লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
গ্লোবাল আইসিটি রিপোর্ট ২০১৫-এ বাংলাদেশের অবস্থানকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হোক
গ্লোবাল আইসিটি রিপোর্ট ২০১৫-এ বাংলাদেশের অবস্থানকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হোক
নববই দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশের সরকার, নীতি-নির্ধারকসহ সাধারণ জনগণ মনে করত তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ঘটলে দেশে বেকারত্বের হার অনেক বেড়ে যাবে। প্রায় বিনা মূল্য ফাইবার অপটিক সংযোগে অফার আমরা প্রত্যহার করি। কেননা ফাইবার অপটিক কানেকটিভিটি থাকলে দেশের সব তথ্য পাচার হয়ে যাবে। মোবাইল ফোন ছিল বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া মনোপলি ব্যবসায়। ফলে মোবাইল ফোন ছিল সাধারণের নাগালের বাইরে। এ সময় কমপিউটারকে মনে করা হতো এক বিলাসবহুল পণ্যসামগ্রী হিসেবে। আর তাই কমপিউটারের ওপর আরোপ করা হয়েছিল অযৌক্তিক শুল্ক ও কর। বাজেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি অবহেলিত খাত ছিল আইসিটি। বলা যায়, সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে যখন আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় তখন থেকে। সে সময় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা আইসিটির গুরুত্ব যথার্থ উপলব্ধি করতে পেরে কমপিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও কর প্রত্যাহার করেন এবং ঘোষণা দেন বছরে ১০ হাজার প্রোগ্রামার তৈরি করার। অবশ্য সে লক্ষ্য পূরণ না হলেও বাংলাদেশে আইসিটি অঙ্গনে এক নতুন উদ্দামতা সৃষ্টি হয়। সূচিত হয় এক নতুন অধ্যায়ের।
পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার ঘোষণা দেয়, যা ‘ভিশন ২০২১’ হিসেবে পরিচিত। এ লক্ষ্য হাসিলের জন্য অর্থাৎ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া এবং ‘ভিশন ২০২১’-এর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। যেহেতু সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছে, তাই আমাদের প্রত্যাশার মাত্রা একটু বেশিই ছিল বলা যায়। কিন্তু সেটি যে রাতারাতি সম্ভব নয় তা যেমন সত্য, তেমনি সত্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া অসম্ভব কিছু নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাই সঠিক পরিকল্পনা, সততা ও কাজে আন্তরিকতা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে যে ধরনের কর্মযজ্ঞ দেখা যাওয়ার কথা তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। এর প্রমাণও রয়েছে অসংখ্য। এছাড়া গত কয়েক বছরের ‘গ্লোবাল আইসিটি রিপোর্টে’ এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘গ্লোবাল আইসিটি রিপোর্ট ২০১৫’ সংস্করণটিতে বাংলাদেশের অবস্থানের কিছুটা উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে।
গত ১৫ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়েছে ‘গ্লোবাল আইসিটি রিপোর্ট ২০১৫’ সংস্করণটি। এতে রয়েছে ১৪৩টি দেশের সার্বিক আইসিটি পরিস্থিতিসহ এসব দেশের নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স। আমরা যদি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক বিশ্ব আইসিটি রিপোর্টের সিরিজগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব এই সিরিজ রিপোর্টগুলো হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপকভিত্তিক আইসিটি রিপোর্ট। এসব রিপোর্টে প্রতিটি দেশের আইসিটির অবস্থানচিত্র স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।
এবারের এই নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। ভারত ৮৯তম ও পাকিস্তান ১১২তম স্থানে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ছিল ১১৪তম অবস্থানে, ২০১৪ সালে পাঁচ ঘর পিছিয়ে ১১৯তম স্থানে। সমালোচকদের দৃষ্টিতে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের রেডিনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থানের যে ওঠা-নামা, বাস্তবে এর কোনো মূল্য নেই। কেননা, উল্লিখিত এই তিন বছরে আমাদের অবস্থানের কোনো উন্নয়ন বা অবনতি ঘটেনি। কারণ, এই তিন বছরেই আমাদের স্কোর ছিল ৭-এর মধ্যে ৩.২। র্যা ঙ্কিংয়ের যে হেরফের লক্ষ করা যাচ্ছে, এর কারণ অন্যান্য দেশের স্কোর ভ্যালুর উন্নতি বা অবনতির কারণে। তাই ধরে নিতে হবে, উল্লিখিত এই তিন বছরে আমাদের আইসিটি রেডিনেসের উন্নতি বা অবনতি কোনোটাই ঘটেনি।
আমি মনে করি, ‘গ্লোবাল আইসিটি রিপোর্ট ২০১৫’-এর নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের ১০৯তম অবস্থানকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে না দেখে বরং ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা উচিত। আমাদের দেখতে হবে, বাংলাদেশ কোন অবস্থান থেকে আজ এ অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। আগে যেখানে প্রতিবছরই ‘গ্লোবাল আইসিটি রিপোর্টে’ বাংলাদেশের অবস্থান কয়েক ধাপ করে পিছিয়ে যেত, সেখানে এ বছর এক লাফে কয়েক ধাপ এগিয়ে আসাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে নেয়া উচিত। অবশ্য এই এগিয়ে আসার পরও সমালোচনা হতে পারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রমের ঢিলেমি বা প্রত্যাশিত মাত্রায় গতি না আসার কারণে, দুর্নীতি বা অন্যান্য অনৈতিক কাজের জন্য, যা এ লক্ষ্য হাসিলে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
‘গ্লোবাল আইসিটি রিপোর্ট ২০১৫’-এর নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম স্থানকে সম্পূর্ণরূপে নেতিবাচক বা সমালোচনার দৃষ্টিতে না দেখে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করি, যেখানে থাকবে গঠনমূলক সমালোচনা যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রমে গতি আনবে, আনবে স্বচ্ছতা, দূর করবে সব ধরনের অনৈতিক কর্মকা- ও দুর্নীতি।
তাপস পাল
মিরপুর, ঢাকা
বেশি বেশি করে চাই স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা
কমপিউটার জগৎ-এর মে ২০১৫ সংখ্যার ‘কমপিউটার জগতের খবর’ বিভাগে প্রকাশিত এক খবর ‘হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা’ আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। কেননা আমার জানা মতে, কমপিউটার জগৎ ১৯৯৫ সালে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কমপিউটার প্রোগ্রামিংয়ে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশে প্রথম কমপিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আমার মনে হয়, এরপর সরকার বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কমপিউটার প্রোগ্রামিংয়ে উৎসাহিত করতে কোনো ধরনের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে দেখা যায়নি।
আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি, যেকোনো ক্ষেত্রে শক্ত ভিত রচনা করতে হলে উদ্যোগী হতে হবে শিশু বয়েসীদেরকে লক্ষ করে। কেননা, শিশু বয়স থেকেই যদি কোনো বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া যায় বা নিয়মিত চর্চা করা হয়, তাহলে তার হবে ভিত খুব সুদৃঢ়। এ বিষয়টি কমপিউটার প্রোগ্রামিংয়ের ক্ষেত্রেও সত্য। শিশু বয়স থেকেই যদি কমপিউটার প্রোগ্রামিংয়ে উৎসাহিত করা যায়, তাহলে এরা পরিণত বয়েসে যেমন দক্ষ প্রোগ্রামার হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে, তেমনি আগামীতে দেশের দক্ষ কমপিউটার প্রোগ্রামারের চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা এ বিষয়টিকে বুঝে বা না বুঝে বরাবর এড়িয়ে যাই বা গুরুত্ব দেই না।
হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী করতে গত ৮ মে থেকে শুরু হয় জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ২০১৫। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগ দেশব্যাপী এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আমরা ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। সেই সাথে প্রত্যাশা করি, প্রতিবছর আইসিটি বিভাগসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাইস্কুল শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী করতে কমপিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে।
আবুল কালাম আজাদ
সাতমাথা, বগুড়া