• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > তথ্যপ্রযুক্তি টাস্কফোর্স ও নীতিমালা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:৯৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইটি
তথ্যসূত্র:
নীতিপ্রসঙ্গ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
তথ্যপ্রযুক্তি টাস্কফোর্স ও নীতিমালা

চার বছর চার মাস পর জাতীয় আইসিটি টাস্কফোর্সের সভা অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয় এগারো জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল এগারোটায়৷ এমন একটি কমিটির সভায় সরকারপ্রধান ও সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের সামনে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করার একটি সুযোগের কথা অনেকদিন ধরে ভেবেছি৷ তথ্যপ্রযুক্তির মতো বিষয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে সিদ্ধান্ত নেয়াটি সময়সাপেক্ষ বিষয়৷ কারণ, একেক মন্ত্রণালয় একেক কাজ করে৷ এজন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে সেজন্য টাস্কফোর্স গড়ে তোলা হয়েছিল৷ সরকারপ্রধান কোনো সভায় সভাপতিত্ব করে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেন তবে সেটি বাস্তবায়ন দ্রুত হবে৷

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শাসনকালের শেষভাগে এ টাস্কফোর্স গঠন করেন৷ শেখ হাসিনার আমলে আমাদের বিশিষ্টজনরা এই টাস্কফোর্স থেকে তেমন কিছু আদায় করতে পেরেছেন বলে আমার মনে হয় না৷ ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় পদাধিকার বলে এমন একটি সভায় উপস্থিত থাকতে পারার সুযোগটি আমি পাই৷ প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থ উপদেষ্টা, জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারীদ্বয় এবং বিজ্ঞান সচিব, শিক্ষা সচিবসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন৷ তারা সভায় অত্যন্ত সরব ভূমিকা পালন করে এটি আমাদের কাছে নিশ্চিত করেছেন যে, বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ যদিও খুব অবাক হয়েছিলাম এটি দেখে যে, চার বছর পর অনুষ্ঠিত জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় কার্যত এমনসব এজেন্ডা গ্রহণ করা হয়েছে, যা শুধু সাময়িক প্রয়োজনকেই সামনে রাখে৷

স্বাধীনতার সাঁইত্রিশ বছর পর এ জাতির সামনে যাবার জন্য যে স্বপ্ন, যে আকাঙ্ক্ষা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পূরণ সম্ভব, সেসব কোনো বিষয় সে সভায় আলোচিত হবার জন্য নির্ধারিত হয়নি৷ বলতে গেলে সভার পুরো সময়টি আমরা কাটিয়ে দিই শুধু ফিনিশিং স্কুল নিয়ে৷ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সম্ভাবনা ও মরচে ধরা প্রশাসনিক উদ্যোগগুলোকে সচল করার বিষয়গুলো কোনোভাবেই আলোচনায় আনা যায়নি৷ যদিও আলোচ্যসূচীর বিবিধ পর্যায়ে আমি তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা এবং শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টির প্রতি প্রধান উপদেষ্টা এবং সভায় উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হই৷ সুদের হার, চলতি মূলধন বা নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়াদি আইসিটি টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটি পর্যায়ে আলোচিত হওয়া উচিত, জাতীয় টাস্কফোর্সের এজেন্ডা হিসেবে এর আসা উচিত নয়৷ যেসব সিদ্ধান্ত কেবিনেট সচিব পর্যায়ে নিষ্পত্তি হতে পারে, তাকে সরকার প্রধান পর্যায়ে আনা উচিত নয়৷ অন্যদিকে দিকনির্দেশনামূলক বিষয়াদিই শুধু জাতীয় টাস্কফোর্সের আলোচ্যসূচিতে আসা উচিত৷ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ টাস্কফোর্সের সভায় সফটওয়্যার প্রোগ্রামারদের জন্য একটি ফিনিশিং স্কুল স্থাপন, একটি গবেষণা নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়া এবং সফটওয়্যার রফতানি খাতের জন্য চলতি মূলধনের সুদের হার কমানো আলোচ্যসূচিতে পরিণত হয়৷ এর আগে ৫ জুন ২০০৮ তারিখে অনুষ্ঠিত আইসিটি টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির সভায় তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা ও শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টিকে প্রধান আলোচ্যবিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ কিন্তু মূল কমিটির আলোচনায় সে আলোচ্যসূচীই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷

তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে এ সরকারের নড়েচড়ে বসার মতো অবস্থা হয় ২০০৮ সালে বেটার বিজনেস ফোরাম নামের একটি ফোরামের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে৷ বেটার বিজনেস ফোরাম আইসিটি খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সুপারিশ পেশ করার ফলে সরকার তাকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন৷ ফলে বিগত কয়েক মাসে সরকারকে বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভার আয়োজন করতে দেখি আমরা৷ এর মাঝে মহাখালীতে আইসিটি ভিলেজ বা টেকনোলজি পার্ক তৈরি, কমপিউটার শিক্ষায় গতিশীলতা আনা এবং তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়নে পদক্ষেপ নেয়া উল্লেখযোগ্য৷

খসড়া তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৮ প্রণয়ন

২০০২ সালে তত্কালীন সরকার একটি তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়ন করেন৷ আওয়ামী লীগ আমল থেকে এ দলিল প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়৷ তখন থেকে সুদীর্ঘ সময় অনেক সেমিনার-কর্মশালার আয়োজন করে৷ কার্যত সেইসব সেমিনার-কর্মশালা থেকে একটিও সুপারিশ গ্রহণ না করে একটি আমলাতান্ত্রিক নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়৷ বড়জোর কিছু কিছু শিক্ষাবিদের পরামর্শ সেখানে নেয়া হয়৷ প্রায় একই সময়ে আমরা শিল্পখাতের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআই-এর মাধ্যমে একটি তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা তৈরি করে তত্কালীন মন্ত্রী মঈন খানের কাছে পেশ করেছিলাম৷ কিন্তু আমাদের সে নীতিমালার কোনো সুপারিশ তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷ বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের ৪মে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে কমিটিকে এই নীতিমালা পর্যালোচনা ও নবায়ন করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়৷ কমিটি প্রথমে চার সপ্তাহ ও পরে আরও চার সপ্তাহ সময় পায়৷ গত ২ সেপ্টেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত কমিটির চারটি সভা অনুষ্ঠিত হয় ৷ ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮ কমিটির শেষ সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা৷

কমিটির মূল্যায়ন অনুসারে ২০০২ সালের নীতিমালায় মোট ১০৩টি কর্মপ্রণালীর মাঝে ৮টি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে৷ কিছু কাজ হয়েছে ৬১টির এবং ৩৪টি সুপারিশের কোনো কাজ হয়নি৷ কমিটির মতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এ নীতিমালা বিষয়ে অবহিত ছিল না, নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকারের কোনো আগ্রহ ছিল না বা সরকারের মাঝে সমন্বয় ছিল না বলে সে নীতিমালা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়নি৷ এই মূল্যায়নটি কমপিউটার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে করা৷ ফলে এটি সরকারের ব্যর্থতাকে ঢাকার একটি চেষ্টা৷ উদাহরণ দেয়া যেতে পারে৷ বলা হয়েছে যে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, স্কুল-কলেজে কমপিউটার বিষয়টি পাঠ্য করা হয়েছে৷ বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, স্কুল-কলেজে ৯৬/৯৮ সালে এ বিষয়টি পাঠ্য করা হয়েছে৷ ২০০১ সালের মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কমপিউটার শিক্ষার গতি আসে৷ নীতিমালায় সেই অবস্থার উন্নতির কথা বলা হয়েছিল৷ কিন্তু ২০০২ সালের পর স্কুল-কলেজে তো দূরের কথা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও কমপিউটার শিক্ষার জন্য সঠিক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি৷

তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৮ : স্বপ্নের দলিল

প্রশ্ন হতে পারে, কেমন হওয়া উচিত বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা৷ প্রথমত আমি মনে করি, আমাদের এটি ভুলে যাওয়া উচিত ২০০২ সালে একটি নীতিমালা প্রণীত হয়েছিল৷ ২০০৮ সালে যে নীতিমালাটি প্রণীত হচ্ছে তার ঠিকানা হবে বাংলাদেশের সব বিষয়ের অগ্রগতির স্বপ্নের দলিল৷ এটি পাঁচ-সাত বা দশ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে নয়, এর পরিধি হবে অন্তত ২০২১ সাল পর্যন্ত৷ ডিজিটাল প্লানেট নামের যে ধারণাটি আন্তর্জাতিক দুনিয়াতে এখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে এবং বিশ্বের বহু দেশ যেখানে তাদেরকে ডিজিটাল দেশে পরিণত করার চেষ্টা করছে, সেখানে বাংলাদেশ শুধু একটি মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য তার গন্তব্য ঠিক করবে, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ যদি মনে করা হয়, এটি দেশের সরকার যেভাবে আর দশটি নীতিমালা প্রণয়ন করে তেমন একটি নীতিমালা হবে, তবে সেই কাজটি করতে গিয়ে আমরা ভুল করবো৷ এটি একটি আমদানি নীতিমালা নয়, একটি পরিবেশ নীতিমালা, শিল্প নীতি, রফতানি নীতিও নয়৷ এটি এমনকি একটি টেলিকম নীতিমালাও নয়৷ এটি হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একুশ শতকের অভিযাত্রার দলিল৷ এ দলিলে আমাদেরকে বর্ণনা করতে হবে, দেশটি অন্তত ২০২১ সালে বা তার পরে কেমন হবে৷ তথ্যপ্রযুক্তি এই দেশের শিল্প-কৃষি, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তন আনবে সেটি স্পষ্ট করতে হবে৷ অন্যান্য খাতে বা সমাজব্যবস্থায় যে গন্তব্যে আমরা পৌঁছাতে চাই, সেটিও এখানে স্পষ্ট করে বলতে হবে৷

প্রস্তাবিত খসড়া :

তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়ন সংক্রান্ত নবগঠিত জাতীয় কমিটি যে খসড়াটি প্রণয়ন করেছেন, তার ভাষা ইংরেজি৷ সেই ইংরেজি ভাষার দলিলটিকে আমরা অনুবাদ করতে পারব না বা এর নির্দিষ্ট অংশ উল্লেখ করে কোন অনুচ্ছেদের বদলে কোন অনুচ্ছেদ হবে সেটিও বর্ণনা করতে পারব না৷ বরং আমরা বাংলা ভাষায় প্রস্তাবিত নীতিমালায় কী কী থাকতে পারে, তার উল্লেখ করতে পারি৷ অবশ্য, পুরো দলিলটি বাংলাতেই প্রণীত হতে পারতো৷ এর একটি ইংরেজি সংস্করণও থাকতে পারে৷ তবে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এই ইংরেজি দলিলটির একটি বাংলা সংস্করণ প্রকাশ করা হবে৷ এর মাঝেই দলিলটির বাংলা সংস্করণ নিয়ে কাজ করা শুরু হয়েছে৷ ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮ কমিটির শেষ সভায় বাংলা সংস্করণটিও পেশ করা হতে পারে৷

তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালার স্বপ বা ভিশন হচ্ছে এমন : বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিত্সাসহ উপযুক্ত ও মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণ করার পাশাপাশি দেশের নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষিত মানবসম্পদে পরিণত করা, সব নাগরিকের বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক উন্নতি, মৌলিক অধিকার আদায়সহ সুশাসন কায়েম, জনগণের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সব স্তরে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, শহর-গ্রামসহ সর্বত্র সামাজিক সাম্য কায়েম ও সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা এবং সরকারসহ সব পর্যায়ে বিশ্বমানের দক্ষতা অর্জনের জন্য এই দেশটিকে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করে এতে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই হবে তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৮-এর লক্ষ্য৷

এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কতগুলো কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে৷ এই কৌশলগুলোকে খসড়া নীতিমালায় ১০টি অনুচ্ছেদে ভাগ করা হয়েছে৷ এমন দশটি কৌশল নয়, বস্তুত ৭টি উদ্দেশ্য এমনভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে যাতে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ বিকাশে সহায়ক হয়৷ এ ৭টি উদ্দেশ্য হতে পারে এমন :

০১. এই নীতিমালা বাস্তবায়নের পর বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর হাতে কমপিউটার পৌছাবে, সব স্তরে কমপিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে এবং দেশের সব শিক্ষার্থী তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হবে৷ দেশের শিক্ষার মান ব্যাপকভাবে উন্নীত করাসহ বিপুল পরিমাণ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি করা হবে, যা দেশের চাহিদা পূরণ করে বিশ্ববাজারে ব্যাপকভাবে প্রবেশ করতে পারবে৷ এই নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হবে তথ্যপ্রযুক্তিকে শিক্ষার বাহন হিসেবে প্রচলন করা এবং কমপিউটারকে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার নিশ্চিত করা৷

০২. এই নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে দেশের প্রতিটি ঘরে ইন্টারনেট পৌঁছাবে এবং প্রতিটি মানুষ মোবাইল বা টেলিকম প্রযুক্তিসহ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সমভাবে সমপর্যায়ে ব্যবহারের জন্য সমান সুযোগ পাবে৷ এতে গ্রামগুলোকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহার ও লভ্যতাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে৷ এই নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে শহর ও গ্রাম এবং ধনী ও গরিবের মাঝে ডিজিটাল ডিভাইড সম্পূর্ণ দূর করা হবে৷

এই নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হবে একটি পেপারলেস ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠা করা৷ সরকার একটি নেটওয়ার্কড একক ইউনিট হিসেবে ইন্টারঅ্যাকটিভ পদ্ধতিতে কাজ করবে এবং সরকারের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ নীতিনির্ধারকগণ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সরকার পরিচালনা করবেন৷ সরকারের আন্তঃ ও বহিঃযোগাযোগসহ জনগণের সাথে সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণভাবে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নির্ভর হবে৷ এই নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হবে জনগণের তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করা এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের সাথে সরকারের সব প্রকারের যোগাযোগ নিশ্চিত করা৷

০৪. এই নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হবে সরকারি-বেসরকারি কৃষি-শিল্প ও ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ সবধরনের উত্পাদন, বিপণন, বিক্রিসহ সব পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে৷ এসব খাতের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাওয়া নিশ্চিত করাও এই নীতিমালার অন্যতম উদ্দেশ্য হবে৷ এ নীতিমালার আওতায় এমনসব ব্যবস্থা হবে নেয়া, যার সাহায্যে মেধাসম্পদ রফতানি ব্যাপকভাবে বাড়বে এবং দেশের ভেতরে মেধাসম্পদের সৃজন, সংরক্ষণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত হবে৷ এই নীতিমালার অন্যতম উদ্দেশ্য হবে জাতীয় গড় উত্পাদনে মেধাজাত আয়ের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বাড়ানো৷

০৫. এই নীতিমালার উদ্দেশ্য হবে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে টেলিমেডিসিনসহ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করা৷

০৬. এই নীতিমালার অন্যতম উদ্দেশ্য হবে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি, সামাজিক সম্পর্ক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনধারাকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করা৷

০৭. এই নীতিমালার উদ্দেশ্য হবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা ভাষার উন্নয়ন, বিকাশ এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে এই ভাষার ব্যবহারকে নিশ্চিত করা৷

এই লক্ষ্যসমূহের সাথে মিল রেখে খসড়া নীতিমালায় যেসব কর্মপরিকল্পনার কথা উল্লিখিত হয়েছে, সেগুলোকে আরও কিছু পরিমার্জিত করতে হবে এবং সেসব কর্মপরিকল্পনা কে, কোথায়, কবে, কিভাবে বাস্তবায়ন করবে সেটিও উল্লেখ করতে হবে৷ মোট ১০টি উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে ৩০৫টি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়৷ কিন্তু আমাদেরকে এমনভাবে কর্মপরিকল্পনাগুলোকে সাজাতে হবে যাতে খসড়া নীতিমালার কর্মপরিকল্পনাগুলোর সাথে আমাদের উদ্দেশ্যের পরিধি সম্প্রসারিত হয়৷

যদি এই উদ্দেশ্যটির প্রথমাংশ বাস্তবায়ন করা হয় তবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হবে৷ তবে তথ্যপ্রযুক্তিতে কর্মসংস্থান গড়ে তোলার জন্য ফিনিশিং স্কুল ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার বিস্তারের জন্য বিশেষ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে৷

দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়নের জন্য পুরো দেশে ইন্টারনেটের অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে এবং ইন্টারনেটের ব্যয় গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মাঝে আনতে হবে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইন্টারনেট বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে৷

তৃতীয় উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে৷ সরকারের বর্তমান জনবলকে দুবছরে মাঝে কমপিউটার শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে এবং দুবছর পর শুধু কমপিউটার শিক্ষিত জনবলই সংগ্রহ করতে হবে৷ পাশাপাশি সরকারের সব উপাত্ত ডিজিটাল করতে হবে৷ সরকারের সব পর্যায়ে নেটওয়ার্ক থাকতে হবে৷

চতুর্থ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য শিল্প-কলকারখানার উত্পাদন, যোগাযোগ, বিপণন, বিক্রয় ও ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাল করতে হবে৷ সেজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি পর্যাপ্ত জনবল প্রশিক্ষিত করতে হবে৷ ব্যবসায় বাণিজ্যসহ জীবনের সব পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের জন্য সৃজনশীলতাকে উত্সাহিত করাসহ এর সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে৷

পঞ্চম উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়নের জন্য জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌছানো ছাড়াও কৃষি তথ্য পৌঁছানো, সরকারের তথ্য পৌছানো, তথ্যসেবা পৌঁছানো এবং দূরশিক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রম যুক্ত হতে পারে৷

ষষ্ঠ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য খুব বেশি প্রচেষ্টা আলাদাভাবে প্রয়োজন নাও হতে পারে৷ এ ছয়টি উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করলে সেখান থেকে সমাজে যে প্রভাব পড়বে, তার ফলে সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিক সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবেই তথ্যপ্রযুক্তিকেন্দ্রিক হয়ে ওঠবে৷

সপ্তম উদ্দেশ্যটি অবশ্যই আমাদের জাতীয় পরিচয়ের বড় ভিত্তি৷ এজন্য কমপিউটারে বা তথ্যপ্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রয়োগের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে৷ বাংলা ভাষার উন্নয়নে যে চরম অনীহা এখন কাজ করছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷

যদি আমরা আইসিটিতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে পারি তবে আমাদের পক্ষে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা মোটেই কঠিন হবে না৷ এমনকি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলাও মোটেও অসম্ভব হবে না৷


ফিডব্যাক : mustafajabbar@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - সেপ্টেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস