সার্চ ইঞ্জিন গুগল বাজারে আনছে নতুন কমপিউটার। এটি পেনড্রাইভের মতো একটি স্টিক বা ছোট্ট কাঠির মতো। যেকোনো ডিসপ্লেতে ইউএসবির মাধ্যমে সংযোগ দিলেই এই পণ্যটি হয়ে উঠবে স্বাভাবিক ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ। এতে সব ধরনের কাজ করা যাবে। এই কমপিউটারের নাম দেয়া হয়েছে ‘ক্রোমবিট’। ইন্টারনেটের সংযোগের জন্য নানা ধরনের ডঙ্গলের সাথে এখন সবাই পরিচিত। মডেমের পাশাপাশি সাধারণ পেনড্রাইভের চেয়ে একটু বড় আকৃতির ডঙ্গল অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। তবে এবার এই ডঙ্গলের আকৃতিতেই আস্ত একটি কমপিউটার তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে গুগল। শুধু তাই নয়, চলতি বছরেই এরা বাজারে নিয়ে আসবে এই পিসি, যা দামেও হবে সাশ্রয়ী। ‘ক্রোমবিট’ নামের এই পিসিকে গুগল বলছে ‘পিসি-অন-অ্যা-স্টিক’। গুগলের নিজস্ব ক্রোম ওএস বা ক্রোম অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত হবে এই পিসি। এই স্টিককে যেকোনো ডিসপ্লে ডিভাইসের এইচডিএমআই পোর্টের মাধ্যমে সংযুক্ত করলেই ওই ডিসপ্লে ডিভাইসটি পরিণত হয়ে যাবে ক্রোমওএস নির্ভর কমপিউটারে। ছোট আকারের হলেও ক্রোমবিটে থাকছে একটি প্রসেসর, ২ গিগাবাইট র্যাপম, ১৬ গিগাবাইট স্টোরেজ। এ ছাড়া ডঙ্গলের ইউএসবি পোর্ট তো রয়েছেই। ওয়াই-ফাই এবং বস্নুটুথের মতো সংযোগ প্রযুক্তিও ব্যবহার করা যাবে ক্রোমবিটে। ফলে টিভি বা মনিটরের সাথে একে যুক্ত করে দিয়ে বস্নুটুথ বা ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে একটি কিবোর্ড সংযুক্ত করে নিলেই এটি পরিণত হবে পূর্ণাঙ্গ পিসিতে। গুগলের হয়ে ক্রোমবিটগুলো প্রাথমিকভাবে তৈরি করবে আসুস। এগুলোর দাম ১০০ ডলারেরও কম হবে বলে জানিয়েছে গুগল। মূলত শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখেই এগুলো তৈরি করছে গুগল। তবে ব্যবসায়িক কাজের জন্যও এটি কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে গুগল জানায়, ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম ওয়েবভিত্তিক এ স্টিক দিয়ে যেমন কমপিউটার চলবে, তেমনি ব্যবহার করা যাবে অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপ। পুরো পদ্ধতিতে ফাইল রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ক্লাউডে। ক্রোমবিটে কিবোর্ড সংযুক্ত করা যাবে। ‘ক্রোমবিট’ নামের পণ্যটি বাজারে আসবে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে। ক্রোমবিটস স্টিকটি গুগল তাইওয়ানের প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা আসুসের সাথে যৌথভাবে তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট অ্যান্ড্রয়িড পুলিশ জানিয়েছে, ক্রোমবিটে কী হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়ে কিছু জানায়নি গুগল। তবে ডিভাইসটিতে ২ জিবি র্যারম আর ১৬ জিবি স্টোরেজ রয়েছে, আছে ওয়াই-ফাই আর বস্নুটুথ। এছাড়া এতে রয়েছে একটি এক্সটার্নাল ইউএসবি ২.০ পোর্ট। এর হার্ডওয়্যার বেশিরভাগই ক্রোমবুকের চেয়ে কম ক্ষমতাসম্পন্ন বলে ওই সাইটে বলা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারগুলোতে এখন সাশ্রয়ী মূল্যের ডিভাইসের চাহিদা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গ্রাহকেরা এখন তুলনামূলক কম দামে অত্যাধুনিক ফিচারসংবলিত ডিভাইসের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ ক্ষেত্রে ১০০-১৪৯ ডলার মূল্যের নতুন ডিভাইসগুলো গুগলের হার্ডওয়্যার ব্যবসায় এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।
গুগল জানিয়েছে, ক্রোমবিটের মাধ্যমে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে ডেস্কটপ পিসি। কেননা, ক্রোমবিট ডেস্কটপ পিসিকে বহনযোগ্য সংস্করণে রূপান্তর করতে যাচ্ছে। ক্রোমবিট পিসি শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ীদের জন্যও দারুণ উপযোগী হবে।
প্রচলিত বড় আকারের মাদারবোর্ডের সত্যিকারের বিকল্প হয়ে উঠতে পারলে কমপিউটার ইতিহাসে নতুন সংযোজন হিসেবেই বিবেচিত হবে ক্রোমবিট। ক্ষুদে ক্রোমবিটে গতিময় কমপিউটিংয়ের স্বাদ পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। তবে ক্রোমবিট কমপিউটার বিশ্বে কতটা জায়গা করে নিতে পারবে, তা জানতে কয়েক মাস অপেক্ষায়ই থাকতে হবে।
গত জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শো (সিইএস) ২০১৫-এ চিপ নির্মাতা ইন্টেলও একই ধরনের ছোট আকারে পার্সোনাল কমপিউটার ‘কমপিউট স্টিক’ উন্মোচন করে। তুলনামূলক কম দামে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কমপিউটার ব্যবহারের সুবিধা দিতে কমপিউট স্টিক এনেছে ইন্টেল। ডিভাইসটির মূল্য ধরা হয়েছে ১৪৯ দশমিক ৯৯ ডলার। চার ইঞ্চি লম্বা এ ডিভাইসটি দেখতে অনেকটা পেনড্রাইভের মতো। কমপিউটারটি উইন্ডোজ ৮.১ এবং লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেমচালিত দুই ধরনের সংস্করণ বাজারে পাওয়া যাবে। এতে ইউএসবি পোর্ট ও মাইক্রোএসডি কার্ড স্লট রয়েছে।
কমপিউট স্টিকের উইন্ডোজভিত্তিক সংস্করণে রয়েছে ২ গিগাবাইট র্যাটমের পাশাপাশি ৩২ গিগাবাইট অভ্যন্তরীণ তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা। অন্যদিকে লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেমভিত্তিক ডিভাইসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১ গিগাবাইট র্যারমের পাশাপাশি ৮ গিগাবাইট অভ্যন্তরীণ তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা। এছাড়া কার্ড স্লট থাকায় মাইক্রোএসডি কার্ডের মাধ্যমে তথ্য ধারণক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।
ডেভিস মারফি গ্রুপের প্রযুক্তি বিশ্লেষক ক্রিস গ্রিন বলেন, মানুষ বর্তমানে বড় কমপিউটারের চেয়ে ছোট ইন্টারনেট মডেমের মতো কমপিউটারকেই পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রাখছে, যা বহনযোগ্য এবং চাইলে যেকোনো যন্ত্রে লাগিয়ে ওয়েবসাইট দেখাসহ নানা কাজ করতে পারে। আর সে বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন উদ্যোগ