• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > অধ্যাপক কাদেরবিহীন এক যুগ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - জুলাই
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রতিবেদন
তথ্যসূত্র:
স্মরণ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
অধ্যাপক কাদেরবিহীন এক যুগ
পেছনে ফেলে আসা ৩ জুলাই ২০০৩। আর আজকের ৩ জুলাই ২০১৫। মাঝখানে গোটা বারো বছর, এক যুগ। এই এক যুগ কমপিউটার জগৎ পরিবারকে পথ চলতে হয়েছে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের নেপথ্যচারী অগ্রদূত অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদেরবিহীনভাবে। কারণ, মহান আলস্নাহ পাকের ঘোষিত অমোঘ নিয়মে আমরা থাকে হারিয়েছি ২০০৩ সালের ৩ জুলাইয়ে। কমপিউটার জগৎ পরিবারের প্রতিটি সদস্য অনুভব করি, বেদনায় সঙ্কুচিত হই তার এই অনুপস্থিতিতে। কারণ, তার জীবদ্দশায় তিনি কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিটি পাতা যে যত্নের ছোঁয়ায় প্রতিমাসে নিয়মিত বের করতেন, সে ছোঁয়া এখন অনুপস্থিত। এর ফলে আমরা আজকের দিনে তার অনুপস্থিতিতে শত সচেতনতার মাঝেও কমপিউটার জগৎ প্রকাশনায় তার যত্নলালিত সে ছোঁয়ার অভাব অনুভব করি বরাবর। মনে হয় তার অভাব যেনো পূরণ হওয়ার নয়। তবুও আমরা এই এক যুগ কমপিউটার জগৎ প্রকাশ করে আসছি তারই রেখে যাওয়া শিক্ষা ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়ার মূলমন্ত্র ধারণ করে। তার শেখানো শিক্ষা ও আদর্শের তাগিদ ছিল- আমাদের কথা বলতে হবে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছানোর লক্ষ্যকে সামনে রেখে। এজন্য কমপিউটার জগৎ-কে কেন্দ্র করেই গড়ে তুলতে হবে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলন। আর কমপিউটার জগৎ হবে এই আন্দোলনের হাতিয়ার। আমরা বারবার আমাদের একটি বিশ্বাসের কথা জানাতে গিয়ে বলে থাকি- একটি পত্রিকা হতে পারে একটি আন্দোলনের হাতিয়ার। আর এই আন্দোলনকে সঠিক পথে ধাবিত করতে হলে নেতিবাচক সাংবাদিকতার কোনো অবকাশ নেই। অবকাশ নেই সরকার বা সরকারবিরোধী অন্য কোনো মহলের লেজুড়বৃত্তি করার। শুধু বিরোধিতার কারণেই বিরোধিতা করার সুযোগও ইতিবাচক সাংবাদিকতায় নেই।
আরেকটি বিষয় আমাদের নিয়মিত পাঠকবর্গ নিশ্চয়ই জানেন, আমরা শুরু থেকে উপলব্ধি করেছিলাম তথ্যপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে কমপিউটার জগৎ-কে প্রচলিত সাংবাদিকতার অর্গল ভেঙে জন্ম দিতে হবে নতুন ধারার সাংবাদিকতার। এই উপলব্ধিকে সামনে রেখে আমরা আমাদের কর্মকা-কে নিছক পত্রিকা প্রকাশের মধ্যেই সীমিত রাখিনি। নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশের পাশাপাশি আমরা সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালা আয়োজন চালিয়ে গেছি বরাবর। আমরা যথাসময়ে যথাতাগিদটি দিতে ভুলিনি আমাদের নীতি-নির্ধারকদের। কখনও নীতি-নির্ধারকদের সাথে দেখা করে, কখনও সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এসব তাগিদ আমাদের জানাতে হয়েছে। আমরা এ খাতে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন, তাদের জাতির সামনে উপস্থাপন ও সম্মাননা প্রদান করে আসছি অকৃত্রিম আন্তরিকতায়। আমরা আয়োজন করেছি প্রোগ্রামিংসহ তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট নানা প্রতিযোগিতার। আয়োজন করেছি দেশের প্রথম কমপিউটার মেলা। আমরা আয়োজন করেছি এবং করছি অসংখ্য তথ্যপ্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট মেলা। অনেক ক্ষেত্রে আমরা পালন করতে পেরেছি অগ্রদূতের ভূমিকা। আমরা এখনও এসব কর্মকা- অব্যাহত রেখেছি। আমাদের সম্মানিত পাঠকমাত্রই জানেন, আগামী ১১-১২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো লন্ডনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউকে-বাংলাদেশ ই-কমার্স ফেয়ার। বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশন, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক ও কমপিউটার জগৎ-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে এ মেলা। এর আগে কমপিউটার জগৎ বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে প্রথমবারের মতো আয়োজন করে ই-কমার্স মেলা। পত্রিকা প্রকাশনার বাইরে এ ধরনের আন্দোলনমুখী কর্মকা- কমপিউটার জগৎ নতুন করে সূচনা করেনি, মূলত মরহুম আবদুল কাদেরই এ ধরনের বহুমুখী কর্মতৎপরতার সূচনা করে গিয়েছিলেন। আমরা তা অব্যাহত রাখছি মাত্র। ইনশালস্নাহ, আগামী দিনেও তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রম্নতি রইল সম্মানিত পাঠকবর্গের কাছে।
মরহুম আবদুল কাদের ছিলেন সত্যিকার অর্থেই একজন প্রচারবিমুখ মানুষ। ফলে সামগ্রিকভাবে তিনি জাতির কাছে যতটুকু পরিচিত হওয়ার কথা ততটুকু পরিচিতি তার নেই। আমরা সবাই স্বীকার করি, এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনে তার ভূমিকা অসমান্তরাল। তথ্যপ্রযুক্তি খাত-সংশ্লিষ্ট মানুষ তাকে অভিহিত করেন এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক অভিধায়। কিন্তু আমরা জাতীয়ভাবে তার এই অবদানের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি জানাতে পারিনি। একই সাথে এরই মধ্যে তার ইমেত্মকালের পর পুরো একটি যুগ পেরিয়ে গেছে। ফলে আজকের প্রজন্মের কাছে আবদুল কাদেরের স্মৃতি যেনো ক্ষয়ে যেতে চলেছে। হয়তো আগামী প্রজন্মের কাছে তার কোনো নাম-পরিচয়ের অবশেষ থাকবে না। তার ইমেত্মকালোত্তর এক যুগ সময়ে বিভিন্ন সুধীজন তাদের লেখালেখি ও বক্তব্যের মাধ্যমে তার অবদানের স্বীকৃতি জাতীয়ভাবে ঘোষণার তাগিদ দিলেও এর বাস্তবায়ন আজও হয়নি। আসলে এর ফলে এটিই প্রমাণ হচ্ছে, আমরা সত্যিকারের গুণীজনদের সম্মান জানাতে কুণ্ঠিত। এ প্রবণতা যেকোনো জাতির জন্য আত্মহননেরই নামান্তর। এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না বলেই আমরা বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার মতো একটি জাতিতে পরিণত হতে পারছি না। কবে এ প্রবণতার অবসান হবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। আমাদের অনেক তরুণ পাঠকেরই হয়তো মরহুম আবদুল কাদেরের সাথে তেমন কোনো পরিচয়সূত্র নেই। তাদের উদ্দেশে তার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য উপস্থাপনের তাগিদ অনুভব করছি।
অধ্যাপক আবদুল কাদেরের জন্ম ঢাকার লালবাগ, নবাবগঞ্জে, ১৯৪৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। মৃত্যু ২০০৩ সালের ৩ জুলাই। বাবা মরহুম আবদুস সালাম ছিলেন লালবাগের স্থায়ী অধিবাসী। মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান ছিলেন তিনি। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। পড়াশোনা ঢাকার লালবাগের নবাবগঞ্জ, নবাববাগিচা প্রাইমারি স্কুল, ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে এমএসসি ডিগ্রি নেন। তিনি কর্মজীবনে অংশ নেন বেশ কিছু প্রশিক্ষণ কোর্সে : ঢাকার বিএমডিসি থেকে পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট কোর্স, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বব্যাংকের কমপিউটার ম্যানেজমেন্ট কোর্স, ঢাকার সাভারের বিপিএটিসি থেকে উন্নয়ন প্রশাসন কোর্স। এছাড়া নিয়েছেন কমপিউটার-বিষয়ক ২০টি অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের ওপর প্রশিক্ষণ। শিখেছিলেন বেশ কয়েকটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজও।
কর্মজীবন শুরু ১৯৭২ সালের ১ অক্টোবরে, ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে। ১৯৯৫ সালের ২ আগস্ট পর্যন্ত তাকে দায়িত্ব পালন করতে হয় প্রভাষক হিসেবে। ১৯৮৪ সালের ৩১ নভেম্বর কলেজটি সরকারি করা হয়। ১৯৯২ সালের ২ আগস্ট পদোন্নতি পেয়ে হন সহকারী অধ্যাপক। ১৯৯৫ সালের ২ আগস্ট তাকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে বদলি করা হয় পটুয়াখালী সরকারি কলেছে। সেখানে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৫ সালের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর দায়িত্ব পান নবায়ন ও উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-পরিচালক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের কমপিউটার সেলের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার। সেখানে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৫ সালের ২০ নভেম্বর থেকে ১৯৯৭ সালের ২ জুলাই পর্যন্ত সময়ে। এরপর দায়িত্ব নেন একই অধিদফতরের নির্বাচিত সরকারি কলেজে কমপিউটার কোর্স চালুকরণ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে। ২০০০ সালের ২২ জুলাই পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এরপর কিছুদিন ছুটি কাটিয়ে আবার কাজে যোগ দিয়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর কয়েক মাস আগে তিনি ৩ জুলাই ইমেত্মকাল করেন।
কিন্তু তার এসব কর্মকা--র সবকিছুকে ছাপিয়ে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় হয়ে উঠেছিল কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ হিসেবে। ১৯৯১ সালের মে মাসে তিনি মাসিক কমপিউটার জগৎ প্রকাশনা শুরু করেন মূলত তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নকল্প মাথায় রেখে। ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ সেস্নাগান নিয়ে তিনি শুরু করেন এই স্বপ্নকল্প পূরণের অভিযাত্রা। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি বাংলাদেশে সূচনা করেন অন্যরকম এক তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের, যে আন্দোলনের তিনি ছিলেন মধ্যমণি। আর সেই সূত্রেই তার হয়ে ওঠা এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - জুলাই সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস