• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > সরকারি মাল দরিয়াতে ঢাল
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:৯৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইটি
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
সরকারি মাল দরিয়াতে ঢাল
অবশেষে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বাংলা ওসিআর ও বাংলা করপাস তৈরির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইওআই আহবান করেছে। গত ৬ আগস্ট ২০১৪ এটি প্রকাশ করা হয়। পত্রিকায় প্রকাশ করা ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এটি প্রচারিত হয়েছে। ২৫ আগস্ট ইওআই জমা দেয়ার কথা। বরাবর বিনা টেন্ডারে কাজ করার ধারাবাহিকতার প্রবণতা থেকে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহবান করে কাজ শুরু করার জন্য অভিনন্দন। এর আগে আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ, সাইবার অপরাধে সচেতনতা, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৪ ইত্যাদি কাজে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মের যেসব সমালোচনা হচ্ছিল, এটি তার ব্যতিক্রম হতে পারায় এই খাতের সব মানুষের জন্য আনন্দের বিষয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এই ইওআই আহবান করাতে আমার মনে হয়েছে সেই পুরনো প্রবাদটি- ‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’ আমাদের জন্য প্রযোজ্য। আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, সরকারের এটুআই নামের সংস্থা বাংলা ওসিআর (সম্ভবত করপাস) তৈরির কাজটি প্রায় শেষ করে ফেলেছে। আমি যদি বেসরকারি খাতে তৈরি হওয়া ‘পুঁথি ওসিআর’-এর কথা বিবেচনা নাও করি, তবুও এটুআই যে কাজ ২৩ লাখ টাকা ব্যয় করে করে ফেলেছে, সেই একই কাজ মন্ত্রণালয় আবার করছে কেন? এটি কি টাকার শ্রাদ্ধ করার জন্য? স্মরণ করতে পারি, এই মন্ত্রণালয়কে চারটি কাজ করার জন্য আমরা অনুরোধ করেছিলাম। এর মাঝে বাংলা টেক্সট টু স্পিচ ও বাংলা স্পিচ টু টেক্সটও ছিল। জানা গেছে, মন্ত্রণালয় এই দুটিতে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে এটুআই যে কাজটি করে ফেলেছে সেটিতেই হাত দিয়েছে। আমি মনে করছি, তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নে সমন্বয়হীনতার এটি আরও একটি প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। এর আগে বহুবার বলেছি, তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের যে অগ্রযাত্রা তাকে ত্বরান্বিত করতে হলে অবশ্যই সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নানা অঙ্গের বিরোধ মেটানো ছাড়াও সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সাধন করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েরই দায়িত্ব। কিন্তু এটি বাস্তবতা যে, সেই কাজটি এই মন্ত্রণালয় করে না।
এই মন্ত্রণালয়ের অন্তর্দ্বন্দ্ব-কোন্দল ও সমন্বয়হীনতার অন্যসব প্রকাশ্য রূপের সাথে আরও একটি যোগ হলো। আমার মনে আছে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলে বসে আমরা যখন বাংলাভাষার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছিলাম তখন খুব স্পষ্ট করে এটুআই জানিয়েছিল, ওসিআরের কাজ এরা শেষ করে ফেলেছিল। ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়কে ২৩ লাখ টাকা দিয়ে এই কাজটি করিয়েছে এবং সেপ্টেম্বরে এরা সেটি উন্মুক্ত করতে পারবে বলে জানিয়েছিল। কমপিউটার কাউন্সিলের ইডি ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সেই সভাতে ছিলেন। ফলে এ কথা বলা যাবে না, এটুআইয়ের কাজের খবর তারা জানেন না। তেমন অবস্থায় মন্ত্রণালয় টেক্সট টু স্পিচ ও স্পিচ টু টেক্সটের ইওআই করলেই সবচেয়ে ভালো হতো। কিন্তু তা হয়নি।
আরও একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। আমরা বরাবরই বলে আসছি, বেসরকারি খাতে কোনো বাণিজ্যিক সফটওয়্যার তৈরি হয়ে থাকলে সরকারের উচিত নয় সেই সফটওয়্যারের ফ্রি বিকল্প তৈরি করা। এটুআই যে কাজটি করছে, এর ফলে প্রধানত ক্ষতিগ্রস্ত হবে সফটওয়্যার পুঁথি। কারণ, এটুআই তাদের ডেভেলপ করা সফটওয়্যার ফ্রি হিসেবে বিতরণ করবে। ফলে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতে পুঁথি তার ক্রেতা হারাবে। যদিও আমি মনে করি, অপেশাদার ফ্রি সফটওয়্যার কখনও পেশাদার বাণিজ্যিক সফটওয়্যারকে পরাস্ত করতে পারে না, তবুও নৈতিক কারণে সরকারের উচিত নয় এমন কাজ করা। এবার আমরা লক্ষ করছি, সরকার একটি নয়, দু-দুটি অপকর্ম করছে একটি বাণিজ্যিক সফটওয়্যারকে ঠেকানোর জন্য।
বিজয় বাংলা সফটওয়্যারসহ ডজনখানেক বাংলা লেখার সফটওয়্যার ডেভেলপ করার পরও সরকারের কমপিউটার কাউন্সিল একবার, নির্বাচন কমিশন আরেকবার এবং এটুআই-বাংলা একাডেমি শেষবারের মতো তিনটি ফন্ট/সফটওয়্যার বানিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা পানিতে ফেলেছে। সেই একই আচরণ আরও ভয়ঙ্করভাবে করা হচ্ছে পুঁথির সাথে।
আমি আরও মনে করি, সফটওয়্যার সমিতি বেসিস পুরো বিষয়টি নিয়ে নীরব থাকতে পারে না। বেসিসের একজন সদস্য ও নির্বাহী কমিটির পরিচালকের সাথে সরকার এভাবে হীনকর্ম করতে পারে না। বেসিস যদি এর প্রতিবাদ না করে তবে বুঝতে হবে, এটি একটি মেরুদ-হীন বাণিজ্য সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
যাহোক, এটিও জানা বর্তমানে যেভাবে সরকার পরিচালিত হয়, তাতে আমাদের কথার কোনো মূল্য বহন করবে না। ফলে এটুআই এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দুই প্রতিষ্ঠানই টিম ইঞ্জিনের কাজটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এবার আমি একটু মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত কাজ নিয়ে কিছু কারিগরি কথা বলতে চাই।
আমি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ইওআইটি দেখেছি। বস্ত্তত এটি যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। প্রথমেই যেসব ফন্ট থেকে কনভার্ট করার কথা বলা হয়েছে সেগুলো অসম্পূর্ণ। ওসিআর করার নামগুলো হলো : নিকস, নিকসবান, নিকসগ্রামীণ, নিকসলাইট, নিকসলাইটবান, সোলায়মানলিপি, কালপুরুষ, কালপুরুষ আনসি, সিয়াম রূপালী, সিয়াম রূপালী আনসি, আপনালোহিত, বাংলা, আদর্শলিপি, বেনসেন, বেনসেন হ্যান্ডরাইটিং, আকাশ, মিত্রমনো, সাগর, মুক্তিন্যারো, মুক্তি, লোহিত ও সুতন্বীএমজে। এসব ফন্টের মাঝে সুতন্বীএমজে বাংলাদেশের বাংলা প্রকাশনার শতকরা ৯৯ ভাগ কভার করে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, নিকসের যেমন করে লাইট স্টাইলের কথা বলা হয়েছে, তেমনটি সুতন্বী ফন্ট সম্পর্কে বলা হয়নি। বস্ত্তত সবগুলো ফন্টেরই বোল্ড, ইটালিক, বোল্ড ইটালিক ও স্বাভাবিক স্টাইল কনভার্ট করার কথা উল্লেখ করা উচিত ছিল। কিন্তু ফন্টের তালিকায় সেটি নেই।
ফন্টের তালিকা দেখে আমি বুঝতে পারিনি এই ওসিআরের উদ্দেশ্য কী? নিকস সরকারি ফন্ট এবং ভোটার তালিকায় বহুল ব্যবহৃত ফন্ট। সেটি সরকারি ওসিআর কনভার্ট করবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে তার বোধহয় বেশি দরকার হবে না। কারণ নিকসের ডাটা ডিজিটাল ফরম্যাটেই থাকার কথা। ভোটার তালিকার বাইরে শুধু ইউনিকোড পদ্ধতির এই ফন্টে মুদ্রিত প্রকাশনা থাকার সম্ভাবনা আমি দেখি না। তবে সরকারি অফিসে নিকস ফন্ট ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে এবং সেসব ডকুমেন্ট কনভার্ট করতে হতে পারে।
তবে একটি মজার বিষয় হলো, ২৭ বছর ধরে সরকারি অফিসে সুতন্বী ছাড়াও বিজয়ের যে ফন্টগুলো ব্যবহার হয়ে আসছে, তার কোনোটির কথাই তাদের মনে নেই। যেসব ফন্টের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো গত এক দশকের ফন্ট মাত্র। ১৯৮৭ সালের সুনন্দা, তন্বী, সাবরিনা তন্বী এসব ফন্ট ছাড়াও বিগত শতকের আশি-নববই দশকের প্রকাশনার কথা ভাবাই যায় না। পাঠ্যপুস্তকে ব্যবহৃত সাবরিনা তন্বীর একাধিক রূপের কথা মনে রাখতে হবে। মেকিন্টোসের ফন্ট ছাড়াও উইন্ডোজের নানা ধরনের ফন্ট এবং লেখনীর সারদা ফন্টটি এক সময় পাঠ্যপুস্তকে ব্যবহার হয়েছে। সরকার কি সেসব প্রকাশনার কথা ভাববে না? সরকার কি ভাববে না, দৈনিক পত্রিকাগুলোর কাস্টমাইজ করা ফন্ট ব্যবহার করার কথা। সেসব ফন্ট কি ওসিআরের জন্য বিবেচনা করতে হবে না?
একই সাথে সরকারি অফিসে অপটিমা মুনীর টাইপরাইটার ব্যবহার হয়ে আসছে স্বাধীনতার পর থেকে। সেসব ডকুমেন্ট কীভাবে কনভার্ট হবে? সীসার হরফে ছাপা অনেক প্রকাশনা আছে সরকারি অফিসে। সেসব কীভাবে কনভার্ট হবে? এতে স্পষ্টতই বোঝা যায়, ইওআই যারা তৈরি করেছে তারা নিজেরাই জানে না যে তারা কি চান? উল্লিখিত ফন্টগুলোর মাঝে নিকস ও সুতন্বী ছাড়া আর কোনো ফন্টেরই তেমন বেশি পরিমাণ ডকুমেন্ট পাওয়ার কথা নয়।
অন্যদিকে ইউওআইতে বলা হয়নি, কনভার্ট করার পর আউটপুট কিসে হবে। সম্ভবত এই মন্ত্রণালয় ভুলেই গেছে, এরা বিডিএস ১৫২০:২০১১ নামে একটি মান তৈরি করেছে। সরকারি নিয়ম অনুসারে সরকারের সব তথ্য এই মানেই থাকার কথা। আমি এখনও সরকারিভাবে এই মানে ডাটা রাখার কোনো আদেশ দিতে দেখিনি। ওসিআরের ডাটাও যদি সরকারি প্রমিতকরণ মানে না রাখা হয়, তবে সেই মান তৈরি করার কোনো কারণ আছে কি?
ফিডব্যাক : www.bijoydigital.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৪ - সেপ্টেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা