লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যপ্রযুক্তির বাজেট ভাবনা
প্রতিবছর মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুলাই মাস জুড়ে অর্থনীতিতে দেশের বেশিরভাগ সচেতন মানুষের আলোচনার কেন্দুবিন্দুতে থাকে বাজেট। অবশ্য এপ্রিল থেকেই চিন্তার জগতে বাসা বাঁধতে শুরু করে এই ভাবনা। আগামী অর্থবছরের জন্য নতুন করে হিসাব-নিকাশ করতে বসেন ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ আর গণমাধ্যমকর্মীরা। এ সময় বাজেটে নিজেদের প্রস্তাবনা তুলে ধরে বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিত্বকারী সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। মে মাস থেকে এই কাতারে যুক্ত হন সাধারণ মানুষ। মূলত মে মাসের শেষ পক্ষে নির্ধারিত হয়ে যায় পরবর্তী বাজেটের কলেবর। এরপর বাজেট ঘোষিত হলেই বাজারে শুরু হয় পণ্যমূল্যের Djøçb। ব্যক্তি-আয় বাড়বে কি না, অর্জিত আয় দিয়ে কতটা স্বাচ্ছন্দ্যে চলা যাবে, ব্যবসায়-বাণিজ্য কতটা এগিয়ে নেয়া যাবে, সে ভাবনা থেকে শুরু করে দেশজ উন্নয়নে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য আর প্রতিরক্ষা খাত কতটা সুবিধা পাবে, এর চুলচেরা বিশ্লেষণ। রাজনীতির মাঠের গরম ছাপিয়ে তখন বাজেট আলোচনায় সরগরম হয়ে ওঠে আমাদের চারপাশ।
এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। এ ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরে বাজেট ভাবনায় নতুন মাত্রা যুক্ত করা তথ্যপ্রযুক্তি খাত থাকবে প্রথম সারিতেই। ভোক্তা পর্যায়ে ইন্টারনেট, সিম, সেলফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, মনিটর, ওয়েবক্যাম, ডিজিটাল ক্যামেরা, মডেম, রাউটার, নেটওয়ার্কিং পণ্য ইত্যাদির দাম বাড়বে না কমবে, সে বিষয়টি এবার দারুণ প্রভাব ফেলবে। এর ওপর নির্ভর করবে ফ্রিল্যান্সিং, ই-বাণিজ্য এবং সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ডিজিটালায়নে বাংলাদেশ কতটা এগিয়ে যাবে।
বাজেটে নেই তথ্যপ্রযুক্তি খাত
বর্তমানে বিশ্বজুড়েই তথ্যপ্রযুক্তিকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কায়িক শ্রম-নির্ভরশীলতা কমিয়ে মেধাভিত্তিক অর্থনীতি গঠনে প্রচেষ্টা চলছে। গত এক দশক ধরে এ পথে হাঁটতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এই খাতে দারুণ সফলতাও আসতে শুরু করেছে। তবে এখনও বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি তথ্যপ্রযুক্তি খাত। উন্নয়ন বাজেটের মাধ্যমে প্রকল্প তৈরি করে চলছে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উন্নয়ন কাজ। এবারও বাজেটে ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাত’ না থাকলেও এই পরিসরকে সমৃদ্ধ করতে আগামী বাজেটকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই সুনির্দিষ্ট দাবি জানিয়েছে কমপিউটার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস), সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) ও ইন্টারেনট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিসেস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি)।
বাজেটে ৭০০ কোটি টাকার বরাদ্দ চায় বিসিএস
ডিজিটাল বৈষম্য এড়াতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে কমপিউটার, মনিটর, ডিজিটাল ক্যামেরা ও নেটওয়ার্ক পণ্যের মতো ডিজিটাল ডিভাইসগুলো সাধারণের হাতের নাগালে নিয়ে আসার পাশাপাশি বাজার গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সুনির্দিষ্টভাবে ৭০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস)। আগামী পাঁচ বছরের জন্য চেয়েছে কর অবকাশ সুবিধা। ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছে নয় দফা প্রস্তাবনা। এর মধ্যে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সব যন্ত্রাংশ ও অনুষঙ্গ যৌক্তিকভাবে সমহারে শুল্কায়িত করতে এইচএস কোডের শ্রেণী স্থানীয়ভাবে পুনর্বিন্যাস অথবা কর হার সুবিন্যস্ত করার দাবি। এ ছাড়া আউটসোর্সিং ও ই-সেবার বিকাশ-ধারা ত্বরান্বিত করতে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও অন্তত পাঁচ বছরের জন্য প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ের বাড়ি ভাড়ার ওপর ৯ শতাংশ মূসক প্রত্যাহার এবং ই-বাণিজ্যের সব লেনদেনের ওপর থেকে খুচরা বিক্রি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবি জানানো হয়েছে। আমদানি পর্যায়ে এটিভির হার অন্তত ১ শতাংশ কমানো এবং সরবরাহ পর্যায়ে কোনো ভ্যাট আরোপ না করা, আমদানি ও সরবরাহ পর্যায়ে কোনো আয়কর আরোপ না করা, ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ হিসেবে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ডিজিটাল ক্যামেরা, ২৭ ইঞ্চি পর্যন্ত মনিটর, মাল্টিফাংশনাল প্রিন্টার, ইন্টারনেট সংযোগের জন্য বাজেটে নেটওয়ার্কিং ডিভাইসের শুল্ক কমিয়ে আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের বাজেটের মতো আসন্ন বাজেটেও যেনো ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণের শুল্ক ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা ও আইটি দোকানগুলোর ক্ষেত্রে নির্ধারিত ভ্যাট মওকুফ সুবিধা আগামী ২০১৮ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি সম্ভাবনাময় ‘তথ্যপ্রযুক্তি সেবা’ খাতের উন্নয়নে বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তিতে বিদ্যমান ১০ শতাংশ এআইটি ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিসিএস সভাপতি এএইচএম মাহফুজুল আরিফ।
বাজেট প্রস্তাবনায় মাহফুজুল আরিফ বলেছেন, কৃষি ও শিল্প বিপ্লবের পর বিশ্ব এখন এগিয়ে চলছে তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের দিকে। এখানে কায়িক শ্রমের স্থানে যুক্ত হয়েছে মেধা। খনিজ সম্পদের চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে মানবসম্পদ। কমপিউটার বিপ্লব আর ই-যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে বিশ্বের অনেক দেশই দারিদ্র্যকে জয় করে পা রেখেছে উন্নত দেশের তালিকায়। উন্নয়নের এ মহাসড়কে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম। অধিক জনসংখ্যার কারণে তাদের চাকরির বাজার একেবারেই ছোট হলেও কমপিউটার আর ই-যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই তরুণেরা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই আয় করতে শুরু করেছে বৈদেশিক মুদ্রা। পাচ্ছে বিশ্ব নাগরিকের মর্যাদা। একদিকে এরা বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রতিষ্ঠানের কাজ যেমন করে দিচ্ছে, তেমনি নিত্যনতুন সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে এ দেশের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি রফতানিও করছে।
তিনি বলেন, আনুপাতিক হারে এ দেশের রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাক শিল্পে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশমানতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। এই খাতে কঠোর কায়িক শ্রম না দিয়েও কমপিউটারের মতো ডিজিটাল ডিভাইস আর ইন্টারনেট ব্যবহার করে বছরে আয় হচ্ছে লাখ লাখ ডলার। দেশের তরুণদের মধ্যে কমপিউটার সহজলভ্য করা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়ার মধ্যেই এই অর্জন সম্ভব হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কমপিউটার আমদানির ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা আমাদের অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়েছে।
তবে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট, বিকাশমান ই-কমার্সের ওপর ৯ শতাংশ ভ্যাট, সর্বোপরি
আইটিপণ্য আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা এবং আইটি সেবা খাত বিকাশের পথে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা আমাদের অমিত সম্ভাবনার এই খাতকে পূর্ণোদ্যমে বিকশিত হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। প্রযুক্তিপণ্য বিন্যাসে বিদ্যমান এইচএস কোড শ্রেণীবিন্যাসের বাড়তি শুল্ক চাপ, আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম বাণিজ্য কর, সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর এবং প্রযুক্তি সেবার ওপর দ্বৈত করারোপ করায় প্রকারান্তরে সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকাশনা শুল্ক আর করের এই দায় সরাসরি ভোক্তার ওপর বর্তায়। একই কারণে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকার পরও এই খাতে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি খাত কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগিয়ে যেতে পারছে না।
বাজেটে কর অবকাশের ৪ প্রস্তাবনায় বেসিস
