পানি থেকেই তৈরি হবে ডিজেল। এই ডিজেলেই চলবে গাড়ি। সম্প্রতি চমকপ্রদ এমন তথ্য জানিয়েছে জার্মানির গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অওডি। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, পানি থেকে তারা ই-ডিজেল নামে পরিবেশবান্ধব কৃত্রিম জ্বালানি তৈরি শুরু করেছে। জার্মান বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে সম্প্রতি এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এই অত্যাধুনিক পদ্ধতি উদ্ভাবনের খবর দিয়েছে। অওডি গবেষকেরা বলছেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিরপেক্ষ জ্বালানি পাওয়া যাবে। জার্মানির ড্রেসডেন প্লান্টে তা তৈরির কাজ শুরু করেছেন তারা। অওডি গাড়িতে এই নতুন জ্বালানি ব্যবহার হবে। ‘পাওয়ার টু লিকুইড’ পদ্ধতিতে এই ই-ডিজেল তৈরিতেও পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ পদ্ধতিতে কাঁচামাল হিসেবে শুধু পানি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার হয়। একটি বায়োগ্যাস কারখানা থেকে অওডি এই কার্বন ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করছে।
নতুন এই পদ্ধতিতে ই-ডিজেল তৈরিতে প্রথমে পানিকে তাপ দিয়ে বাষ্পীভূকরা হয় এবং উচ্চ তাপমাত্রায় পানিকে ভেঙে এর হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন আলাদা করা হয়। এরপর আরও দুটি প্রক্রিয়া শেষে এই হাইড্রোজেনকে সিনথেসিস রিয়েক্টরে উচ্চ তাপ ও চাপে বিক্রিয়া ঘটানো হয়। এতে হাইড্রোকার্বন যৌগ তৈরি হয়, যাকে বলা হয় বস্নু ক্রুড। এ বস্নু ক্রুডকে রিফাইন করেই ই-ডিজেল উৎপন্ন করা হয়। এই জ্বালানি সালফার ও অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনমুক্ত। ডিজেল ছাড়াও ই-গ্যাসোলিন নামে কৃত্রিম পেট্রলও তৈরি করছে অওডি।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট সিনেট জানিয়েছিল, জার্মানির প্রতিষ্ঠান সানফায়ার জিএমবিএইচের গবেষকেরা পানি থেকে কৃত্রিম পেট্রল, কেরোসিন ও ডিজেল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ‘পাওয়ার টু লিকুইড’ পদ্ধতিতে পানির সাথে কার্বন ডাই-অক্সাইড মিশিয়ে এসব তৈরি করা হয়।
বিশ্বের জ্বালানি সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে গবেষকেরা বলছেন, জৈব জ্বালানির ওপর নির্ভরতা রাতারাতি কমানো সম্ভব নয়। কারণ, বর্তমান অবকাঠামো ও প্রযুক্তি বেশিরভাগই কয়লা ও পেট্রোলিয়ামনির্ভর। এই জ্বালানির ব্যবহার কমাতে এখনও অনেক সময় লাগবে এবং প্রচুর অর্থ খরচ হবে। তবে এর একটি সমাধান হতে পারে পরিশুদ্ধ জ্বালানি। সানফায়ার তা নিয়েই কাজ করছে।
‘পাওয়ার-টু-লিকুইড’ এমন একটি প্রযুক্তি, যা পানি ও কার্বনকে তরল হাইড্রোকার্বন যেমন- কৃত্রিম পেট্রল, ডিজেল ও কেরোসিনে রূপান্তর করতে পারে।
১৯২৫ সালে উদ্ভাবিত ফিসার-ট্রপস প্রসেসের ভিত্তিতে পানি থেকে পেট্রল তৈরি করা যায়। এতে সলিড অক্সাইড ইলেকট্রোলাইজার সেল (এসওইসি) ব্যবহার করা হয়, যাতে বাতাস বা সূর্যের আলোর মতো নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া শক্তি কাজে লাগিয়ে বাষ্প উৎপাদন করা হয়। এরপর তা থেকে অক্সিজেন বাদ দিয়ে হাইড্রোজেনকে আলাদা করা হয়। এরপর কার্বন ডাই-অক্সাইড রিসাইকেল করে কার্বন মনোঅক্সাইডে রূপান্তর করা হয়। কার্বন মনোঅক্সাইড ও হাইড্রোজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তরল হাইড্রোকার্বন পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে জ্বালানি তৈরির প্রক্রিয়াটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে সফল হয়েছেন গবেষকেরা। তাদের দাবি, তাদের তৈরি এই যন্ত্রে প্রতিদিন ৩ দশমিক ২ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড রিসাইকেল করে এক ব্যারেল জ্বালানি পাওয়া যেতে পারে।
সানফায়ারের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা ক্রিস্টিয়ান ভন ওলসহাসেন বলেন, ‘পানি থেকে জ্বালানি তৈরির পরীক্ষা সফল হয়েছে এবং বাণিজ্যিকভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ সম্ভব সেই বিষয়টিও প্রমাণিত হয়েছে। এখন নীতিনির্ধারকদের কাজ হবে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা। বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব হলেই শুধু ধাপে ধাপে জৈব জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমবে। দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানির সক্ষমতা অর্জন করতে হলে তার জন্য আজ থেকেই কাজ শুরু করতে হবে।’