• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > তথ্যপ্রযুক্তি আইনের খসড়া
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সম্পাদক
মোট লেখা:৩১৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সম্পাদনা
তথ্যসূত্র:
সম্পাদকীয়
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের খসড়া
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের খসড়া

সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। বলা হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তিগত বা সাইবার অপরাধী ক্রমেই একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এর রাজনৈতিক অর্থে ব্যবহার বিরাট হুমকি সৃষ্টি করেছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকার ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে সংশোধনী আনতে যাচ্ছে। গত ১৯ আগস্ট মন্ত্রিসভা সংশোধিতব্য এ আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে। এখন এটি একটি অধ্যাদেশ জারি করে সংশোধনের কাজ সম্পন্ন করার অপেক্ষায়। কিন্তু অবাক হওয়ার ব্যাপার, যেখানে ১২ সেপ্টেম্বর সংসদের অধিবেশন বসছে, সেখানে কেনো উল্লিখিত তথ্যপ্রযুক্তি আইন অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিল সরকার। সাধারণত সংসদ কার্যকর না থাকলে জরুরি প্রয়োজনে সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে কোনো আইন প্রণয়ন বা সংশোধন করে থাকে। পরে তা সংসদে সুবিধা মতো সময়ে পাস করে নেয়া হয়।

কিন্তু যেখানে ১২ সেপ্টেম্বর সংসদ বসছে, সেখানে তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশ জারি করে তথ্যপ্রযুক্তি আইন সংশোধনের উদ্যোগ কোনো বিবেচনায়ই যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে না। যেকোনো আইন সংশোধন ও প্রণয়নের উত্তম ক্ষেত্র হচ্ছে জাতীয় সংসদ। কারণ, তখন সংশ্লিষ্ট বিল নিয়ে সংসদে সংসদ সদস্যরা আলোচনা ও সংশোধনী প্রসত্মাব দেয়ার সুযোগ পান। বিরোধী দলের এতে মতামত কী, তা দেশের মানুষ জানতে পারে। কিন্তু সরকার কেনো সে পথে না গিয়ে আইন প্রণয়নের শুদ্ধতর পথটি পরিহার করে অপ্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারি করে আলোচ্য তথ্যপ্রযুক্তি আইনটি সংশোধন করতে যাচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। তবে এর ফলে এ আইন সংশোধনে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে আশঙ্কিত হওয়ার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

এমনিতেই সমালোচনা আছে, ২০০৬ সালেও যখন এ আইনটি করা হয় তখনও আইন প্রণয়নে স্বচ্ছ ধারা অনুসরণ করা হয়নি। তা ছাড়া তখনও অভিযোগ ওঠে- আইনটিতে নাগরিক অধিকারের স্বার্থবিরোধী কালাকানুন যুক্ত করা হয়েছিল। দৃষ্টান্ত হিসেবে এর ৫৭ ধারার ১ উপধারাটির কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এ ধারাটি ত্রুটিপূর্ণ এবং সংবিধানে দেয়া মৌলিক অধিকারের প্রতি হুমকি। সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনদের অভিমত, এ ধারাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যতাড়িত হয়ে আইনে সংযোজিত হয়। এবং সরকার রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য এর অপপ্রয়োগ করতে পারে বলে তখন এরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এখন যৌক্তিক কারণেই বলা হচ্ছে, মাহমুদুর রহমান ও আদিলুর রহমান খানের বিরুদ্ধে এ ধারাটির অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। অতএব এ ধারাটি ন্যায়বিচার বিঘ্নিত করবে, এমন সম্ভাবনা প্রবল। সমালোচনা আছে, এ ধারাটিতে অপরাধ এমন ব্যাপক ও অনির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, যার অপপ্রয়োগ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, অতএব তা বাতিলযোগ্য। কারণ এতে অপরাধের সুনির্দিষ্ট সীমারেখা টানা হয়নি।

এ ধারায় যা বলা হয়েছে তা থেকে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তা-ই প্রমাণিত হয়। এ ধারায় বলা আছে- ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে কিংবা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লিল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ পথে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহলে তার এ কাজ হবে একটি অপরাধ।’

এদিকে সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সংশোধনীর যে খসড়া অনুমোদিত হয়েছে, তা নিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ও হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। তাদের মতে, পুলিশকে সরাসরি মামলা করা ও পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া, কয়েকটি ধারা অজামিনযোগ্য করা ও আমলযোগ্য নয় এমন অপরাধকে আমলযোগ্য হিসেবে গণ্য করার যে প্রস্তাব এ খসড়া সংশোধনীতে রয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এর ফলে এ আইনে রাজনৈতিক অপপ্রয়োগ চলবে যখন-তখন। তাই এরা এ আইনের অপব্যবহার নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এদের সাথে আমাদেরও সুদৃঢ় বিশ্বাস- সংশোধিত আইনের খসড়া কার্যকর করা হলে দেশের নাগরিক সাধারণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে খর্ব হবে। এবং শুধু মত প্রকাশের কারণে অনেকেই হয়রানির শিকারে পরিণত হবেন। দেশের আইনজীবীরাও এমনটিই মনে করছেন। তবে সরকার বলছে- দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে অপরাধ করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। অসৎ উদ্দেশ্যে এ মাধ্যম ব্যবহার হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে উস্কানি, আঘাত করা হচ্ছে ধর্মীয় অনুভূতিতে। এসব রোধের জন্যই এ আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

এ আইনটির ভালো-মন্দ দিক নিয়ে চলতি সংখ্যায় একটি লেখা প্রকাশ করা হয়েছে। এ লেখায় এর বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। আশা করছি, পাঠক সাধারণের এ আইনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানার চাহিদা মিটবে এ লেখা পড়ে। তবে যৌক্তিক কারণেই বর্তমান সংশোধনীর খসড়া মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করবে বলে আমরা মনে করি। সেই সাথে আমরা মনে করি এ আইনের সংশোধনী অধ্যাদেশের মাধ্যমে নয়, সংসদে বিলের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। তা হলে দেশবাসী এর ভালো-মন্দ উভয় দিক সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে। সরকারও সমালোচনার হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা