• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ওআইম্যাক্স লাইসেন্স পেয়েছে বাংলা লায়ন, ব্র্যাক বিডিমেইল ও আগুরি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সেলিনা আক্তার
মোট লেখা:৫
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইন্টারনেটওআইম্যাক্স, 
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ওআইম্যাক্স লাইসেন্স পেয়েছে বাংলা লায়ন, ব্র্যাক বিডিমেইল ও আগুরি

ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স পেয়েছে বাংলা লায়ন, ব্র্যাক বিডিমেইল ও আগুরি প্রকাশ্য নিলামে সর্বোচ্চ ডাক ২১৫ কোটি টাকা : বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এটি বিশ্বরেকর্ড।

বেসরকারি খাতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য ওয়াইম্যাক্স অর্থাৎ ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার অপারেবিলিটি ফর মাইক্রোওয়েভ অ্যাক্সেস বা ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অ্যাক্সেস (বিডব্লিউএ) লাইসেন্স পেয়েছে বাংলা লায়ন কমিউনিকেশন্স, ব্র্যাক বিডিমেইল নেটওয়ার্ক লিমিটেড ও আগুরি ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড বাংলাদেশ লিমিটেড৷ ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হোটেল রেডিসনে ওয়াইম্যাক্স/বিডব্লিউএ লাইসেন্স দিতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এক প্রকাশ্য নিলামের আয়োজন করে৷ এতে সর্বোচ্চ ডাক ওঠে ২১৫ কোটি টাকা৷ নিলামে বিজয়ী তিনটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিটিসিএল (বিটিটিবি) এই লাইসেন্স পাবে৷ ফলে চারটি প্রতিষ্ঠান থেকে লাইসেন্স দেয়া বাবদ সরকারের আয় হবে ৮৬০ কোটি টাকা৷

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মনজুরুল আলম নিলাম শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, ওয়াইম্যাক্সের প্রতিটি লাইসেন্সের জন্য নিলামে এ অর্থ দেয়ার ডাক বিশ্বরেকর্ড৷ এর আগে সিঙ্গাপুরে প্রতিটি ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্সের জন্য ১৮ মিলিয়ন ডলার ডাক উঠেছিল৷ বাংলাদেশে এই ডাক উঠেছে ৩২ মিলিয়ন ডলার বা ২১৫ কোটি টাকা৷ তিনি বলেন, ওয়াইম্যাক্সের লাইসেন্সের জন্য এত ডাক উঠবে তা বিটিআরসির চিন্তাতে ছিল না৷ যেহেতু বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় তাই নিলামে এত ডাকমূল্য উঠেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷

নিলামে দেশী-বিদেশী ৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়৷ বিটিআরসির ঘোষণা অনুযায়ী নিলামে ফ্লোর প্রাইস ছিল ২৫ কোটি টাকা৷ বেলা ১১টায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা থেকে এ নিলাম শুরু হয়৷ বেলা ৩টায় বিকল্প ধারার মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর মান্নানের বাংলা লায়ন কমিউনিকেশন্স এ লাইসেন্সের জন্য সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা নিলাম ডাকার পর আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি৷ বিটিআরসি সেখানেই নিলাম শেষ করে দেয়৷

এনজিও ব্র্যাকের ব্র্যাক বিডিমেইল নেটওয়ার্ক ২১২ দশমিক ৬০ কোটি টাকা এবং ইউরোপের অরেঞ্জ গ্রুপের আগুরি ২০৭ দশমিক ৫০ কোটি টাকা ডেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল৷ পরে তারা ২১৫ কোটি টাকায় বাংলা লায়নের দরে এ লাইসেন্স কিনে নিতে সম্মত হয়েছে৷ বিটিসিএলকেও লাইসেন্সের জন্য একই পরিমাণ অর্থ দিতে হবে৷ প্রয়োজনে তারা দেশী-বিদেশী অংশীদার নিয়ে এ লাইসেন্স নিতে পারবে৷

বিটিআরসি জানায়, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই তিন প্রতিষ্ঠানকে এ নিলামের ৫০ শতাংশ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে৷ এর মধ্যে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে লাইসেন্স পাবে৷ লাইসেন্স পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে তাদের অপারেশনে আসতে হবে৷ আর ব্রডব্যান্ড অ্যাক্সেস গাইডলাইন অনুযায়ী তাদের আগামী তিন বছরের মধ্যে সারাদেশকে ওয়াইম্যাক্স কভারেজের আওতায় আনতে হবে৷ বিটিআরসি আশা করছে, ওয়াইম্যাক্স সুবিধা চালু হলে সারাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে৷

বিটিআরসি ওয়াইম্যাক্সের লাইসেন্সধারীদের জন্য সর্বমোট ৩৫ মেগাহার্টজ বরাদ্দ রেখেছে৷ বাংলা লায়ন ২৫৮৫-২৬২০ মেগাহার্টজ, ব্র্যাক ২৩৩০-২৩৬৫ এবং আগুরি ২৩৬৫-২৪০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডউইডথ বরাদ্দ নিয়েছে৷

নিলাম চলাকালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএ মালেক নিলামস্থল পরিদর্শন করেন৷ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিলাম প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আছে কিনা, তা দেখার জন্য তিনি সেখানে গিয়েছেন৷ তার ধারণা, স্বচ্ছতার মধ্য দিয়েই নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে৷

