• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > কমিউনিটি মডেল
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মানিক মাহমুদ
মোট লেখা:২৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি ও সমাজ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
কমিউনিটি মডেল
কমিউনিটিভিত্তিক ই-সেন্টার তথা সিইসি Access to Information Programme (A2I)-এর আওতায় একটি পাইলট প্রজেক্ট৷ এ প্রজেক্টের শুরু দুটি ইউনিয়নে ২০০৭ সালের মে মাসে৷ ইউনিয়ন দুটি হছে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়ন এবং দিনাজপুর জেলার সেতাবগঞ্জ উপজেলার মুশিদহাট ইউনিয়ন৷

এই উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তিনটি :

০১. এমন একটি কমিউনিটি মডেল খুঁজে বের করা, যার মাধ্যমে তৃণমূল মানুষের দোরগোড়ায় তথ্যসেবা পৌঁছানোর একটি সহজ প্রক্রিয়া বের হবে এবং যে মডেলে থাকবে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত টেকসই হবার সব উপাদান৷
০২. এ মডেল নিশ্চিত করবে ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব নেতৃত্ব এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মালিকানা৷ এর মধ্য দিয়ে সিইসি হয়ে উঠবে একটি স্থায়ী স্থানীয় সমৃদ্ধ জ্ঞানভাণ্ডার৷
০৩. এ মডেলে সরকারি উদ্যোগে সারাদেশের সব ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়ার এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হবে৷তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের, বিশেষ করে হতদরিদ্রদের জন্য তথ্যসেবা নিশ্চিত হবে এমন একটি মডেল তৈরি করা হয়েছে, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মালিকানাতেই টেকসই হওয়া সম্ভব৷

এই অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রধান শক্তিগুলো ছিল :

০১. একটি শক্তিশালী মবিলাইজেশন বা উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া৷
০২. ইউনিয়ন পরিষদের সিইসিকে টেকসই করে তোলার দায়িত্ব কাঁ ধে তুলে নেয়া৷
০৩. সিইসিতে ইউনিয়ন পরিষদের নেতৃত্বে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মালিকানা প্রতিষ্ঠা৷
০৪. স্থানীয় তরুণ সম্প্রদায়ের আইসিটি প্রতিনিধি হয়ে ওঠা৷
০৫. স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বে তথ্য চাহিদা নির্ণয় করার সুযোগ৷
০৬. সিইসির সাথে স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা৷

ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য তথ্যসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়৷ এর প্রধান কারণ ছিল একটি স্বয়ংক্রিয় উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া৷ ইউনিয়ন পরিষদকে এতটাই উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হয়েছিল, কাঙ্ক্ষিত সময়ের আগেই সিইসি ইউনিয়ন পরিষদের একটি প্রাতিষ্ঠানিক অংশ হয়ে ওঠে৷ ইউনিয়ন পরিষদ শক্ত হাতে হাল ধরেছে বলেই সিইসির দ্রুত একটি পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি চ্যানেল হয়ে ওঠা সহজ হয়ে উঠেছে৷ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে ধারাবাহিক অংশগ্রহণমূলক সংলাপের ফলাফল হয়েছে এই যে, এরা উপলব্ধি করছে- তথ্য তাদের জীবনের গতিকে বাড়িয়ে দেবার এক শক্তিশালী মাধ্যম৷

তৃণমূল জনগোষ্ঠীর তথ্য অসচেতনতা ছিল একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ কেননা, তথ্যপ্রযুক্তি এখনো তাদের একটি বড় অংশের কাছে বিস্ময়কর ও অকল্পনীয় বস্তু৷ এই দূরত্ব দ্রুতই কমিয়ে আনা সম্ভব হয় যখন এটা স্পষ্ট করা হতো সিইসি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পদ৷ এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে স্থানীয় তরুণ জনগোষ্ঠী আইসিটি প্রতিনিধি হিসেবে৷

সহজে বোধগম্য তথ্যভাণ্ডার তৈরির একটি প্রক্রিয়া দাঁড় করানো ছিল আরেক চ্যালেঞ্জ৷ চ্যালেঞ্জ এ কারণে যে প্রচলিত তথ্যভাণ্ডার তৈরির প্রক্রিয়ায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ছিল বেশ দুর্বল৷ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেই সিইসিতে তথ্যভাণ্ডার নিয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যাপক আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়৷ এর ফলে সহজেই বেরিয়ে আসতে শুরু করে বর্তমান তথ্যভাণ্ডারের সীমাবদ্ধতা, নতুন আরো কী তথ্য যুক্ত করা জরুরি এবং কিভাবে তথ্যকে আরো সহজে বোধগম্য করে তোলা সম্ভব৷

কমিউনিটি মডেল

কমিউনিটি মডেলের লক্ষ্য টেকসই এবং স্থানীয় জনগণের জন্য তথ্যসেবা নিশ্চিত করা৷ মডেলের প্রধান তিনটি অংশ - লক্ষ্য অর্জনে কী দরকার, লক্ষ্য অর্জনে যেসব উপাদান দরকার তা কোথায় পাওয়া যাবে এবং সেসব উপাদান কিভাবে পাওয়া যাবে? উপাদান মোট ছয়টি৷ এই উপাদানগুলোর বিশ্লেষণের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব কমিউনিটি মডেলের মূল শক্তি৷

উপাদান এক : স্থানীয় তরুণদের আইসিটি প্রতিনিধি হয়ে ওঠা

সিইসি মডেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো তথ্যসচেতন এবং অনুপ্রাণিত স্থানীয় একদল তরুণ৷ এই তরুণরা সংগঠিত, স্বেচ্ছাব্রতী মানসিকতার এবং সোচ্চার৷ গভীর দেশপ্রেম ও সামাজিক দায়বদ্ধতাবোধ ছিল এর মূল ভিত্তি৷ এই তরুণদের উপলব্ধিতে আসে এরা নিজেরাও বিদ্যমান সামাজিক, অর্থনৈতিক বৈষম্যের পাশাপাশি তথ্যবৈষম্যের শিকার৷ সিইসি তাদের জানাতে সহায়তা করে, সমানভাবে তথ্য পাওয়া নাগরিক অধিকার৷ এই অধিকারবোধ তাদের মধ্যে তাগিদ সৃষ্টি করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে তথ্যসচেতন ও তাদের তথ্যচাহিদা পুরণে স্বেচ্ছাব্রতীর ভূমিকা পালনে৷

উপাদান দুই : স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মালিকানাবোধ

কমিউনিটি মবিলাইজেশন হলো কমিউনিটি মডেলের মূল ভিত্তি৷ ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় সিইসি পরিচালনায় যে মালিকানাবোধ এবং অনুপ্রেরণা- তা আসে এই মবিলাইজেশন থেকে৷ তথ্য ব্যবহারের ফলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে গুণগত পরিবর্তন আসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, প্রচলিত মানসিকতা, আয় বাড়ানো প্রভৃতি ক্ষেত্রে৷ এর প্রভাবে স্থানীয় মানুষের মধ্যে তথ্য ব্যবহারের আরো তাগিদ সৃষ্টি হয়- পরিবেশ সৃষ্টি হয় যৌথ চিন্তা করার, যৌথ উদ্যোগ নেয়ার- যার প্রত্যক্ষ ফল হলো বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন সৃষ্টি৷ স্থানীয় সিইসি সংশ্লিষ্টদের মালিকানা দৃঢ় করে তোলার ক্ষেত্রে মবিলাইজেশনের পাশাপাশি তাদের সামর্থ্যের বিকাশ ঘটানো আর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷

উপাদান তিন : স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক তথ্য ও সেবা

হরাইজন স্ক্যানিং থেকে বেরিয়ে আসে বিদ্যমান টেলিসেন্টারগুলোতে যে ধরনের তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে তার বেশিরভাগই সরবরাহভিত্তিক৷ কিন্তু মানুষের দরকার চাহিদাভিত্তিক তথ্য৷ এই শূন্যতা মানুষের দোরগোড়ায় তথ্যসেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এক বিরাট বাধা হিসেবে কাজ করে৷ এটুআই (A2I) এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেয়৷ এরা সিইসির জন্য তথ্যভাণ্ডার তৈরির আগে বুঝার চেষ্টা করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সত্যিকারের তথ্য চাহিদা কী? এই চাহিদা বের করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে বেইসলাইন সার্ভে পরিচালনা করে৷ বেইসলাইন থেকে শুধু স্থানীয় তথ্য চাহিদাই নয়, বরং বেরিয়ে আসে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে স্থানীয় মানুষের প্রচলিত ধ্যানধারণা, সম্ভাবনা এবং সমস্যা৷ মাধাইনগর আর মুশিদহাট ইউনিয়নে বেইসলাইন সার্ভে পরিচালনা করা হয় জুলাই ২০০৭-এ৷ বেইসলাইন সার্ভে পরিচালিত হয় স্থানীয় একদল স্বেচ্ছাসেবকের নেতৃত্বে৷ এদের মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষক, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় সাংবাদিক ছিলেন৷ এই ভলান্টিয়ারদের সাথে একদল গবেষকও যুক্ত ছিলেন৷

বেইসলাইন সার্ভের ফল

স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি- ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে কতখানি প্রয়োজন সে সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা বিদ্যমান৷ এর প্রধান কারণ তথ্যসচেতনতার অভাব৷ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি এখনো এখানকার বেশিরভাগ মানুষের কাছে বিস্ময়কর পর্যায়েই রয়ে গেছে৷ তরুণরা তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে আগ্রহী৷ তবে তুলনামূলক বয়স্ক, বিশেষ করে বেশিরভাগ প্রবীণদের মধ্যে প্রযুক্তিভীতি কাজ করে৷ তাদের মন্তব্য- চলছেতো, কী দরকার এসবের৷ শিক্ষিত অগ্রসররে মতামত হলো- আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের বিশেষ করে তরুণদের ধ্বংস করে দেবে৷ এই ভীতি বেশি কাজ করে তাদের মধ্যে, যারা কোনো না কোনোভাবে নেতৃত্বের সাথে জড়িত৷ কিন্তু সুবিধা ও অধিকারবঞ্চিত যারা- তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা পেলে তাদের মধ্যে তথ্য ব্যবহারের বিশেষ এক তাগিদবোধ জাগবে৷ বিশেষ করে নারীরা৷ তরুণরা তো এক পা এগিয়েই রয়েছে৷ পেশাজীবীদের মধ্যে কর্মদক্ষতা বাড়ানোর প্রশ্নে প্রযুক্তির সুবিধা নিতে আগ্রহী৷ তবে তাদের ধারণা নেই কিভাবে প্রযুক্তিকে আয়ত্বে আনা সম্ভব৷ কৃষকদের ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতি বা সনাতনী জ্ঞান সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে কাজ করে, যা তারা বাপ-দাদার মাধ্যমে অর্জন করেছে৷ অসচেতনতা, ফলে আস্থাহীনতা, এসবই এই বাধার পেছনের কারণ৷

চাহিদার ভিত্তিতে তথ্যভাণ্ডার তৈরি

সিইসির জন্য তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হয় বেইসলাইন ও হরাইজন স্ক্যানের ফাইন্ডিংসয়ের ভিত্তিতে৷ হরাইজন স্ক্যান থেকে দেখা যায়, বিদ্যমান টেলিসেন্টারগুলোর বেশিরভাগ তথ্যভাণ্ডারই পাঠভিত্তিক (টেক্সবেইসড), যা সবার জন্য সহজে বোধগম্য (কমিউনিকেটিভ) নয়৷ বিশেষ করে সেখানে নিরক্ষর ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা করে উপযোগী তেমন কোনো তথ্য নেই, যা আছে তা অন্য আরেক জনের সাহায্য ছাড়া তাদের পক্ষে বুঝা সম্ভব নয়৷ বেইসলাইন সার্ভের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইন্ডিংস হলো- স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক বিষয়ের সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো ডকুমেন্ট করা জরুরি৷ স্থানীয় মানুষ মনে করে, এক এলাকার বেস্ট প্র্যাকটিস অন্য এলাকার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য৷ অথচ, এখনো পর্যন্ত বিদ্যমান টেলিসেন্টারগুলোতে এ ধরনের তেমন কোনো তথ্যভাণ্ডার নেই৷

এসব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সিইসির জন্য কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, আইন ও মানবাধিকার, প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র উদ্যোগ প্রভৃতি বিষয়ে তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হয়৷ জীবিকাভিত্তিক এসব তথ্যভাণ্ডার চারটি ফরমেটে ভাগ করে তৈরি করা হয়- এনিমেটেড, ভিডিও, অডিও এবং পাঠভিত্তিক৷ এনিমেটেড ফর্মে (৭৫মিনিট) প্রধানত কৃষি তথ্য তৈরি করা হয়, যাতে করে কৃষকরা দেখে সহজেই বুঝতে পারে৷ সে অনুশীলনগুলো তুলে আনা হয় ভিডিও ফর্মে (৭৫মিনিট)৷ভিডিও ফরমেটে করা হয় সবার দেখার সুবিধার জন্য নয়, ডকুমেন্ট করাও এর একটা বড় উদ্দেশ্য৷ নিরক্ষর ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য অডিও ফরমেটে (৫০০ পৃষ্ঠা) করা হয় আইন ও মানবাধিকার বিষয়ে তথ্যভাণ্ডার৷ এর বাইরে রয়েছে জিয়ন-এর ৩০ হাজার পৃষ্ঠার পাঠভিত্তিক তথ্যভাণ্ডার৷ তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা ছাড়াও, পরে স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ডিজিটাইজড, নন-ডিজিটাইজড তথ্য সরবরাহ করা হয়৷ এর মধ্যে রয়েছে সরকারি ৫০ ধরনের ডিজিটাইজড ফরম, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ-এর গবেষণা বিষয়ক পাঠতথ্য এবং প্রাকটিকাল অ্যাকশন-এর ক্ষুদ্র উদ্যোগ এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ে একাধিক ডিজিটাইজড ও পাঠতথ্য৷

উপাদান চার : ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব নেতৃত্ব

সিইসি মডেলের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব নেতৃত্ব৷ ইউনিয়ন পরিষদের এমন নেতৃত্ব স্থানীয় মানুষের সিইসিকে নিজেদের সম্পদ বিবেচনা করা সহজ করে তুলেছে এবং ক্রমশই স্থানীয় জনগোষ্ঠীর এই মালিকানাবোধ জোরালো হচ্ছে৷ এটা সম্ভব হচ্ছে তার কারণ সিইসির সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ভূমিকা রাখা বেশ সহজ৷ সিইসির নিয়মিত পর্যালোচনাসভায় সিইসি কমিটির সদস্যরা গ্রামবাসীর হয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন, সমালোচনা ও মতামত তুলে ধরেন৷ এ প্রক্রিয়ায় সিইসিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে - টেলিসেন্টার প্র্যাকটিসে যা একেবারেই নতুন৷ আর একটি আকর্ষণীয় দিক হলো, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তৃণমূল মানুষের কাছে সত্যিকার অর্থেই তথ্যসেবা পৌঁ ছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে৷ এই সফলতা ইউনিয়ন পরিষদকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে৷ পাশাপাশি সিইসিসংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে এই স্বচ্ছতা এসেছে, ইউনিয়ন পরিষদকে সত্যিকার অর্থেই একটি কার্যকর পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি চ্যানেল-এ রূপান্তরিত করা সম্ভব৷

ইউনিয়ন পরিষদ মনে করে, টেকসই সিইসি গঠন করার প্রশ্নে শুধু ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব নেতৃত্ব যথেষ্ট নয়৷ দরকার সহায়ক সব শক্তির সুসমন্বয়৷ এজন্য শুরু থেকেই ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহকে সিইসির কার্যক্রমের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত করেছে৷ ইউনিয়ন পরিষদের এ উদ্যোগের ফলে সিইসি-ব্যবস্থাপনার গুণগত মান উন্নত হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ ও সিইসি কমিটির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চর্চা শক্তিশালী হয়েছে, এবং এর পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি চ্যানেল (পিএসডিসি)হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে৷ সিইসি মডেলের এসব অগ্রগতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং একাধিক জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সংস্থার মনোযোগ আকর্ষণ করে৷ এর সূত্র ধরে একাধিক টেলিসেন্টার সিইসি ভিজিট করে এবং তাদের কনটেন্ট ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করে৷ এর মধ্যে প্রাকটিক্যাল অ্যাকশন অন্যতম৷ বিটিএন এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে৷ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সিইসি মডেলকে অন্যান্য ইউনিয়নে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ শুরু করে৷ তবে সবার জন্য আগ্রহের বিষয় হলো, ইউনিয়ন পরিষদ কিভাবে একটি কার্যকর পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি চ্যানেল হনে উঠল৷ জাইকা ও এডিবি আরো দুটি বিষনে জানার চেষ্টা করছে - ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব নেতৃত্ব এবং সিইসিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মালিকানা সৃষ্টির প্রক্রিয়া৷

উপাদান পাঁচ : প্রাথমিক বিনিয়োগ

সিইসি তথ্যসেবা দেয়া শুরু করে জানুয়ারি ২০০৮-এ৷ উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে ২টি পিসি, ২টি প্রিন্টার (কালারসহ), ১টি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ১টি ডিজিটাল ক্যামেরা, ১টি স্ক্যানার মেশিন প্রভৃতি৷ ইউনিয়ন পরিষদের লক্ষ্য সিইসির মাধ্যমে তথ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো৷ এ লক্ষ্য অর্জনে এরা একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে- এক. সিইসিকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা৷ এ জন্য ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট থেকে বার্ষিক ৫০ হাজার টাকা থোক বরাদ্দ নিশ্চিত করে৷ দুই. সিইসিকে ইউনিয়ন পরিষদের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তোলা৷ সে জন্য সিইসি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করে৷ এর পাশাপাশি সিইসিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারিবারিক তথ্যসেবা কার্ড তৈরি করে। ইউনিয়ন পরিষদ আশা করছে, প্রতি বছর এই কার্ড থেকে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা সিইসি তহবিলে যোগ হবে৷ উল্লেখ্য, প্রতিটি কার্ডের মূল্য ১০০ টাকা এবং প্রতিটি ইউনিয়নে পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার বাস করে৷

উপাদান ছয় : দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপক

সিইসির দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনা চলে ম্যানেজারের নেতৃত্বে৷ এর বাইরে স্থানীয় একদল স্বেচ্ছাব্রতী তথ্যকর্মীর ভূমিকা পালন করে৷ এদের মধ্যে প্রধানত ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকসহ, সরকারি-বেসরকারি মাঠকর্মী রয়েছে৷ সিইসি ম্যানেজার বেতনভুক্ত৷ কিন্তু তাদের আচরণ উদ্যোক্তার মতো, বেতনভুক্ত কর্মীর মতো নয়৷ এর কারণ একাধিক- এক. সিইসি ম্যানেজার স্থানীয়৷ দুই. সিইসি কমিটি তাদের নিয়োগ দেয়ার সময় দুটি বিষয় স্পষ্ট কনে বলেছে- সিইসিকে ২০০৮ শেষ হবার আগেই লাভজনক করে তুলতে হবে এবং তথ্যসেবা মানের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে৷ তিন. সিইসি ম্যানজারের ইনসেনটিভ- নীট মুনাফার ২৫ শতাংশ কমিশন নির্ধারণ৷ চার. স্থানীয়রা তথ্য নিতে আসে সিইসির মালিকের মতো অধিকার নিয়ে৷


ফিডব্যাক : manikswapna@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - অক্টোবর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস