লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
অর্জন অবশ্যই গৌরবের
অর্জন অবশ্যই গৌরবের। বাংলাদেশের মানুষ অর্জন করতে জানে। করতে পারার বিষয়টা তো তখনই সম্ভব হয়, যখন প্রত্যয়ের সাথে যোগ হয় বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা। সেটাই করে দেখিয়েছে কমপিউটার জগৎ। আর অবশ্যই এর পেছনে ছিল পাঠকদের অদম্য প্রত্যাশা।
শুধু প্রশ্ন দিয়ে জীবন চলে না। প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আর বাস্তবসম্মত সমাধানের পথটা খুঁজে পাওয়াই হচ্ছে সফলতা। দুই লাইনে এটা বলে ফেলা যায়, কিন্তু সঠিক পথে থেকে চলতে পারা একটা বিরাট দায়। এই দায় সামলানোর জন্য চাই ধৈর্য আর কর্মস্পৃহা। বাংলাদেশের তরুণেরা অন্তত আইসিটি নিয়ে এক প্রজন্ম ধরে এই কাজটা করে যেতে পেরেছে। এখনও পারছে- প্রত্যয় আছে ভবিষ্যতেও পারবে।
আইসিটি নিয়ে পথ চলার প্রথম দিকগুলো যে সহজ ছিল না, তা নতুন করে বলার আর অপেক্ষা রাখে না। পুরনো কথার চেয়ে বরং বলা উচিত নতুনে কথা; তবে সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে পুরনোর সাথে নতুনের মেলবন্ধন ঘটানো। সামনে অনেক পথ এবং তা যে অনমেত্ম প্রসারিত তা স্বীকার করে নিতে হবে। তবে অবশ্যই অাঁচ পাওয়া যায় নিকট ভবিষ্যতের। কতটা স্বপ্ন-সম্ভাবনা আর তার কতটা অর্জন যোগ্য, সেটাকেই বড় করে দেখা উচিত।
কমপিউটার জগৎ বেড়ে চলেছে বিশ্বের আইসিটির সাথে সাথেই। এ কথা গৌরবের সাথেই বলা যায়, স্ব-কালের অর্জনকে কখনই এড়িয়ে চলেনি। দূরদর্শী প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল কাদের যেমন ছিলেন, তেমনি আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এখনও নিয়মিত হাজির থাকতে পারছে কমপিউটার জগৎ। তবে এবার হয়তো আরও সূক্ষ্ম, আরও জটিল এবং অবশ্যই আরও গতিময় এক জগতে প্রবেশ করতে হবে এই ২৪ বছরের যুবা-পত্রিকাটিকে। কারণ অবশ্যই প্রযুক্তি। ক্রমশ গতি ও সূক্ষ্মতা অর্জন করছে প্রযুক্তি এবং অবশ্যই বাড়ছে আইসিটির আওতা। সম্ভাবনা যেমন বাড়ছে, তেমনি আকাঙক্ষার পারদও চড়ছে।
অবশ্যই ইতিহাস-সচেতনতা সামনের পথ দেখায়। এ যুগের মানুষ তাই দেখছে। তালিকা দেয়ার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের মানুষ সর্বত্রই আছেন। আর সে কারণেই বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের তরুণেরা স্বপ্ন দেখতে পারে। আলাদা করে ডিজিটাল উদ্যোগের ব্যাপারটা হয়তো অচিরেই সেকেলে হয়ে যাবে, কারণ যেকোনো উদ্যোগকেই হতে হবে অবশ্যই ডিজিটাল। এখনই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
ভবিষ্যতকে দেখা যাচ্ছে বর্তমানের আলোতেই এবং তার বিষয় জুড়েই আছে অপ্রতিরোধ্য আইসিটি। তথ্যের প্রতি গণিতের আওতা বাড়া এবং সূক্ষ্মতার দিকে ধেয়ে চলা সহসা থামবে না। বরং বলা চলে- চলা মাত্র শুরু হয়েছে আর এই চলা তো থামার নয়। যদিও থামে না, ক্রমশ তার আওতায় নিয়ে আসে অগাণিতিক বিষয়গুলোকেও। এমন মনে করার কারণ নেই যে, ডিজিটাল যা কিছু করার ছিল, তার সবই সম্পন্ন হয়েছে। প্রকৃতি ও মানবদেহ-মনের এমন অনেক সাধারণ বিষয় আছে, যেগুলো এখনও রয়ে গেছে আইসিটির বাইরে। উদহারণ হিসেবে বলা যায়, সাধারণ সব যোগ নির্ণয়ের কথা। সত্যি কথা বলতে কি- বিষয়টা এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধারণানির্ভর রয়ে গেছে। জিন সিকোয়েন্সিং একটা সম্ভাবনা দেখিয়েছে কার্যকারণ নির্ণয়ের, কিন্তু প্রযুক্তিটাকে ঠিকমতো ধরা যায়নি এখনও। বিশ্ববিদ্যালয়সহ জ্ঞানের যে অপরিমেয় সম্ভার তার দশ শতাংশেরও বিধিবদ্ধ তালিকা তখন পর্যন্ত নেই মানুষের হাতে।
নেই- প্রয়োজন আর কল্যাণ এখন পর্যন্ত এইসব ধারণাকে সম্বল করেই বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো সাইবারনেটিকসও এগোচ্ছে। এক সময় তো এই ধারণাও পাল্টে যেতে পারে। যেমন আগে হয়েছিল। এক সময় গণিত দুর্বোধ্যতাকে অতিক্রম করেছিল আর জন্ম দিয়েছিল পরিচলন বিদ্যার। এ ঘটনার একশ’ বছরও পেরোয়নি এখনও।
