লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
লুৎফুন্নেছা রহমান
মোট লেখা:১৪১
লেখা সম্পর্কিত
সঠিকভাবে স্মার্টফোন ব্যাটারির যত্ন নেয়া
স্মার্টফোন এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। সবার সাথে কানেকটেড থাকার এক উপায়। তাই স্মার্টফোন হয়ে উঠেছে আধুনিক তরুণ প্রজন্মের ক্রেজ। এই স্মার্টফোনকে বলা হয় বিস্ময়কর এক পকেট-সাইজ কমপিউটার। এটি ধারণ করে আপনার ব্যক্তিগত মেমরি ও তথ্য। এর মাধ্যমে আপনার খোশখেয়ালে সবকিছু দিয়ে পূর্ণ করা যায়।
লক্ষণীয়, স্মার্টফোনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হার্ডওয়্যার কম্পোনেন্টগুলোর মধ্যে ব্যাটারি অন্যতম। আপনার গেজেট যদি সবচেয়ে অ্যাডভ্যান্স অক্টা-কোর সিলিকন ব্রেইন, এন্ট্রি লেভেল নেটবুকের চেয়ে বেশি র্যা মসমৃদ্ধ হয় বা অত্যাধুনিক ক্যামেরাসমৃদ্ধও হয়, তাহলেও তা কোনো কাজে আসবে না, যদি ব্যাটারির চার্জ না থাকে। কিন্তু যদি ব্যাটারির জুস গলে বের হয়ে যায়, তাহলে এর সুপারপাওয়ার কোনো বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না।
স্মার্টফোনে রিমুভ্যাল ব্যাটারির ব্যবহার দিন দিন বিরল হয়ে পড়ছে, যা দিয়ে আপনি খুব সহজে যত্ন নিতে পারতেন। তবে লিথিয়াম আয়নচালিত মেশিন দিয়ে সবকিছু পরিচালনা করা খুব সহজ হয়ে পড়েছে নিচে বর্ণিত ধাপগুলো অনুসরণ করে।
ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর প্রাথমিক কাজ
ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর প্রথম নিয়ম হলো ক্যান্ডি ক্র্যাশ নামের গেম প্লে করে সম্পূর্ণ ব্যাটারির আয়ু ব্যবহার না করা এবং যখন সত্যিকার অর্থে কোনো কিছু ব্যবহার না করবেন, তখন ওয়াই-ফাই এবং জিপিএস এনাবল রেখে ঘোরাঘুরি না করা। এর ফলে আপনার ফোনে দিতে পারবেন বাড়তি কয়েক ঘণ্টা কার্যকর জীবন। এছাড়া স্মার্টফোনের যত্নে ব্যাটারি চার্জিংয়ের প্রাথমিক বাড়তি কিছু নিয়ম আছে, যা সুস্থ ব্যাটারির বেজলাইন।
ব্যাটারি-মেমরিকে প্রশিক্ষেত করে তোলা
আমাদের মতো ফোনের রয়েছে নিকেলভিত্তিক ব্যাটারি। এটি ধারণ করে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। এর জন্য দরকার বিশেষ যত্ন। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ক্ষমতা সর্বোচ্চ নিয়ে যেতে যতটুকু সম্ভব ব্যাটারিকে ৫০ (ish)-এর কাছাকাছি রাখতে চেষ্টা করুন। ১০০ শতাংশ পূর্ণ করা ভালো, তবে দীর্ঘমেয়াদে এর ফল খারাপ, যা ফোনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের জন্য মাসে অন্তত একবার স্মার্টফোনের ব্যাটারিকে পূর্ণ চার্জ করা উচিত। যদি ব্যাটারির লেংথ সম্প্রসারণ চালিয়ে যান, তাহলে এর ফলে স্মার্টফোনের কার্যকারিতা কমে যাবে, যা আমরা কেউ প্রত্যাশা করি না। আবার, অপরদিকে ফোনকে চার্জ করার জন্য প্রতি ২০ মিনিট পরপর প্লাগ করাও উচিত নয়। আপনার স্মার্টফোনকে যথাযথভাবে চার্জ করার সেরা উপায় হলো ব্যাটারির পার্সেন্টেজের ওপর নজর রাখা। যখনই দেখবেন পূর্ণ ব্যাটারি চার্জের কাছাকাছি চলে এসেছে, সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেনি এবং খুব গরম হওয়ার আগেই আনপ্লাগ করে নিন। যদি আপনার আইফোনকে এভাবে যথেষ্ট সময় নিয়ে প্রশিক্ষেত করতে পারেন এবং এ রুটিন মেনে নিয়মিত কাজ করেন, আপনার আইফোনের নাটকীয় পরিবর্তন দেখতে পারবেন।
আপনি হয়তো মাঝে-মধ্যে রিচার্জেবল ব্যাটারি এবং মেমরি ইফেক্টের কথা শুনে থাকবেন। আমরা জানি, যদি রিচার্জেবল ব্যাটারিকে পরিপূর্ণভাবে চার্জ করে আবার সম্পূর্ণভাবে চার্জশূন্য করার মাধ্যমে পূর্ণ ক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায় না, তাহলে ব্যাটারি তার কার্যকর ক্ষমতার কথা ভুলে যাবে। এখন সবকিছু ভুলে যান। এ মুহূর্তে এটি আপনার ফোনে প্রয়োগ করা যাবে না।
ব্যাটারি-মেমরি প্রয়োগ করা হয় নিকেলভিত্তিক ব্যাটারিতে। আপনার বিশ্বস্ত সাইডকিক লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির জন্য দরকার একটু ভিন্নভাবে আচরণ করা।
স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা সাধারণত মোবাইল চার্জ করার কথা ছাড়া ব্যাটারর স্থায়িত্বের কথা চিন্তাই করেত পারেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না ব্যাটারির জুস গলে বের হচ্ছে।
আপনার স্মার্টফোন ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য দরকার ব্যাটারিকে নিয়মিতভাবে ৪০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে চার্জিত রাখা। ব্যাটারিকে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে সবসময় প্লাগইন অবস্থায় রাখা থেকে বিরত থাকুন।
ঠা-া রাখা
ঘন ঘন মোবাইল চার্জ দেয়া এক খারাপ অভ্যাস। স্মার্টফোন দ্রুতগতিতে অনেক বেশি গরম হয়ে গেলে ব্যাটারির মান অনেক কমে যায় এবং এটি ব্যবহার হোক বা কোনো কিছু না করে অলসভাবে পড়ে থাকুক ব্যাটারির মান কমতেই থাকবে। স্মার্টফোনের গড় তাপমাত্রা সাধারণত ৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট ধরা হয়। সাধারণত একটি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি প্রতিবছর এর মোট ক্ষমতার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ হারায়। ৭৭ ডিগ্রি ফারেনহাইটে এ সংখ্যা লাফিয়ে ২০ শতাংশ উন্নীত হয় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে।
গ্রীষ্মকালে কোনো কোনো স্মার্টফোনকে বিশেষ করে আইফোনকে রাখতে হয় নিরাপদ টেম্পারেচার জোনে। কেননা, লিথিয়ান আয়ন ব্যাটারির সবচেয়ে বড় বা খারাপ শত্রু হলো তাপ। অ্যাপলের তথ্যমতে, আইফোন সবচেয়ে ভালো কাজ করে ৩২ ডিগ্রি থেকে ৯৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। আদর্শগতভাবে রুম টেম্পারেচারের কাছাকাছি তাপমাত্রায় স্মার্টফোন রাখা উচিত এবং আপনার অন্য সব গ্যাজেট, যেগুলো একে অপরের খুব কাছাকাছিতে আছে, সেগুলোকে পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। স্মার্টফোন, আইপ্যাড ও ল্যাপটপ ইত্যাদিকে পরস্পরের কাছ থেকে আলাদা করা হলে ডিভাইসগুলো বেশি তাপ সৃষ্টি করার পরিবর্তে অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়ে উঠবে।
যদি আপনার স্মার্টফোন অনেক বেশি গরম হয়ে যায়, তাহলে তা দ্রুত ঠা-া করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা না করে স্বাভাবিক নিয়মে তা ঠা-া হতে দিন, অন্যথায় আপনার মোবাইলে আদ্রতা জমে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
ওয়্যারলেস চার্জিং এড়িয়ে যাওয়া
ওয়্যারলেস চার্জিং ইন্ডাক্টিভ চার্জিং নামেও পরিচিত, যা ঝামেলামুক্ত ও সুবিধাজনকভাবে স্মার্টফৈানে শক্তি জোগায়। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড দুটি অবজেক্টিভের মাঝে সরাসরি সংযোগ ছাড়া এনার্জি ট্রান্সফার করার জন্য ইন্ডাক্টিভ চার্জিং ব্যবহার হয়। এটি সাধারণত একটি চার্জিং স্টেশনে সম্পন্ন করে। এখানে ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইসে এনার্জি সেন্ড করা হয় ইন্ডাক্টিভ কাপলিংয়ের মাধ্যমে, যা পরে ওই এনার্জি ব্যবহার করতে পারে ব্যাটারি চার্জ করার জন্য বা ডিভাইস রান করানোর জন্য।
ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড ইন্ডাক্টিভ ওয়্যারলেস চার্জারের ক্ষেত্রে এ ধরনের কিছু বাজে সমস্যা দেখা যায়। এটি কিছু তাপ অপচয় করে। সেই সাথে কিছু শক্তিও অপচয় করে। ওয়্যারলেস ইন্টারফেসজুড়ে পাওয়ার ট্রান্সফার করার জন্য দরকার অধিকতর জটিল সিস্টেম। ওয়্যারলেস ব্যাটারি চার্জার গতানুগতিক ওয়্যারড সিস্টেমের তুলনায় জটিল হওয়ায় এর দামও বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরাসরি দেয়ালে হুক (কমপিউটার কানেকশনের বিপরীত) করে স্মার্টফোন চার্জ দেয়াই হলো সেরা উপায়। এতে চার্জ দ্রুতগতিতে হয় এবং নিরাপদও।
কখনও চার্জশূন্য করবেন না
স্মার্টফোন ব্যাটারি স্বাভাবিক নিয়মে এক সময় তার কার্যকর ক্ষমতা হারাবে। তবে কিছু উপায় আছে, যা স্মার্টফোন ব্যাটারির এ ক্ষয়িষ্ণু প্রসেসের গতি বেশ কমিয়ে দিতে পারে। এ সমস্যার সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো ফোনে কিছু ব্যাটারি চার্জ ফ্রি রেখে দেয়া।
ধরুন, আপনি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে চান, তাহলে এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ ব্যাটারির ক্ষমতা বা চার্জ রাখা উচিত। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি আপতদৃষ্টিতে তেমনভাবে পাওয়ার বা ক্ষমতা হেমারেজ করে না যখন ব্যবহার হয় না। সাধারণত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি অব্যবহৃত অবস্থায় থাকলে প্রতি মাসে মোট ক্ষমতার ৫ থেকে ১০ শতাংশ ক্ষমতা হারায়।
যখন লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ক্ষমতা খুব কমে যায়, আক্ষরিক অর্থে জিরো পার্সেন্ট হয়ে পড়ে, তখন এগুলো মারাত্মকভাবে আনস্ট্যাবল হয়ে পড়ে এবং চার্জ দেয়াও খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় বিস্ফোরণের মতো মারাত্মক কোনো বিপর্যয় থেকে প্রতিরোধের জন্য চার্জ দিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্টফোন ব্যাটারির চার্জ কখনও ৪০ থেকে ৮০ শতাংশের নিচে নামতে দেয়া উচিত হবে না। আবার ব্যাটারির চার্জ ১০০ শতাংশ হওয়ার আগেই আনপ্লাগ করা উচিত। কেননা, অতিরিক্ত চার্জের কারণে ব্যাটারি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
খুব বেশি ঘর্মাক্ত হতে না দেয়া
খুব সহজে ব্যাটারিকে রক্ষা করা যায়, সহজে অলস করা যায়। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে যদি যথাযথভাবে যত্ন নেয়া যায়। কিছু খারাপ অভ্যাস হলো- স্মার্টফোনকে চার্জের জন্য সারারাত প্লাগইন অবস্থায় রেখে দেয়া। এর ফলে ব্যাটারি খুব গরম হয়ে উঠতে পারে, যা পরে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
স্মার্টফোন অজেয় নয়। স্মার্টফোনকে গাড়ির ড্যাশবোর্ডে বা ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার আবহওয়ায় রেখে দেয়া ঠিক হবে না। সহজ কথা, স্মার্টফোনকে অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে দূরে রাখা উচিত
ফিডব্যাক : swapan52002@yahoo.com