লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
ব্যাংকিং ও প্রযুক্তি
যেখানে-সেখানে যখন-তখন ব্যাংকিং এবং প্রযুক্তি
যেখানে-সেখানে যখন-তখন ব্যাংকিং এবং প্রযুক্তি
গোলাপ মুনীর
নগদ টাকা ওঠানো, কিংবা জমা দেয়া, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, মোবাইল ফোন, পানি ইত্যাদি পরিষেবার বিল পরিশোধ, কর্পোরেশন ট্যাক্স, আয়-কর, আগাম-কর, অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর, স্থায়ী আমানত জমা, শেয়ার ব্যবসায় এবং আরো নানা কাজ চলে ব্যাংকের মাধ্যমে৷ আপনি যদি ব্যস্ত-সমস্ত একজন কর্মকর্তা কিংবা পেশাজীবী কিংবা ব্যবসায়ী হন, তাহলে এতসব করতে আপনার হাতে এত সময় কই? আপনার জন্য সুখবর, তথ্যপ্রযুক্তি এগিয়ে এসেছে সহজেই আপনার এসব ঝামেলা মিটিয়ে দিতে৷
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যাংক ব্যবসায়কে এখন ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে প্রায় প্রতিটি চ্যানেলে৷ হতে পারে সেটি ইন্টারনেট, হতে পারে এটিএম তথা অটোমেটিক টেলার মেশিন, কিংবা হতে পারে মোবাইল ফোন ব্যাংকিং৷ আর এমনকি ট্রেনে বসেও খুব শিগগিরই চলতে পারে ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড৷ শিগগিরই আপনি মুক্তি পেতে পারেন মাল্টিপল পিন তথা পার্সোনাল আইডেন্টিটি নম্বর নিরাপদ রাখার মতো দুঃসহ যন্ত্রণা থেকেও৷ বায়োমেট্রিকের সুবাদে প্রয়োজন ফুরাবে পাসওয়ার্ডেরও৷ এসব কিছুই আসছে তাদের নিজস্ব কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে৷ এ লেখায় প্রয়াস পাবো সেসব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরতে৷ জানাতে চাইবো কিভাবে ব্যাংকগুলো নানা উদ্ভাবনীমূলক উপায়ে সমাধান করে চলেছে তাদের কাজগুলো৷
নগদ টাকা ওঠানো, কিংবা জমা দেয়া, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, মোবাইল ফোন, পানি ইত্যাদি পরিষেবার বিল পরিশোধ, কর্পোরেশন ট্যাক্স, আয়-কর, আগাম-কর, অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর, স্থায়ী আমানত জমা, শেয়ার ব্যবসায় এবং আরো নানা কাজ চলে ব্যাংকের মাধ্যমে৷ আপনি যদি ব্যস্ত-সমস্ত একজন কর্মকর্তা কিংবা পেশাজীবী কিংবা ব্যবসায়ী হন, তাহলে এতসব করতে আপনার হাতে এত সময় কই? আপনার জন্য সুখবর, তথ্যপ্রযুক্তি এগিয়ে এসেছে সহজেই আপনার এসব ঝামেলা মিটিয়ে দিতে৷ ব্যাংকগুলো তার গ্রাহকদের জন্য চালু করছে কেবল ব্যাংকিং, এসএমএস ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম, ক্রেডিট কার্ড, ডেভিড কার্ড ও এমনি আরো কত কি? এসব সেবা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ব্যাংকগুলো ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে বা করতে যাচ্ছে৷ কিন্তু ব্যাংকগুলোকে তা করতে হচ্ছে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই৷ আর ব্যাংকের সিআইও তথা প্রধান তথ্য কর্মকর্তাকেই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চলতে হয়৷ এক্ষেত্রে একটি মুখ্য চ্যালেঞ্জ বা উদ্বেগ হচ্ছে, এসব চ্যানেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷ চ্যানেলের সংখ্যা যত বাড়বে, তত বেশি সংখ্যার পোর্ট খুলে যাবে৷ পাশপাশি প্রশ্ন আসবে, এসব চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনে নিশ্চিত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা যেনো বিঘ্নিত না হয়৷ আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ও এগুলোর ডাটার মধ্যে সুসংহত সমন্বয়৷
ব্যাংকগুলোর সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমাদের ব্যাপক পল্লী গ্রাহকদের সামনে কী করে এই বাজার সম্প্রসারণ করা যায়৷ আসলে আমাদের দেশের ব্যাংক ব্যবসায় তথ্যপ্রযুক্তির অ্যাপ্লিকেশনের একটি অবহেলিত ক্ষেত্র৷ এর বড় কারণ টেলিকমিউনিকেশনের অপর্যাছপ্ততা৷ হতে পারে ব্যাংকগুলোর জন্য এটাই প্রকৃষ্ট সময় ট্র্যাডিশনাল ব্যাংকিং সলিউশন থেকে বেরিয়ে আসা এবং নজর দেয়া উদ্ভাবনীমূলক সলিউশনগুলোর দিকে৷ এমনি একটি বিকল্প হচ্ছে, সুদূর প্রসারিত অঞ্চলে ব্যাংক সেবা সম্প্রসারণে বায়োমেট্রিক টেকনোলজির ব্যবহার৷
আইটি এসেছে কাজকে সহজ করে তুলতে
শুরুতেই বলা দরকার, ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন চ্যানেলের ব্যবহারকারীর জন্য নিশ্চিত করতে হবে কাস্টমার ইনফরমেশনে গ্রাহক সাধারণের প্রবেশ৷ এই একই তথ্যভণ্ডার ব্যবহার করা যাবে একইভাবে নতুন ও পুরনো গ্রাহকদের কাছে নতুন পণ্য ও সেবা বিক্রির সমঝোতা তৈরির কাজে৷ একই সাথে সেলস টিমের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে একটি কার্যকর ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম তথা এমআইএস৷
এ সমন্বয় চ্যালেঞ্জের একটি জোরালো সমাধান হতে পারে এসওএ তথা সার্ভিস ওরিয়েন্টেড আর্কিটেকচার৷ আর তা ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দেবে তাদের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে সংযোগ গড়ে তোলা নিশ্চিত করতে কোনো ধরনের প্রোপ্রাইটরি কোড না লিখে অথবা ব্যক্তিবিশেষের ডাটাবেজের সংমিশ্রণ না ঘটিয়েই৷ এ কাজে এসওএ ব্যবহারে ব্যাংকগুলোর জন্য রয়েছে ব্যাপক সুযোগ৷
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এরই মধ্যে নানা ধরনের ব্যাংকিং সলিউশন বের করতে সক্ষম হয়েছে৷ অবশ্য একটি সলিউশন কাজ করতে সক্ষম একটি কমপ্লিট ইনফরমেশন সিকিউরিটি সলিউশন হিসেবে৷ অর্থাৎ এটি সক্ষম সব অ্যাপ্লিকেশনে এন্ট্রি চ্যানেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে৷ একটি উদাহরণ দিই কিভাবে এসএমএস ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার করে থার্ড পার্টি তথা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে অর্থ লেনদেন সম্পাদন করা যায়৷ একজন ক্রেতা কিছু কেনার জন্য একটা ম্যাসেজ পাঠান৷ ব্যাংক পণ্য ও সেবা কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করে ম্যাসেজ পাঠায় মার্চেন্ট ও বায়ার উভয়ের কাছে৷ গ্রাহকের অথেনটিসিটি তথা যথার্থ গ্রাহক নির্ণয়ে এখানে মুখ্যত ব্যবহার হয় ডেভিট কার্ড নম্বরের৷ নিরাপদ লেনদেনের বিষয়টি নিশ্চিত হয় দুটি স্তরে৷ প্রথমত, আপনার মোবাইল নম্বর যথার্থতা ব্যাংক যাচাই করে অথেনটিকেশন কী ব্যবহার কবে। এরপর গ্রাহক প্রবেশ করেন একটি গোপন এমপিআইএন তথা মোবাইল পার্সোনাল আইডেনটিফিকেশন নাম্বার-এ৷ এর যথার্থতা আবার যাচাই করে নেয় ব্যাংক৷ নিরাপত্তা পদক্ষেপ আরো জোরদার করার জন্য তিনটি ইনভেলিড লগইন উ্যোগ অগ্রহণযোগ্য ধরে নেয়া হয়৷
বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন
ব্যাংকগুলো ব্যাপকভিত্তিক গ্রাহকদের জন্য বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি ব্যবহারে ছিল অনেকটা অনাগ্রহী৷ কারণ, মানুষ ভাবতো এটা অনেকটা অপরাধ তদন্তের মতোই কাজ করে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে নতুন ভাবনা-চিন্তা নিয়ে এলো বিএফএস টেকনোলজি৷ অনেকেই এখন এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে৷ তা সত্ত্বেও গ্রামাঞ্চলে এখনো সাক্ষরতার হার গ্রহণযোগ্য পর্যালয়েরও নিচে৷ সেখানকার মানুষও এ প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী৷ আমাদের বিশ্বাস, যেসব পদক্ষেপের ফলে একটি সহজতর ইন্টারফেস তৈরি হবে এবং আপনি যেখানে ঝামেলামুক্ত থাকবেন মাল্টিপল পিন নম্বর থেকে, সেসব পদক্ষেপকে সবাই স্বাগত জানাবে৷ মোটের ওপর অন্যান্য শারীরিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে অনন্য আইডেনটি বা পরিচয় প্রকাশের৷
ফিঙ্গার স্ক্যানিং বা আঙ্গুলের ছাপ আজো অটোমেটিক টেলার মেশিনে একটি জনপ্রিয় বায়োমেট্রিক অ্যাপ্লিকেশন৷ এটিএম-এর পেছনে একটি বহনযোগ্য স্ক্যানিং যন্ত্র সংযোগ দিয়েই যেকোনো এটিএম মেশিনকে এ কাজের উপযোগী করে তোলা যায়৷ আর এ মেশিনটি সংযুক্ত করা যায় ব্যাংকের সার্ভারে, যা জমা রাখা রেকর্ডের সাহায্যে ভিজিটরের অথেনটিফিকেশন কিংবা সঠিক পরিচয় জানিয়ে দেবে৷ কোনো ব্যক্তিপরিচয় নির্ণয়ে এটি একটি স্থির-নিশ্চিত উপায়, কোনো লোকই এর ফলে পরিচয় গোপন করতে পারে না৷ শুধু এটিএমগুলোই নয়, বায়োমেট্রিক ব্যবহার করে ব্যাংকের স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে যেমন লকার রুম বা ডাটা সেন্টারে প্রবেশ সংরক্ষিত করা যায়৷
বায়োমেট্রিকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রত্যেক মানুষের বায়োমেট্রিক রেকর্ড অনন্য৷ অতএব একটি পাসওয়ার্ড কিংবা পিন হারিয়ে গেলেও বায়োমেট্রিক ট্রেইল বা প্রলক্ষণ হারিয়ে যায় না৷ তা কেউ চুরি করতে পারে না কিংবা নতুন করে সৃষ্টি করাও যায় না৷ সেজন্যই আইডেনটিটি চুরি হয়ে যাওয়া থেকে মুক্ত থাকতে বায়োমেট্রিক ব্যবহার করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায়৷ ডাটাবেজের পাশাপাশি পার্সোনাল ইনফরমেশন চুরি যাওয়ার বিষয়টি যেখানে একটা ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে বায়োমেট্রিক তো অগ্রাধিকার পাবার দাবি রাখতেই পারে৷ আসলে কিছু আর্থিক লেনদেনে, যেমন-ভোক্তাদের পক্ষ থেকে ক্রেডিট কার্ডে বায়োমেট্রিক অ্যাপ্লিকেশন একটি ভালো পছন্দ হতে পারে৷ অধিকন্তু এরা আরো অধিকতর চটপটে হয়ে ওঠে৷
ফিঙ্গার স্ক্যানকে ছাপিয়ে
ফিঙ্গার বেজড স্ক্যান হচ্ছে বায়োমেট্রিক অথেনটিফিকেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহারের নানা প্রযুক্তির একটি৷ এর অন্যান্য বিকল্প হচ্ছে হাতের জ্যামিতিকে রেটিনা স্ক্যান থেকে শুরু করে চোখের কর্ণিয়া স্ক্যানের সাথে মিলিয়ে নেয়াসহ আরো কিছু বিকল্প৷ quasi-behavioral তথা আপাত-আচরণ লক্ষণ ভিত্তি করেও পরিচয় যাচাই করে নেয়া যায়৷ যেমন কোনো ব্যক্তির কণ্ঠ, হাতের লেখা ইত্যাদি৷ তার পরও আছে মুখ দেখে চেনে নেয়া, যাকে বলা হয় ফ্যাসিয়েলরিকগনিশন৷ এত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যক্তির মুখমণ্ডল স্টোর করে রাখা হয়৷ প্রতিটি লেনদেনে এর সঙ্গে ব্যক্তির সরাসরি মুখমণ্ডলটি তুলনা করে নেয়া হয়৷ ডাটাবেজে রাখা সংরক্ষিত সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর রাখা মুখমণ্ডলটাই এখানে মিলিয়ে দেখা হয়৷ হাতের জ্যামিতি তথা হ্যান্ড-জিওমেট্রিভিত্তিক ব্যবস্থাটি বাস্তবায়ন ততটা সহজ নয়৷ কারণ, এগুলোর প্যারামিটার ব্যহৃতিক কারণে পরিবর্তন হয়৷ যেমন আবহাওয়া পরিস্থিতি, হাতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি৷ একইভাবে রেটিনা স্ক্যানের সময় প্রয়োজন হয় চোখের পেছনের রেটিনায় পৌঁছানোর জন্য যথার্থ শ্রেণীবন্ধন বা পারফেক্ট এলাইনমেন্ট৷ জনবহুল এলাকায় এটি একটি সময়ক্ষেপী কাজ৷
গ্রাম এলাকার ক্ষুদ্র ব্যাংক
আমরা দেখেছি কী করে বায়োমেট্রিক অথেনটিফিকেশনের মাধ্যমে দূর-দূরান্তে প্রবেশযোগ্য ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য নিরাপদ ব্যাংক সেবা দিতে পারে, কী করে তা কাজ করতে পারে গ্রামের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যও৷ এবার দেখা যাক, গ্রাম এলাকার ব্যাংকগুলো কী ধরনের প্রযুক্তি পদক্ষেপ এক্ষেত্রে নিতে পারে৷ গ্রামীণ ব্যাংকিং হচ্ছে এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে রাজনৈতিক চাপ একটি অংশ৷ গ্রামীণ গ্রাহকদের ব্যাংক সেবা দিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কৃষিঋণ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট চাপ বা অগ্রাধিকার৷ তা সত্ত্বেও, প্রাযুক্তিক দিক থেকে এগুলোর উদ্যোগ নির্ভরশীল টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর প্রাপ্যতার ওপর৷ এখানে আশার আলো হচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরে গ্রাম এলাকায় মোবাইল ফোনের সুবিধা দ্রুত বেড়ে চলা, আর এই সুবিধা মানুষ এখন ভোগ করতে শুরু করেছে সস্তা থেকে সস্তাতর উপায়ে৷ এরই প্রবণতা এগিয়ে যাওয়ার স্পষ্ট সম্ভাবনা বিদ্যমান৷ এটা সব গ্রাহকের জন্য সুখের৷ ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য তো বটেই৷ ব্যান্ডউইডথের খরচও কমছে৷ এর অর্থ ব্যাংকগুলো সুদূর সম্প্রসারিত শাখাগুলোর সাথেও অনলাইন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার সুযোগ বর্ধিত হারে পাবে৷ ব্যাংকগুলোতে বর্ধিত হারে প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি একটি ইতিবাচক দিক৷
ভারতে RFID এবং NFC এই উভয়কে একীভূত করে এর প্রয়োগ এখন ভারতের গ্রামাঞ্চলের মানুষের ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য তৈরি৷ ফিলিপস-এর গড়ে তোলা NXP Semiconductor যৌথভাবে উদ্ভাবন করেছে NFC টেকনোলজি মোবাইল প্লাটফরম উদ্ভাবক A Little World-এর সহযোগে৷ এই মোবাইল প্লাটফরম একান্তভাবেই উদ্ভাবিত ব্যাংকিংয়ের জন্য৷ অ্যা লিটল ওয়ার্ল্ড চেষ্টা করেছে মাইক্রো-ব্যাংকিংয়ের ধারণা ভারতে ৪টি রাজ্যের ৪৫০টি গ্রামে কার্যকর করতে৷ এ প্রযুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত আছে একটি কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট গড়ে তোলা, যেখানে থাকে এনএফসি সাপোর্ট করে এমন সুনিপুণ মোবাইল ফোন৷ প্রত্যেক গ্রামবাসীর জন্য একজন অ্যাকাউন্টধারী৷ এদের প্রত্যেককে দেয়া হয় একটি বায়োমেট্রিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ আরএফআইডি স্মার্ট কার্ড, যা সংযোগ রক্ষা করবে কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্টের মোবাইল ফোনের সঙ্গে৷ স্মার্ট কার্ডে অপরিহার্যভাবে থাকে গ্রাহকের পরিচিতি৷ যেমন নাম, ঠিকানা, ছবি, ফিঙ্গার প্রিন্ট টেমপ্লেট ও সঞ্চয়ের সংশ্লিষ্ট বিস্তারিত বিবরণ অথবা ইস্যুয়িং ব্যাংকের লোন অ্যাকাউন্ট৷ স্বল্পপাল্লার ওয়্যারলেস সংযোগ প্রযুক্তি হিসেবে এনএফসি সুযোগ করে দেয় দুটি ডিভাইসের মধ্যে নিরাপদ ডাটা বিনিময়ের৷ শুধু এগুলো একীভূত করে, ঠিক যেমনটি কাজ করে ব্লুটুথ৷ যেহেতু এনএফসি কার্যকরভাবে সমাবেশ ঘটায় অসংখ্য আইডেনটিফিকেশন ও নেটওয়ার্কিং টেকনোলজি, সেহেতু এটি যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারে আরএফআইডি কার্ড ও একটি এনএফসি মোবাইল ফোনের মধ্যে অথবা প্রয়োজনে দুটি এনএফসি ডিভাইসের মধ্যেও৷ বর্তমানে এ প্রকল্পে ব্যবহৃত এনএফসি অ্যানাবলড মোবাইল ফোনগুলো নেয়া হচ্ছে মটোরোলা আর নোকিয়া থেকে৷
এনএফসি কাজ করে ম্যাগনেটিক ফিল্ড ফাংশনের ধারণার ওপর৷ আর এটি অপারেট করা হয় লাইসেন্সবিহীন ১৩.৫৬ মেগাহার্টজ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে৷ স্পিড হতে পারে ১০৬ কিলোবিট, ২১২ কিলোবিট ও ৪২৪ কিলোবিটের কাছাকাছি৷ এটি একটি ওপেন প্লাটফরম টেকনোলজি, প্রমিতকরণ করা হয়েছে ECMA-340-এ৷ আর অপারেট করা হয় অ্যাক্টিভ ও প্যাসিভ আরএফআইডি উভয় মোডে৷ পাইলট প্রকল্প হিসেবে পরিচালনার সময় উত্তরখণ্ড, মিজোরাম, মেঘালয় ও অন্ধ্রপ্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ আর স্টেট ব্যাংক, অন্ধ্র ব্যাংক আর অন্ধ্রপ্রদেশ গ্রামীণ ব্যাংক এ প্রকল্পে সহযোগিতা যুগিয়েছে৷ অন্ধ্রপ্রদেশের ওয়ারাঙ্গাল জেলায় সোশ্যাল সিকিউরিটি পেনশনারদের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয় এই মাইক্রো-ব্যাংকিংয়ের আওতায়৷ মিজোরাম রাজ্যের আইওয়্যাল ও উত্তরখণ্ডের পিথোরাঘরের মতো স্থানে এ প্রজেক্ট সেখানে চালু করেছে ব্যাংকিংয়ের ধারণা৷ এর আগে এসব স্থানে ব্যাংকিংয়ের কোনো অস্তিত্ব ছিল না৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে, আরএফআইডি কার্ড এখন বিশ্বের নানা দেশে নানা উদ্যোগের মাধ্যমে চালু রয়েছে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে৷ সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ৩৫টি দেশে এসব কার্ড ব্যবহার হচ্ছে এদের নতুন ইস্যু করা ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে৷ পাসপোর্টজুড়ে দেয়া হয় আরএফআইডি চিপ৷ এর মধ্যে পেপারওয়ার্ক কমিয়ে আনা এবং পাসপোর্ট ডাটাকে টেম্পার গ্রুফ করে তোলা হয়৷
ট্রেনে এটিএম
ভারতে গেলে দেখা যাবে সেখানকার বিভিন্ন নগরীতে ও গ্রামাঞ্চলে রয়েছে মোবাইল এটিএম ভ্যান৷ ভারত সরকার রেলওয়ে প্লাটফরমে এটিএম সেটআপ করতে দেয়ার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে ট্রেনের মধ্যে এটিএম সেটআপ করার৷ টেলিযোগাযোগের অগ্রগতির পাশাপাশি যেমন উন্নীত ভি-স্যাট ও মাইক্রোওয়েভ লিঙ্ক টেকনোলজিই এখন সম্ভব করে তুলেছে এ অবকাঠামো গড়ে তুলতে৷ আজ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন রেলওয়ে প্লাটফরমে ১৮০০ এটিএম বসানো হয়েছে৷ বেশিরভাগই বসানো হয় বড় বড় মেট্রো এলাকার রেলস্টেশনের প্লাটফরমে৷ যেসব যাত্রী ছোট ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চল থেকে যাতায়াত করে এবং যেখানে পর্যারপ্ত ব্যাংকিং সুবিধা নেই তাদের জন্য ট্রেনে এটিএম ব্যাংকিং সেবার সুযোগ সত্যিই উপকারী৷ এর পাশাপাশি কমবে নিরাপত্তার উদ্বেগও৷ আসলে দূরপাল্লার একটি ট্রেন কাজ করতে পারে দূরতম স্থানের জন্য একটি দ্রুততম এটিএম ক্যারিয়ার হিসেবে৷ এর মাধ্যমে যাত্রীর নিরাপত্তা বাড়বে৷ এদেরকে বেশি অঙ্কের অর্থ সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে না৷ এর বদলে এটিএমের মাধ্যমে এরা যখন যেখানে যতটা প্রয়োজন তত অর্থ তুলে নিতে পারবে৷ এটিএমের পাশাপাশি একটি টিকেটিং কিয়স্ক স্থাপন করতে পারলে যাত্রীদের সুবিধাটা আরো বেড়েই যাবে৷ অর্থাৎ তখন যাত্রীরা এটিএমের সাহায্যে প্রয়োজনের সময়ে অর্থ তুলে নিয়ে একই স্থান থেকে টিকেটটাও কিনে নিতে পারবে৷
শেষ কথা
যখন-তখন যেখানে-সেখানে ব্যাংকিং সংশ্লিষ্ট যে প্রযুক্তির ওপর এখানে আলোকপাত করা হলো এর বেশকিছুর প্রয়োগ এখন বাংলাদেশে চলছে৷ প্রয়োগটা সর্বব্যাপী না হলেও দিন দিন ব্যবহারটা বাড়ছে৷ আর কিছু কিছু প্রযুক্তির প্রয়োগটা এখনো আমাদের এখানে শুরুই হয়নি৷ তবে শুরু হওয়াটা কঠিন, তেমনটি নয়৷ এখন শুরু করার উদ্যোগটাই বড় কথা৷ সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা এ নিয়ে ভাববেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন, আর এর মাধ্যমে আমাদেরকে প্রযুক্তির উচ্চতর সিঁড়িতে নিয়ে দাঁড় করাবেন, আমাদের কাজের গতি বাড়াবেন, কাজকে সহজতর করে তুলবেন, সে তাগিদ রেখেই শেষ করছি আজকের এ লেখা৷
কজ ওয়েব