আসন্ন বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে একশ কোটি ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যে সরকারের কাছে চার দফা প্রসত্মাব দিয়েছে বেসিস। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আয়কর অব্যাহতির সময়সীমা বাড়ানো সম্পর্কে প্রস্তাবনায় সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার ওপর থেকে আয়কর অব্যাহতির সময়সীমা আগামী ১০ বছরের জন্য অর্থাৎ ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি বেসিসের। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার জন্য ধার্য বর্তমানের মূসক ৪.৫ শতাংশ (এসআরও ২৩৯-আইন/২০১২/ ৬৫৬-মূসক) থেকে শূন্য (০) শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রাথমিকভাবে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য ই-কমার্সের সব লেনদেনের ওপর থেকে খুচরা বিক্রি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাত ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উল্ল্বেখযোগ্য খাত বিবেচনায় তৈরী পোশাক শিল্পের মতো সফটওয়্যার ও আইটিইএস কোম্পানির জন্যও বাড়ি ভাড়ার ওপর থেকে উল্লিখিত ৯ শতাংশ মূসক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাজেট প্রসত্মাবনা নিয়ে বেসিস সভাপতি শামীম আহসান বলেন, বর্তমান সরকার ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আয়ের ওপর আয়কর অব্যাহতি দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নে এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে এ খাতের বিকাশে সহায়তা করছে। এই সময়সীমা আরও বাড়ানো দরকার হলে দেশের দ্রুত বিকাশমান তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেবে।
তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাত সরকারের একটি অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচিত। বর্তমান সরকার সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রে অটোমেশন ও ডিজিটালায়ন বাস্তবায়নের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই অটোমেশন কর্মসূচি জোরদার করার জন্য এস০৯৯.১০-এর তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার ওপর বিদ্যমান মূসক ৪.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা প্রয়োজন।
শামীম আহসান আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ই-কমার্স উৎসাহিত করতে ই-কমার্সভিত্তিক পণ্য ও সেবা লেনদেন ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, তার অংশ হিসেবে সম্প্রতি ই-কমার্স বিস্তারের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা, ডিজিটাল সার্টিফিকেট প্রচলন ইত্যাদি উল্লেখ করতেই হয়। তবে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা মনে করছেন, ই-কমার্সের দ্রুত বিস্তারের জন্য কিছু মূসক অব্যাহতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে। প্রচলিত বাড়ি ভাড়া দিয়ে ব্যবসায় করতে অনেক আইটি উদ্যোক্তাই হিমশিম খাচ্ছেন। তদুপরি বাড়ি ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য ৯ শতাংশ মূসক দিতে তাদের অনেকের পক্ষেই দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।
ইপিবির মাধ্যমে বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়ে শামীম আহসান বলেন, এনবিআরের পক্ষ থেকে বড় বড় কোম্পানির জন্য সফটওয়্যারের মাধ্যমে হিসাব সংরক্ষণ ও ভ্যাট হিসাব প্রণয়নে বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তবে তা এখনও বাসত্মবায়িত হয়নি। আমরা চাই, প্রথম সারিতে থাকা কোম্পানিগুলো যেনো সফটওয়্যার ব্যবহারে ভ্যাট বাধ্যতামূলক করে। আর এডিবির ৫ শতাংশ যেনো মন্ত্রণালয়গুলোর অটোমেশন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগ বাসত্মবায়নে ব্যয় করা হয়।
মোবাইল সিমে কর প্রত্যাহার চায় অপারেটরেরা
২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে সিমের ওপর আরোপিত সব ধরনের কর প্রত্যাহার, কর্পোরেট কর সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা, মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা এবং একই সাথে ইন্টারনেট মডেমসহ টেলিকম খাতের বিভিন্ন যন্ত্রাংশে কর ও শুল্ক ছাড়ের প্রস্তাব করে বর্তমানে মডেমের ওপর অগ্রিম ব্যবসায় কর (এটিভি) ৪ শতাংশ, আমদানি পর্যায়ে ৪ শতাংশ, সরবরাহে ৪ শতাংশ ও বিক্রির ওপর ৮ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)।
এ বিষয়ে অ্যামটব মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, বর্তমানে মোবাইল গ্রাহকদের প্রত্যেককে একটি সিম ও রিমকার্ডের বিপরীতে ১০৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর এবং ১৯০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়। যার কারণে একটি সিমকার্ডের দাম অতিরিক্ত ৩০০ টাকা আরোপিত হয়। তাই সিমকার্ডের ওপর নির্ধারিত কর প্রত্যাহার না হলে গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য মোবাইল ব্যবহার কঠিন হয়ে যাবে। একই সাথে সিম ট্যাক্স প্রত্যাহার না করলে মোবাইল অপারেটরদের ব্যবসায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে ছয় মোবাইল ফোন অপারেটর।
তিন আরও বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মোবাইল ফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর এ মোবাইল ফোনের সিমকার্ড স্বল্প দামে মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে এর ওপর সব ধরনের কর প্রত্যাহার জরুরি। এখনও বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে মোবাইল ফোনের ব্যবহার অন্যান্য দেশ থেকে কম। জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশকে এ সুবিধার আওতায় আনতে কর রেয়াত প্রয়োজন। কারণ গ্রামীণ জনপদের মানুষের ক্ষেত্রে একটি সিমের জন্য ৩০০ টাকা কর দেয়া বেশ কঠিন। আবার কোম্পানিগুলোকে এ কর দিতে হলে তাদের আর্থিকভাবে বেশ চাপে পড়তে হয়।
প্রসত্মাবিত বাজেটে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশের ব্যবসায় পরিবেশ টিকিয়ে রাখতে কর্পোরেট করের হার সহনীয় পর্যায়ে আনার দাবি করেছে মোবাইল ফোন অপারেটরেরা। তাদের দাবি, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ হারে কর কমিয়ে আনা হোক। এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মাহতাব উদ্দিন আহমদ জানান, বাংলাদেশ ছাড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে পাকিসত্মান ও শ্রীলঙ্কায় ৩৫ শতাংশ, ভারতে ৩২ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৩০ শতাংশ এবং মালয়েশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় ২৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট কর দিতে হয়। তিনি বলেন, এশিয়ার সব দেশেই ৪০ শতাংশের নিচে এ কর নির্ধারিত থাকলেও বাংলাদেশে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কর্পোরেট কর দিতে হয়। অবশ্য বর্তমানে শুধু তিনটি অপারেটরকে এ কর দিতে হয়। কারণ, বাকি কোম্পানিগুলো এখনও মুনাফার মুখ দেখতে পারেনি অথবা আগে মুনাফায় থাকলেও এখন লোকসান গুনছে। এ তিন কোম্পানি হলো- গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবি। বাকি কোম্পানিগুলোর মূল মালিকানার সাথে শেয়ার থাকা আন্তর্জাতিক টেলিকম গ্রুপগুলো লোকসান গুনে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে সিটিসেল থেকে সিংটেল, রবি থেকে টিটিআই ডোকোমো ও এয়ারটেল থেকে ওয়ারিদ টেলিকম।
মাহতাব উদ্দিন বলেন, বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত সব ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ কর দিয়ে থাকে মোবাইল ফোন অপারেটরেরা। তালিকাবহির্ভূত অন্যান্য কোম্পানির সর্বোচ্চ কর হার ৩৭ শতাংশ হলেও মোবাইল অপারেটরদেরকে কর দিতে হয় তারচেয়ে ৮ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত অন্যান্য খাতের কোম্পানির কর হার সাড়ে ৩২ শতাংশ হলেও মোবাইল ফোন অপারেটরদের ১০ শতাংশ বেশি হারে এ কর দিতে হয়।
নেটওয়ার্কিং পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চায় আইএসপিএবি
বাজেটে আইপি ফোনসেট, ফাইবার অপটিক, মেইনটেন্যান্স ফ্রি ব্যাটারি, নেটাওয়ার্ক ক্যাবল, রাউটার, সুইচ, মিডিয়া কনভার্টারসহ ৩১টি নেটওয়ার্ক পণ্যের (ক্যাবলসহ) ওপর ডিউটি চার্জ কমানোর পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট কিছু প্রণোদনা প্যাকেজ অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে আইএসপিএবি। পাশাপাশি ইন্টারনেটের ওপর গ্রাহক পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমানো এবং গত ১৫ বছর ধরে পাইকারি ব্যবসায় হিসেবে ব্যান্ডউইডথ বিপণনের ওপর যে রিবেট রয়েছে সেখানে কর সংজ্ঞায়নে জটিলতা তৈরি না করে অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
প্রসত্মাবিত বাজেট নিয়ে প্রত্যাশা ও প্রস্তাবনা সম্পর্কে আইএসপিএবি সভাপতি আক্তারুজ্জামান মঞ্জু বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে কানেকটিভিটি বাড়াতে হবে। আর এটি করতে হলে বাজেটে ফাইবার অপটিক, আইপি ফোনসেটসহ ৩১টি নেটওয়ার্ক পণ্যের (ক্যাবলসহ) ওপর ডিউটি চার্জ ৩ শতাংশে নামিয়ে আনলে এবং সরকারি উদ্যোগে নেটওয়ার্কিংয়ের কাঠামোগত উন্নয়ন এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াবে। তখন আমরা এ খাত থেকে সহজেই মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি একটি বড় ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারব।
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন করতে ডিজিটাল সংযোগ ও এর ব্যবহার বাড়াতে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। এটি করতে হলে শুরুতেই এবারের বাজেটে সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ ও ডাটা সার্ভিসের ওপর থেকে ধার্য করা ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে।
ইন্টারনেট সংযোগকে যতটা সহজলভ্য ও মূল্য সংবেদনশীল করা সম্ভব হবে, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত ততটাই বিকশিত হবে এবং ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে অভিমত দেন আক্তারুজ্জামান মঞ্জু। নেট ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থাকে ঢাকাকেন্দ্রিক না রেখে এটি উপজেলা পর্যায়ে বিসত্মৃত করতে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, এটা করা হলে ইন্টারনেট সংযোগ খরচ ও এর দাম কমবে। বাড়বে এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ ও ব্যবহার। একই সাথে কমবে জনভোগান্তিও। বাজেট নিয়ে নানা আলোচনার ফাঁকে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের টেলকোর কাছ থেকে ই-ওয়ান ক্যাবল ভাড়া না করে বিটিসিএলের মতো সমান ট্যারিফ দেয়ার প্রস্তাব করেন আইএসপিএবি সভাপতি। এ ছাড়া এই খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দক্ষ ব্যবস্থাপনা বাড়ানোর প্রতি জোর দেন তিনি। তিনি বলেন, এ খাতে উন্নয়নের এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি মনিটরিং বাড়ানো। অপরদিকে বাজেটে শুল্ক সুবিধার পাশাপাশি ইন্টারনেট সংক্রান্ত পণ্যের শুল্ক নিয়ে হয়রানি বন্ধের দাবি জানান আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক মো: ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট পণ্যের শুল্ক কমিয়ে দেয়া উচিত। তবে তার চেয়েও বড় বিষয় শুল্ক দিতে গিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে যে পরিমাণ হয়রানির শিকার হতে হয়, তা দূর করা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ইন্টারনেট সংক্রান্ত কোন পণ্যের শুল্ক কত, তা নিয়ে শুল্ক অফিসের কর্তারাই নিশ্চিত নন। তাই একই পণ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের শুল্ক অফিসে দুই ধরনের শুল্ক দিতে হয়, যা খুবই বিব্রতকর। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এ অবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রথমে সংশ্লিষ্ট পণ্যের একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা থাকা দরকার। তাহলে এ ধরনের হয়রানি থেকে রেহাই পাব। ইমদাদুল হক বলেন, আইএসপিগুলো আইইজির কাছ থেকে ব্যান্ডউইডথ কেনার সময় ১৫ শতাংশ কর দেয়। বছর শেষে আগে একটি রিবেট পাওয়া যেত, কিন্তু এখন পাওয়া যায় না।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থায় গতিশীলতা আনতে বাজেটে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার জরুরি বলে মনে করেন নেটওয়ার্কিং বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির। একই সাথে আইপি ফোনসেটের ওপর বিদ্যমান ৬৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর প্রতি জোর দেন তিনি। তথ্যপ্রযুক্তির এ সময়ে এমন ভ্যাট ধার্য গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটা ইন্টারনেটের প্রসারে বড় বাধা বলে অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি এবারের বাজেটে এসব সমস্যার সমাধান হবে। বিগত তিন বছরে বাজেট প্রণয়নের আগে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, বাজেটের আগে খাতভিত্তিক একটি কর্মপরিকল্পনা নেয়া হলে আমরা অনেক ভালো ফল পেতাম। বলতে গেলে অনেকটা লক্ষ্যহীন পথেই আমরা চলছি। আর এ কারণেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাসত্মবায়নে এখন সরকারের উদ্যোগ নিয়েই জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। তারপর বেসরকারি চেষ্টায় দেশের ইন্টারনেট সংযোগ বেড়েছে। অবশ্য ওয়াইম্যাক্স সংযোগ যতটা বেড়েছে তারযুক্ত সেবা ততটা বাড়েনি। এ ক্ষেত্রে বেড়েছে তথ্যসেবা প্রবৃদ্ধি। কিন্তু সম্প্রতি এই সেবাদানে নতুন লাইসেন্স দিলেও তা বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় সামনে বাজার আরও অস্থিতিশীল হবে বলে জানান সাবির আহমেদ সুমন। এর ফলে সেবার মান যেমন কমবে, তেমনি বাড়বে দাম ও অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়।
ফ্রিল্যান্সিং খাতে করারোপের প্রস্তাব
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং ব্যবসায় পরিচালনায় ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)
করারোপের প্রসত্মাব করেছে। যদিও আয়কর অধ্যাদেশে ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকটিভিটির কোনো সংজ্ঞা নেই। তাই রাজস্ব আয়ের এ খাত থেকে করারোপে অচিরেই পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা করেছে। সংগঠনের সমন্বয়ক আবদুল খালেক এ বিষয়ে বলেন, প্রতিবছর ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ২ কোটি ডলার আয় করছে বাংলাদেশ। নিয়মকানুনের আওতায় এনে এ খাত থেকে সরকার বছরে ১০ কোটি ডলার আয় করতে পারবে।
তবে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ইল্যান্স-ওডেস্কের বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার সাইদুর রহমান খান বলেন, এই প্রস্তাব দেশে তরুণদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে বিকাশমান ধারাকে বাধাগ্রস্ত করবে। আমরা চাই, এই সুবিধাটি ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাড়ানো উচিত। কেননা তা করা না হলে উঠতি তরুণরা হতাশ হবে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে রফতানি আয়ের নতুন যে ধারা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের শিক্ষিত বেকার কমার যে ধারা তৈরি হচ্ছে তা মুখ থুবড়ে পড়বে। কেননা প্রাথমিক পর্যায়েই যদি করা কষাঘাতে পড়তে হয়, তাহলে ব্যক্তি উদ্যোগগুলো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়া দুরূহ হয়ে পড়বে।
প্রাজ্ঞজনের বাজেট ভাবনা
আসন্ন বাজেটে প্রত্যাশা বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, গত ৩০ বছরে আমরা এগোতে পারিনি। এখনও যথেষ্ট পিছিয়ে আছি। আমাদের পাশের রাষ্ট্র ভারত যখন তথ্যপ্রযুক্তিতে ৭৫-৮০ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করে, সেখানে আমরা সবে মাত্র ১ বিলিয়ন লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৫ বছরে বিল গেটস শীর্ষ ধনী হয়েছেন সেই প্রযুক্তি খাতের সম্পূরক উন্নয়নে বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ প্রত্যাশা করি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও আমাদের অর্থের অপচয় হচ্ছে। কনসালট্যান্সি কিংবা বিশেষায়িত কাজে কমপিউটার গ্র্যাজুয়েটদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে অনেক আলোচনা-আয়োজন দেখা গেলেও এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপরেখা এখনও স্পষ্ট নয়। এলোমেলো অবস্থায় চলছে।
এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলের কমপিউটার সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে তৈরি অ্যাসোসিও চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ এইচ কাফি বলেন, ডিউটি ফি বাড়ানো-কমানোর চেয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দেয়া উচিত। বড় পরিসরে গুরুত্বের সাথে তরুণদের প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি এর ব্র্যান্ডিং বিষয়ে মনোযোগ দেয়া উচিত। এজন্য ভিয়েতনাম, হংকং, কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ভারতের পথ অনুসরণ করা উচিত। দিন দিন এ খাতে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। তাই বাজেটে এমনভাবে বরাদ্দ দেয়া উচিত যেনো ঈপ্সিত লক্ষ্য স্পর্শে বেগ পেতে না হয়। এ জন্য ফাইন টিউন করতে হবে। দঃখজনক হলেও সত্য, আমরা এখনও নিজেরাই নিজেদের ক্যাপাসিটি বিষয়ে সচেতন নই।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জববার বলেন, এবারের বাজেটে নতুন কিছু চাই না। দীর্ঘদিনের দাবিগুলোর প্রতিফলন দেখতে চাই। তিনি বলেন, ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে এই মুহূর্তে নেটওয়ার্কিং প্রোডাক্ট, ক্যামেরার ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া দরকার। সিমের ওপর কোনো ট্যাক্স থাকা উচিত নয়। ইন্টারনেটের ওপর কোনো ভ্যাট থাকা উচিত নয়।
ইন্টানেটের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার না করাটা হতাশাজনক। ডিজিটাল শিক্ষার প্রসারে কনটেন্ট তৈরি করা উচিত। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটালাইজেশনের জন্য আলাদা বরাদ্দ বাজেটে থাকা উচিত।
ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সবুর খান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন করতে হলে এ খাতের জন্য রেভিনিউ বাজেটের অন্তত ১ শতাংশ বাজেটে বরাদ্দ করা উচিত। ভারতে তাদের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের জন্য বাজেটে ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়। আমরা আশা করব সরকার এবারের বাজেটে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেবে।
দেশী প্রযুক্তি বিকাশের জন্য এ দেশে ডেভেলপ করা সফটওয়্যার কিংবা হার্ডওয়্যার যন্ত্রাংশের জন্য সরবরাহ ভ্যাট শূন্য করার বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনার আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে অনুকূল পরিবেশ তৈরি না করলে আমাদের উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হবে।
বিশ্বব্যাপী প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, বছরের জুলাই মাস থেকে শুরু হয় অর্থবছরের গণনা। আমাদের দেশে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে আগামী অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের ছক আঁকা। এই ছককে সাজাতে সরকারেকে সহায়তা করতে সাংগঠনিকভাবে যেমন ব্যবসায় সংগঠনগুলো তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরছে; একই সাথে বাজেট যে জনবান্ধব হয় সেজন্য নিজেদের মত রাখছেন বিশিষ্টজনেরা। বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তিকে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন এদের সবাই। বিভিন্ন পর্যায় থেকে মত দিলেও এসব মতামতে প্রচ্ছন্নভাবে ফুটে উঠেছে অভিন্ন সুর। বাজেটে ইন্টারনেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার, কিছু কিছু পণ্যে শুল্ক সুবিধার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ডাটা ব্যাংক তৈরি এবং বিচ্ছিন্নভাবে ঘটা প্রযুক্তি উৎকর্ষতাকে এগিয়ে নিতে সমন্বিত উদ্যোগের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন এদের প্রায় সবাই। আমরা চাই, এবারের বাজেটে সংশ্লিষ্ট সংগঠন এবং বিশিষ্টজনের এই পরামর্শ অনুযায়ী জন-প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটুক স্বাভাবিক নিয়মেই। সেই লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সুনির্দিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা তুলে ধরা। এসব পরামর্শের আলোকে বাজেট প্রণীত হলে উপকৃত হবে গোটা জাতি। আমাদের বিশ্বাস, এই পরামর্শ সরকারকে যেমন দিকনির্দেশনা দেবে, তেমনি বাড়বে দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা আর স্বচ্ছতাও।
বিশ্বব্যাপী প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বছরের জুলাই মাস থেকে শুরু হয় অর্থবছরের গণনা। স্বভাবতই এপ্রিল-মে মাস থেকে শুরু হয় আগামী অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের ছক আঁকা। আমরা চাই, এবারের বাজেটে সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও বিশিষ্টজনের পরামর্শ অনুযায়ী জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটুক স্বাভাবিক নিয়মেই। সেই লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সুনির্দিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা তুলে ধরা। এসব পরামর্শের আলোকে বাজেট প্রণীত হলে উপকৃত হবে গোটা জাতি। সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাস, এই পরামর্শ সরকারকে যেমন দিকনির্দেশনা দেবে, তেমনি বাড়বে দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা আর স্বচ্ছতা।
ফিডব্যাক : netdut@gmail.com