২০১১ সালে জাপানে ৩০০ কোটি ডলারের তথ্যপ্রযুক্তি অফশোর আউটসোর্সিং বাজারের ৬০ হাজার জনবলের চাহিদা রয়েছে৷ আমাদের এই বিপুল ব্যবসায়ের সাথে সফল অংশীদারিত্ব প্রয়োজন৷ বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা আজ কোনো ভৌগোলিক সীমারেখায় কাজ করেন না৷ সেই সাথে উপার্জন ও সম্মান গগনচুম্বী৷ তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা আজ জাতির উত্তরণের জন্য জরুরি৷ নতুন প্রজন্মকে এই শিক্ষায় সুশিক্ষিত হয়ে ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সংকল্প নিতে হবে৷
জাপান সূর্যোদয়ের দেশ৷ কত রঙিন গল্পের আর বিভীষিকাময় ইতিহাসের দেশ এই জাপান৷ মার্কিনীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এক নজিরবিহীন পৈশাচিকতার দৃষ্টান্ত রেখেছিল হিরোশিমার বুকে আণবিক বোমা ফেলে৷ সেই দেশ আজ সূর্যোদয়ের আরো এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সফল প্রয়োগে৷ জাপান আজ বিশ্বব্যাপী হয়ে উঠেছে তরুণ প্রজন্ম তথা তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের প্রত্যাশিত গন্তব্য৷ এ লেখায় জাপানের বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের চাহিদা, তথ্যপ্রযুক্তি সম্ভারের বাজার এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশের এই লোভনীয় বাজারে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিকনির্দেশনা রয়েছে৷ বলে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস তথা বেসিস-এর প্রতিনিধিরা জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার সাথে এ সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক উন্মোচনের লক্ষ্যে জাপান সফর করেন৷ এই লেখায় জাপানের তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ, সেবার নানা দিক এবং জাইকা বাংলাদেশের পাইলট প্রকল্প ও বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে আলোকপাত করা হলো৷ সেই সাথে বেসিস প্রতিনিধদের জাপান সফরের অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের মতামতও প্রতিফলিত হলো৷
সিআইসিসি জাপান
গত মে মাসে সেন্টার ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন ফর কমপিউটারাইজেশন তথা সিআইসিসির এক সেমিনারে তামোকা আসাই জাপানে অফশোর সফটওয়্যার তৈরির বর্তমান প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করেন৷ তামোকা আসাই সিআইসিসির উর্ধতন গবেষক৷ সিআইসিসি উল্লেখযোগ্য ছয়টি ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে৷ প্রথমত, এশিয়ার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং এ লক্ষ্যে সিআইসিসি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে৷ এর পাশাপাশি কমপিউটারায়নের জন্য এশিয়ার মুক্তমান অবকাঠামো উন্নয়ন ও গবেষণার দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়৷ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং এর যথাযথ মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গবেষণা সহায়তাও সিআইসিসি দিয়ে থাকে৷ এর পাশাপাশি জাইকার বিভিন্ন প্রজেক্টে কারিগরি সহযোগিতার কাজ সিআইসিসি করে থাকে৷ বিশ্বব্যাপী সিআইসিসি নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে ১৮টি দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান৷ বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয় এবং মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই এর অন্তর্গত৷ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য ১৬টি দেশের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিভিত্তিক মন্ত্রণালয় বা সমমানের সরকারি প্রতিষ্ঠান সিআইসিসির সাথে কাজ করছে৷ বাংলাদেশ সরকারের সিআইসিসির সাথে সংশ্লিষ্টতায় বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন বেশি৷ সিআইসিসির সাথে আমাদের পাশের দেশ ভারতের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ভিয়েতনামের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, এমনকি পাকিস্তানের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ও সংশ্লিষ্ট৷
জাপানের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে ১৯৯৬ সালে৷ তথ্যপ্রযুক্তির সেবা যোগানোর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের চাহিদা উত্তরোত্তর বেড়ে যায়৷ ২০০৬-এর জাপানে এই বাজার ১৬.৭ ট্রিলিয়ন ইয়েন থেকে বেড়ে ২০০৮-এ তার মূল্যমান দাঁড়ায় ৬০ ট্রিলিয়ন ইয়েনে৷ উল্লেখ্য, ট্রিলিয়ন হচ্ছে এক লাখ কোটি৷ একই সাথে বেরে যায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সংখ্যা, যা ২০০৬-এ উন্নীত হয় ৮ লাখ ২০ হাজারে৷ নিচের ১ নম্বর চার্টে দেখানো হলো জাপানের এই ক্রমবর্ধমান বাজারে মানবসম্পদের চাহিদা৷
অপর একটি জরিপে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন ব্যবসায়িক সেবার ধরনের ভিত্তিতে দেখা যায় কাস্টমাইজড সফটওয়্যার জাপানের ৫৪.১ শতাংশ বাজার দখল করে আছে৷ বাকি ৪৫.৯ শতাংশ রয়েছে সফটওয়্যার পণ্য, যা জাপানের তথ্যপ্রযুক্তির বাজারের ৮.৫ শতাংশ ৷ ডাটা প্রক্রিয়াকরণ সেবা ১০.৪ শতাংশ, যা নিচের ২ নম্বর চার্টে দেখানো হলো৷ আরেকটি জরিপে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যবসায়ের ভিত্তিতে তথ্যপ্রযুক্তি সেবার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকম পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যার মূল্যমান ৩ ট্রিলিয়ন ইয়েন৷ এর পাশাপাশি রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, যার মূল্যমান ২ ট্রিলিয়ন ইয়েন৷ নিচের ৩ নম্বর চার্টে তা দেখানো হলো৷
অফশোর আউটসোর্সিং ও জাপান
সফটওয়্যার উন্নয়নের দুটি প্রক্রিয়া- অনশোর ও অফশোর৷ অনশোর মূলত নিজেদের দেশে সম্পাদিত হয়৷ জাপানের নিজস্ব কোম্পানি অথবা সহায়ক কোম্পানির সাথে যৌথভাবে অনশোর আউটসোর্সিংয়ের কাজ হতে পারে৷ কিন্তু অফশোরের বেলায় হয় কোম্পানির নিজস্ব অফশোর কেন্দ্রে যা অবস্থিত অন্য কোন দেশে৷ যেমন চীন, ভিয়েতনাম বা ভারতে হতে পারে৷ অথবা অন্য কোম্পানির সাথে ভিন্ন দেশে যৌথ আয়োজনে অফশোর আউটসোর্সিং কাজ হতে পারে৷
অফশোর আউটসোর্সিংয়ের জন্য জাপানের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সিআইসিসির সাথে যৌথভাবে কাজ করছে৷ জাপান বাজারের প্রয়োজনে অল্পমূল্যে এবং সকল মান সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করে অল্প সময়ে সফটওয়্যার তৈরি করা এর মূল লক্ষ্য৷ এ লক্ষ্যে নির্ধারিত চারটি ধাপে অফশোর আউটসোর্সিং সাজানো হয়েছে৷ প্রথম ধাপকে বলে ট্রায়াল বা পরীক্ষামূলক ধাপ৷ এই ধাপে প্রথম ৬ মাস থেকে ১ বছর সময়ে সরাসরি তদারকি এবং সহযোগী ব্যবস্থাপনায় সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি উন্নয়নের কাজ চলে৷ দ্বিতীয় ধাপে ১ থেকে ২ বছর সময়ে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দেয়া হয়৷ জানা-অজানা দিকের উন্মোচনে দক্ষতা বেড়ে যায়৷ তৃতীয় ধাপে ২ থেকে ৩ বছরে দক্ষতার সার্বিক উন্নয়নে সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয় এবং সবশেষ ধাপে চার বছরের অধিক সময়ে অফশোর আউটসোর্সিংয়ের ধারা আরো একধাপ এগিয়ে যায়৷ জাপানের অফশোর আউটসোর্সিংয়ের অপর আরেকটি জরিপে দেখা যায়, ৬১টি কোম্পানির সরাসরি অর্ডারের প্রজেক্ট ২৮ শতাংশ এবং ৫০টি কোম্পানির অপ্রত্যক্ষ অর্ডারের প্রজেক্ট শতকরা ২৩ ভাগ মোটের ওপর, যা জাপানের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের ৪-৬ শতাংশ৷ চীন ৬৮ শতাংশ বা ৪৮৫০ কোটি ইয়েনের বাণিজ্য নিয়ে আছে সবার আগে৷ অপরদিকে ভারত শতকরা ২০ ভাগ বা ১৪১০ কোটি ইয়েন নিয়ে আছে দ্বিতীয় ভাগে৷ কিন্তু উল্লেখযোগ্যভাগে দেখা যায়, ভিয়েতনামে ২০০৪ থেকে ২০০৬ অবধি দ্বিগুণ হারে বেড়েছে৷ নিচে ৪ নম্বর চার্টে তা দেখানো হলো৷
অপর এক জরিপে দেখা যায়, দেশভিত্তিক অফশোর সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়ার পদ্ধতিতে চীন প্রতিযোগী ভারত, ভিয়েতনাম বা ফিলিপাইন অপেক্ষা অনেক এগিয়ে আছে৷ সফটওয়্যারের চাহিদা নিরূপণ, প্রোগ্রামিং, ডিজাইন, সব ধরনের পরীক্ষণ বা টেস্টের সাথে প্রযুক্তি উন্নয়ন অন্তভূক্ত৷ নিচের ৫ নম্বর চার্টে এ তুলনামূলক চিত্র দেখানো হলো৷ জাপানের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা গ্রহণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বহুজাতিক কোম্পানি ন্যাশনাল ইলেকট্রিক লিমিটেডের অফশোর ব্যবসায়ের পরিমাণ ২০০৬ সালের হিসাব অনুসারে ২৪শ কোটি ডলার, যা মোট সফটওয়্যার শিল্পের শতকরা ৮ ভাগ এবং এই অফারে ব্যবসায়ের ৮০ শতাংশ যায় চীনে৷ মাত্র ৮ শতাংশ ভারতে, ১০ শতাংশ ফিলিপাইনে এবং ২ শতাংশ যায় ভিয়েতনামে৷ অন্যান্য বহুজাতিক কোম্পানির অফশোর ব্যবসায়ের চিত্রও একই৷ এই ধারাবাহিকতায় বুঝা যায় চীন এবং ভিয়েতনাম জাপানের অফশোর গন্তব্য এবং ১০ হাজার কোটি ডলারের ব্যবসায়ের ৮০ শতাংশ চীন এবং ১৫ শতাংশ ভিয়েতনামকেন্দ্রিক৷ অফশোর ডেভেলপমেন্টের মূল লক্ষ্য মানবসম্পদ সংরক্ষণ এবং এ প্রক্রিয়ায় উন্নয়নের খরচ কমানো৷ আন্তর্জাতিক বাজারের দক্ষ মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং এ ক্ষেত্রে ভারত ও কোরিয়া নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে৷ জাপানের তথ্যপ্রযুক্তি সম্ভারের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে অফশোর আউটসোর্সিং মাত্র শতকরা ১৮ ভাগ স্থান নিয়েছে চীন এবং ভিয়েতনামে, যা নিচের ৬ নম্বর চার্টে দেখানো হলো৷
বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ
এবার আসা যাক জাপানের অফশোর আউটসোর্সিংয়ের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে৷ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ভাষা৷ এই বিশাল শত শত কোটি ডলারের জাপান মার্কেটে প্রবেশে জাপানি ভাষার দক্ষতার কোনো বিকল্প নেই৷ সেই সাথে আছে ভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং ব্যবসায়ের ধরন ও প্রক্রিয়ার ভিন্নতা৷ আরো অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার অসুবিধা, মানবসম্পদের খরচ, তথ্যের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের সংরক্ষণ, যা নিচের ৭ নম্বর চার্টে দেখানো হলো৷
জাপানে অফশোর আউটসোর্সিং মার্কেট ক্রমেই বড় হচ্ছে৷ আশা করা হচ্ছে, ২০১১ সাল নাগাদ এ বাজারের মূল্যমান দাঁড়াবে ২৫ হাজার ৭০০ কোটি ইয়েনে৷ ৬০ হাজারের উর্ধে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ এই ক্ষেত্রে চাকরি করবেন৷ নিচের ৮ নম্বর চার্টে এ বাজারের ক্রমবর্ধমান রূপরেখা দেখানো হলো৷
জাইকার পাইলট প্রকল্প
জাইকা বেসিস এবং বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহায়তায় সফটওয়্যার খাতের উত্কর্ষের জন্য একটি পাইলট প্রকল্পে বাংলাদেশ থেকে জাপানে সফটওয়্যার রফতানির সম্ভাবনা ও দিকনির্দেশনার ওপর কাজ করে৷ এ কার্যক্রমের আওতায় মোট ৪২টি সফটওয়্যার কোম্পানি বেসিসের সার্বিক সহযোগিতায় অংশ নেয়৷ এ প্রকল্পের প্রয়োজনে প্রতিটি কোম্পানির ব্যবসায়িক তথ্যাদি ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় অনুবাদ করা হয়৷ ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় কোম্পানির ডাটাবেজও তৈরি করা হয়৷ এ তথ্যাদি ও ডাটাবেজকে জাপানের বাজারে ব্যবহারোপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে জাপানে আয়োজন করা হয় সেমিনার৷ একই সাথে এক হাজার জাপানি কোম্পানির সাথে টেলিযোগাযোগ, ১৯টি বহুজাতিক