকাসের ব্যবস্থা আছে এবং ক্যামেরাটির জন্য একটি শর্টকাট বাটন রয়েছে।
ইউটিউব ভিডিও :
গুগল ফোন ব্যবহার করে ইউটিউবের মিলিয়ন মিলিয়ন ভিডিও আপনি উপভোগ করতে পারবেন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন।
অডিও প্লেয়ার :
গুগলের এ ফোনে রয়েছে একটি অত্যাধুনিক বিল্ট-ইন অডিও প্লেয়ার, যার মাধ্যমে আপনি যেকোনো ধরনের অডিও ফাইল চালাতে পারবেন।
কাস্টমাইজ্যাবল হোম স্ক্রিন :
গুগল ফোনের হোম স্ক্রিনটি আপনি আপনার ইচ্ছেমতো সাজাতে পারবেন। আপনার পছন্দের যেকোনো ছবি ব্যবহার করে ওয়ালপেপার বানাতে পারবেন। যেসব অ্যাপ্লিকেশন আপনি খুব বেশি ব্যবহার করেন কিংবা প্রতিদিন ব্যবহার করেন, সেসব অ্যাপ্লিকেশনকে ফোনের ডেস্কটপে এনে রাখতে পারবেন।
নোটিফিকেশন প্যান :
গুগলের তৈরি এ আধুনিক ফোনে রয়েছে একটি নোটিফিকেশন প্যান। এতে আপনার ডাউনলোডের হিসেব, মিসকল, ভয়েস কলসহ অনেক কিছু সংরক্ষিত থাকে।
কালার অপশন :
গুগল ফোন পাওয়া যাচ্ছে তিনটি বর্ণে। সাদা, ব্রোঞ্জ এবং কালো। ক্রেতারা তাদের ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই যেকোনো রঙের ফোন পছন্দ করতে পারে।
প্রিয় পাঠক, এ লেখার মাধ্যমে আমরা আপনাদের গুগল ফোনের বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। ‘ফোন’ নাম হলেও গুগল ফোনকে একটি পিডিএ (পার্সোনাল ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট) কিংবা ছোট কমপিউটারও বলা যেতে পারে। আমাদের এ লেখা আপনার ভবিষ্যৎ পিডিএ নির্বাচনের ব্যাপারে সহায়ক হবে বলে আশা করছি।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : rabbi1982@yahoo.com