প্রত্যয়টা সংক্ষেপে হচ্ছে এই যে- মানুষের সব কাজে-কর্মে গণিতকে কাজে লাগানো। কারণ আর কিছুই নয়, সহজ-সরলভাবে জীবনযাপন করতে পারা এবং ক্রমাগত উন্নতি করতে পারা। উন্নতিটাও চাওয়া হচ্ছে সহজ এবং কষ্টহীন জীবনযাপনের জন্যই।
আসলে এটাও একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। উত্তেজনা কিসে হয়? যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা এখন পর্যন্ত এটাও বলা মাপকাঠি। এটা চিরকালে এখন থাকবে এমনটা ধারণা করে বসে থাকার কোনো মানে নেই। এটাও মনে রাখা প্রয়োজন, এখানকার যে মূল্যবোধ তা ভবিষ্যতে থাকবে না, যেমন অতীতের মূল্যবোধ এখন আর নেই। নতুন মূল্যবোধের চর্চার প্রস্ত্ততি এখন থেকেই নেয়ার কথা বলছেন অনেকে। একটি বিষয় সবাইকে স্বীকার করতেই হবে, এই ডিজিটাল যুগের বয়স প্রায় কমপিউটার জগৎ-এর সমসাময়িক। বড়জোর আর পাঁচটা বছর বাড়িয়ে ধরা যায়। অর্থাৎ আমরা ধরতে চাচ্ছি সেই সময়টা থেকে, যখন থেকে সামরিক কাজের বাইরে সাধারণের ব্যবহারের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তিকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। সামরিক স্থাপনার ভেতর বেরোনোর পরই সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল দুই পরিচয়ই পাওয়া গেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির।
প্রকৃতপক্ষে কমিউনিকেশন বা যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি কমপিউটারের চূড়ান্ত ক্যারিশমা এখনও দেখেনি বিশ্ববাসী। নতুন কিছু এলে মানুষ প্রথমে বিস্মিত হয়, তারপর অভ্যস্ত হয়ে যায়। এ ঘটনাটা দ্রুত ঘটছে আইসিটির ক্ষেত্রে, এটাই বিশেষত্ব। সর্বশেষ আরও কিছু বিষয় দেখা যাচ্ছে আইসিটির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অন্য প্রযুক্তিকে আত্মীকরণ করা। মোবাইল ফোন এর উৎকৃষ্টতম উদাহরণ। তবে অন্য অনেক প্রযুক্তিকেই গতিশীল করছে আইসিটি- রোবটিক্স এর অন্যতম উদাহরণ। তবে গাণিতিক সূক্ষমতা থাকায় প্রকৌশলগত সব বিভাগেই আইসিটি হয়ে উঠেছে অগ্রগণ্য। একদিকে সূক্ষ্মতা এবং যোগাযোগের মাধ্যমে মেধার সমন্বয় দুটো কাজই করছে আইসিটি। শেষোক্ত বিষয়টি মানবসভ্যতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গতি এনেছে এই বিষয়টিই। প্রকৃতপক্ষে আইসিটি যেটা করছে, তা হলো মেধার সমন্বয় ঘটানো। যথাযোগ্যতা এবং সাযুজ্য প্রযুক্তির ও দুই বৈশিষ্ট্য এখন অতীব জরুরি বিষয়। অতীতে বিশেষভাবে আবিষ্কার হওয়া অনেক প্রযুক্তিই ডিজিটাল সমন্বয় ও সুযোগের কারণে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠেছে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। স্বল্পদৈর্ঘ্যের বেতার সঙ্কেতকে গুণান্বিত করে তুলতে পারাই এ প্রযুক্তির প্রাপ্তি। যোগাযোগের ধরনগুলোকে প্রকৃতপক্ষে আধুনিক এবং গুণসম্পন্ন করে তুলেছে গাণিতিক নির্ভুলতা।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নির্ভুলতা এবং অন্যান্য প্রযুক্তিকে আত্তীকরণ করা। এ ছাড়া নিজস্ব বৈশিষ্ট্যও অপরিমেয়। মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি যেমন আইসিটিকে সমৃদ্ধ করছে, প্রকৃতপক্ষে বিগত আড়াই দশক হচ্ছে কমপিউটারের শক্তিমান ও বহুমুখী হয়ে ওঠার পাশাপাশি মানুষকেও শক্তিমান করে তোলার সময়। প্রতিটা মানুষেরই এখন নিজেকে জানান দেয়ার সুযোগ রয়েছে আর জগতটাও আক্ষরিক অর্থে ভার্চুয়াল নেই। তবু মানুষের আস্থা, শক্তিমত্তা বাড়ার প্রাথমিক পর্বই বলা যায় একে। ক্রমাগত উন্নয়নই এখন মূল প্রবণতা। প্রযুক্তি গোপনীয়তাকে যেমন প্রকাশ করে দিচ্ছে, আইসিটি তেমন তথ্যের শক্তিও বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুণে। আগামী দিনগুলোয় মানুষ আরও শক্তিশান হবে নিঃসন্দেহে এবং অবশ্যই বাড়বে তথ্য ব্যবহারের অভিনবত্ব
ফিডব্যাক : abir59@gmail.com