জাপানি কোম্পানিতে ভ্রমণ এবং এসব কাজকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য বিক জাপান স্থাপন করা হয়৷ জাপান-বাংলাশে সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাইকার সহায়তায় এ পাইলট প্রকল্পের আওতায় যে জরিপ করা হয়, তার ফলও চমকপ্রদ৷ প্রথমত, বাংলাদেশকে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবার দেশ হিসেবে বিবেচনা করে এই সংখ্যা নেই বললেই চলে৷ শতকরা ১১ ভাগ অল্প চেনে এবং শতকরা ৮৯ ভাগই বাংলাদেশকে এই খাতে চেনে না৷ জাপানের অফশোর আউটসোর্সিং চীনে ৪২ শতাংশ, ভিয়েতনামে ১৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়াতে ১১ শতাংশ, ভারতে ৯ শতাংশ এবং ফিলিপাইন ও তাইওয়ানে ৬ শতাংশ৷ উল্লেখ্য, চীন ও ভিয়েতনাম জাপানের অফশোর আউটসোর্সিং গন্তব্যের শীর্ষে অবস্থান করছে এবং এ লেখায় পাঠকদেরকে ভিয়েতনামের হ্যানয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রয়াস ছোট পরিসরে তুলে ধরার চেষ্টা করব৷ এ জরিপের অপর এক প্রশ্নে বাংলাদেশে জাপান আউটসোর্সিং করতে আগ্রহী কি না এ প্রশ্নের জবাবে ৮৭ শতাংশই জানায়, তারা এখনো ভাবছে না৷ এ জরিপের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশে আউটসোর্সিং ব্যবসায় করার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়সমূহ নিয়ে৷ বাংলাদেশে অফশোর আউটসোর্সিং করার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভাষা নিয়ে ১৬ শতাংশ জাপানি গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করে৷ মান নিয়ন্ত্রণ ১৫ শতাংশ, চাহিদার বিবরণ বুঝার ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ, তথ্যের চুরি ১১ শতাংশ, ব্যবসায় প্রকৃতি পাথর্ক্যে ১০ শতাংশ ও সরবরাহর সময় নিয়ে ৮ শতাংশ ভাবে ৷
অপর এক জরিপে অফশোর আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে দেশ নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নির্ধারণ করে ওইসব দিকের শতকরা হার বের করা হয়৷ উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রগুলো হলো জাপানি ভাষায় যোগাযোগ দক্ষতা যা শতকরা ৬৫ ভাগ, প্রকৌশলীদের মেধা ও দক্ষতা শতকরা ৬২ ভাগ, মূল্যমানের যথার্থতা শতকরা ৩৫ ভাগ৷ একই সাথে রয়েছে সিএমএম বা আইএসও সনদপ্রাপ্তি, ব্যবস্থাপনায় পারদর্শিতা, সরবরাহ প্রক্রিয়ার দ্রুততা, জাপানের সাথে দূরত্ব এবং অন্যান্য৷ উল্লিখিত ৮ নং চিত্রে তা দেখানো হলো৷
জাপান বিক
জাইকার প্রস্তাবনায় বিক (BIK : Bangladesh IT Kumiai) স্থাপন হয়েছে জাপানে৷ এর মূল লক্ষ্য, জাপানের বাজারে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংলাদেশী সফটওয়্যার নির্মাতাদেরকে সংশ্লিষ্ট করে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং জাপানে বাংলাদেশের সফটওয়্যার রফতানিকে সফল করা৷ বিক জাপান-এর মূল কাজ জাপান বাজারে সাথে বাংলাদেশী সফটওয়্যার সরবরাহকারীদের সম্পৃক্ত করা এবং প্রয়োজনীয় বিপণন সহায়তা দেয়া৷ বিক-এর পার্টনারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য I Con Co. Ltd, Koisj K K, ITA Ltd এবং Mega Corporation৷
জাইকার এ পাইলট প্রকল্প থেকে বাংলাদেশকে জাপানের অফশোর মার্কেট রূপান্তরের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়৷ ভারত ও চীনে অফশোর আউটসোর্সিংয়ে ব্যর্থতার কারণে জাপানি কোম্পানিগুলো এখন যথেষ্ট সতর্ক, কোনো নতুন দেশকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে৷ তা ছাড়া জাপানি কোম্পানিগুলো আশা করে সরবরাহকারীরা তাদের জাপানি ভাষায় লেখা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পড়তে পারবে৷ সর্বোপরি নতুন অফশোর আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে জাপানি কোম্পানিগুলো জাপানে একটি ট্রায়াল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে প্রকৌশলগত কলাকৌশল সম্পর্কে আগেভাগে সম্যক ধারণা নিতে বেশি আগ্রহী৷ এর ফলে আস্থা অর্জন সহজ হয়৷
সব মিলিয়ে বলা যায়, আমাদের জন্য সময়ের কোনো বিকল্প নেই৷ সময়ের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন এবং বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অফশোর আউটসোর্সিংয়ের গন্তব্যে রূপ দিতে হবে৷ জাইকার এ প্রকল্প দুইটির ধাপ শেষ করেছে৷ তৃতীয় ধাপে জাইকা প্রণয়ন করবে আমাদের করণীয় এবং সরকারি-বেসরকারি সহায়তার সমন্বয়ে জাপানের বাজারে আমাদের সফটওয়্যার রফতানির প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা৷
দক্ষতার আদর্শ প্রণয়নে জাপান
ভিয়েতনামের হ্যানয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রম আলোচনার আগে জাপানের তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের দক্ষতার যে মাপকাঠি সর্বজনগৃহীত তা আলোচনা প্রয়োজন৷ জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে৷ সংক্ষেপে একে বলে METI বা Ministry of Economy, Trade and Industry৷ METI-র পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতার আদর্শ নিরূপণের কেন্দ্র এবং এই কেন্দ্র প্রণয়ন করেছে তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের দক্ষতার মান পরিমাপবিষয়ক প্রকাশনা৷ গত মার্চে এ দক্ষতা পরিমাপের তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করা হয়৷
দক্ষতার আদর্শ নিরূপণে METI ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের দক্ষতার মাপকাঠি প্রণয়নের পর এর বেশ কয়েকটি পরিবর্তন হয়েছে৷ জাপানের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প যখন সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার পণ্য থেকে সেবা খাতের দিকে অগ্রসর হয়, তখন প্রয়োজন হয়ে পড়ে সেবা খাতের উত্কর্ষ সাধন৷ তথ্যপ্রযুক্তির এ সেবার গুণগত মান সর্বোপরি নির্ভর করে মানবসম্পদের দক্ষতার ওপর৷ যখন তথ্যপ্রযুক্তির সেবাভিত্তিক ব্যবসায় আরো রমরমা হয়ে ওঠে, তখন এই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক সাফল্য এবং সামর্থ্য ব্যক্তিবিশেষের নিজ নিজ দক্ষতার গুণগত উত্কর্ষের ওপর আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে ওঠে৷ তথ্যপ্রযুক্তির সেবা খাতকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে দক্ষতার আদর্শের ভিত্তি স্থাপন করা হয়, যাতে করে দক্ষতার পরিমাপ করা যায় এবং এ প্রক্রিয়ায় শিল্প, বাণিজ্য, সরকার এবং শিক্ষাখাতের সফল সমন্বয় সম্ভব হয়৷ জাপানের বাইরে সুদূর ভিয়েতনামেও এর সফল প্রয়োগ সম্ভব হয়েছে৷ দক্ষতার আদর্শ প্রমিত করার সার্বিক কাঠামোতে রয়েছে তিনটি অংশ৷ প্রথম অংশে আছে সার্বিক পরিচিতি৷ এখানে কাঠামো, বিভিন্ন সংজ্ঞা এবং দক্ষতার পরিমাপকে সহজ ও গ্রহণযোগ্য করে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে করে বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের মতো প্রয়োগ করে এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে৷ দ্বিতীয় অংশে আলোচনায় এসেছে চাকরির বিভিন্ন দিক, ক্যারিয়ারের কাঠামো, ক্যারিয়ারের প্রয়োজনীয় দক্ষতা৷ এই অংশে ব্যবসায়ের সফলতার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও আলোচিত হয়েছে৷ তৃতীয় অংশে বিশদভাবে আলোচনা হয়েছে দক্ষতার প্রয়োজনীয় চলন্তিকা, দক্ষতার বিভিন্ন দিক এবং এর প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের রোডম্যাপ৷ জাপানের এই তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতারমান প্রমিত করার ভিত্তিতে সমগ্র জাপানে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের মানোন্নয়ন সম্ভব হয়েছে এবং জাপান মার্কেটে প্রবেশের জন্য এটাই পূর্বশর্ত৷ পাঠকবর্গ চাইলে এই IT Skill Standard-এর ২০০৮-এর ডকুমেন্টটি METI ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে এ বিষয়ে জেনে নিতে পারেন৷ পূর্ণাঙ্গ এই তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতার প্রমিত ডকুমেন্টটি বিশদভাবে আলোচনা করা এই পরিসরে সম্ভব নয়৷
তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতার ২০০৮-এর সংস্করণ প্রয়োজনীয় পরীক্ষণ এবং দক্ষতা বিষয়ে সকল দিকনির্দেশনা দেয়৷ জাপানের তথ্যপ্রযুক্তি সেবার বড় কোম্পানিগুলোর শতকরা ৬০ ভাগ এই মানকে ভিত্তি করে মানবসম্পদ আহরণ করে৷ চীন ও ভারতের তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সংখ্যার এক তুলনামূলক জরিপে দেখা যায় ২০০১ থেকে ২০০৫ অবধি চীন অপেক্ষা ভারতে বছরে দ্বিগুণের ওপর মানবসম্পদ সংখ্যা বেড়েছে৷ ভারতের অভ্যন্তরীণ তথ্যপ্রযুক্তি সেবাখাত এবং তথ্যপ্রযুক্তির রফতানিখাতে ২০০৫ সাল মোতাবেক মোট মানবসম্পদের পরিমাণ যথাক্রমে ৩,৬০,০০০, ৪,১০,০০০ এবং ৫,১০,০০০৷ উল্লিখিত ৯ নং চিত্রে তা দেখানো হলো৷
হ্যানয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গ
গত আগস্ট মাসে জাইকার প্রজেক্ট অফিসে জাপান-বাংলাদেশের সার্বিক সহযোগিতায় যে প্রজেক্টগুলো চলছে এ বিষয়ে এক বিশদ আলোচনা হয়৷ আলোচনায় লেখকের সাথে ছিলেন কেইসুকি সুজিইয়ামা, মামোরু ইয়াসুই, সোজো ইনাকাজু এবং কমপিউটার জগত্-এর সহকারী সম্পাদক এম. এ. হক অনু৷ আলোচনায় উপরোল্লিখিত অনেক বিষয়ে আলোকপাত করা হয়৷ উঠে আসে ভিয়েতনামের হ্যানয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা৷
হ্যানয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আজ এক আন্দোলনে নেমেছে৷ প্রতিবছর ১২০ জন গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছে সরাসরি জাপান বাজারের জন্য৷ চার বছরের তথ্যপ্রযুক্তির প্রোগ্রামে জাপানিজ ভাষা শিক্ষাকে স্তরে স্তরে বিন্যাস ঘটানো হয়েছে৷ হ্যানয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একই সাথে জাপানের তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতার আদর্শকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করেছে৷ এর ফলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা জাপানি ভাষায় পারদর্শিতার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও আয়ত্ত করছেন পড়াশোনার পাশাপাশি৷ সেই সাথে রয়েছে জাপানি ভাষা পরীক্ষা বা JLPT (Japanese Language Proficiency Test)৷ জাইকা প্রতিনিধদের সাথে আলোচনায় জানা যায়, চার বছরের শিক্ষা কার্যক্রমে প্রথম দুই বছরে ৫৬০টি জাপানি ভাষা শিক্ষার ক্লাস এবং পরবর্তী দুই বছরে মোট ২৮০টি ক্লাস হয়৷ এই ভাষা শিক্ষার ক্লাসগুলোর পাশাপাশি চলে অন্য ক্লাসসমূহ৷ ভিয়েতনামে আছে ভিয়েতনাম-জাপান মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় মানবসম্পদ উন্নয়নের কাজ করে থাকে৷ জাইকা প্রতিনিধদের সাথে আলাপের সময় ভিয়েতনামের সাথে বাংলাদেশের সফটওয়্যার শিল্পের তুলনামূলক আলোচনায় জানা যায়, ভিয়েতনামের সফটওয়্যার শিল্পের সংখ্যা বাংলাদেশ অপেক্ষা দ্বিগুণ এবং কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ বছর এগিয়ে আছে ভিয়েতনাম৷ এই সফলতার পেছনে আছে সফল সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং জাপান ও ভিয়েতনামের সরকারি পর্যায়ে পারস্পরিক বিনিময়৷ জাইকা প্রতিনিধদের কাছে আমাদের দুর্বলতা জানতে চাইলে আলোচনায় উঠে আসে নানা দিক৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জাপান বাজারে বাংলাদেশের সফটওয়্যার শিল্পের ব্যাপক পরিচিতির অভাব এবং পাশাপাশি ব্র্যান্ডিংয়ের অভাব৷ মাল্টি-টায়ার ওয়ার্কিং মডেল নেই বললেই চলে৷ এর সাথে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও আগ্রহ এবং যথোপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা সৃষ্টি করতে পারে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ মার্কেট৷
ভিয়েতনামের হ্যানয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জাইকার মামোরু ইয়াসুই সাক্ষাত্কারের বিভিন্ন সময়ে আলোকপাত করেন৷ হ্যানয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পায় ১৯৫৬ সালে৷ এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর অর্ধশতাব্দী ধরে জাতির বিভিন্ন বিপ্লবে বিশেষ করে শিল্প বিকাশ আর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে৷ এই অর্ধশতাব্দীতে এক বিশালসংখ্যক বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ এবং শিক্ষক দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলোতে আজ সাফল্যোর স্বাক্ষর রাখছেন প্রতিনিয়ত৷ জাতীয় পর্যায়ে প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা ও প্রশিক্ষণ এবং সফলতা আজ ভিয়েতনামের উন্নতির মূলমন্ত্র৷
গত দশকে নীরব বিপ্লবে ভিয়েতনামে অর্থনৈতিক ও সামাজিক রূপরেখার পুনর্বিন্যাস সাধিত হয়েছে৷ এর সাথে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা ও দেশাত্মবোধ এই জাতিকে আজ সফলতার স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দিয়েছে৷
হ্যানয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও প্রযুক্তি শিক্ষা বিনিময়ের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র৷ বিজ্ঞান গবেষণার কাজ পুরোপুরি জাতীয় অর্থনৈতিককে কেন্দ্র করে আবর্তিত৷ গবেষণালব্ধ ফলাফল ও প্রযুক্তির জ্ঞানকে সরাসরি জাতির অর্থনীতির মূল সোপানের সাথে সংশ্লিষ্ট করে জাতির উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এক মহতী প্রয়াস৷ এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণাকে একই সুরে আবর্তিত করা প্রয়োজন, যেমন করে হ্যানয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিয়ত করছে৷ এই গবেষণার বিভিন্ন প্রজেক্টে অনুদান ও সফল প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ভিত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পাওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে৷ গবেষণার বিভিন্ন কেন্দ্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তথ্যপ্রযুক্তি, জৈবপ্রযুক্তি, পদার্থবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স ও টেলিযোগাযোগ এবং মৌলিক পদার্থ কেন্দ্র৷ হ্যানয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানার জন্য ওয়েবসাইট : www.lhut.edu.vn/en৷
শেষ কথা
তথ্যপ্রযুক্তির মানবসম্পদ উন্নয়নে গত ২৫ মে ফুজিত্সু ভিয়েতনামের এক উপস্থাপনায় সরকার এবং শিল্পের পারস্পরিক কর্মকাণ্ডের ওপর মূল্যবান আলোচনা হয়৷ তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবসায় ব্যবহারকারীদের মধ্যে সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা সাধারণ ব্যবহারকারী ও সরবরাহকারী উল্লেখযোগ্য৷ সরকার শিক্ষানীতি প্রণয়ন করছে বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য৷ এই নীতি প্রণয়নে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থান এবং ভবিষ্যত্ উন্নয়ন পরিকল্পনার ও চাহিদার কোনো প্রতিফলন নেই৷ এর ফলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক আন্দোলন পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থানে আছে এবং বিজ্ঞান শিক্ষার সাথে সাথে প্রয়োগের অভাবে বিজ্ঞান শিক্ষানুরাগীরা ক্রমান্বয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ ব্যবহারকারীদের জন্য প্রণীত তথ্যপ্রযুক্তির নীতিমালার কোনো বাস্তবায়ন পরিকল্পনা নেই৷ ১৯৯৭ থেকে ২০০৮ অবধি এই কাগুজে তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালার কথামালার পাশাপাশি বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবায়নের আশু প্রয়োজন৷ প্রযুক্তি সরবরাহকারীদের জন্য যথোপযুক্ত তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবসায়িক নীতিমালা থাকা প্রয়োজন, যাতে করে সরকার যথাযথ প্রযুক্তি সহায়তা পেতে পারে এবং প্রযুক্তি বাস্তবায়নে সফল হতে পারে৷ সরকারি সব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা৷ এ সীমাবদ্ধতাকে পাশে রেখেই তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটানোর অন্য কোনো ব্যতিক্রম আমাদের নেই৷ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েট আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরাসরি চাকরির সুবিধা নিতে পারছে না৷ কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের এবং বিশেষ করে ক্যারিকুলামের সাথে আইটি প্রতিষ্ঠানে বাস্তব কাজের যথেষ্ট পার্থক্য আছে৷ অপরদিকে তথ্যপ্রযুক্তির সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় তথ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার অভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়৷ ক্ষেত্রবিশেষে একে অপরের সাথে সহযোগিতা বা মতবিনিময় তেমন হয় না৷
উপরে উল্লিখিত এ মডেলের আলোকে আমাদের প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষানীতি, যা প্রতিবছর দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন সম্ভাবনা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের সফল অবস্থানের চাহিদা মোতাবেক পরিমার্জন ও পরিবর্ধন হবে৷ আমাদের প্রয়োজন তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা বাস্তবায়নের সুপরিকল্পিত কাঠামো এবং এ কাঠামোর সাথে সম্পৃক্ত সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যবহারকারীদের সঠিক দিকনির্দেশনা৷ আমাদের সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় এবং যথোপযুক্ত জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ আহরণ৷ একই সাথে উদ্যোগ এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই তথ্যপ্রযুক্তির বাস্তবায়নের ও সেবাকে পূর্ণাঙ্গ ব্যবহারের জন্য৷ আমাদের প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় এবং তথ্যপ্রযুক্তির শিল্পের পারস্পরিক সহযোগিতায় শিক্ষা কার্যক্রম তথা ক্যারিকুলামকে আরো বাস্তবভিত্তিক ও ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করা৷ সেই সাথে আরো প্রয়োজন শিক্ষা ও শিল্পের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব এবং সহযোগিতা৷
এটা ঠিক যে, আমাদের ইচ্ছের কোনো অভাব নেই৷ বেসিস প্রতিনিধিরা জাপান সফর করেছেন এবং জাপানের বাজারে আমাদের সম্ভাবনা ও করণীয় খতিয়ে দেখেছেন৷ কিন্তু দেশের ২২টিরও বেশি পাবলিক, ৫৪টিরও বেশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ রয়েছে এবং তথ্যপ্রযুক্তির যে আন্দোলন আজ হ্যানয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেই আন্দোলন করতে হলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেসিসের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা প্রয়োজন৷ জাপানি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম আমাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েই করতে হবে৷ তাই নয় কি? প্রযুক্তি উন্নয়নের গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন জ্ঞান তৈরিতে অবদান রাখতে পারে৷ তাই আমাদের স্বপ্নের তথ্যপ্রযুক্তিকে আমাদের সফল সমন্বয়ের ও সরকারি পৃষ্ঠ-পোষকতার বন্ধনে আরো নিবিড়-ভাবে রচনা করা প্রয়োজন৷
লেখক : অধ্যাপক ও প্রধান, কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ৷
উপরের সব উপাত্ত সিআইসিসির গবেষণালব্ধ এবং www.cicc.or.jp-এর অন্তর্গত৷
ফিডব্যাক : aktarhossain@yahoo.com