• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ডিজিটাল প্রতারণা : বাঁচতে হলে জানতে হবে
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মদ জাবেদ মোর্শেদ চৌধুরী
মোট লেখা:৫১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সিকিউরিটি
তথ্যসূত্র:
সিকিউরিটি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ডিজিটাল প্রতারণা : বাঁচতে হলে জানতে হবে
গতকাল টিভিতে দেখলাম, এক প্রেমিক যুগল পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। কী ছিল অপরাধ?
এরা বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট (বিক্রয় ডটকম, এখানেই ডটকম, ওএলএক্স ডটকম ইত্যাদি) থেকে ভালো মানের ইলেকট্রনিক্স জিনিস অর্ডার দিত। তারপর এরা কোনো একটা অফিসে ১০-১৫ মিনিটের জন্য অ্যাক্সেস নিত, বিক্রেতাকে সেখানে আসতে বলত। তখন মেয়েটি পণ্যটি এমডিকে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে বলে নিয়ে গিয়ে অফিস থেকে উধাও।
ইদানীং এই ধরনের ডিজিটাল প্রতারণার হার বেড়েই যাচ্ছে। আসুন, দেখি কী কী ধরনে চলতে পারে এই প্রতারণা :
০১. বিক্রয় ডটকমে একটি অ্যাড দেখল ফারহান, ম্যাকবুক এয়ার ল্যাপটপ মাত্র ২৫ হাজার টাকা, দেখেই মাথা খারাপ। এত কম কেন? অ্যাডে আবার লেখা বিদেশ থেকে পাঠিয়েছে, ব্যবহার করতে পারছি না বলে বিক্রি করে দিচ্ছি। ফারহান ভেবে নিল, অন্তত আর যাই হোক নষ্ট তো নয়, ইউজ করতে পারে না বলে বিক্রি করে দিচ্ছে। অ্যাডের নাম্বারে ফোন দিতেই এক সুকণ্ঠি মেয়ে ফোন ধরে বলল, বিদেশ থেকে গিফট দিয়েছে আঙ্কেল, ইউজ করা হয় না বলে কম দামে বিক্রি করে দেবে। ফারহান আর অত চিন্তা করল না, তাকে বলে দিল সে নেবে। মেয়েটি জানাল, মগবাজার থেকে কালেক্ট করতে হবে। ভালো লাগলে ক্যাশ টাকা দিতে হবে। খুশিতে বাকবাকুম হয়ে মগবাজার গেল। ল্যাপটপ তো দূর, সাথে যা ছিল সব রেখে দিল সেই অ্যাড দেয়া ছিনতাইকারী দল।
০২. সেল-বাজারে আইফোন ৫-এর অ্যাড দেখে ফোন দিল ওমর ফারুক। দাম অনেক কম, মাত্র ১৬ হাজার। লোকেশন চট্টগ্রাম। এত কম দামে পেয়ে সাথে সাথেই ফোন। কথা হলো, সব কিছু ঠিকঠাক। ৩০ শতাংশ অগ্রিম, বাকিটা এসএ পরিবহনে পণ্য পেয়ে অগ্রিম দিয়ে দিল। তারপর অ্যাড উধাও, নাম্বার অফ! আর আসেনি তার আইফোন ৫।
০৩. শফিক সাহেব বাসে করে অফিসে যাচ্ছেন। হঠাৎ তার ফোনে অদ্ভুত নাম্বার থেকে কল এলো। বলা হলো রবি কাস্টমার কেয়ার থেকে বলছি। আমাদের সিগনালে কিছু সমস্যা হচ্ছে, আপনার মোবাইল ঠিকমতো সিগনাল ধরতে পারছে না। এতে এমন হতে পারে যে, সেটের ব্যাটারি শর্টসার্কিট হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে। আপনি দয়া করে আগামী দুই ঘণ্টা মোবাইল অফ করে রাখবেন। ভুলেও মোবাইল অন করবেন না। সাময়িক এই অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। শফিক সাহেব অত কিছু না ভেবে মোবাইল বন্ধ করে দিলেন। কি দরকার অন রেখে বিপদে পড়ার। ওই দিকে তার স্ত্রীর কাছে ফোন দিল কেউ। বলল, শফিক সাহেবের বাস এক্সিডেন্ট করেছে। তিনি ইমার্জেন্সিতে আছেন, জরুরি কিছু ওষুধ, ইনজেকশন এবং অক্সিজেনের জন্য টাকা লাগবে। ৩০ মিনিটের মধ্যেই কিছু টাকা বিকাশে দিতে হবে। তা না হলে সাহায্যকারী কিছু করতে পারবেন না। তিনি স্টুডেন্ট। হাতে টাকা নেই। ভদ্রমহিলা দিশেহারা হয়ে তার মেয়েকে বললেন, শফিক সাহেবের মোবাইলে কল দিতে। মোবাইল বন্ধ। তারা বিশ্বাস করলেন যে, শফিক সাহেব আসলেই এক্সিডেন্ট করেছেন। যেহেতু উত্তরা থেকে মতিঝিল আসতেই অনেক সময় লেগে যাবে। তাই বাসায় যা ছিল বিকাশ করে দিলেন এবং মা-মেয়ে আত্মীয়স্বজনকে জানিয়ে সিএনজি অটোতে করে মতিঝিলের উদ্দেশে রওনা দিলেন। টাকা পাঠানোর পর কথা হলেও সিএনজি অটো থেকে কল দিয়ে আর ওই লোকের ফোন অন পাওয়া যায়নি। মতিঝিল যে ঠিকানায় দিয়েছিলেন সেখানেও কোনো হাসপাতাল নেই। অনেক পড়ে শফিক সাহেবের ফোন অন পাওয়া গেল এবং বুঝতে পারলেন যে তারা প্রতারিত। শফিক সাহেব সুস্থ আছেন।
০৪. স্যামসাং এস ৪ কিনতে বসুন্ধরা সিটিতে গিয়েছিল সাদি। অনেক দোকান ঘুরেও যখন দাম কমাতে পারছিল না, তখন একটা ছেলে বলল- একটা টানা সেট আছে লাগবে কি না? মাত্র ১৫ হাজার টাকা দিলেই হবে। সাদি চিন্তা করল, কম দামে যখন পাওয়া যাচ্ছে খারাপ কী। দরদাম করে ১০ হাজার টাকায় ঠিক করে ফেলল। যে বসুন্ধরা সিটির পেছন থেকে সেটটা হাতে নেবে এমন সময় দেখল আরও কয়েকজন বখাটে মতো ছেলে ওই দিকে আসছে। ভয় পেয়ে গেল সাদি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পেটে ছুরি ধরে টাকা, মোবাইল, এটিএম কার্ডসহ যা পেল নিয়ে গেল। সাদি কিছুই করতে পারল না!
০৫. ফেসবুকে রিয়ার পরিচয় নিলয়ের সাথে। দেখতে অনেক স্মার্ট, বড়লোকের ছেলে। ঈদের শপিংয়ের সাথে নিলয়ের সাথে দেখা- দুটোই হবে ভেবে নিলয়কে বসুন্ধরা সিটিতে আসতে বলল। যদিও নিলয় বলেছিল পিঙ্ক সিটিতে দেখা করতে। বসুন্ধরা সিটিতে দেখা হলো দু’জনের। দেখতে বেশ স্মার্ট। নিলয় জানাল, সে মোবাইল কিনবে। রিয়া যেটা পছন্দ করবে সেটাই কিনবে। খুশি হয়ে রিয়া নিলয়ের সাথে মোবাইল দেখতে গেল। কয়েকটা দোকান ঘুরে রিয়ার পছন্দ হলো সনি এক্সপেরিয়া জেড। নিলয়ও বলল এটা নিয়ে নেবে। দাম দর হয়ে গেল। মোবাইলে সিম লাগিয়ে নিলয় বলল, তুমি একটু বস আমি সামনেই আছি। এখানে নেটওয়ার্কে সমস্যা। কল করে চেক করে আসি। দোকানের সামনে থেকে কখন যে হারিয়ে গেল নিলয়, রিয়া টেরও পেল না। নিলয়ের নাম্বারও বন্ধ। ফেসবুক আইডিও ডিঅ্যাকটিভ। কোনো ছবিও সেভ করে রাখেনি সে। দোকানদার কিছুক্ষণ পরপর জিজ্ঞেস করছে যে সাথের লোক কই? এখন রিয়া কীভাবে বলবে সে নিলয়ের প্রতারণার শিকার। ওর শপিংয়ের টাকা এবং জমানো টাকা থেকে মোবাইলের দাম দিতে হবে।
০৬. বাংলাদেশে এখন ফ্রিল্যান্সারের অভাব নেই। অল্প কিছু ডলার আছে আপনার মার্কেটপ্লেসের অ্যাকাউন্টে। অনেকেই অল্প ডলার ক্যাশ করার জন্য ঝামেলায় যেতে চায় না। তখন তারা লোকাল কোনো ডলার বেচাকেনা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তা বেচে দেয়। মানুষের সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ও প্রলোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে অনেক প্রতারক প্রথমে তাদের ওয়েবসাইটে নিয়ে আসে। এরপর উক্ত ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট করতে হবে। এরপর আপনাকে PayPal, Skrill, Neteller, WMZ ইত্যাদি মাধ্যম থেকে উক্ত ওয়েবসাইটে ডলার সেন্ড করতে হবে। ৩০ মিনিটের মধ্যে আপনার পাঠানো ডলার টাকা হয়ে উক্ত সাইটে অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স দেখাবে। তখন আপনি চাইলেই বিভিন্ন উপায়ে টাকা আপনার হাতে পাবেন। প্রথমবার আপনার পাঠানো ডলার আপনাকে ক্যাশ টাকা প্রেরণ করবে আপনাকে বিশ্বাস করানোর জন্য। আপনি বিশ্বাস করে পরে মোটা অঙ্কের ডলার সেন্ড করবেন। সেন্ড করার সাথে সাথেই ডলার পানিতে ফেললেন। এরপর উক্ত সাইটের সাথে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারবেন না। যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ করবে। এভাবেই প্রতিনিয়ত দেশের ফ্রিল্যান্সারদের সাথে প্রতারণা করে চলেছে বিভিন্ন ওয়েবসাইট। যেসব ওয়েবসাইট প্রতারণা করছে তাদের ওয়েবসাইটে যোগাযোগের কোনো ঠিকানা নেই। আছে শুধু ফোন নাম্বার, যেগুলো ফুটপাত থেকে কেনা, যার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।
এসব থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার তো অবশ্যই সতর্কতা। তবে নিজের লোভও কিন্তু আপনাকে প্রতারণার ফাঁদে নিয়ে যেতে পারে। তাই সাধু সাবধান
ফিডব্যাক : jabedmorshed@yahoo.com


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস