লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
আহমেদ ওয়াহিদ মাসুদ
মোট লেখা:৯৮
লেখা সম্পর্কিত
অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর সিসি
ড্রয়িংয়ের জন্য অ্যাডোবির জনপ্রিয় একটি পণ্য অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর। আধুনিক আর্টের জন্য যত ধরনের ড্রয়িং প্রয়োজন, তার সবই এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা যায়। ইলাস্ট্রেটরের নতুন ভার্সন অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর সিসি ১৭.১। এ লেখায় ইলাস্ট্রেটর সিসির বিভিন্ন আপডেটেড ফিচার, আগের ভার্সনের সাথে এর পার্থক্য ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
পেন্সিল টুল আপডেট : অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর সিসির সবচেয়ে বড় আপডেটগুলোর মাঝে একটি হলো এর পেন্সিল টুলের আপডেট। যদিও সবার পেন্সিল টুল ব্যবহার করার দরকার হয় না, তবুও এই টুলটির মাধ্যমে বিভিন্ন ফিগার অনেক সহজে অাঁকা যায়। আসলে পেন্সিল টুল ব্যবহারের মাধ্যমে আরও অর্গানিক, ফ্রি ফর্ম পাথ অাঁকা সম্ভব। নতুন ভার্সনে সবচেয়ে বড় অ্যাড-অনের মাঝে একটি হলো পেন্সিল টুলের মাধ্যমে যে পাথ অাঁকা হয় তার মাঝে স্ট্রেইট সেগমেন্ট যুক্ত করা। পেন্সিল টুল সিলেক্ট করে কোনো কিছু অাঁকার সময় শিফট বাটন চাপলে ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলের একটি স্ট্রেইট পাথ সেগমেন্ট তৈরি হয়ে যাবে (চিত্র-১)।
অন্যদিকে Alt বাটন চেপে অাঁকলে একটি স্ট্রেইট সেগমেন্ট তৈরি হবে, কিন্তু তা ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে সীমাবদ্ধ থাকবে না (চিত্র-২)।
টুলটির অপশনেও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। টুলস প্যানেলে পেন্সিল টুলে ডাবল ক্লিক করলে টুলটির অপশন ডায়ালগ আসবে। এখানে ফিডেলিটি অ্যাডজাস্ট করার জন্য একটি অপশন রাখা হয়েছে, আগে যেখানে দুটি ছিল। আর এই ফিডেলিটি অপশনটি এখন অন্যান্য টুল যেমন স্মুথ, পেইন্ট ব্রাশ, ব্লব ব্রাশ ইত্যাদিতেও রাখা হয়েছে।
সেগমেন্ট রিশেপ ইমপ্রম্নভমেন্টস : পাথ এডিটিংয়ের ক্ষেত্রে আরও একটি আপডেট আনা হয়েছে। আগের ভার্সনগুলোতে পাথ এডিট করা নিতান্তই কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার ছিল। যদিও কিবোর্ড শর্টকাট ব্যবহার করে তা কিছুটা সহজে করা যেত। তবে এবারের নতুন ভার্সনে বিভিন্ন টুলে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এডিটিংয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।
প্রথমে পেন টুল দিয়ে শুরু করা যাক। পেন টুল দিয়ে অাঁকার সময় মডিফায়ার কী চেপে এবং পরে ব্যবহৃত সিলেকশন টুলে সিলেক্ট করার মাধ্যমে আগের অাঁকা কোনো সেগমেন্টকে রিশেপ করা যায়। এখন পেন টুল সিলেক্ট করা অবস্থায় পয়েন্টারটিকে কোনো সিলেক্টেড পাথ সেগমেন্টের ওপর রেখে Alt বাটন চাপলে রিশেপ সেগমেন্ট কার্সর আসবে (চিত্র-৩)।
এ সময় ড্র্যাগ করার মাধ্যমে সহজেই সেগমেন্ট রিশেপ করা যাবে এবং এসময় শিফট বাটন চাপলে হ্যান্ডেলগুলো পারপেন্ডিকুলার ডিরেকশনে চলে যাবে।
এই নতুন পদ্ধতিগুলো অ্যাঙ্কর পয়েন্ট টুলের জন্যও প্রযোজ্য। যারা পুরনো ইলাস্ট্রেটর ইউজার তাদের কাছে অ্যাঙ্কর পয়েন্ট টুলটি নতুন লাগতে পারে। আসলে আগের ‘কনভার্ট অ্যাঙ্কর পয়েন্ট’ টুলটিই এখন অ্যাঙ্কর পয়েন্ট টুল।
কোনো পাথ অাঁকার পর এখন তা ডিরেক্ট সিলেকশন টুলের মাধ্যমে এডিট করা যাবে। এখন পয়েন্টারকে কোনো সিলেক্টেড পাথ সেগমেন্টের ওপর পয়েন্ট করলে রিশেপ সেগমেন্ট কার্সর চলে আসবে, যদি না পাথটি স্ট্রেইট সেগমেন্ট না হয় (চিত্র-৪)।
এভাবে সেগমেন্টটিকে ফ্রি ফর্ম হিসেবে ড্র্যাগ করা যাবে, অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট অ্যাঙ্গেলে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তবে ড্র্যাগ শুরু করার পর ইউজার যদি তা পারপেন্ডিকুলার করতে চায় অর্থাৎ ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে সীমাবদ্ধ করতে চায়, তাহলে শিফট বাটন চাপলেই হবে। আর রিশেপ পাথ সেগমেন্টের কাজ এখন টাচ ডিভাইসেও করা যাবে।
লাইভ কর্নার : নতুন ইলাস্ট্রেটরের উল্লেখযোগ্য আপডেটের মাঝে একটি হলো লাইভ কর্নার অ্যাডিশন, যার মাধ্যমে কোনো পাথের কর্নার অ্যাঙ্কর পয়েন্টকে তিনভাবে রিশেপ করা যায়। যেমন- রাউন্ডেড, ইনভার্টেড রাউন্ডেড ও চ্যামফার। ফলে কোনো রেক্ট্যাঙ্গেলের কর্নারে আর আলাদাভাবে রাউন্ড ইফেক্ট দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। চিত্র-৫-এ দেখানো হয়েছে কীভাবে একটি রেক্ট্যাঙ্গেলে লাইভ কর্নার ইফেক্ট দেয়া যায়। প্রথমে একটি রেক্ট্যাঙ্গেল অথবা স্কয়ার অাঁকতে হবে। এবার শেপটি সিলেক্ট করা অবস্থায় ডিরেক্ট সিলেকশন টুল সিলেক্ট করে পয়েন্টারটিকে শেপটির ওপরে রাখতে হবে। চিত্রে দেখা যাচ্ছে, শেপটির প্রতিটি কর্নার অ্যাঙ্কর পয়েন্টে লাইভ কর্নার পয়েন্টে একটি লাইভ কর্নার উইজেট দেখা যাচ্ছে। যেকোনো একটি উইজেটকে ড্র্যাগ করে এবার শেপের কেন্দ্রের দিকে টেনে আনতে হবে। এভাবে কর্নারকে টেনে আনলে নতুন শেপ লাল কালারের একটি পাথ দিয়ে দেখানো হবে এবং একটি কর্নারকে টেনে আনলে বাকি কর্নারগুলোও নিজে থেকে সরে আসবে (চিত্র-৬)।
যেকোনো লাইভ কর্নার উইজেটের ওপর ডাবল ক্লিক করলে কর্নার অপশনের ডায়ালগ বক্স ওপেন হবে, যেখান থেকে ইউজার বিভিন্ন অপশন সিলেক্ট করার মাধ্যমে কর্নারে বিভিন্ন ইফেক্ট অ্যাপ্লাই করতে পারবে (চিত্র-৭)।
লাইভ কর্নার উইজেটের ওপর Alt বাটন চেপে ক্লিক করলে বিভিন্ন ইফেক্ট একের পর এক সাইকেল করবে। এক বা একাধিক পাথের ওপর লাইভ কর্নার ইফেক্ট দেয়া সম্ভব। এছাড়া কন্ট্রোল প্যানেলে কর্নার লিঙ্কে ক্লিক করে কর্নার রেডিয়াস পরিবর্তন করা যাবে। কোনো লাইভ কর্নার ইফেক্ট রিমুভ করার জন্য হয় কর্নার রেডিয়াস ০-তে সেট করতে হবে অথবা সেটিকে ড্র্যাগ করে আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে।
এসভিজি আপডেট : নতুন ভার্সনের আরও একটি আপডেট হলো এসভিজি ওয়ার্কফ্লোতে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা। যেমন- ইউজার যদি সেভ অ্যাস অপশনের মাধ্যমে এসভিজি ফরম্যাটে সেভ করতে চায়, তাহলে এসভিজি সেভ অপশন ডায়ালগ বক্সে কিছু নতুন ফিচার দেখা যাবে, যার মধ্যে একটি হলো ফন্ট টাইপ অপশন এখন বাই ডিফল্ট এসভিজিতে সিলেক্ট করা থাকবে, আগে যেখানে এটি অ্যাডোবি সিইএফ হিসেবে থাকত। প্যানেলের একদম শেষে অতিরিক্ত অপশনে ক্লিক করলে ডেসিমাল অপশন পাওয়া যাবে। আগে এটির ডিফল্ট মান ছিল ৩, কিন্তু এখন এটি থাকবে ১। এসভিজি অপশন ডায়ালগ বক্সের আরেকটি নতুন অপশন হলো রেসপন্সিভ সিলেকশন। এই অপশনটি এসভিজি কনটেন্টকে সিএসএসের মাধ্যমে অটো স্কেলেবল করতে পারে। তাছাড়া কোনো এসভিজি ফাইলকে সরাসরি ইলাস্ট্রেটরে ওপেন করলে পিক্সেল গ্রিডের সাথে অবজেক্টগুলোকে সঠিকভাবে অ্যালাইন করার মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল ফিডেলিটি মেইনটেইন করা হয়।
প্লেস কমান্ড শর্টকাট : এবার ইউজারদের বহু প্রতীক্ষিত প্লেস কমান্ডের শর্টকাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শর্টকাটটি হলো Ctrl+Shift+P, যদিও এটি অ্যাডোবি ইনডিজাইনের শর্টকাট থেকে আলাদা। তবে ইউজার চাইলে নিজের পছন্দমতো শর্টকাট তৈরি করে নিতে পারে। এজন্য এডিট ট্যাবে গিয়ে কিবোর্ড শর্টকাট অপশন সিলেক্ট করতে হবে।
ইমপোর্ট এক্সপোর্ট সেটিংস : ইলাস্ট্রেটর অ্যাপ্লিকেশন ইমপোর্ট এক্সপোর্টের ক্ষেত্রে নতুন অনেক অপশন যুক্ত করা হয়েছে। যেমন- ওয়ার্কসপেসেস, ডিফল্ট প্রোফাইল, কালার সেটিং, ভ্যারিয়েবল উইডথ প্রোফাইল ইত্যাদি। যখন ইলাস্ট্রেটর সেটিং এক্সপোর্ট করা হয়, তখন একটি সেটিং প্যাকেজ জেনারেট হয়, যা একটি একক ফাইল এবং এটি শেয়ার করা যায়। ফলে ইউজার চাইলে সহজেই এক কমপিউটার থেকে আরেক কমপিউটারে ইলাস্ট্রেটরের সেটিং নিতে পারবে, অন্য কমপিউটারে ইলাস্ট্রেটরের কপি আলাদা হলেও এভাবে সেটিং ইম্পোর্ট করা যাবে। সেটিং এক্সপোর্ট করার জন্য এডিট ট্যাবে গিয়ে মাই সেটিংস®এক্সপোর্ট সেটিংস অপশন সিলেক্ট করতে হবে। এরপর ইউজার একটি লোকেশন দিয়ে দিলে সেখানে সেটিং প্যাকেজ ফাইল জেনারেট হবে, যা পরে অন্য কমপিউটারে নেয়া যাবে (কপি, ই-মেইল, এফটিপি ইত্যাদির মাধ্যমে)। আর সেটিং ইমপোর্ট করা একেবারেই সহজ। এজন্য এডিট>মাই সেটিংস®ইমপোর্ট সেটিংস অপশন সিলেক্ট করতে হবে। একটি ওয়ার্নিং ডায়ালগ বক্স আসবে ইলাস্ট্রেটর রিস্টার্ট করার জন্য, রিস্টার্ট করলেই নতুন সেটিং অ্যাপ্লাই হবে।
পারস্পেকটিভ ড্রয়িং : আগের ইলাস্ট্রেটরের ভার্সনগুলোতে পারস্পেকটিভ গ্রিড পরিবর্তন করলে তা ওই গ্রিডের সাথের আর্টওয়ার্ককে পরিবর্তন করতে পারত না। কিন্তু এখন ইউজার যদি স্টেশন পয়েন্ট লক করে (ভিউষ্পারস্পেকটিভ গ্রিড®লক স্টেশন পয়েন্ট), তারপর একটি ভ্যানিশিং পয়েন্ট সিলেক্ট করে এবং তারপর পারস্পেকটিভ গ্রিড পরিবর্তন করে তাহলে আর্টওয়ার্কটিও তার সাথে সাথে সরে যাবে (চিত্র-৮)।
অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটরের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শেপ, আর্টওয়ার্ক, ফন্ট ইত্যাদি ড্রয়িং করা সম্ভব। আধুনিক ড্রয়িংয়ের জন্য যত ধরনের উপকরণ ও ফিচার প্রয়োজন, তার প্রায় সবই এখানে পাওয়া যায়
ফিডব্যাক : wahid_cseaust@yahoo.com