লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
এহতেশাম উদ্দিন মাসুম
মোট লেখা:১
লেখা সম্পর্কিত
বদলে গেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অফিস ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সেবায় এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন
সরকার চায় সীমিত সম্পদ ও সুযোগের মধ্যেও অফিস ব্যবস্থাপনাকে আইসিটিসমৃদ্ধ করে সর্বোত্তর নাগরিক সেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন যথা সচেতন। সেই সূত্রে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেয়া নানা উদ্যোগের ফলে অফিস ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সেবায় এসেছে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন। এরই ওপর আলোকপাতের প্রয়াস রয়েছে মোহাম্মদ এহতেশাম উদ্দিন-এর এ লেখায়।
ন্যাশনাল ই-সার্ভিস সিস্টেম : অনলাইন নথি ব্যবস্থাপনা
২০১৪ সালের মার্চের শেষ দিকে সারাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ন্যাশনাল ই-সার্ভিস সিস্টেম বা এনইএসএস কার্যক্রমে চট্টগ্রামের অবস্থান ছিল ৬২তম। এই হতাশাজনক অবস্থানের পেছনে কারণ ছিল ইন্টারনেটের ধীরগতি, কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব আর কর্মচারীদের নিস্পৃহ উদাসীন মনোভাব। এছাড়া এ কার্যালয়ের কমপিউটারগুলো ছিল আধুনিক প্রযুক্তির মাপকাঠিতে সেকেলে। মে ২০১৪ থেকে এ কার্যালয়ের আইসিটি শাখাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। পুরনো-নষ্ট কমপিউটারগুলো যুগোপযোগী করা হয়। বিভিন্ন ধাপে আরও ২২টি কমপিউটার ও দুটি ল্যাপটপ কেনা হয় সরকারি বরাদ্দের বাইরে।
এখানে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ইন্টারনেট সংযোগ ও এর ধীর গতি। বিভিন্ন সময় এ কার্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে আগে স্থাপিত ল্যান (LAN) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সারা অফিসের সব কয়টি কক্ষে আবার নতুন করে ল্যান সংযোগ দেয়া হয়। কার্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রাউটার বসিয়ে পুরো অফিসকে ওয়াই-ফাইয়ের আওতায় আনা হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এবং জেলা প্রশাসনের নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন প্যাকেজে ১৩ এমবিপিএস ইন্টারনেট সংযোগ নেয়া হয়। ১১৬টি কমপিউটার ও ২৩টি ল্যাপটপের সমন্বয়ে এ কার্যালয়কে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্ত্তত করা হয়েছে। বদলিজনিত কারণে অনেক প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যত্র চলে যাওয়ায় প্রাথমিক প্রশিক্ষণের পথটা খুব মসৃণ ছিল না। কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের TOT প্রশিক্ষণ ছিল, তারাও বিভিন্ন সময় বদলি হয়ে গেছেন। পরে নতুনভাবে কর্মকর্তাদের TOT প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং তাদের মাধ্যমে প্রথম ধাপে জেলা প্রশাসনে নিযুক্ত অন্য কর্মকর্তাদের ও দ্বিতীয় ধাপে কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এনইএসএস এবং ডিজিটাল নথি নম্বর ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে পক্ষব্যাপী এই প্রশিক্ষণ ছিল ফলপ্রসূ। যার ফলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বর্তমানে এনইএসএসে প্রথম স্থানে অবস্থান করছে। এ কার্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আইসিটিবিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে প্রযুক্তিবান্ধব ও দক্ষ করে তোলা হয়েছে। পুরনো আমলের নথি ব্যাবস্থাপনা থেকে সরে এসে ডিজিটাল নথি ব্যবস্থাপনার সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন এ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে অফিসপ্রধান থেকে শুরু করে অফিস সহকারী পর্যন্ত সবাই ফাইল-নথির অবস্থান, মুভমেন্ট এবং বিষয়বস্ত্ত বুঝতে পারেন। কোন ডেস্কে কতটি নথি কতদিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে তা প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করা হয়। ফলে কাজের জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা বেড়েছে। সার্বিকভাবে যা সুশাসন নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে।
জেলা ই-সেবা কেন্দ্র ও ফ্রন্টডেস্ক : নাগরিক সেবা নিতে যুগোপযোগী উদ্ভাবন
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সব সেবা স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে ও ঝামেলাহীনভাবে দেয়ার লক্ষ্যে ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর দেশের সব জেলার সাথে চট্টগ্রামে জেলা ই-সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। জেলা ই-সেবা কেন্দ্রে রয়েছে সুদৃশ্য আধুনিক ফ্রনটডেস্ক, যেখানে সব নাগরিক ও দাফতরিক আবেদন সরাসরি, ডাকযোগে কিংবা ই-মেইলে নেয়া হয়। ২০১৩ সালের ১ জুলাই জেলা ই-সেবা কেন্দ্রটি জাতীয় ই-সেবা সিস্টেম তথা এনইএসএস দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু জেলা ই-সেবা কেন্দ্র থেকে জনগণ তাদের কাঙিক্ষত সেবা নিতে পারতেন না। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার কার্যালয়ে জেলা ই-সেবা কেন্দ্র ও ফ্রন্টডেস্ককে নতুন আঙ্গিকে ও বড় পরিসরে সাজানোয় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও ওয়াই-ফাইয়ের সুবিধা এ কেন্দ্রকে করেছে গতিময় ও অত্যাধুনিক। এ কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনের অবস্থানের কারণে সেবা পেতে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয় না।
জেলা ই-সেবা কেন্দ্রের অনলাইনভিত্তিক সেবা : ০১. নাগরিক আবেদন গ্রহণ; ০২. দাফতরিক আবেদন গ্রহণ; ০৩. সিএসআরএসএসএ দিয়ারা, পেটি, বিএস খতিয়ান ও নকশাসহ নানা সরকারি দলিলের সহিমোহরী নকল সরবরাহ; ০৪. জনস্বার্থে ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ বিতরণের তথ্যাদি; ০৫. বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের তথ্যাদি; ০৬. হজবিষয়ক প্রয়োজনীয় সহায়তা; ০৭. বিভিন্ন ব্যবসায় বাণিজ্যিক লাইসেন্স প্রদান; ০৮. আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স সংক্রান্ত সহায়তা দেয়া; ০৯. উপজেলাধীন সায়রাত মহাল, বদ্ধ জলমহাল ও বালুমহাল ইজারা সংক্রান্ত তথ্যাদি; ১০. কৃষি, অকৃষি, হাট-বাজারের খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত সংক্রান্ত তথ্যাদি ও ফরম; ১১. হাট-বাজার পেরিফেরিকরণ, হাট-বাজারের খাস জমি চিহ্নিতকরণ, হাট-বাজার অভ্যন্তরস্থ খাস জমি বন্দোবস্ত/বণ্টন সংক্রান্ত তথ্যাদি ও ফরম; ১২. অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, লিজ দেয়া ও নবায়ন সংক্রান্ত তথ্যাদি; ১৩. বিদেশগামী কর্মীদেরকে উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া; ১৪. বিদেশে মৃত্যুবরণকারীদের লাশ আনা এবং ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে সহায়তা দেয়া; ১৫. উপজাতীয়দের উন্নয়ন ও শিশু অধিকার বিষয়ক তথ্য দেয়া; ১৬. প্রাথমিক শিক্ষা ও স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পরিচালনায় বিভিন্ন সহায়তা; ১৭. ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রাপ্তি এবং ১৮. হটলাইনের মাধ্যমে যেকেউ যেকোনো সময়ে তার প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পেয়ে থাকে।
ওয়েব পোর্টাল :
স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ
২০১৪ সালের মার্চের শেষভাগে জেলা ওয়েব পোর্টালে তথ্য সন্নিবেশের শতকরা হার ছিল ৮৩ ভাগ, উপজেলা পর্যায়ে ৪০ ভাগ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ৩০ ভাগ। এপ্রিলের শুরু থেকে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পোর্টাল হালনাগাদ করার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে জোর তৎপরতা শুরু হয়। উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে উপজেলা টেকনিশিয়ান এবং ইউআইএসসি উদ্যোক্তাদের ওয়েব পোর্টাল বিষয়ক দুই দিনব্যাপী বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রত্যেকটি সরকারি অফিসকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এসে নিজ নিজ তথ্য হালনাগাদ করার জন্য তাগিদ দেয়া হয় এবং নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। ফলে চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলা ও ১৯৫টি ইউনিয়ন ওয়েব পোর্টালের নির্ভুলতা বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০০ ও ৯৮ শতাংশ।
ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে সেবা দেয়া সম্পূর্ণভাবেই প্রযুক্তিভিত্তিক প্রক্রিয়া। পোর্টালে সন্নিবেশিত তথ্য-উপাত্ত থেকে জনসাধারণ তার কাঙিক্ষত তথ্যটি পেতে পারেন। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সব ওয়েব পোর্টালে সব তথ্য সন্নিবেশিত হওয়ার ফলে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। বাংলাদেশের যেকোনো জেলার তুলনায় সঠিকতার মান যাচাইয়ে চট্টগ্রাম জেলা ওয়েব পোর্টাল বস্ত্তনিষ্ঠ তথ্য প্রদর্শন করে যাচ্ছে।
সাধারণ মানুষ অবাধে যেকোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন এবং তথ্য অধিকার আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের সেবা সুনিশ্চিত হচ্ছে। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সব ওয়েব পোর্টালে সব তথ্য সন্নিবেশিত হওয়ার ফলে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। তথ্য অধিকার আইনের স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ পোর্টালের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হচ্ছে।
ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা : ভার্চুয়াল অফিস নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সম্পূর্ণভাবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। বর্তমান জেলা প্রশাসকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ কার্যালয়ের ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১৬টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ফলে অযাচিত মানুষের ভিড় ও দালালের দৌরাত্ম্য কমেছে। এ কার্যালয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনার লক্ষ্যে এবং ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে সিসি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্থাপিত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থানীয় আইএসপির সহায়তায় জেলা প্রশাসক তার নিজস্ব বাংলো অফিস, বাসা ও অফিসের নিরাপত্তা এবং অন্যান্য বিষয় এই ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে তদারকি করে থাকেন।
ডিজিটাল বায়োমেট্রিক্স অ্যাটেনডেন্স
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স সিস্টেমের আওতাভুক্ত। প্রতিদিন সব কর্মকর্তা-কর্মচারী যথাক্রমে পাঞ্চ কার্ড ও থাম্ব ইম্প্রেশনের মাধ্যমে সকাল ৯টার মধ্যে অফিসে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। এটি সম্পূর্ণভাবে প্রযুক্তিনির্ভর একটি ব্যবস্থা। ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম যন্ত্রটির মাধ্যমে পাঞ্চ কার্ড ও থাম্ব ইম্প্রেশনের প্রয়োগ ঘটিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন।
এ পরিবর্তনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় একটি সুশৃঙ্খল অফিসে পরিণত হয়েছে। সবার সঠিক সময়ে উপস্থিতিতে কাজের গতি ও নাগরিক সেবার মান বেড়েছে।
ডিজিটাল সিভিল স্যুট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন দেওয়ানি আদালতে চলমান মামলাগুলোর ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষ ও গতিশীল করার জন্য বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের সহায়তায় চট্টগ্রাম জেলাসহ দেশের সব জেলায় এ সফটওয়্যারটি ২০১১ সালের নভেম্বরে একযোগে চালু হয়। অনলাইনে এন্ট্রি পদ্ধতি ২০১১ সাল থেকে চালু হলেও মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে যায়। এটি আবার বর্তমান জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ২০১৪ সাল থেকে নতুন করে চালু হয় এবং নিয়মিত তথ্য আপডেট করা হয়। এ পদ্ধতিটি চালু হওয়ার পর থেকে অন্যান্য জেলার মতো এ জেলায়ও বিভিন্ন আদালতে (সদর এবং উপজেলায় অবস্থিত আদালত) চলমান দেওয়ানি মামলাগুলোর সব তথ্যাদি রেজিস্টারে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি ডিজিটাল সিভিল স্যুট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অনলাইনে মামলাগুলো লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। ডিজিটাল সিভিল স্যুট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে দেওয়ানি মামলা রেকর্ড করা হয়। ঠিকানা : www.csmminland .gov.bd।
বর্তমানে উক্ত সফটওয়্যারের মাধ্যমে ৮ হাজারের মতো দেওয়ানি মামলা এন্ট্রি দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় সরকারি স্বার্থ জড়িত/জড়িত নেই এ ধরনের প্রায় বিশ হাজারের মতো মামলা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব মামলা অনলাইনে এন্ট্রি করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিটি চালু থাকলে এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে সরকারি মামলাগুলোর তদারকিতে আরও গতিশীলতা আসবে। এর মাধ্যমে সরকারবিরোধী মামলাগুলো রেকর্ড হচ্ছে। ফলে সারাদেশের মামলাগুলো এই সফটওয়্যারে সংরক্ষিত হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে বসে সব মামলা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। মামলার মধ্যে যে বিষয়গুলো সংরক্ষিত হচ্ছে তা হলো- মামলা নম্বর, মামলার ধরন, দায়েরের তারিখ, আদালত, বাদী, বিবাদী, তফসিল, জিপি/এজিপি। মামলাগুলো অপারেটর দিয়ে এন্ট্রি করার পর সংশ্লিষ্ট সেকশন অফিসার অনুমোদন দেন। পরে আবার চাইলে মামলাগুলো সংশোধন করা যায়। এটি ব্যবহারের জন্য আইডি ও পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হয়।
এ সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে কোন মামলা কী অবস্থায় আছে, তা জানা যাচ্ছে এবং মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে। এর ফলে কাজে গতিশীলতা এসেছে এবং জনগণ উপকৃত হচ্ছেন। এ প্রক্রিয়ায় সব মামলা নিবন্ধিত করা হচ্ছে এবং অচিরেই শতভাগ সফলতার মাধ্যমে জনসেবা নিশ্চিত করা যাবে। এতে সরকারি সম্পদ রক্ষাসহ ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ তাদের কাঙিক্ষত মামলা সংক্রান্ত সেবা দ্রুত সময়ে পাবেন।
ভূমি অফিস
দ্রুত ও স্বচ্ছতার সাথে নাগরিক সেবা দেয়ার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সদর সার্কেল ভূমি অফিসকে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজড করা হয়, যা বাংলাদেশে প্রথম নজির। সদর সার্কেল ভূমি অফিসে প্রত্যেকটি নামজারি মামলা অনুমোদনের প্রতিটি পর্যায়ে সময় নির্ধারিতকরণ এবং তদানুযায়ী একটি ডাটাবেজ সংরক্ষণ, অফিস ডিজিটালাইজেশন, ইন্টারনেট সংযোগ, মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদনকারীর নিজের মোবাইলে স্ট্যাটাস আপডেট জানানো এবং ওয়েবসাইটেও হালনাগাদ তথ্য দেয়ার জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রযুক্তির প্রয়োগে সেবা দেয়া
০১. পুশ পুল ব্র্যান্ডেড এসএমএসের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবা : ‘এসিল্যান্ড সদর’ এই ব্র্যান্ড নামে নামজারির আবেদনকারীর নিজ মোবাইল নম্বরে নামজারির প্রতিটি ধাপে এসএমএসের মাধ্যমে নোটিফিকেশন মেসেজ চলে যাবে। নামজারির প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করার জন্য নির্ধারিত সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে নামজারির কার্যক্রম শেষ হয়।
০২. ওয়েবসাইটেও নামজারির সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে : সদর সার্কেল ভূমি অফিসে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। নামজারির মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে www.acland-sadarctg.gov.bd ওয়েবসাইটে ক্লিক করুন। এ অংশে গিয়ে মামলা নম্বর ও আবেদনকারীর নিজস্ব মোবাইল নম্বর দিলে সংশ্লিষ্ট নামজারির নথিটি কোন পর্যায়ে রয়েছে তা দেখতে পারেন।
০৩. ওয়াই-ফাই জোন স্থাপন : নামজারি মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য যেসব আবেদনকারী সদর সার্কেল ভূমি অফিসে আসেন, তারা এই অফিসের ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সুবিধা নিয়ে থাকেন। কোনো কারণে ব্যর্থ হলে হেল্পডেস্ক কর্মচারীর মাধ্যমেও এই সুবিধা নেয়া যায়।
০৪. হটলাইন সেবা : সদর সার্কেল ভূমি অফিস থেকে পরামর্শ, মামলার তথ্য ও সেবা পদ্ধতি সম্পর্কে জানার জন্য সেবাপ্রত্যাশী জনগণকে যাতে সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে অফিসে না এসে ঘরে বসেই ছোটখাটো সমস্যার সমাধান ও তথ্য জানা যায় সেজন্য একটি হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। নম্বরটি হলো ০১৭৭০-৭৭৭০০০। আপনার কলটি ফ্রন্টডেস্কে কর্মরত কর্মচারীরা রিসিভ করে প্রত্যাশিত সেবা দিতে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে থাকেন। কোনো কারণে ব্যর্থ হলে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সাথে সরাসরি ০১৭৩৩-৩৩৪৩৬০ নম্বরেও যোগাযোগ করা হয়ে থাকে।
দ্রুত ও স্বচ্ছতার সাথে নাগরিক সেবা দেয়ার লক্ষ্যে সদর সার্কেল ভূমি অফিসকে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজড করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলার চান্দগাঁও সার্কেল ভূমি অফিস ও আগ্রাবাদ সার্কেল ভূমি অফিসের ডিজিটালাইজেশনের কাজ দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরের তিনটি সার্কেল ভূমি অফিসের ডিজিটালাইজেশনের কাজ শেষ হলে ক্রমান্বয়ে জেলার সব উপজেলা ভূমি অফিসকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
ভূমি অফিস ডিজিটালাইজেশনের ফলে দালালদের দৌরাত্ম্য কমেছে। মানুষ সরাসরি সেবা পাচ্ছেন। তাই মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশনের ফলে তথ্য পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় সব রেকর্ড স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে, যা ভূমি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। ফ্রন্ট ডেস্ক ও হটলাইনে সরাসরি আবেদনের সুযোগ থাকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে।
ইউডিসি : জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানো
২০১১ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে একযোগে সব কয়টি ইউনিয়নে ইউআইএসসি (বর্তমানে ইউডিসি) উদ্বোধন করেন। মূলত প্রযুক্তিকে গ্রামে-গঞ্জে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়ার অভিপ্রায়েই ইউডিসির জন্ম। সেই সময় থেকে চট্টগ্রামে ২১৩টি ইউডিসির যাত্রা শুরু। একজন পুরুষ ও একজন নারী পরিচালকের সমন্বয়ে গঠিত এই ইউডিসিগুলো অনলাইন জন্মনিবন্ধন, অনলাইন প্রচার আবেদন, বিদেশ গমনেচ্ছুদের রেজিস্ট্রেশনসহ নানা সেবা দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের অর্থ ও সময় সাশ্রয় করছে।
ইউনিয়ন পর্যায়ে অনলাইনভিত্তিক সেবা দিতে ইউডিসিগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া ইউনিয়ন ওয়েব পোর্টাল হালনাগাদকরণে ইউডিসি পরিচালকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যেসব ইউডিসিতে বিদ্যুতের ঘাটতি আছে, সরকারের সহায়তায় সেসব ইউডিসিতে ইতোমধ্যে সোলার প্যানেল সরবরাহ করা হয়েছে। তাদের দেয়া হয়েছে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ওপর তিন দিন ও পাঁচ দিন মেয়াদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ। তাদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য জেলা প্রশাসনের নিজস্ব অর্থায়নে একাধিকবার দেয়া হয়েছে সার্ভিস বিষয়ক নানা প্রশিক্ষণ।
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম : অনলাইন ক্লাস ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নে শিক্ষা ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সমন্বয় করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার এ কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করেছে। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ফলে শিক্ষার্থীরা সুন্দর ও সুশৃঙ্খল এবং গভীরভাবে পঠিত বিষয়টি জানতে পারছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মূল ভিত্তি হলো প্রযুক্তি প্রয়োগে শিক্ষাদান। অর্থাৎ প্রচলিত ক্লাসরুম ব্যবস্থাপনার সাথে প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করা। শিক্ষকরা নিয়মিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাদান করছেন। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের একঘেয়েমি ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে খেলার ছলে এবং প্রযুক্তির সাথে মিলে-মিশে তাদের শিখন প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলার ৬৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং মেট্রোপলিটন এলাকার ২০৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শিগগিরই চট্টগ্রাম জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে ৮৩৫টি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষাদানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কি না, তা নিয়মিত তদারকি করা হয়। এতে করে শিক্ষকরা নিয়মিত তাদের প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষাদান করছেন। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের একঘেয়েমি ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে খেলার ছলে এবং প্রযুক্তির সাথে মিলে-মিশে তাদের শিখন প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহারে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানের গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে এবং একটি প্রযুক্তিনির্ভর ও বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়ে উঠছে