• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ভুলে যাওয়া বিষয় পড়বে মনে
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সাবরিনা নুজহাত
মোট লেখা:৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফিচার
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ভুলে যাওয়া বিষয় পড়বে মনে
অনেকেই হয়তো ‘ইটারনাল সানশাইন অব দ্য স্পটলেস মাইন্ড’ মুভিটি দেখেছেন। মুভিতে একজন বিজ্ঞানী মানুষের স্মৃতিশক্তি মুছে দেয়ার প্রযুক্তি আবিষ্কার ও ব্যবহার করেন। আবার আলঝেইমার রোগীর মতো স্মৃতিভ্রষ্টতাসহ অনেক রোগেই মানুষ স্মৃতি হারিয়ে ফেলতে পারে। কখনও তা স্বল্প সময়ের জন্য, আবার কখনও দীর্ঘ সময়ের জন্য। স্মৃতিশক্তি মুছে দেয়া বা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে যদি স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনা যায়, তাহলে কতই না ভালো হতো। সেই হারানো স্মৃতি ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় বিজ্ঞানীরা আরও একধাপ এগিয়ে গেছেন। এরা মসিত্মষ্কে এমন একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র সফলভাবে স্থাপনে সক্ষম হয়েছেন, যা হারানো স্মৃতি ফিরিয়ে আনবে। এর পাশাপাশি তা স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সহায়তা করবে। এটি বেইল হিপ্পোক্যাম্পাসের একটি সার্কিটের পরিবর্তে ব্যবহার করা হবে। বিজ্ঞানীরা বানর ও ইঁদুরের ওপর এর পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। এখন মানুষের ওপর এটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। মানুষের ক্ষেত্রে বিষয়টি সফল হলে আলঝেইমার রোগের মতো স্মৃতিভ্রষ্টতাসহ মসিত্মষ্কের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় বৈপ্লবিক অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েক ফরেস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এ গবেষণার কাজটি করেছেন। এতে নেতৃত্ব দেন ওয়েক ফরেস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম এ ডেডাওলার।
গবেষণাগারে কিছু ইঁদুরকে প্রথমে একটি পাত্র থেকে পানি খেতে দেয়া হয়। ওই পাত্রে দু’টি দ- আছে। এর একটি দ--র ওপর চাপ দিতে পারলে পাত্র থেকে পানি পাওয়া যায়। এটি দুই-তিনবার করতে করতে ইঁদুরগুলো বুঝে ফেলে পানি খেতে হলে কোন দ-টি চাপ দিতে হবে। এরপর ওষুধের মাধ্যমে ইঁদুরের স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে দেয়া হয়। তারপর ইঁদুরের মসিত্মষ্কে একটি সূক্ষ্ম ইলেকট্রনিক যন্ত্র বসিয়ে সুইচ চালু করে দেয়া হয়। এতে যন্ত্রটি মসিত্মষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসের দু’টি বড় অংশকে উদ্দীপিত করে, মসিত্মষ্কে স্মৃতি সংরক্ষণে প্রধান ভূমিকা পালন করে এ হিপ্পোক্যাম্পাস। তখন ইঁদুরগুলোর আবার মনে পড়ে যায়, পানি খেতে হলে পাত্রের কোন দ-টি চাপ দিতে হবে। অর্থাৎ ইঁদুরগুলো আগের স্মৃতি ফিরে পায়। এই গবেষণার সাথে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থিওডর বার্গার বলেন, সুইচ চালু করলেই ইঁদুরগুলো স্মৃতি ফিরে পায়। আবার সুইচ বন্ধ করলে তারা ভুলে যায়।

গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, ইঁদুরগুলো যখন স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, তখন ওই যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের মসিত্মষ্কে স্নায়বিক উদ্দীপনা দেয়ার পর দেখা গেছে, তাদের স্মৃতিশক্তি অনেক বেড়ে গেছে। অর্থাৎ স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো ঘটনার ৬০ শতাংশ স্থায়ীভাবে মনে রাখতে পারত এবং বাকি ৪০ শতাংশ একটু পরে ভুলে যেত। কিন্তু স্নায়বিক উদ্দীপনা দেয়ার পর এরা ভুলে যাচ্ছে মাত্র ১০ শতাংশ। বাকিটা তাদের মসিত্মষ্কে সংরক্ষিত থেকে যাচ্ছে।

মেমরি মেশিন
এক রোগীর মসিত্মষ্কে অস্ত্রোপচারের সময় ভুলক্রমে তার হিপ্পোক্যাম্পাস বাদ দেয়া হয়েছিল। এর ফলে দেখা গেল তার পুরনো সবই মনে আছে, কিন্তু নতুন কিছু আর মনে থাকছে না। এই হিপ্পোক্যাম্পাস আসলে কী? হিপ্পোক্যাম্পাস হলো মানুষের মসিত্মষ্কের একটি অংশ, যা মানুষের স্মৃতিশক্তির জন্য দায়ী। হিপোক্যাম্পাস শারীরিক সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষের স্মৃতিশক্তি সমৃদ্ধ করে, বাড়ায় মসিত্মষ্কে হিপ্পোক্যাম্পাসের আয়তন। হিপ্পোক্যাম্পাস আসলে মসিত্মষ্কে নতুন স্মৃতির রেশ তৈরি করে। যদিও সেই রেশগুলো হিপ্পোক্যাম্পাসে তৈরি হয় না। মানবজাতির একটা বড় চ্যালেঞ্জ আলঝেইমার ডিজিজও তৈরি হয় এই অংশের ত্রুটির কারণে। এনকেফেলাইটিস রোগীর হিপ্পোক্যাম্পাস আক্রান্ত হয় মসিত্মষ্কে অক্সিজেনের অভাবে। রহস্যময় মসিত্মষ্কের সব অংশের কাজ ঠিকঠাক জানা যায়নি, কিন্তু জানার চেষ্টার কোনো ত্রম্নটি নেই। হিপ্পোক্যাম্পাস এ ধরনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার গুরুত্ব জানা থাকলেও কার্যপদ্ধতি জানা নেই। মনস্তাত্ত্ববিদ আর আয়ু বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিমত আছে। সন্দেহ নেই, ভবিষ্যতের জন্য হিপ্পোক্যাম্পাস এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

বার্গার এবং তার সহযোগীদের আবিষ্কৃত এই ডিভাইসটি নষ্ট হিপ্পোক্যাম্পাস পরিবর্তন করে এবং একটি বাড়তি হিপ্পোক্যাম্পাস ব্যবহার করা যাবে। হিপ্পোক্যাম্পাসে ব্যবহৃত ইলেকট্রোডের তৈরি ছোট চিপ মসিত্মস্কের সব সিগন্যাল স্বল্প সময়ের স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করে। এরপর এই সিগন্যাল কমপিউটারে পাঠানো হয়, যা গাণিতিকভাবে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি হিসেবে রূপান্তরিত করে। এই দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি আবার হিপ্পোক্যাম্পাসের আরেকটি লেয়ারে অবস্থিত ইলেকট্রোড চিপে পাঠায়।

স্বল্প সময়ের স্মৃতি রূপান্তরিত হয়ে কীভাবে একটি দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি হতে পারে সে বিষয়ে বার্গার বলেন, এটি অনেকটা ট্রান্সলেশন নিয়মের মতো। এই মেমরি যুক্ত করা শব্দের বা ওয়ার্ডের মতো আর গাণিতিক রূপান্তরিত বিষয়টি অনুবাদকের মতো কাজ করে।

গবেষণা চলছেই
ইঁদুর ও বানরের পর এবার মানুষের ওপর এই ডিভাইসটির পরীক্ষা শুরু করেছেন বার্গার ও তার সহযোগীরা। এখনও পর্যন্ত এরা খুব বেশি সাফল্যজনক তথ্য পাননি। তবে বার্গার বলেন, এটা নিশ্চিতভাবে আকর্ষণীয় হবে। শর্টটার্ম মেমরি কীভাবে গাণিতিকভাবে লংটার্ম মেমরিতে রূপান্তর একটি বড় চ্যালেঞ্জ- এমনটাই মনে করেন বার্গার। মসিত্মষ্কের অভিযোজন অথবা নমনীয়তা ডিভাইসটির কার্যক্রমে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করবে। যাই হোক, ডিভাইসটি মানব মসিত্মষ্কের স্মৃতি উদ্ধারে সফল হবে এমনটিই তাদের প্রত্যাশা । তবে এটি সম্ভব হলে কিছু প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়াবে। যেমন- স্মৃতি ডিকোড করে শেষ পর্যন্ত কি কাঠগড়ায় প্রমাণের জন্য এ উদ্ভাবন ব্যবহার করা হবে? এমনকি একজন তার স্মৃতি মুছে অন্যজনের স্মৃতি ব্যবহার করবে? তবে এখন নয়, আগামীতে এ ধরনের প্রশ্ন সামনে আসতে পারে।
ফিডব্যাক : bmtuhin@comjagat.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস