• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ক্ষুদ্র পিসির সমাহার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: যুগল মাহমুদ
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
পিসি
তথ্যসূত্র:
উদ্ভাবন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ক্ষুদ্র পিসির সমাহার

কমপিউটার শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ Compute থেকে, যার অর্থ হচ্ছে গণনা করা৷ কমপিউটারের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে যে গণনা করে বা সহজ কথায় বলা যেতে পারে গণনাযন্ত্র৷ প্রথমে গণনার কাজেই কমপিউটার বানানোর প্রয়োজন পড়ে গবেষকদের৷ তখন সামান্য ক্যালকুলেটর যে কাজ করতে পারতো তার আকার আয়তনের কথা শুনলে অবাক হবেন৷ তাই পুরনো দিনের কথা বাদ দিয়ে আসি নতুন যুগের কমপিউটারের কথায়৷ এ যুগে মানুষ যে হারে বাড়ছে সে হারে কমছে তাদের বাসস্থানের আকার৷ সবকিছুই ছোট হয়ে আসছে, যাতে তা অল্প স্থানে সঙ্কুলান হতে পারে৷ আমরা ডেস্কটপ হিসেবে যেসব পিসি ব্যবহার করি সেগুলোকে বলা হয় মাইক্রোকমপিউটার৷ কিন্তু তার চেয়েও যদি আরো ছোট আকারের পিসি হয় তবে তাকে কি বলা যায়, একবার ভাবুন তো? এখন পিসিগুলোর আকার যে হারে পাল্লা দিয়ে কমছে, কিছুদিন পড়ে দেখা যাবে, সবার কাপড়ের বোতামে এঁটে যাবে এই যন্ত্রটি৷ কি, বিশ্বাস হচ্ছে না? আসুন কিছু উদাহরণ দিয়ে এ ব্যাপারে যুক্তি দাঁড় করানো যায় কি না দেখা যাক৷



প্রথমেই আসা যাক বিখ্যাত কোম্পানি এপলের ক্ষুদ্র পিসিগুলোর কথায়৷ তাদের বানানো ম্যাক মিনি ও আইম্যাকের কথা হয়তো অনেকের অজানা৷ দাম বেশি হওয়ায় তা আমাদের মতো দরিদ্র উন্নয়নশীল দেশে বেশি বিস্তারের সুযোগ পায়নি৷ ম্যাক মিনিতে বিশাল সাইজের কেসিংকে বিদায় জানিয়ে রূপান্তর করা হয়েছে সিডি বা ডিভিডি রম ড্রাইভের আকারে৷ দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ৬.৫ ইঞ্চি, উচ্চতায় ২ ইঞ্চি ও মাত্র ১.৩১ কেজি ওজনের এই ছোট্ট মেশিনটির ক্ষমতা শুনতে অবাক লাগে৷ এতে রয়েছে ইন্টেল ডুয়াল কোর প্রসেসর, ইন্টেল জিএমএ ৯৫০ গ্রাফিক্স প্রসেসর, ১৬০ গিগাবাইট হার্ডডিস্ক, ১ গিগাবাইট মেমরি, DVI কানেক্টর, VGA অ্যাডাপ্টার, ইউএসবি ও ফায়ারওয়্যার পোর্ট, বিল্ট-ইন গিগাবিট ইথারনেট, অপটিক্যাল ড্রাইভ লাগানোর সুযোগ, এনালগ ও ডিজিটাল অডিও ইত্যাদি৷ ম্যাক মিনি ২০০৫ সাল থেকে বাজারজাত করা হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে এর ক্ষমতা আরো বাড়ানো হচ্ছে৷ ২০০৭-এর আগস্ট থেকে এর সাথে যুক্ত হয় কোর টু ডুয়ো প্রসেসর৷ এর আগে ইন্টেলের সিঙ্গেল কোর ও ডুয়াল কোর সমন্বয়ে এটি বাজারজাত হতো৷ নতুন ম্যাক মিনি ম্যাকিনটোশ অপারেটিং সিস্টেম এক্স টাইগার ও লেপার্ডের নতুন সংস্করণ সমর্থন করে৷ চকচকে সাদা রঙের ম্যাক মিনি খুবই দৃষ্টিনন্দন, তেমনি পরিবহন ও ব্যবহারে সুবিধাজনক৷



এপলের আরেকটি যুগান্তকারী আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে আইম্যাক৷ এতে LCD মনিটরের আকৃতিতে এঁটে দেয়া হয়েছে পুরো একটি ডেস্কটপ কমপিউটার৷ আইম্যাকের নতুন ভার্সনটি এখন ২৪ ইঞ্চি পর্দায়ও পাওয়া যায়৷ এই এলসিডি মনিটরের পেছনেই রয়েছে কমপিউটারের যাবতীয় যন্ত্রাংশ৷ এর নতুন সংস্করণে রয়েছে ইন্টেল কোর টু ডুয়ো ২.৮ গি.হা. বা কোর টু এক্সট্রিম ৩.০৬ গি.হা. প্রসেসর, এটি এটিআই রেডিয়ন এইচডি ২৬০০ প্রো আই রেডন এইচডি ২৬০০ প্রো বা NVIDIA GeForce 8800 GS (২৪ ইঞ্চির জন্য), ২৫০ গিগাবাইট থেকে ১ টেরাবাইট হার্ডডিস্ক, ২ গিগাবাইট ৠাম, যা ৪ গিগাবাইট পর্যন্ত বাড়ানো যাবে৷ এছাড়াও রয়েছে ব্লু-টুথ, ওয়েবক্যাম ইত্যাদিসহ আরো নানা সুবিধা৷ প্রথমদিকের আইম্যাকগুলো বানানো হতো সাদা রঙের পলিকার্বনেট দিয়ে, কিন্তু এখন ব্যবহার করা হয় অ্যালুমিনিয়াম ও কাঁচ৷ ছোট একটি টেবিলেই এঁটে যায় এই মেশিনটি, সাথে শুধু প্রয়োজন এপলের মাইটি মাউস আর একটি কী-বোর্ড৷ আইম্যাকের পুরনো ভার্সনগুলোর মধ্যে রয়েছে আইম্যাক-জি৩, জি৪ ও জি৫৷ জি৩ ছিল সাধারণ সিআরটি মনিটরের আকৃতির, যা ১৩টি ভিন্ন রঙে পাওয়া যেতো৷ জি৪ ছিল অর্ধবৃত্তাকার একটি মেশিনের উপরে এলসিডি মনিটর, যা দেখতে অনেকটা টেবিল ল্যাম্পের মতো মনে হতো৷ আর জি৫-এর নতুন ভার্সনই হচ্ছে আইম্যাক৷ এদের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে প্রসেসরে৷ জি৫-এ ব্যবহার করা হতো পাওয়ার পিসি ৯৭০ মানের প্রসেসর আর নতুন আইম্যাকে ব্যবহার করা হয় ইন্টেলের প্রসেসর৷




এপলের কথা ছেড়ে একটু অন্যদের দিকে নজর দেয়া যাক৷ Littlepc.com নামের কোম্পানি বানানো শুরু করেছে সিডিরম ড্রাইভের সমান আকৃতির কমপিউটার৷ এটি দৈর্ঘ্যে ১০ ইঞ্চি, প্রস্থে ৫.৮ ইঞ্চি ও উচ্চতায় ২.৮ ইঞ্চি৷ এই পিসির বৈশিষ্ট্য হলো এতে কোন কুলিং ফ্যান নেই৷ এটি বানাতে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যে এতে ফ্যানের প্রয়োজন নেই ও তা উইন্ডোজ ভিসতা সমর্থন করে৷ এতে রয়েছে বিল্ট-ইন সাউন্ড কার্ড, গ্রাফিক্স কার্ড, ল্যান কার্ড ইত্যাদি৷ কালো রঙের অ্যালুমিনিয়াম চেসিসে মোড়ানো এই কমপিউটারে রয়েছে পিসিআই স্লট, ইউএসবি পোর্ট, সিরিয়াল পোর্ট ইত্যাদি৷ সেলেরন প্রসেসর থেকে শুরু করে কোর টু ডুয়ো সবমানের পিসিই এরা বাজারজাত করে থাকে৷ কমপিউটারের নাম দেয়া হয়েছে লিটল পিসি৷



Nano-ITX নামের আরেকটি কমপিউটার বের হয়েছে যেগুলো রম ড্রাইভের আকৃতির চেয়ে কিছুটা ছোট এবং এগুলোকে বলা হচ্ছে ‘দ্য ড্যাম স্মল মেশিন’ ৷ ৮০০ মে.হা. ও ২৫৬ মেগাবাইট মেমরির এই মেশিনগুলো ইউএসবি থেকে বুট করতে সক্ষম এবং লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে চলে৷ রুপালি এই মেশিনগুলোতেও ফ্যান ব্যবহার করা হয়নি, যার ফলে চলার সময় এটি কোনো ধরনের শব্দ তৈরি করে না৷

এছাড়া NEC US110-Tiny PC নামের কমপিউটারগুলো আকারে Nano-ITX এর থেকে আরো ছোট এবং খুব সহজেই হাতের তালুর ওপর এঁটে যায়৷ এই পিসির আয়তন হচ্ছে ১৫০ × ৯৪ × ৩০.৪ মিলিমিটার এবং ওজন মাত্র ৩৫০ গ্রাম৷ এটি এখনো বাজারজাত করা হয়নি বিধায় এর মেমরি, প্রসেসর, স্টোরেজ স্পেস সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা দেয়া হয়নি৷ তবে ধারণা করা হচ্ছে এর দাম পড়বে প্রায় ৪০০ ডলারের মতো৷


আরো ছোট আকারের পিসির কথা বলতে গেলে বলতে হয় স্পেস কিউব নামের কমপিউটারের কথা, যা আকারে একটি আপেলের চেয়ে বড় নয়৷ ২ ইঞ্চি বাই ২ ইঞ্চি ঘনকের আকৃতির এই পিসি বানিয়েছে জাপানের শিমাফুজি কর্পোরেশন৷ মাত্র ৫ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহারে চালিত এই যন্ত্র বানানো হয়েছে মহাশূন্যে সহজে ব্যবহার উপযোগী করে৷ নামকরণ সে অনুসারেই৷ এতে রয়েছে ৩০০ মে.হা., ১৬ মেগাবাইট মেমরি, ৬৪ মেগাবাইট এসডি ৠাম কার্ড, ল্যান পোর্ট, ইউএসবি পোর্ট, ইথারনেট পোর্ট, ভিজিএ মনিটর কানেক্টর ও এক জোড়া স্পিকার ও হেডফোন জ্যাক৷ ১ গিগাবাইট ধারণক্ষমতার কম্প্যাক্ট ফ্ল্যাশ কার্ড থেকে চলা লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে এর চালিকাশক্তি৷ বর্তমানের চাহিদা অনুযায়ী সিস্টেমের ক্ষমতা নিতান্তই খুবই কম মানের হলেও আকারের কথা বিবেচনা করলে তা খুব একটা কম বলা চলে না৷ জাপানের বাইরে এর বিক্রি হয় না, কিন্তু যদি তা কখনো করা হয় তবে তার দাম পড়বে প্রায় ২৭৫০ ডলার৷

যদি এমনটা হতো, ঘরের দেয়ালে লাগানো সুইচ বোর্ডে থাকতো কমপিউটার৷ তাতে শুধু মনিটর, মাউস আর কীবোর্ডের কানেকশন দিয়েই চালানো যেত সিস্টেম৷ ঠিক যেমন করে আমরা সকেট থেকে পাওয়ার কানেকশন নিয়ে টিভি চালাই তেমনভাবে৷ তাহলে ব্যাপারটা যে খুবই মজার হতো, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এমনি এক কমপিউটার বানিয়েছে ইসরাইলের চিপ পিসি টেকনোলজিস কোম্পানি এবং এর নাম দিয়েছে জ্যাক পিসি৷ এটি AMD Au 1550 RISC প্রসেসরসমৃদ্ধ, যার গতি ৩৩৩ থেকে ৫০০ মে.হা.৷ এর মেমরি হচ্ছে ৬৪-১২৮ মেগাবাইট ও এর অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে Windows CE .NET 4.2/5, যা ৩২-৬৪ মেগাবাইটের ফ্ল্যাশ মেমরি কার্ড থেকে চালু হবে৷ ৫ ওয়াট বিদ্যুতে চলমান এই কমপিউটার সাধারণ পিসির চেয়ে ২০ গুণ বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী৷ কমপিউটারটির কনফিগারেশন শুনেই সহজে বুঝা যায় যে এগুলোতে হাই গ্রাফিক্স কোয়ালিটির কোনো গেম খেলা সম্ভবপর নয়, এটি শুধু অফিশিয়াল ও ইন্টারনেটের সাধারণ টুকিটাকি কাজের জন্য বেশ উপযোগী৷


ফিডব্যাক : quitehitman@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - অক্টোবর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস