• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ভিএসপি অপারেটর লাইসেন্সের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায়
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: খন্দকার রোমেল
মোট লেখা:১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ভিওআইপি
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ভিএসপি অপারেটর লাইসেন্সের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায়
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষে্য বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় অবৈধ ভিওআইপি বন্ধের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে বিটিআরসি ৮৮৭টি ভিএসপি লাইসেন্স ইস্যু করে। যুগোপযোগী সিদ্ধামেত্মর জন্য BAVSP (Bangladesh Association of VoIP Service Provider)-এর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
ভিএসপি লাইসেন্সপ্রাপ্তদের সবাই এদেশের যুব সমাজের প্রতিনিধি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং শতভাগ দেশীয় বিনিয়োগকারী। আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগের জন্য বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে এ দেশের যুব সমাজের প্রতিনিধিরা ৮৮৭টি লাইসেন্সের জন্য ২০১৩ সালে বিটিআরসি’র মাধ্যমে সরকারকে ফি হিসেবে ৬০ কোটি টাকা প্রদান করেছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, প্রায় দুই বছর অতিক্রান্তত্ম হওয়ার পরও আইজিডবিস্নউ’র সাথে ভিএসপি’র আকাশ-পাতালসম বৈষম্য, আইজিডবিস্নউ’র অনীহা ও অসহযোগিতা এবং বিটিআরসি’র উদাসীনতা, সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে এই ভিএসপি লাইসেন্স খাতে কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করা তরুণ উদ্যোক্তারা কোনো ব্যবসায় করতে পারেনি। উপরন্তু, সরকারের দেয়া বেশিরভাগ ভিএসপি লাইসেন্স এখন পর্যন্তও অকার্যকর অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে লাইসেন্সধারীরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কিত ও হতাশাগ্রস্ত। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী ভিএসপি লাইসেন্সধারীদের পক্ষে ব্যবসায় ও পুঁজি রক্ষা করা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব হচ্ছে না বলেই এ সংবাদ সম্মেলন।
ভিএসপি লাইসেন্সের সমস্যাসমূহ
০১. বিটিআরসি’র ১২/০৩/২০১৫ তারিখের সার্ভিস প্রোডাইভারদের সার্ভিস এবং ট্যারিফ বিষয়ে বিষয়ে জারি করা নির্দেশনা নং- বিটিআরসি/SS/Common-directives(658)part-2/2014-112-এর অনুচ্ছদ-৩৭ অনুযায়ী সব সার্ভিস প্রোভাইডার আইনগত ও টেকনিক্যালি সেবা বিতরণ এবং চার্জিংয়ের জন্য দায়ী থাকবে। কিন্তু, বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। বিটিআরসি’র ইস্যু করা এ পর্যন্ত সব ধরনের অপারেটর লাইসেন্স FBO (Facility Base Operator) হলেও ভিএসপি লাইসেন্সই একমাত্র Non-FBO (Non-Facility Base Operator) অপারেটর লাইসেন্স। বিটিআরসি’র নীতিমালায় ভিএসপি লাইসেন্সকে অপারেটর লাইসেন্স বলা হলেও কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়া কীভাবে ভিএসপি লাইসেন্স একটি অপারেট লাইসেন্স হলো বিষয়টি কারো বোধগম্য নয়।
০২. লাইসেন্সিং দুর্বলতা এবং বিটিআরসি’র উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে আইজিডবিস্নউ অপারেটরেরা ভিএসপি’র সাথে আমত্মঃসংযোগ চুক্তি সম্পাদন করতে প্রায় ১ বছর ৬ মাস সময় অতিক্রান্ত করে দেয়। এখনও পর্যন্ত কোনো কোনো আইজিডবিস্নউ অপারেটর ভিএসপি’র সাথে কোনো রকম চুক্তি ছাড়া লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে নামমাত্র ভাড়ায় ভিএসপি’র লাইসেন্স ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে আইজিডবিস্নউ অপারেটরেরা ভিএসপি’র নামে Call Termination করে ভিএসপি’র ন্যায্য পাওনা ৫ শতাংশ রেভিনিউ পরিশোধ না করে মাত্র ১ শতাংশের কম হারে ভিএসপিকে ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করছে। সে হিসেবে ২৯টি আইজিডবিস্নউ অপারেটর যদি অর্ধেক ভিএসপি লাইসেন্সও ব্যবহার করে তাহলেও তারা দুই বছরে ভিএসপিকে রেভিনিউ বাবদ ২৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করেনি। কিন্তু আইজিডবিস্নউ অপারেটরেরা ভিএসপিকে ওই ২৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বলে বিটিআরসিকে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। উপরন্তু, কোনো কোনো আইজিডবিস্নউ ন্যায্য পাওনা ৫ শতাংশ কমিশন পরিশোধের আগেই ভিএসপি অপারেটর থেকে নগদে বা চেকে অন্যায়ভাবে ৪ শতাংশের বেশি কমিশন ফেরত নিয়ে রেভিনিউ বাবদ ১ শতাংশেরও কম রেভিনিউ গ্রহণে ভিএসপিকে বাধ্য করছে। আবার কোনো কোনো আইজিডবিস্নউ নীতিমালাবহির্ভূত ম্যানেজ সার্ভিস কোম্পানি গঠন করে ভিএসপি’র অধিকাংশ রেভিনিউ কুক্ষেগত করছে।
০৩. লাইসেন্সিং নীতিমালা অনুযায়ী কল টার্মিনেশনের CDR (Call Detail Record) এবং পরিশোধিত আনুষাঙ্গিক ট্যাক্সের চালানপত্র ভিএসপিকে প্রদান করার বিধান থাকা সত্ত্বেও আইজিডবিস্নউ অপারেটরেরা বিগত দুই বছরের কোনো সিডিআর বা চালানপত্র দেয়নি। ফলে ভিএসপি অপারেটরেরা বর্তমানে এনবিআর এবং সরকারের অন্যান্য সংস্থার কাছে দায়বদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
০৪. প্রয়োজনের তুলনায় বেশিসংখ্যক আইজিডবিস্নউ অপারেটর থাকার কারণে নিজেদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফলে আইজিডবিস্নউ অপারেটরেরা বছরের পর বছর ছল-চাতুরীর মাধ্যমে সরকারের রেভিনিউ এবং ভিএসপি’র ন্যায্য পাওনা পরিশোধ না করে আন্তর্জাতিক বাজারে নির্ধারিত রেটের কমে ভিওআইপি সার্ভিস দিয়ে আসছে। ফলে ভিএসপি অপারেটরেরা প্রথম থেকেই কোনোভাবেই ব্যবসায় করতে পারছে না। অপরদিকে, লাইসেন্সিং গাইডলাইন অনুযায়ী কোন আইজিডবিস্নউ অপারেটর বা আইজিডবিস্নউ অপারেটরের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ ভিএসপি অপারেটর লাইসেন্স নিতে পারে না। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা এই যে, আইজিডবিস্নউ অপারেটরেরা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে নিজেরা ভিএসপি লাইসেন্স নিয়ে ভিওআইপি ব্যবসায় এবং বাজারকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অস্থিতিশীল করে রেখেছে।
০৫. ভিএসপি এবং আইজিডবিস্নউ লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী উভয় অপারেটর একই রেটে আন্তর্জাতিক বাজারে ভিওআইপি সার্ভিস বিষয় সমন্বয় করে। সেবা, বাজার, রেট এবং ক্যারিয়ার একই হওয়া সত্ত্বেও আইজিডবিস্নউ অপারেটরেরা টার্মিনেশনের জন্য কল রেটের ওপর ২০ শতাংশ কমিশন পেয়ে থাকে, অপরদিকে ভিএসপি অপারেটরদের কমিশন নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। একই সেবা, বাজার এবং রেটের জন্য কমিশন বৈষম্যের কারণে ভিএসপি অপারেটরেরা কোনোভাবেই ব্যবসায় করতে পারছে না। নীতিমালা অনুযায়ী আইজিডবিস্নউ অপারেটরেরা নিজস্ব আনলিমিটেড পোর্ট ক্যাপাসিটির মাধ্যমেও TDM (Time-Division Multiplexing) ভিওআইপি কল আদান-প্রদান করতে পারে। কিন্তু লাইসেন্সিং গাইড লাইনে টার্মিনেশনের জন্য ভিএসপি অপারেটরদেরকে আইজিডবিস্নউ থেকে মাত্র ৯০ পোর্টের ক্যাপাসিটি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বৈষম্যমূলক। শুধু আইজিডবিস্নউ হতে ৯০ পোর্ট ক্যাপাসিটি নিয়ে ভিএসপি অপারেটরেরা আইজিডবিস্নউ’র সাথে প্রতিযোগিতা বা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না।
০৬. ইতোমধ্যে সেপ্টেম্বর-২০১৪ ভিওআইপি কল রেট ৩.০০ সেন্ট থেকে কমিয়ে ১.৫০ সেন্ট করার ফলে আইজিডবিস্নউ’র কমিশন ১৩.২৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ, আইসিএক্সের কমিশন ১৫ শতাংশ থেকে ১৭.৫০ শতাংশ এবং এএনএস অপারেটরদের কমিশন ২০ শতাংশ থেকে ২২.৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। একই রেগুলেটরের অধীনে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলেও অজ্ঞাত কারণে ভিএসপি’র কমিশন বাড়ানোর বিষয়ে বিটিআরসি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। উপরন্তু, কল টার্মিনেশনের নেটওয়ার্ক টপোলজি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার এবং আইজিডবিস্নউ’র মাঝে ভিএসপি অপারেটর থাকা সত্ত্বেও ভিএসপি অপারেটরদের বাদ দিয়ে অন্যদের কমিশন বাড়ানো বৈষম্যমূলক ও নীতিমালা পরিপন্থী।
০৭. বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী আইজিডবিস্নউ অপারেটরেরা আন্তর্জাতিক কলের জন্য আইসিএক্স, এএনএস এবং বিটিআরসিকে কোন অগ্রিম রেভিনিউ পরিশোধ করে না। কিন্তু আইজিডবিস্নউ অপারেটরেরা ভিএসপিকে ৯০ পোর্টের আন্তসংযোগের বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও আইজিডবিস্নউ অপারেটরেরা আন্তসংযোগের জন্য নিয়মবহির্ভূতভাবে ভিএসপি’র কাছে আবার বিনিয়োগ বা অগ্রিম দাবি করে, যার ফলে ভিএসপি লাইসেন্স অকার্যকর থেকে যায়।
০৮. টার্মিনেশন কল রেট অর্ধেক করা হলেও ভিএসপি’র পোর্ট ক্যাপাসিটি এবং কমিশন বৃদ্ধি না করায় ভিএসপি’র আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে আগের ধার্য করা বার্ষিক নবায়ন ফি ১,১৫,০০০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা কোনো অবস্থাতেই যুক্তিযুক্ত নয় এবং লাইসেন্সের কার্যকারিতা ও বার্ষিক মুনাফার সাথে কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। বিগত দুই বছর ধরে বার বার আবেদন করার পরও ভিএসপি অপারেটর লাইসেন্সের অসংখ্য সমস্যা ও অসংগতির সমাধান না করায় ভিএসপি অপারেটরেরা কোনো ব্যবসায় করতে পারেনি। তারপরও মরার ওপর খড়ার গা এর মত বিটিআরসি অযৌক্তিভাবে লাইসেন্স নবায়ন ফি পরিশোধের জন্য ভিএসপি অপারেটরদেরকে নোটিশ দিয়েছে।
০৯. আইএলডিটিএস পলিসি-২০১০-এর সব নীতিমালা উপেক্ষা করে স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ রক্ষার্থে সম্প্রতি বিটিআরসি নতুন নির্দেশনা জারি করে ভিওআইপি ব্যবসায়কে সিন্ডিকেট করার লক্ষে্য ভিএসপি অপারেটরদের বাদ দিয়ে নীতিমালা বহির্ভূতভাবে IOF (IGW Operators Forum) গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিটিআরসি’র এমন বৈষম্যমূলক ও নীতিমালা পরিপন্থী সিদ্ধামেত্মর ফলে আইওএফের নেটওয়ার্ক টপোলজিতে ভিএসপিকে বাদ দিয়ে অকার্যকর করার নতুন ষড়যন্ত্রের অবতারণা করা হয়েছে। আইওএফের নেটওয়ার্ক টপোলজিতে ভিএসপিহর অবস্থান নির্ধারণ না করার কারণে ৮৮৭টি ভিএসপি অপারেটর লাইসেন্সের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। প্রকৃত বাস্তবতা এই যে, বাস্তবতাবিরোধী ও নীতিমালা পরিপন্থী সিদ্ধামেত্মর ফলে ৮৮৭টি ভিএসপি অপারেটর লাইসেন্স সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হবে এবং তাদের পুঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যাবে।
ভিএসপি অপারেটর লাইসেন্সের উপরোল্লিখিত সমস্যা এবং অসংগতিগুলো দ্রুততম সময়ে সমাধান করে ৮৮৭টি ভিএসপি অপারেটর লাইসেন্স কার্যকর করে যুব সমাজের ৬০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রক্ষার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - এপ্রিল সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস