লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
রোমান হরফের উচ্চারণভিত্তিক বাংলা কীবোর্ড
বহু বছর ধরেই আমি একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হই- আপনি কবে একটি ফনেটিক কীবোর্ড তৈরি করবেন। আমি প্রশ্নকর্তাদের মনের কথা বুঝি। এরা আমাকে রোমান হরফে বাংলা লেখার পদ্ধতি চালুর কথা বলেন। বিষয়টি এমন- এরা ইংরেজি হরফে বাংলাভাষা লিখবে এবং সেই ইংরেজিতে লেখা বাংলাভাষা বাংলা হরফে রূপান্তরিত হবে এমনটাই চায়। এটি এখনকার তরুণ-তরুণীদের প্রিয় একটি পদ্ধতি। আমি নিজে মনে করি, রোমান হরফ দিয়ে বাংলা লেখা বা একেবারেই বাংলা না লেখার চেয়ে এটি হয়তো মন্দের ভালো একটি কাজ। তবে এই বাংলা লেখার মানসিকতা একদিন পুরো বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী ও বাংলা হরফকে বিপন্ন করবে। ফলে ভাষা ও বর্ণমালা নিয়ে তামাশা না করা ভালো। বরং নিজের পছন্দমতো একটি কীবোর্ড বাছাই করে বাংলা হরফ দিয়েই বাংলা লেখা উচিত।
প্রসঙ্গত, আমি একদিকে নীতিগতভাবে রোমান হরফে বাংলা লেখার উপায়কে মানি না, অন্যদিকে আমি মনে করি কোনোভাবেই রোমান হরফ দিয়ে খুব সহজে বাংলা লেখা সম্ভব নয়। খুব সাধারণ অ্যাকাডেমিক আলোচনাতেই আমরা দেখি, বহু বাংলা হরফের উচ্চারণগত মিল রোমান ২৬টি বর্ণে নেই। এই পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনে বাংলা লেখা হয় এমন একটি সফটওয়্যারের ওয়েব পেজে বাংলা লেখার দৃষ্টান্ত এভাবে দেয়া আছে। আমার সোনার বাংলা (amar sOnar bangla), লক্ষেনŠ (lokkhNOU), কর্তৃত্ত্ব (korrtrritw), শিক্ষা (shikSha/shikkha), শ^াশ^ত (SwaSwoto/SwaSwt), ছাত্র (chatro), বৈষ্ণব (bOIShNb), সমুদ্র (somudro), রিদ্মিক (ridmik), ব্রহ্মপুত্র (brohmputro), হটাৎ (hoTaTH), চাঁদ (caqqd)’। এখানে শ^াশ^ত, ব্রহ্মপুত্র বা হটাৎ লেখার জটিলতা তো কিছুটা বোঝা যায়, কিন্তু চাঁদ ও কর্তৃত্ত্ব লেখার সাথে কোনো ধরনের উচ্চারণ কাজ করে বলে তো মনেই হয় না।
আমাদের তরুণ-তরুণীদের অনেকের কাছে এই পদ্ধতিটি সহজ মনে হয়। এদের বেশিরভাগ বাংলাভাষাই জানে না। তারা বুঝতেই পারে না, বাংলাভাষার লাখো শব্দকে এভাবে লিখতে হলে কপালে শুধু কি ভাঁজই পড়বে? রোমান হরফ দিয়ে বাংলা লেখার জন্য একটি অভিধানই তৈরি করতে হবে। আমার ধারণা, বিজয় বা অন্য কীবোর্ড দিয়ে বাংলা লেখার অভ্যাস করার চেয়ে এই অভিধান আত্মস্থ করা হাজার গুণ কঠিন হবে। তবে এ ক্ষেত্রে যে সুবিধাটি রয়েছে তা হলো, এই পদ্ধতির ব্যবহারকারীরা খুব সহজ-সরল সব সময় ব্যবহার হওয়া কয়েকশ’ বাংলা শব্দ ব্যবহার করে মাত্র। লিখতে লিখতে সেসব শব্দ তার আয়ত্ত হয়ে যায়। কিন্তু কেউ যদি পরীক্ষার খাতায় বাংলা লিখতে চায়, পত্রিকার পাতায় নিবন্ধ লেখে বা বইয়ের জন্য বাংলা লেখে, তবে এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়ে যায়। সম্ভবত এজন্যই কোনো পত্রিকা অফিস বা প্রকাশনা সংস্থা বিজয় কীবোর্ড ছাড়া রোমান হরফে বাংলা লেখার কথা ভাবেই না। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে টাইপরাইটার বা কমপিউটারের কীবোর্ড হচ্ছে অভ্যাসের বিষয়। ইংরেজিতে বোরাক নামের একটি কীবোর্ড অনেক দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও তা বহুল প্রচলিত হয়নি। কোয়ার্টি কীবোর্ড তার জনপ্রিয়তা হারায়নি। মোবাইলের জন্য টি নাইন নামের পদ্ধতিও আছে। কিন্তু আমি ইংরেজি লেখার সময় তা অফ করে রাখি।
বিষয়টি নিয়ে সেই ’৮৮ সাল থেকেই লিখছি। আমি কেন বিজয় কীবোর্ড তৈরি করেছি সেটি এতবার বলেছি যে কেউ যদি সবগুলো লেখা পড়ে থাকেন, তবে বিরক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু যারা আমাকে ফনেটিক কীবোর্ড বানাতে বলেন, তারা আমার সেসব লেখা পড়েননি। তখন তো অনেকের জন্মও হয়নি। অনেকেই যন্ত্রে বাংলাভাষার ইতিহাস জানেন না বলে টাইপরাইটার, টাইপসেটার বা কমপিউটারের বাংলা কীবোর্ড সম্পর্কেও জানেন না। এরা শুধু রোমান হরফ দিয়ে বাংলা লিখতেই শিখেছেন। আমি এদের বহুজনকে দেখেছি কোন কোন ব্যঞ্জনবর্ণে কোন যুক্তাক্ষর হয় সেটিও জানে না। এরা এটি বোঝে না, রোমান হরফের কম্বিনেশনে বাংলা যুক্তাক্ষর হয় না।
ঐতিহাসিকভাবে সত্য, বিদেশীরা বানিয়েছেন বলে বাংলা কীবোর্ড বরাবরই রোমান হরফকে অনুসরণ করে তৈরি হয়ে আসছিল। লাইনো-মনো টাইপকাস্টিং মেশিনের কীবোর্ড, রেমিংটন বাংলা টাইপরাইটার, গুডরেজ বাংলা টাইপরাইটার বা ফটোটাইপসেটারের বাংলা কীবোর্ড রোমান টাইপরাইটার কীবোর্ডকে অনুসরণ করেছে। এমনকি বিজয় ছাড়া কমপিউটারের অন্য বাংলা কীবোর্ডগুলোও রোমান কীবোর্ডকে অস্বীকার করেনি। এই প্রবণতাকে প্রথম যিনি পাশ কাটিয়ে যান তিনি শহীদ মুনীর চৌধুরী। তিনি বাংলা বর্ণনানুক্রম অনুসরণ করে টাইপরাইটারের বাংলা কীবোর্ড তৈরি করেন, রোমান হরফের কথা একেবারেই ভুলে যান। এমনকি সাইফুদ্দাহার শহীদসহ কমপিউটারের জন্য প্রথম কীবোর্ড নির্মাতারা তাদের কীবোর্ডটিগুলোকে রোমান কীবোর্ডের সাথে সম্পৃক্ত করেই তৈরি করেন। তিনি এ বিষয়ে স্পষ্টতই বলেছেন যে সেটাই নাকি যুক্তিসঙ্গত। তিনি বাংলা শব্দ ব্যবহারের ফ্রিকুয়েন্সি জরিপ করেন। কিন্তু কীবোর্ডে যখন বাংলা অক্ষর বসান, তখন রোমান হরফের উচ্চারণকে অনুসরণ করেন। তবে তিনিও রোমান হরফের সাথে বহু বাংলা বর্ণকে মেলাতে পারেননি। কখনও কখনও মনে হয় তিনি নিজেই মেলানো থেকে সরে গেছেন। তার কীবোর্ডটি ছিল চার স্তরের। তাতে তিনি ফলা, অর্ধবর্ণ ইত্যাদিও বসান। কোথাও কোথাও অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণ পদ্ধতি প্রয়োগ করলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনকি রোমান হরফের উচ্চারণকেও অনুসরণ করেননি।
আমি অনেকগুলো ভারতীয় বাংলা কীবোর্ড দেখেছি, তাতে কোথাও কোথাও রোমান হরফকে অনুসরণ করা হলেও জনপ্রিয় কীবোর্ডগুলো রোমান হরফকে অনুসরণ করেনি। বর্তমানের অবস্থাটি অবশ্য ভিন্নতর। এখন ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করলে দক্ষেণ এশিয়ার ভাষাগুলোর রোমানাইজড কীবোর্ড পাওয়া যায়। হিন্দি, নেপালি, চীনা, রুশ, তামিল এমন অনেক ভাষাতেই এ ধরনের কীবোর্ড তৈরি হয়েছে।
রোমান হরফকে অনুসরণ করে বাংলা কীবোর্ড তৈরি করার প্রথম প্রয়াস হিসেবে শহীদলিপির কথাও বলতে হবে। আমি শহীদ মুনীর চৌধুরীর পরে বাংলা কীবোর্ড তৈরি করি। শুরুতেই আমি মনে করেছি, চার স্তরের নয়, বাংলাকে ইংরেজি কীবোর্ডের স্বাভাবিক ও শিফট বোতামের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমি বাংলা হরফের হিসাবটাও ’৫২-এর কাছাকাছি করতে সক্ষম হই। সেজন্য দুটি স্বরবর্ণ, ৯টি স্বরচিহ্ন, ৩৯টি ব্যঞ্জনবর্ণ, একটি লিঙ্ক ও একটি যতিচিহ্ন ও তিনটি ফলা মিলিয়ে মোট ৫৫টিতে সামাল দিতে সক্ষম হই। আমার কাছে মনে হয়েছে, কীবোর্ড দুয়েক লাইন বাংলা লেখার জন্য নয়, পেশাদারিত্বের জন্য। দুয়েক লাইন তো কোনো বিজ্ঞানসম্মত নয়- এমন কীবোর্ড ছাড়াও লিখতে পারি। মোবাইলে যেখানে ২৬টি হরফের বোতাম নেই, সেটি দিয়েও তো লিখতে পারি। কিন্তু আমাকে যদি অনেক লেখা বেশ দ্রুতগতিতে লিখতে হয়, তবে টাইপের গতিটা খুবই জরুরি। টাইপের এই গতিটা আসতে পারে বোতামে অক্ষরের সংখ্যা কম হলে, মনে রাখা সহজ হলে এবং যেসব অক্ষরের ব্যবহার বেশি সেগুলো হোম কী-তে থাকলে। শুরুতে আমি শহীদ মুনীর চৌধুরীর টাইপরাইটারের কীবোর্ড অনুসরণ করে চার স্তরের কীবোর্ড তৈরি করি। তাতে মুনীর কীবোর্ডের সাথে শুধু দুটি নতুন স্তর যোগ করা হয়। তখনও কমপিউটারের প্রোগ্রামিং করার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে যুক্তাক্ষর বানানোর বিষয়টির কথা ভাবিনি। তাতে বড় অসুবিধা হয় যে কমপক্ষে ১৮৮টি বোতাম মনে রাখতে হতো। সেটি টাইপের গতি কমানো ছাড়াও অহেতুক জটিলতা তৈরি করে। বস্ত্তত অ্যাপল মেকিন্টোসে এ ধরনের প্রোগ্রামিং করার মানুষের সন্ধানও আমার কাছে ছিল না। সেই কাজটি আমাকে করতে হয় ভারতে গিয়ে। পরে দুই স্তরের কীবোর্ড বানানোর সময় আমি বাংলাভাষার মাধুর্য বা বিজ্ঞানসম্মত দিকটি কাজে লাগাই। বাংলা হরফের অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণ ও হসমেত্মর ব্যবহারকে আমি কীবোর্ডের প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহার করি। সে কারণেই বিজয় কীবোর্ড এখনও পেশাদারিত্বে সেরা। কিন্তু এটি বাস্তবতা, কমপিউটারের বাংলা লেখা যখন ইউনিকোডভিত্তিক হয় এবং ইন্টারনেটকে যখন বাংলা লেখার একটি বড় ভিত্তি হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়, তখন থেকেই রোমান হরফে টাইপ করে বাংলা লেখার পদ্ধতি জনপ্রিয় হতে থাকে। এ ক্ষেত্রে অভ্র জনপ্রিয়তাও অর্জন করে। আমি অবাক হইনি এটি দেখে যে, অভ্র নামের কোনো কীবোর্ড নেই। এটি আসলে রোমান হরফে বাংলা লেখার একটি বিশেষ উপায়। আমাদের তরুণেরা এই পদ্ধতিটিকে সহজতর উপায় বলে বিবেচনা করতে থাকে এবং কালক্রমে ফেসবুক স্ট্যাটাস লেখার একটি খুবই জনপ্রিয় উপায় হয়ে দাঁড়ায়। যদিও আমরা লক্ষ করেছি, এসব বাংলা লেখালেখিতে প্রচুর পরিমাণ ভুল থাকে এবং লেখকেরা যা লিখতে চান তা সঠিকভাবে সহজে লিখতে পারেন না। এর কারণটি অতি সহজ। আমরা লক্ষ করেছি, রোমান হরফে যুক্তাক্ষর তো দূরের কথা অনেক সাধারণ ব্যঞ্জনবর্ণও লেখা যায় না। যেসব বাংলা হরফ রোমান হরফ দিয়ে লেখা যায় না তার সংখ্যাও কম নয়। ঋ, ঙ, চ, ঞ, ণ, ত, থ, দ, ধ, শ, ড়, ঢ়, য়, ং, ৎ,ঃ, ঁ লেখার জন্য কোনো রোমান বর্ণ ব্যবহার করা যায় না। এ ছাড়া বাংলা মহাপ্রাণ বর্ণগুলো লেখার জন্য একাধিক বর্ণ টাইপ করতে হয়। খ, ঘ, ছ, ঝ, ঠ, ঢ, শ, ষ ইত্যাদি বর্ণও কোনো রোমান হরফে লেখা যায় না। এগুলো লিখতে ইংরেজি য বর্ণটি বাড়তি যুক্ত করতে হয়। ফ ও ভ-এর জন্য দুটি রোমান হরফ অবশ্য রয়েছে। তবে এর সাথে প ও ব-এর জন্যও আলাদা বর্ণ রয়েছে। রোমান হরফের কাঠামোতে যেমন স্বরচিহ্ন, ফলা, যুক্তাক্ষর নেই, তেমনি নেই অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণ পদ্ধতি। এমন একটি অবস্থায় রোমান হরফ দিয়ে লেখা মানে যে কী বিড়ম্বনা, সেটি যারা লেখেন তারাই উপলব্ধি করতে পারেন। রোমান হরফ দিয়ে তথাকথিত ফনেটিক পদ্ধতিতে বাংলা লেখার বিবরণী দেখলেই তা আরও স্পষ্ট হয়।
এত কিছু জানার পরও আমার কাছে মনে হয়েছে, রোমান হরফের সাথে উচ্চারণকে কাছাকাছি রেখে বিজয়ের অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণ ও হসন্ত সংযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কি একটি রোমান হরফের উচ্চারণভিত্তিক বাংলা কীবোর্ড তৈরি করা যায়?
এ ধরনের একটি চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে আমি একটি রোমান হরফের উচ্চারণভিত্তিক বাংলা কীবোর্ডের প্রস্তাবনা তৈরি করার প্রয়াস চালিয়েছি। এই প্রস্তাবনার প্রথম নিয়মটি হচ্ছে বাংলা যুক্তাক্ষরকে কীবোর্ডে না রাখা। কারণ, বাংলা সব অক্ষর প্রচলিত কোনো কীবোর্ডে রাখা যাবে না। সীসার টাইপের হিসেবে ৪৫৪ ও শহীদলিপির হিসেবে ৭০০ বাংলা হরফ কোনোভাবেই কীবোর্ডে ঠাঁই পেতে পারে না। এজন্য যুক্তাক্ষর ও স্বরবর্ণ তৈরিতে হসন্ত ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ যুক্তাক্ষর ছাড়াও স্বরবর্ণের ক্ষেত্রেও বিজয়ের মতো মাত্র অ-ও বাদে বাকিগুলোর জন্য হসন্ত প্রয়োগ করা। এই দুটি নিয়মই বিজয় কীবোর্ডের প্যাটেন্ট। এরপর বিজয় কীবোর্ডের প্যাটেন্ট অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণ পদ্ধতিটি ব্যবহার করা যায়। আমরা বিজয় কীবোর্ডের মতোই ৫৫টি বোতাম ব্যবহার করতে চাই। র ফলা, য ফলা ও রেফ হবে বাড়তি তিনটি হরফ। এবার রোমান হরফের সাথে উচ্চারণে মিলে তেমন অক্ষরগুলোর মাঝে বেশি ব্যবহৃতগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় স্থাপন করা যায়। এভাবে আমি কোর, র, ট,vা কার, কিার, ু কার, প,া কার, স, ড, গ, হ, জ, ক, ল, য, ব, ন ও ম বর্ণগুলো স্থাপন করতে পারি। এসব বাংলা হরফের সাথে কাছাকাছি উচ্চারণের রোমান হরফ রয়েছে। এর সাথে অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণ জোড় তৈরি করা যায়। সেজন্য কৈার, র ফলা, ঠ,ŠŠ কার,ী কার, ফ, অ, ষ, ঢ, ঘ, ঝ, খ, য ফলা, ভ, ণ ইত্যাদি বর্ণ স্থাপন করতে পারি। এরপর আমরা অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণ জোড়ার কথা ভুলে গিয়ে বাকি বর্ণগুলোকে স্থাপন করতে পারি।
এবার প্রয়োজন হবে ঋ, ঙ, ঞ, ত, থ, দ, ধ, শ, ড়, ঢ়, য়, ং, ৎ,ঃ, ঁ এবং রেফ বর্ণগুলোকে স্থাপন করা। আমরা এরই মাঝে জেনে গেছি, এই অক্ষরগুলোর সাথে রোমান হরফ মেলাতে পারব না। তাই আমরা রোমান কীবোর্ডের যেসব বোতাম এখনও খালি আছে, সেগুলোতে ব্যবহারের ঘনত্ব অনুসারে বাংলা অক্ষরগুলোকে বসাতে পারি। এমন অবস্থায় কেমন হতে পারে আমাদের পুরো কীবোর্ডটি? রোমান হরফের সাথে মিলিয়ে বাংলা বর্ণগুলোকে বসিয়ে আমরা দেখতে পারি এই আনন্দময় কীবোর্ডটি কেমন হতে পারে? ধরে নিলাম এর নামই আনন্দ।
এবার আমরা ইংরেজি বর্ণের সাথে বাংলা হরফগুলোকে বসাতে পারি। অ বোতামো, অ; ই বোতামে ব, ভ; ঈ বোতামে চ, ছ; উ বোতামে ড, ঢ; ঊ বোতামে ,, ;; ঋ বোতামে হসন্ত, ।; এ বোতামে গ,ঘ; ঐ বোতামে হ,ৃ; ও বোতামে ,,ী; ঔ বোতামে জ, ঝ; ক বোতামে ক,খ; খ বোতামে ল, র্ (রেফ); গ বোতামে ম, শ; ঘ বোতামে ন, ণ; ঙ বোতামেু, ূ; চ বোতামে প, ফ; ছ বোতামে ঙ, ং; বোতামে জ র, ্র (র) ফলা, ঝ বোতামে স, ষ; ঞ বোতামে ট,ঠ; ট বোতামে ও, Š; ঠ বোতামে দ, ধ; ড বোতামে য়, ঞ; বোতামে ঢ ত, থ; ণ বোতামে ড়, ঢ়; ত বোতামে য,্য; \ বোতামে ৎ,ঃ এবং শিফট ৭ বোতামে ঁ (চন্দ্রবিন্দু)।
এই উপমহাদেশের ভাষাগুলোর কমপিউটার কীবোর্ডগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রোমান হরফের মতো একটি প্রমিত কীবোর্ড এসব ভাষার জন্য প্রচলিত হয়নি। বরং প্রায় প্রতিটি ভাষাতেই ডজন-হাফডজন কীবোর্ড রয়েছে। কোথাও কোথাও সরকারি প্রমিত কীবোর্ড থাকলেও সেগুলোর প্রচলন মোটেই নেই। বাংলাভাষার জন্য অসংখ্য কীবোর্ড তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে বিজয় একটি মানদ- দাঁড় করালেও ভারতে অবস্থা খুবই নাজুক। অন্যদিকে এভাবে প্রতিদিন নতুন নতুন কীবোর্ড তৈরি হলে জটিলতা আরও বাড়তে থাকবে
ফিডব্যাক : www.bijoyekushe.net