বিটিআরসির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মনজুরুল আলম নিলাম শুরুর আগে নিলামের বিভিন্ন নিয়মাবলী তুলে ধরেন৷ শেষে তিনি বলেন, রেকর্ড দামে ওয়াইম্যাক্সের লাইসেন্স বিক্রি করলেও এতে আমরা যেমন উত্ফুল্ল নই, তেমনি এ নিয়ে আমাদের আশঙ্কাও নেই৷ ওয়াইম্যাক্সগুলো কাজ শুরু করলে দেশের মানুষ খুবই কম খরচে ইন্টারনেট সেবা পাবে৷

বিটিআরসি গত ৩০ আগস্ট লাইসেন্স দেয়ার জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আবেদনপত্র আহবান করে৷ ১২টি প্রতিষ্ঠান আবেদনপত্র কিনলেও ৯টি প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশ নেয়৷ শর্তানুসারে লাইসেন্স পাওয়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে প্রথম বছর সংশ্লিষ্ট এলাকায় অন্তত ৯০টি বেজ স্টেশন বসাতে হবে৷ প্রতিষ্ঠানে ৬০ ভাগের বেশি বিদেশী বিনিয়োগ থাকতে পারবে না৷ অনাবাসিক বাংলাদেশীরা (এনআরবি) ৭০ ভাগ মালিকানায় বিনিয়োগ করতে পারবেন৷

এ ব্যাপারে বিস্তারিত গাইডলাইন প্রকাশ করে বিটিআরসি, যা তাদের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে৷ খসড়া গাইডলাইন অনুযায়ী ১৫ বছরের জন্য ব্রডব্যান্ড লইসেন্স দেয়া হবে৷ আবেদন ফি ধার্য হয় ৫০ হাজার টাকা৷ বার্ষিক লাইসেন্স ফি ৩ কোটি টাকা৷ বিটিআরসির লাইসেন্সধারী দেশীয় কোনো মোবাইল ফোন কোম্পানি ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অ্যাক্সেস সার্ভিসের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেনি৷ নিলাম বিজয়ীদের ১২৮ কেবিপিএস ক্ষমতাসম্পন্ন ইন্টারনেট স্পিড দিতে হবে৷

ওয়্যাইম্যাক্স লাইসেন্স দেশীয় বিনিয়োগকারীদের কাছেই সীমাবদ্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)৷ তাদের দাবির কারণেই বিটিআরসি বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশী কোম্পানির যৌথ মালিকানা থাকতে পারবে বলে অনুমতি দেয়৷

ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে গত আগস্টে রাজধানীর ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে দু’দিরে এক কর্মশালার আয়োজন করে বিটিআরসি৷ সেখানে অংশ নেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সেরা ওয়াইম্যাক্স বিশেষজ্ঞ এবং এ প্রযুক্তি সম্পর্কে আগ্রহী দেশের প্রায় সাড়ে ৩শ’ টেলিকম বিশেষজ্ঞ৷ কর্মশালায় বলা হয়, ওয়াইম্যাক্স তুলনামূলকভামে কম ব্যান্ডউইডথ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে চলতে সক্ষম৷ একটি টাওয়ারের মাধ্যমে চার থেকে পাঁচ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেয়া যায় এ প্রযুক্তিতে৷ মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কমপিউটারে ক্ষুদ্র একটি চিপ যুক্ত করে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া যাবে ইন্টারনেট সুবিধা৷ দেশে ওয়াইম্যাক্স সুবিধা মূলত দেয়া হবে গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের লক্ষ্য৷ এর মাধ্যমে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র মানুষ বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা সহজেই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাবে৷

কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিটিআরসির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মনজুরুল আলম বলেছেন, ওয়াইম্যাক্স উচ্চগতিসম্পন্ন৷ এর ব্যান্ডউইডথ অনেক বেশি৷ এজন্য ওয়াইম্যাক্সের মাধ্যমে গ্রামে বসেই কলসেন্টার পরিচালনা, সফটওয়্যার ব্যবসায় এবং ভিত্তিও কনফারেন্সিংসহ সবকিছুই করা সম্ভব৷ তিনি বলেন, আমাদের একটিই লক্ষ্য৷ আর তা হচ্ছে সংযোগ বিচ্ছিন্নদের ২০১৫ সালের মধ্যে সংযোগের মধ্যে নিয়ে আসা৷ এটাই হচ্ছে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল৷ এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ওয়াইম্যাক্স একটিমাত্র প্রযুক্তি৷

ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্সের আওতায় অপারেটররা ওয়্যারলেস ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ভিডিও অন ডিমান্ড, হাইডেফিনিশন টিভি, আইপি ফোন, ওয়্যারলেস ফিক্সড ফোন, মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন সেবা দিতে পারবেন৷ অনেকেই ওয়াইম্যাক্সকে মার্কিন সিন্ডিকেটের এবং থ্রিজিকে ইউরোপীয় সিন্ডিকেটের পণ্য বলে মনে করে৷ সারাবিশ্বে ওয়াইম্যাক্সকে নেতৃত্ব দিচ্ছে চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেল এবং টেলিকম ও আইসিটি পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মটোরোলা৷ আর থ্রিজির নেতৃত্বে রয়েছে নোকিয়া ও এরিকসন৷ বর্তমানে ওয়াইম্যাক্সের দুটি স্ট্যান্ডার্ড প্রচলিত রয়েছে৷ এগুলো হলো-আইইইই ৮০২.১৬ডি এবং আইইইই ৮০২.১৬ই৷ আইইইই ৮০২.১৬এম ওয়াইম্যাক্সের উন্নততর স্ট্যান্ডার্ড, যা এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে৷ এর গতি হবে প্রতি সেকেন্ডে ১ গিগাবাইট৷
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
২০০৮ - অক্টোবর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস