• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ই-লার্নিং এবং বাংলাদেশ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: এম. মিজানুর রহমান সোহেল
মোট লেখা:১০
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ই-লার্নিং
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ই-লার্নিং এবং বাংলাদেশ

ই-লার্নিং : ঘরে বসেই ডিগ্রি!
শিক্ষার্থীদের কাছে বিকল্প শিক্ষামাধ্যম হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর ই-লার্নিং বা ই-শিক্ষা। সরাসরি ক্লাসে উপস্থিত না হয়েও এ ব্যবস্থায় অনলাইনে নিজের সুবিধামতো সময়ে শিক্ষালাভ করা যায়। সারাদিন কাজ সেরে রাতে ঘরে বসেই খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার্চুয়াল ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন অনেকেই। ই-লার্নিং পদ্ধতি দূরত্ব কমিয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়ার পাশাপাশি কমিয়ে দিয়েছে খরচও। এছাড়া শিক্ষা বিরতির কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, এমন অনেকেই এখন নতুন করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে। ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পড়াশোনার একটি আকর্ষণীয় দিক হলো এখানে সর্বশেষ তথ্য পাওয়া সম্ভব। এর ফলে যেকোনো পেশার মানুষের পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়ে উঠছে। একই সাথে কমপিউটার, মোবাইল, অনলাইন, সফটওয়্যার, টিভি, রেডিও, ডিভিডি, ভিসিডি, প্রজেক্টর ব্যবহার করে শিক্ষা যেকোনো বয়সী মানুষের জন্যই আনন্দদায়ক করে তোলা সম্ভব। গণিত, জ্যামিতি, পদার্থবিদ্যা ও ইংরেজির অনেক জটিল বিষয় সহজ করে উপস্থাপন করা সম্ভব। এর ফলে বিজ্ঞানকে আরও জনপ্রিয় করে তোলা সহজ হচ্ছে। যেখানে বিদ্যুৎ ও উল্লিখিত মাধ্যম আছে, সেখানে এখনই এ সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব। শিক্ষার্থীরা ভিডিও দেখার পর যা বুঝা যায়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করবে। শিক্ষক শুধু এ প্রশ্নের সূত্র ধরে আলোচনা করবেন। যুক্ত করতে পারেন নতুন নতুন উদাহরণ। ইউনিভার্সিটি অব ফিনিক্সের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, শুধু যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত ২০১২ সালে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে অনলাইন ডিগ্রি নিয়েছে। আমেরিকার শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ই-শিক্ষায় ডিগ্রিধারী গ্র্যাজুয়েটদের কাজের সুযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

ই-লার্নিং কী
ই-লার্নিং এক ধরনের দূরশিক্ষণ (ডিসটেন্স লার্নিং) পদ্ধতি। বিভিন্ন দেশে দূরশিক্ষণ পদ্ধতি প্রচলিত। বাংলাদেশের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও (বাউবি) চালু আছে এ পদ্ধতি। তবে প্রচলিত দূরশিক্ষণ অর্থাৎ অফলাইন পদ্ধতির সাথে এর উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হচ্ছে, শিক্ষার্থীকে সরাসরি ক্লাস কিংবা পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় না। এ শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত থাকতে শুধু ইন্টারনেটযুক্ত একটি কমপিউটারই যথেষ্ট। সুবিধাজনক সময়ে অনলাইনে যুক্ত হয়েই চালিয়ে নেয়া যাবে পড়াশোনা। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষত কমপিউটার, মোবাইল, ভিডিও, টেলিভিশন, ভিডিও কনফারেন্সিং, ওয়েবসাইট, ই-মেইল, সফটওয়্যার ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী একে অপর থেকে দূরে যে শিক্ষাব্যবস্থা তাই ই-লার্নিং। তবে ইন্টারনেট ও কমপিউটার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হবে শিক্ষার্থীর। সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাসের সাথেও খুব বেশি পার্থক্য নেই এ পদ্ধতির। ই-লার্নিং তিন ধরনের : ০১. কমপিউটারভিত্তিক ট্রেনিং (সিবিটি), ০২. ইন্টারনেটভিত্তিক ট্রেনিং (ইবিটি) ও ০৩. ওয়েব ভিত্তিক ট্রেনিং (ডবিস্নউবিটি)। এ শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটা বৈশ্বিক। বিশ্বের যেকোনো দেশে থেকেই দ্রম্নতগতির ইন্টারনেট সংযুক্ত কমপিউটারের মাধ্যমে অনলাইনে সরাসরি (লাইভ) ক্লাসে অংশ নেয়া যায়। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা ই-মেইলে লগইন আইডি বা ইউজার আইডি দিয়ে নির্দিষ্ট সাইটে ব্রাউজ করতে হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সব শিক্ষা উপকরণই এখানে পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপূর্ব শর্ত পূরণ করে প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে।

কেনো ই-শিক্ষা
প্রচলিত মাধ্যমে যখন একজন শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ের ওপর পড়াশোনা করেন, তখন অন্য কোনো বিষয়ে পড়ার সুযোগ থাকে কম। ই-লার্নিং এ ধারণা বদলে দিয়েছে। শিক্ষার্থী কিংবা পেশাজীবীরা অন্য কাজের ফাঁকে ই-লার্নিংয়ে সম্পৃক্ত হতে পারবেন। এর বড় সুবিধা হচ্ছে, কোনো ভিসা জটিলতা ও অতিরিক্ত ফি ছাড়াই নিজ দেশে থেকেই আন্তর্জাতিক ডিগ্রি অর্জন করা সম্ভব। শিক্ষা বিরতি ও বয়সের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই এ মাধ্যমে। সেশনজট না থাকায় কাঙ্ক্ষিত ডিগ্রি অর্জনে সময় অপচয় হওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই। এছাড়া গ্রামের প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে সব স্তরের শিক্ষার সুযোগ রয়েছে এ পদ্ধতিতে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে সফটওয়ারের ব্যবহার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, অনলাইন পরীক্ষা, স্কাইপ স্কুলের মতো অনেক পদ্ধতিতেই চলছে ই-লার্নিং।

ই-লার্নিংয়ে যেসব মাধ্যম ব্যবহার হয়
০১. স্ক্রিনকাস্ট, ০২. ই-পোর্টফলিও, ০৩. ইপিভিএসএস, ০৪. পিডিএ, ০৫. এমপি থ্রি পেস্নয়ার, ০৬. ওয়েবসাইট, ০৭. সিডিরম, ০৮. ই-ডিসকাশন বোর্ড, ০৯. ই-মেইল, ১০. ব্লগ, ১১. উইকি, ১২. চ্যাট, ১৩. শিক্ষাব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার, ১৪. শিক্ষামূলক অ্যানিমেশন, ১৫. জরিপ বা ভোটিং, ১৬. ভার্চুয়াল ক্লাসরম্নম ও ১৭. শিক্ষামূলক গেম।

যে কারণে ই-শিক্ষা জনপ্রিয় হবে
শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে হলে ই-লার্নিং অনিবার্য। কাঙ্ক্ষিত এ শিক্ষাব্যবস্থায় ই-লার্নিংয়ের ভূমিকা হবে সুদূরপ্রসারী। এর ফলে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে বহু উন্নত দেশের কাছেও অন্যতম দৃষ্টান্ত। কারণ, ই-লার্নিং বাস্তবায়ন কঠিন কিছু নয়। ই-লার্নিং শুধু কমপিউটারের মাধ্যমে ঘটবে না। ই-লার্নিং মানে কমপিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল, সফটওয়্যার, অনলাইন, টিভি, রেডিও, ভিসিডি, ডিভিডি প্রভৃতি ইলেকট্রনিক ডিভাইসকেও শিক্ষার কাজে ব্যবহার করা। মোবাইলের কথাই ধরা যাক। মোবাইল শিক্ষার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। মোবাইল বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের কাছেও এখন সহজলভ্য। সে কারণে সমাজের সবচেয়ে সুবিধা ও অধিকারবঞ্চিত মানুষও এ ডিভাইস ব্যবহার করে শিক্ষার সুযোগ নিতে পারেন। এ সুযোগ এরা নিতে পারেন তাদের সুবিধামতো সময়ে, যখন খুশি তখন। টিভি, রেডিও, ভিসিডি, ডিভিডি শুধু বিনোদনের মাধ্যম না হয়ে, হয়ে উঠতে পারে ব্যাপক ব্যবহারের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে। সপ্তাহ বা দিনের নির্দিষ্ট সময়ে রেডিও ও টিভিতে বয়সভিত্তিক কোর্স চালু হতে পারে।

থাকবে না প্রাইভেট পড়ানোর সংস্কৃতি
ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে শিক্ষাকে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক করে তোলা সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষকেরা হয়ে উঠতে পারেন সহায়ক। ক্লাসে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করবে তাদের প্রয়োজনানুযায়ী। শিক্ষক সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবেন। উত্তর যে তাকেই দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ক্লাসে এমন শিক্ষার্থী থাকতে পারে, যার সে প্রশ্নের উত্তর জানা আছে। শিক্ষকের প্রথম দায়িত্ব হবে তাকে খুঁজে বের করা। এভাবে চললে প্রাইভেট পড়ানোর যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে দেশে, তা দ্রুতই কমিয়ে আনা সম্ভব, যা শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রশ্নে খুবই জরুরি। উল্লেখ্য, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইতোমধ্যে প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ করা ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষকেরা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেশের বা দেশের বাইরের ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন। একই কাজ আমাদের দেশের শিক্ষকেরাও শুরু করতে পারেন।

ই-শিক্ষার ভবিষ্যৎ
ভবিষ্যৎ পৃথিবীর চেহারা পাল্টে দেবে ই-শিক্ষা। আর কোনো শিক্ষা পদ্ধতিতেই এত বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে শিক্ষা পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার কমপিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাগিব হাসান বলেন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটাই বলি, আমি বাংলাদেশে বুয়েট ও আমেরিকার বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছি। কিন্তু কোনোখানেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী একসাথে আমার ক্লাস করছে এমন হয়নি। আমার যে সীমিত জ্ঞান বা শিক্ষা আছে, তা বহু মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারাটা একটা অসাধারণ অনুভূতি। তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের এখন এ সুযোগ করে দিয়েছে। আর আরেকটা ব্যাপার- মুক্ত জ্ঞানের বিসত্মার। আসলে শিক্ষার খরচ কখনই লাখ লাখ টাকা হওয়ার কথা না। জ্ঞান হলো মুক্ত, স্বাধীন, আর জ্ঞানদান করলে তা বেড়ে যায়। প্রথাগত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা স্কুলের মাধ্যমে জ্ঞানের বিসত্মার করার খরচ অনেক। শিক্ষকদের বেতন বা ভবন নির্মাণের কারণে সবার জন্য শিক্ষা দেয়া সম্ভব নয়, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোতে। কিন্তু ই-শিক্ষার মাধ্যমে খুব অল্প খরচে লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব জ্ঞানের আলো, যে আলো পাল্টে দেবে তাদের জীবনকে, পাল্টে দেবে আমাদের এ পৃথিবীকে। ই-শিক্ষার ভবিষ্যৎটা তাই উজ্জ্বল, সম্ভাবনাময় এবং দুনিয়া কাঁপানো।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ই-শিক্ষা
বাংলাদেশে প্রচুর শিক্ষার্থী অর্থাভাবে কিংবা শিক্ষার অবকাঠামো না থাকার কারণে পড়ালেখা ছাড়তে বাধ্য হয়। গ্রামাঞ্চলে, এমনকি মফস্বল শহরগুলোতে পড়াশোনার সুযোগ ভালো নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে ই-শিক্ষা একটি বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারে। ই-শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশে যারা কাজ করছে, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মোস্তফা জববারের আনন্দ মাল্টিমিডিয়া ও বিজয় ডিজিটাল স্কুল, নজরুল ইসলাম খানের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর স্কাইপ স্কুল ইত্যাদি। এছাড়া বাংলাদেশের হয়ে প্রবাসী বাংলাদেশী সালমান খানের খান একাডেমি ও রাগিব হাসানের শিক্ষক ডটকম ই-শিক্ষার পথপরিক্রমায় সহায়তা করে আসছে অনেক বছর ধরে। এদিকে অনলাইনে ব্লগ সাইটগুলোতেও বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিষয় আলোচনায় সমৃদ্ধ হচ্ছে। এর বাইরে দেশে আরও অনেক কোচিং সেন্টার অনলাইনে শিক্ষা বা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। এরা অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি, ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত সংরক্ষণ, তাদের কৃতিত্ব, আইডি কার্ড, প্রগ্রেস রিপোর্ট, পরীক্ষার ফল ও সার্টিফিকেট, বেতন ও বিভিন্ন ফি গ্রহণ, অ্যাডমিট কার্ড, ক্যুইজ প্রতিযোগিতা, শিক্ষকদের বেতন পরিশোধসহ স্কুলের হিসাবপত্র সংরক্ষণের মতো কাজগুলো করছে। যাকে বলা যেতে পারে শিক্ষাব্যবস্থায় নীরব বিপ্লব।

কেমন খরচ হবে
ই-শিক্ষাব্যবস্থায় প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার তুলনায় খরচ অনেক কম। কিছু বিশেষ বিষয়ে খরচ সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থার তুলনায় বেশি না হলেও প্রায় সমান। ক্রেডিট আওয়ারের ওপর ভিত্তি করে টিউশন ফি নির্ধারণ করা হয়। ফি জমা দিতে হয় ইন্টারনেটে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে। ব্যাংকের মাধ্যমেও ফি জমা দেয়া যায়। অনলাইনে ভর্তির আবেদন করার সময়ই ফি জমা দেয়ার ব্যাপারে শিক্ষার্থীকে নির্দেশনা দেয়া হয়। দেশে ডাচ-বাংলা ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংক ই-শিক্ষার জন্য বিশেষ স্টুডেন্ট কার্ডের ব্যবস্থা করেছে। প্রত্যাশিত প্রতিষ্ঠানে চাহিদামাফিক ফি দিয়ে পড়াশোনা করা যাবে।
ই-লার্নিং বিবর্তন ১৯৭১-২০১৩
ভাব বিনিময়ের মাধ্যমটা মূল বিষয় হিসেবে দেখা গেলেও তথ্যপ্রযুক্তির নিশ্চুপেই শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। আর এ পরিবর্তনে অনেকেই ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতের শিক্ষাব্যবস্থা হয়তো আরও ব্যাপক কিছু নিয়ে আসবে। ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এরা টেলিভিশনের মাধ্যমে পড়ালেখার ব্যবস্থাপনা তৈরি করে, যা পরে বিভিন্ন দেশ অনুসরণ করে। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যমত্ম ইন্টারনেট অনেকের কাছেই পৌঁছতে থাকে। ১৯৮৯ সালে ফনিক্স ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যেই ই-শিক্ষার একটি অবকাঠামো তৈরি হয়ে যায়। ২০০৪ সালে সালমান খান সারা বিশ্বে ইউটিউবের মাধ্যমে শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার তৈরি খান একাডেমিতে বিনা খরচে অনেক বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা লাভের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া মাইক্রোসফট, সিসকো, র্যা ডহ্যাট, নিউ হরিজনসহ বিশ্বে অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইন শিক্ষা, পরীক্ষা, সার্টিফিকেট ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছে, যা এখন ৩৪ বিলিয়ন ডলারের শিক্ষা মার্কেটে পরিণত হয়েছে। ২০১৩ সালে এসে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক পরিসরে ই-শিক্ষার ব্যবহার বেড়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ক্ষুদ্র পরিসরে বাড়তে দেখা গেছে। অচিরেই হয়তো ই-শিক্ষার প্রভাবে অ্যানালগ শিক্ষাব্যবস্থার স্থান হবে জাদুঘরে।
বাংলাদেশে ই-শিক্ষার কয়েকটি উদ্যোগ
বাংলাদেশে হয়তো অনেকেই এখন ই-লার্নিং নিয়ে কাজ করছেন। আমরা এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানার প্রয়াস পাব।

আনন্দ মাল্টিমিডিয়া ও বিজয় ডিজিটাল স্কুল
১৯৯৯ সালে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া ও ২০০৯ সালে প্রথম বিজয় ডিজিটাল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মাল্টিমিডিয়া স্কুল একটি আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি কোনো কমপিউটার প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নয়। এখানে একটি ছাত্রের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা দেয়া হয়। এ স্কুলের ছাত্রদেরকে অন্য কোনো স্কুলে সাধারণ শিক্ষা নিতে হয় না। এতে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব বিষয় শেখানোর পাশাপাশি অন্যান্য অতিরিক্ত বিষয়েও শেখানো হয়। ইংরেজি, অঙ্ক ও কমপিউটার বিজ্ঞান বাধ্যতামূলকভাবে শেখানো হয় প্লে গ্রুপ-নার্সারি শ্রেণী থেকে। বিদ্যমান স্কুলগুলোর সাথে এসব স্কুলের পার্থক্য হলো, এতে শুধু কমপিউটারই শেখানো হয় না, কমপিউটারকে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কমপিউটার দিয়ে ইংরেজি, বাংলা, অঙ্ক, ইতিহাস, বিজ্ঞান, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়েও শেখানো হয়। এসব বিষয়ে শিক্ষা দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় বিশ্বমানের সফটওয়্যার এবং নিজস্ব ল্যাবে প্রস্ত্তত শিক্ষামূলক মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার।

শিক্ষক ডটকমে বিনামূল্যে বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স
আমাদের মধ্যে অনেকে অনলাইনে কোর্স করার ব্যাপারে আগ্রহী হন। বিশ্বখ্যাত অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যেমন- হার্ভার্ড, এমআইটি, ক্যামব্রিজসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে। অনলাইন কোর্স চালানো হয় দূরশীক্ষণ পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষা নেয়ার জন্য একজন ছাত্রছাত্রীর শুধু একটি কমপিউটার ও ইন্টারনেট এবং একটি ওয়েবক্যামের (ঐচ্ছিক) দরকার হবে। শিক্ষক একদিন একটি কিংবা দুটি করে লেকচার দেবেন, আর তা হয়তো ভিডিও আকারে কিংবা ওয়েবক্যামে লাইভ সম্প্রচার করে নির্দিষ্ট ভিডিও চ্যানেলে কিংবা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক আগে থেকেই এ প্রোগ্রাম চালু থাকলেও আশার কথা আমাদের দেশেই অনলাইনে কোর্স করানোর জন্য চালু নতুন একটি সাইট শিক্ষক ডটকম। ওয়েবসাইটির উদ্যোক্তা বুয়েটের কমপিউটার সায়েন্স বিভাগের সাবেক শিক্ষক, বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার কমপিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বাংলা উইকিপিডিয়ার প্রশাসক ড. রাগিব হাসান। এ ওয়েবসাইটে বাংলা ভাষায় নানা বিষয়ে অনলাইন কোর্স দেয়া হচ্ছে। এ কোর্সগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। যেকেউ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এখানে নানা বিষয় শিখতে পারবেন। বর্তমানে ওই ওয়েবসাইটে যেসব কোর্স চালু আছে সেগুলো হলো : জ্যোতির্বিজ্ঞান ১০১, কেমিকৌশল পরিচিতি, ক্লাউড কমপিউটিং, তড়িৎকৌশল পরিচিতি, ফাইন্যান্স ১০১, অর্থবিজ্ঞান পরিচিতি, জিওগ্রাফিক ইনফর্মেশন সিস্টেম (এওঝ) পরিচিতি, পরিবেশ এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিচিতি, বায়োইনফরমেটিক্স পরিচিতি, ক্যালকুলাসের অ-আ-ক-খ, সি প্রোগ্রামিং, সি++ প্রোগ্রামিং, পরিবেশ বিজ্ঞান পরিচিতি, নিউরোসায়েন্স পরিচিতি ইত্যাদি। শিক্ষক ডটকমের ওয়েবসাইট : http://www.shikkhok.com আর ফেসবুকে দেখতে ভিজিট করতে পারেন https://www.facebook.com/shikkhok ঠিকানায়।

বাংলাদেশের প্রথম স্কাইপ স্কুল
বর্তমান তরম্নণদের দেশের জন্য কাজ করতে আগ্রহ লক্ষ করা যায়। তাদের বেশিরভাগের সময় কাটে ইন্টারনেটকে ঘিরে। সুতরাং এদের মেলবন্ধন ঘটাতে পারলে করা সম্ভব নতুন কিছু। সেই ভাবনাই কাজে লাগাতে চেয়েছেন জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী। তিনি যোগাযোগ করেছেন ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া বেশ কিছু তরম্নণ-তরম্নণীর সাথে। বেশিরভাগই সাগ্রহে রাজি হয়েছে তার সাথে কাজ করতে। আবেদ চৌধুরী বলেন, প্রত্যমত্ম অঞ্চলে স্কুল খোলা গেলেও সেখানে পড়ানোর মানুষের অভাব খুব বেশি। এখনকার ছেলেমেয়েরা এগিয়ে এলে সেই সমস্যা অনেকাংশেই দূর করা সম্ভব। তারই ফলস্বরূপ গত ২০ জুন উদ্বোধন হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম স্কাইপভিত্তিক স্কুলের। শুরম্নটা মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার প্রত্যমত্ম গ্রাম হাজীপুর থেকে শুরম্ন হলেও আবেদ চৌধুরী চান সারাদেশেই চালু হোক স্কাইপ ভিত্তিক স্কুলের। আপাতত স্বাক্ষরতা জ্ঞানদান দিয়েই চলছে স্কাইপ স্কুল। ক্লাস নিচ্ছে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একদল শিক্ষার্থী। অক্ষরজ্ঞান, ছড়া, দেশাত্মবোধক কবিতা, কবি পরিচিতি ইত্যাদি শিক্ষা দিচ্ছে এরা। ইন্টারনেট কানেকশন দুর্বল থাকলে অডিও কলের মাধ্যমে ক্লাস নিচ্ছে এরা। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে ওই এলাকার ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্রে স্কাইপের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে কথা বলার সুযোগ তৈরি হলে স্কাইপ শব্দটি সংশিস্নষ্ট এলাকার জনমানুষের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে।

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ই-শিক্ষা
আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (কোয়েকা) আর্থিক সহযোগিতায় দূরশিক্ষণে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ই-শিক্ষা চালু করা হয়েছে। গত বছরের ৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আরআইএম আমিনুর রশীদ এ তথ্য জানান। কোয়েকার সাহায্যপুষ্ট এ প্রকল্পের সহায়তায় বাউবির প্রচলিত সব প্রোগ্রামে আইসিটি ব্যবহারের সুযোগ এবং ই-শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের দক্ষতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষক সৃষ্টি করাসহ শিক্ষার্থীদের ই-শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা হবে। প্রথম পর্যায়ে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম ও লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বাসত্মবায়নে কোরিয়া ২১ কোটি ৬০ লাখ এবং বাউবি নিজস্ব উৎস থেকে ৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করবে। গাজীপুরের মূল ক্যাম্পাসসহ ঢাকা ও ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কেন্দ্রে তিনটি আইসিটি ল্যাব স্থাপন করে প্রযুক্তিনির্ভর এ শিক্ষাব্যবস্থার কার্যক্রম গড়ে তোলা হয়েছে।

শেকৃবিতে দেশের প্রথম ভার্চুয়াল ক্লাসরুম
বিশ্বের উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার ও গবেষণার তথ্য সরাসরি শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ গ্লোবাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তত্ত্বাবধানে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প হিসেবে বাংলাদেশ রিসার্চ এডুকেশন নেটওয়ার্কের আওতায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছে প্রথম ভার্চুয়াল ক্লাসরুম। এর মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে শিক্ষক এখানকার ছাত্রদের ক্লাস নিতে পারবেন। অপরদিকে এখানকার শিক্ষকেরাও বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার দিতে পারবেন। এ ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান শ্রেণীকক্ষে বসে দেখতে ও শিখতে পারবে। যদি ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় রেসপন্স করে, তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। তবে দেশের মধ্যে অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নেটওয়ার্ক না থাকায় শেকৃবি যোগাযোগ করতে পারছে না। বাংলাদেশে ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির তত্ত্বাবধানে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প হিসেবে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম হওয়ার কথা। এর মধ্যে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে প্রথম এ ক্লাসরুম তৈরি করা হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ ক্লাসরুমে রয়েছে ৪২টি আসন। যেখানে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ও পিএইচডির শিক্ষার্থীরা শেখার সুযোগ পাবেন। এছাড়া শেকৃবিতে তৈরি করা হয়েছে ডিজিটাল আর্কাইভ। এর মাধ্যমে শেকৃবিসহ দেশের অন্য সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্পর্কিত গবেষণার ফল, থিসিস ও জার্নাল ডিজিটালাইজ করে অনলাইনে পাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া শেকৃবির বেশিরভাগ শ্রেণীকক্ষে সাউন্ড সিস্টেম ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আলাদা সাইবার সেন্টার। বর্তমানে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সব শিক্ষার্থী ফ্রি ইন্টারনেটের সুবিধা পাচ্ছে।

সবার জন্য উন্মুক্ত শিক্ষক বাতায়ন

অনেক আগে থেকে শিক্ষকদের জন্য শিক্ষক বাতায়ন ওয়েবসাইট (http://www.teachers.gov.bd/) চালু থাকলেও তা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল না। অবশেষে গত ১৭ মে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষক বাতায়ন ওয়েবসাইটটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরম্নল ইসলাম নাহিদ। ‘শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে শিক্ষক’ সেস্নাগানে শিক্ষকদের জন্য তৈরি হয়েছে ডিজিটাল বিষয়বস্ত্ত বা কনটেন্টভিত্তিক ওয়েবসাইট শিক্ষক বাতায়ন। বর্তমানে শিক্ষক বাতায়নে সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সত্মরের উন্নতমানের ডিজিটাল কনটেন্ট রয়েছে। কনটেন্ট ব্যবহারকারীদের অনলাইন মতামতের ভিত্তিতে সপ্তাহে তিনজন শিক্ষককে সেরা কনটেন্ট প্রস্ত্ততকারী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ইউএনডিপি ও ইউএসএইডের অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে ওয়েবসাইটটি চালু হয়। প্রশিক্ষিত শিক্ষকেরাই শিক্ষার্থীদের উপযোগী কনটেন্ট তৈরি করে ক্লাসে ব্যবহার করছেন। তাদের তৈরি এসব কনটেন্ট ইউআইএসসি ব্লগে (এ ব্লগটি এখনও সবার জন্য উন্মুক্ত নয়) রাখেন। বর্তমানে এ ব্লগসাইটের সদস্যসংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি এবং কনটেন্ট আছে ১৩ হাজারেরও বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্ল্যাকবোর্ড বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১০টি শ্রেণীকক্ষকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মাল্টিমিডিয়া সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। এসব কক্ষে থাকছে প্রজেক্টর, ইন্টারনেট সংযোগসহ কমপিউটার ও স্মার্টবোর্ড। ‘ব্ল্যাকবোর্ডের যুগ শেষ হচ্ছে ঢাবিতে’ শীর্ষক প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এ কাজ মাসখানেকের মধ্যে শেষ হবে। স্মার্ট টেক নামে এক কোম্পানি এর বাসত্মবায়ন করছে। এর মাধ্যমেই শেষ হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের বস্ন্যাকবোর্ডের যুগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ও অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফর্মেশন সিস্টেম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ উদদীন আহমেদ জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে কলা ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, কার্জন হল, চারম্নকলা অনুষদসহ ২১০টি শ্রেণীকক্ষ ও ১২টি সম্মেলন কক্ষ প্রযুক্তির আওতায় আনা হবে। এরই মধ্যে প্রায় ২০০ কক্ষের কাজ শেষ হয়েছে। মমতাজ উদদীন আহমেদ বলেন, প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা। ২০১২ সালে প্রকল্পটি পাস করা হয়। কাজ শুরু হয় এ বছরের মে মাসে। এ প্রকল্পের আওতায় কলা ভবনের ৪৯টি শ্রেণীকক্ষ, লেকচার থিয়েটার ভবনের ৬টি কক্ষ, সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের ১২টি শ্রেণীকক্ষ ও একটি সম্মেলন কক্ষ, চারুকলা অনুষদের সম্মেলন কক্ষসহ মোট ৯টি, বিজ্ঞান অনুষদের জন্য কার্জন হল ভবনের ৩৪টি, মোকাররম হোসেন ভবনের ১৩টি, মোতাহার হোসেন ভবনের ২৪টি, বাণিজ্য অনুষদের ১৮টি, সমাজকল্যাণ গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য ইনস্টিটিউটের ২১টি শ্রেণীকক্ষ ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের একটি সম্মেলন কক্ষের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ বিষয়ে বলেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষের এ সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তার মধ্যে পড়ে ক্লাসরুমগুলো মাল্টিমিডিয়ায় সমৃদ্ধকরণ। শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠন সহজ করার ক্ষেত্রে এটা জরম্নরি। এসব দিক মাথায় রেখে বিশ্বব্যাংকের হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেন্সমেন্ট (হেকেপ) প্রজেক্টের আওতায় ক্লাসরুমগুলো মাল্টিমিডিয়ায় সমৃদ্ধ করা হচ্ছে।

ই-শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেছে বিআইএম

দেশেই বিশ্বমানের শিল্প ব্যবস্থাপক গড়ে তুলতে ই-শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম)। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে প্রথমবারের মতো অনলাইনে ২০১৩ সালের স্নাতকোত্তর ডিপ্লমা কোর্সে ৫৮৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। বছরব্যাপী এ কোর্সে শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ ব্যবহারের পাশাপাশি ই-মেইলে শিক্ষা উপকরণ বিনিময় ও কোর্স কনটেন্ট ডাউনলোডের সুযোগ থাকছে। গত ২০ জানুয়ারি ২০১৩ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের (বিআইএম) স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্সের উদ্বোধন করা হয়।

ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ভার্চুয়াল ক্লাস

বাংলাদেশে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অফলাইন ডিসটেন্স এডুকেশন ব্যবস্থা চালু করলেও অনলাইনভিত্তিক ই-লার্নিং এখনও চালু হয়নি। সরকারি সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় এ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে স্পষ্ট ও স্বচ্ছ ধারণা না থাকাও এর আরেকটি কারণ। তবে দেরিতে হলেও এগিয়ে এসেছে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ড্যাফোডিল আমত্মর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে তাদের নির্দিষ্ট লিঙ্কের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাস পদ্ধতি চালু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কমপিউটার বিজ্ঞানের কয়েকটি বিষয়ের ক্লাসে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারছেন। ক্লাস ছাড়াও লাইব্রেরি ও ফাইল ম্যানেজার অপশন থেকে অনলাইনে আরও কিছু একাডেমিক সেবা পাবেন শিক্ষার্থীরা।

ই-লার্নিং সেবায় ক্রিয়েটিভ আইটি ও ফিউচার লিডার্স

অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে দেশের দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক আইটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট এবং ফিউচার লিডার্স। এ ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কমজগৎ টেকনোলজিসের ই-লার্নিং পস্ন্যাটফর্ম ওয়েব টিভি নেক্সট ডটকম। এ লক্ষ্যে কমজগৎ টেকনোলজিসের সাথে প্রতিষ্ঠান দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুয়ায়ী প্রতিষ্ঠান দুটি অনলাইনে তাদের প্রশিক্ষণগুলো (গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, এসইও আউটসোর্সিং প্রভৃতি) পরিচালনা করছে। কমজগৎ টেকনোলজিসের ই-লার্নিং পস্ন্যাটফর্ম ওয়েব টিভি নেক্সট ডটকম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণগুলো সরাসরি সম্প্রচার করছে। নির্দিষ্ট আইডির মাধ্যমে প্রশিক্ষণে দেশ-বিদেশের যেকোনো প্রামত্ম থেকে আগ্রহীরা অংশ নিতে পারবে। অংশ নেয়া প্রশিক্ষণার্থীরা ভিডিও, ভয়েস ও টেক্সট চ্যাটের মাধ্যমে কোনো প্রশ্ন থাকলে জানতে ও বুঝে নিতে পারবে। এ প্রসঙ্গে ক্রিয়েটিভ আইটি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মনির হোসেন বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় বহির্বিশ্বে ই-লার্নিং (দূরশিক্ষণ বা অনলাইনে পড়াশোনা) জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে নানা কারণে বাংলাদেশে ই-লার্নিং তেমন এগিয়ে যেতে পারেনি। অপরদিকে যাতায়াত ও আবাসন ব্যবস্থার অভাবে অনেকেই রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোর ভালো মানের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন না। এ অবস্থায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের সুযোগ দিতে পারলে আগ্রহীরা ঘরে বসেই ই-শিক্ষার সুযোগ পাবেন। দক্ষ প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বিষয়টিতে নিজেদের দক্ষতা উন্নয়ন করতে পারবেন। সে কারণে এ চুক্তিবদ্ধ হওয়া। কমজগৎ টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, দেশে ই-লার্নিং একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এমনকি দেশের বাইরে থেকে প্রবাসীরাও যাতে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারে, সেজন্য আমরা ই-লার্নিং প্লাটফর্ম তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিতে পারবে। সংশিস্নষ্ট আরও প্রতিষ্ঠান খুব শিগগিরই এ প্লাটফর্মে যুক্ত হবে।

ক্যাম্পস২১ ডটকম
ক্যাম্পস২১ ডটকম নামে বাংলাভাষায় একটি ই-লার্নিং ওয়েবসাইট চালু হয় ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। www.champs21.com নামে ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই নিজেদের অর্জিত শিক্ষা যাচাই করে নেয়ার সুযোগ পায়। তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা শুধু গণিত ও বিজ্ঞানের ওপর পরীক্ষা দিতে পারবে। পরীক্ষা দেয়ার সাথে সাথেই পেয়ে যাবে ফল। ভুল হলে কোথায় কী ভুল হয়েছে তা-ও জানা যাবে। এজন্য অবশ্য শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী নুজরুল ইসলাম নাহিদ ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার কার্যালয়ের মিলনায়তনে ওয়েবসাইটটির উদ্বোধন করেন। ডেইলি স্টার ও টিম ক্রিয়েটিভ যৌথভাবে ই-লার্নিংয়ের ওই উদ্যোগ নেয়। সম্প্রতি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ‘স্পেলিং রেভ্যুলেশন’ নামে একটি ইংরেজি শিক্ষার উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে ক্যাম্পস২১ ডটকম।

বাংলাদেশে যারা বিচ্ছিন্নভাবে অনলাইনে শিক্ষা দিচ্ছে

উন্নত বিশ্ব তো বটেই, ঢাকা শহরের নামীদামী স্কুলগুলো পরিচালিত হচ্ছে অনলাইন বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে। কেউবা নিজেদের নামে সফটওয়ার তৈরির মাধ্যমে, কেউবা ওয়েবসাইট করার মাধ্যমে এবং কেউবা অনলাইন সার্ভিস প্রোভাইডারদের বার্ষিক নির্দিষ্ট ফি দিয়ে সার্ভিস নিয়ে অনলাইনে স্কুল পরিচালনা করছে। নিজেদের নামে সফটওয়্যার করতে গেলে অনেক খরচ। তাই কেউ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে স্কুলের সুনাম ও অর্জনগুলো জানিয়ে দিচ্ছে অনলাইন ব্রাউজারদের। ওয়েবসাইটে রক্ষিত ভর্তি ফরম ডাউনলোড করে কোনো প্রার্থী শিক্ষক হওয়ার আবেদন করতে পারেন, কোনো ছাত্র ভর্তির আবেদন করতে পারেন, এমনকি আজকাল বেতন-ফিও অনলাইনের মাধ্যমে দেয়া যায়। ওয়েবসাইটের একটি বার্ষিক খরচ আছে এবং টাকা দেয়ার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কতটা স্পেস পাবেন। আর অনলাইন সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানিগুলো তাদের নির্দিষ্ট সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য কোনো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে দৈনিক ভিত্তিতে একটি সুনির্দিষ্ট অঙ্কের ফি নেয়। যেমন টাস্ক টিএমএস নামে ফার্মগেট এলাকায় অবস্থিত একটি প্রতিষ্ঠান অনলাইন সার্ভিস দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কোচিং সেন্টার, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে দৈনিক ১০ টাকা হারে ভাড়া নিয়ে। তাদের কী কী সার্ভিস রয়েছে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের আল-হেরা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনলাইন সার্ভিস ম্যানেজার জাহেদ আহমদ জানান, আমরা টাস্ক টিএমএসের মাধ্যমে পাওয়া অনলাইন ফ্যাসিলিটিজ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি, ছবিসহ জীবনবৃত্তামত্ম সংরক্ষণ, তাদের কৃতিত্ব, আইডি কার্ড, প্রগ্রেসিভ রিপোর্ট, পরীক্ষার ফলাফল ও সার্টিফিকেট, বেতন ও বিভিন্ন ফি নেয়া, অ্যাডমিট কার্ড, ক্যুইজ প্রতিযোগিতা, শিক্ষকদের বেতন দেয়াসহ স্কুলের হিসাবপত্র সংরক্ষণ করতে পারি। এছাড়া দেশে আরও অনেক কোচিং সেন্টার অনলাইনে শিক্ষা বা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে।

প্রাথমিক শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মহাপরিকল্পনা

প্রাথমিক শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের ৫৫টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) প্রতিটিতে ২০টি কমপিউটার ও পাঁচটি ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি পিটিআইয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি। পাশাপাশি ৮ হাজার ৪৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ল্যাপটপ দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন জানান, দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও বিভাগে দুটি এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসে একটি করে কমপিউটার দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় শহরে ইন্টারনেট কানেকশনও দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, দেশের সব পিটিআইয়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে। এসব পিটিআইয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আইসিটি সরঞ্জামের ব্যবহার ও ডিজিটাল আইসিটি কনটেন্ট তৈরির ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। শ্রেণীকক্ষে ব্যবহারের জন্য ৪টি ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পিটিআই প্রশিক্ষকেরা ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে ক্লাস পরিচালনা করেন। সূত্র জানায়, উপজেলা পর্যায়ের ৫০৩টি মডেল স্কুলে একটি করে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সরবরাহ করা হয়েছে। একই সাথে ওয়্যারলেস মডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি মডেল স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করা সম্ভব হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষককে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে নেয়া মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে এক হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর সরবরাহ করা হয়েছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রতি স্কুলে তিনজন শিক্ষককে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। চলতি বছর আরও ৭ হাজার ৪৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্ট সরবরাহ করা হবে। এ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে ৩৭ হাজার ৬৭২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্ট সরবরাহ করা হবে। অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে ইতোমধ্যে দেশের ৩৭০ জন প্রশিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি রিসোর্স পুল গঠন করা হয়েছে। উক্ত রিসোর্স পুলের আওতায় বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ১০০ শিক্ষককে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি ও এর ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ বছরে ৩০টি পিটিআইয়ের আরও ৩ হাজার ৮৭ জন শিক্ষকের প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। এসব শিক্ষক এটুআই পরিচালিত একটি বস্নগের মাধ্যমে তাদের তৈরি কনটেন্টগুলো একে অপরের মধ্যে বিনিময় করবেন। চলতি বছরের এক হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ করা ৭৪৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সর্বনিম্ন চারজন করে শিক্ষককে আইসিটি ইন এডুকেশন ও ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আগামী অর্থবছরে শুরু করা হবে বলে সূত্র জানায়

সহযোগিতায় : মোস্তফা জববার ও নুহা চৌধুরী

ফিডব্যাক : mmrsohelbd@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস