ইন্টারনেটে এখন শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিক্স ও আকর্ষণীয় ছবিসম্বলিত পেজ। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এক্সেসের ব্যাপক সম্প্রসারণের ফলে আমরা এখন অনলাইনে মুভি উপভোগ করতে পারছি। ট্রেইলর এবং অ্যানিমেশন থেকে শুরু করে টিভি প্রোগ্রাম ও ফিচার ফিল্ম সবকিছুই ওয়েব থেকে ডাউনলোড করা যায় বা অনলাইনে দেখা যায়।
তবে অনলাইন ভিডিও মুভি অন্য উৎস থেকে উপভোগ করা সবসময় সহজ ব্যাপার নয়। কেননা, বর্তমানে ডজনেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের ফরমেট যেমন রয়েছে, তেমনি এগুলো চালানোর জন্য রয়েছে বিভ্রান্ত সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া প্লেয়ার। বর্তমানে অনেক ধরনের ফাইল ও ফরমেট রয়েছে ভিডিও ফাইল চালানোর জন্য, যেগুলো সম্পর্কে সাধারণ ব্যবহারকারীরা খুব কম ধারণা রাখেন।
চাপ সৃষ্টি করে অর্জন করা
যদি ওয়েবসাইটে ভিডিও উপভোগ করতে ক্লান্ত বোধ করেন বা ডাউনলোড করা মুভি ফাইল প্লে করেন, তাহলে তা হবে শব্দহীন, অদৃশ্য, থাকবে শুধু দুর্বোধ্য এরর মেসেজ। এমন অবস্থায় বিচলিত হবার কিছু নেই। কেননা, বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ফাইলের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফাইল ফরমেট, যেগুলো প্লে করার জন্য দরকার সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার। মূলত এ কারণেই বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ফাইল ফরমেটের উপস্থিতি দেখা যায়, যার মূল পার্থক্য হলো ফাইল সাইজ।
ভিডিও ফাইল সাধারণত বেশ দীর্ঘ হয়। এ ফাইল অনলাইনে ডিস্ট্রিবিউট করার জন্য বা সাশ্রয়ীভাবে হার্ডডিস্কে স্টোর করার জন্য দরকার ফাইলের সাইজ ছোট করা। সাধারণত ভিডিও যখন তৈরি করা হয়, তখন সেটি হয় প্রতি সেকেন্ডে ২৫ ফ্রেমবিশিষ্ট । এটি শব্দসহ প্রতি সেকেন্ডে মধ্যম রেজ্যুলেশনের ২৫ ফটোর সমতুল্য। স্বাভাবিক ডিজিটাল ফাইল হিসেবে স্টোর হবার ফলে প্রতি মিনিটে ২. গি.বা ডাটা ব্যবহার হয়। এতে হার্ডডিস্কে কয়েক ক্লিপ স্টোর করা ছাড়া অন্য কোনো কিছু যেমন করা যায় না, তেমনি অনলাইন ভিডিও উপভোগ করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমনকি দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগের ক্ষেত্রেও এমন অবস্থা বিরাজ করে। এ অবস্থার পরিত্রাণ হতে পারে কম্প্রেশন ইউটিলিটি।
কম্প্রেশন হচ্ছে এমন এক কৌশল, যার ফলে ফাইলের সাইজ বেশ কমানো যায়। এর ফলে সামান্য কিছু ডাটা হারিয়ে যায়। এমপিথ্রি কম্প্রেশন যেভাবে গান সঙ্কুচিত করে মূল সাইজের এক-দশমাংশ কমিয়ে নিয়ে আসে, ঠিক সেভাবেই কাজ করে। এক্ষেত্রে বাদ দেয়া হয় ফ্রিকোয়েন্সিকে, যা আমাদের শ্রবণক্ষমতার বাইরে। ডিভিডি ব্যবহার করে ভিডিও কম্প্রেশন। ৪.৭ বা ৮.৫ গি.বা.-এর ডবল লেয়ার ডিভিডি ডিস্কে একটি ছবি ফিট করার জন্য সাধারণত ব্যবহার হয় এমপিথ্রি২ নামের কম্প্রেশন টুল। কম্প্রেশন আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন প্রতিটি ভিডিও ফ্রেম ধারণ করে স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনেশনের চেয়ে শতগুণ বেশি তথ্য। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কার্যকরভাবে ভিডিও ডেলিভার করার জন্য ফাইল সাইজ আরো ছোট হওয়ার দরকার। এজন্য চাই অধিকতর শক্তিশালী কম্প্রেশন।
প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য মিডিয়া প্লেয়ার :
প্রায় সব পিসিতেই ইনস্টল করা থাকে কোনো না কোনো সফটওয়্যার, যা ভিডিও ফাইল প্লেব্যাক করতে পারে। তবে বেশিরভাগ পিসিতেই প্রি-ইনস্টল করা থাকে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ারের সর্বশেষ ভার্সন WMPII. এই সফটওয়্যার WMV ভিডিও ফাইলসহ অন্যানো বেশ কয়েকটি ডিজিটাল ভিডিও মিউজিক ফরমেট কম্প্যাটিবল।
কমপিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে দুই বা ততোধিক মিডিয়া প্লেয়ার ইনস্টল করা থাকতে পারে বিদ্যমান প্রধান প্রধান সব ধরনের মিডিয়া ফরমেট সাপোর্ট করার জন্য। WMP ফরমেট ছাড়াও আপনাকে অ্যাপলের ক্যুইকটাইম প্লেয়ার ডাউনলোড ও ইনস্টল করার দরকার হতে পারে। বাহ্যত পিসিতে অ্যাপলের ক্যুইকটাইম ইনস্টল করা থাকলে অ্যাপল-ম্যাক ফরমেটের ভিডিও মুভি যেমন MOV ফাইল উপভোগ করতে পারবেন। ক্যুইকটাইম ৭ পাওয়া যাবে অ্যাপলের নিজস্ব ওয়েবসাইট www.apple.com/uk/ quicktime থেকে বা আইটিউন ৮-এর অংশ হিসেবে ডাউনলোড করা যাবে www.applecom/ uk/itunes সাইট থেকে। যদি আপনি আইপড ব্যবহার করেন, তাহলে ক্যুইকটাইমকে ইনস্টল অবস্থায় পাবেন।
আরেকটি জনপ্রিয় সফটওয়্যার হলো রিয়েল প্লেয়ার। রিয়েল প্লেয়ার ফরমেট মূলত ব্যবহার হয় স্ট্রিমিং মিউজিক ও ভিডিও অনলাইনের ক্ষেত্রে। রিয়েল প্লেয়ার-টু-ভার্সন ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে http://uk.real.com/player সাইট থেকে।
ব্রাউজার প্লাগ-ইনস
ওয়েব পেজে ভিডিও অ্যামবেডেড উপভোগ করতে চাইলে স্ট্যান্ড অ্যালোন মিডিয়া প্লেয়ারসহ আরো দরকার হবে ওয়েব ব্রাউজার প্লাগ-ইনস। উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ার, ক্যুইকটাইম এবং রিয়েল প্লেয়ার এসব প্রোগ্রামে সম্পৃক্ত রয়েছে তাদের নিজস্ব ব্রাউজার প্লাগ-ইন উপাদান। যদি পিসিতে ইতোমধ্যে স্ট্যান্ড অ্যানোল মিডিয়া প্লেয়ার ইনস্টল করে থাকেন, তাহলে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের সেটআপ প্রসেসের সময় এর প্লাগইন অবশ্যই সম্পৃক্ত থাকবে। এ বিষয়টি চেক করে দেখার জন্য ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৭ ওপেন করুন এবং টুলস-এ ক্লিক করে ইন্টারনেট অপশনে ক্লিক করুন। এরপর প্রোগ্রাম লেবেল করা ট্যাবে ক্লিক করে Manage add-ons বাটনে ক্লিক করুন।
পরবর্তী স্ক্রিনে Name-এ ক্লিক করুন যাতে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের প্লাগ-ইন বর্ণ ক্রমানুসারে সজ্জিত হয়। এবার স্ক্রল ডাউন করে ক্যুইকটাইম, রিয়েল প্লেয়ার এবং উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ারসংশ্লিষ্ট এন্ট্রি চেক করে দেখুন। যদি ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ছাড়া ফায়ারফক্স বা অন্য কোনো ব্রাউজার ব্যবহার করেন, তাহলে তৎসংশ্লিষ্ট প্লাগ-ইন ম্যানুয়ালি ইনস্টল করতে হবে। ফায়ারফক্সের ব্যবহারকারীরা উপরোক্ত তিনটি প্লাগ-ইন ফ্রি ডাউনলোড করতে পারবেন www.snipurl.com সাইট থেকে।
অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ প্লেয়ার আরেকটি জনপ্রিয় ভিডিও ফরমেট যা মূলত ব্যবহার হয় জনপ্রিয় ইউটিউব ও বিবিসিআই প্লেয়ারসহ ভিডিও স্ট্রিমিং ওয়েবসাইটে। ইউটিউব ফ্রি পাওয়া যাবে www.youtube.com এবং বিবিসিআই প্লেয়ার পাওয়া যাবে www.bbc.co.uk/iplayer সাইট থেকে। আর ফ্ল্যাশ ফ্রি ইনস্টল করা যাবে www.adobe.com/products/flashplayer সাইট থেকে। এ ছাড়া অ্যাডোবি শকওয়েব প্লেয়ার ফ্রি পাওয়া যাবে http://get.adobe.com/shockwave সাইট থেকে।
কোডেক
যদি কোনো মিডিয়া প্লেয়ার কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ভিডিও ফাইল সাপোর্ট করে, তার মানে এই নয় যে ভিডিও যে ফরমেটে এনকোড করা হয়েছিল তার সাথে এটি কম্প্যাটিবল হবে। এক সময় উইন্ডোজ এভিআই ফাইল সফলভাবে সব ভিডিও ফাইল সাপোর্ট করতো, যেগুলো .avi এক্সটেনশনযুক্ত। AVI-কে বলা হয় ‘Container’ ফরমেট এবং AVI ফাইলের মধ্যে ধারণ করা বিভিন্ন ধরনের ভিডিওর মধ্যে যেকোনো এক ভিডিও ফরমেট হতে পারে। একই কথা বলা যেতে পারে অন্যান্য কন্টেইনার ফরমেটের ক্ষেত্রে যেমন- MOV, MPG।
অর্থাৎ যথাযথ মিডিয়া প্লেয়ার ইনস্টল করা থাকলেই হবে না, বরং আপনি যে ভিডিও ফরমেট প্লে করতে চাচ্ছেন তার কোডেক থাকতে হবে। কোডেক হলো কম্প্রেসর/ডিকম্প্রেসরের সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি এমন এক সফটওয়্যার যা ব্যবহার হয় মিডিয়া প্লেয়ারের ফাইল রিড করার জন্য যেগুলো বিশেষ কোনো প্রক্রিয়ায় কম্প্রেস করা হয়েছে। উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ার এবং ক্যুইকটাইমসহ বেশিরভাগ মিডিয়া প্লেয়ার সম্পৃক্ত থাকে তাদের নিজস্ব কোডেকসহ জনপ্রিয় ফরমেটের জন্য।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : swapan52002@yahoo.com