লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ইন্টেলের পঞ্চম প্রজন্মের ব্রডওয়েল প্রসেসর
পঞ্চম প্রজন্মের ব্রডওয়েল-ওয়াই ডুয়াল কোর প্রসেসর অবমুক্ত করেছে ইন্টেল। এবারের কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স শোতে (সিইএস) পঞ্চম প্রজন্মের প্রসেসরের পূর্ণাঙ্গ সিরিজ অবমুক্ত করেছে বিশ্বের বৃহত্তম মাইক্রোচিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। ব্রডওয়েল-ওয়াই প্রসেসরের সাথে এবার যুক্ত হয়েছে ব্রডওয়েল-ইউ। ১৪ ন্যানোমিটার আর্কিটেকচারে তৈরি এই প্রসেসর পাওয়া যাবে কোরআই৩, কোরআই৫ ও কোরআই৭ হিসেবে। আর এই সিরিজের প্রতিটি প্রসেসরে সংযুক্ত থাকবে বিল্টইন জিপিইউ। মূলত এই প্রসেসরের মাধ্যমেই মূলধারার নোটবুক ও ছোট আকৃতির ডেস্কটপ পিসিতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টেল প্রসেসর। এই প্রসেসর হাজির হওয়ার সাথে সাথে এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তৈরি ডিভাইসগুলোও বাজারে আসার জন্য প্রস্ত্তত হতে শুরু করেছে। এসার, আসুস, ডেল, লেনোভো, এইচপি, তোশিবা- এই প্রসেসরগুলো এদের আপকামিং পণ্যে ব্যবহার করবে বলে জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বছর বাজারে আসতে যাওয়া নতুন ম্যাকবুক এয়ারেও এই প্রসেসর ব্যবহার হবে বলে খবর রয়েছে প্রযুক্তিবিশ্বে।
পঞ্চম প্রজন্মের এই ব্রডওয়েল প্রসেসরগুলো আগের চতুর্থ প্রজন্মের হ্যাসওয়েল প্রসেসরের তুলনায় অনেক বেশি কর্মক্ষম এবং এগুলোর বিদ্যুৎ খরচও অনেক কম। এগুলো আকারেও তুলনামূলকভাবে ছোট। ফলে প্রযুক্তিপণ্যকে আরও ছোট করে ডিজাইন করার যে ধারা তৈরি হয়েছে, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ব্রডওয়েল প্রসেসর। থ্রিডি গ্রাফিক্সে ২২ শতাংশ বেশি পারফরম্যান্স দেবে ব্রডওয়েল প্রসেসর। এতে ভিডিও কনভার্সনেও গতি পাওয়া যাবে ৫০ শতাংশ বেশি। যেসব ডিভাইসে ব্রডওয়েল প্রসেসর ব্যবহার করা হবে, সেগুলোতে হ্যাসওয়েল প্রসেসরের তুলনায় দেড় ঘণ্টা বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপও পাওয়া যাবে। বলা হচ্ছে, ইন্টেলের তৈরি যেকোনো প্রসেসরের তুলনায় এর বিদ্যুৎ খরচ কম। ফলে ব্রডওয়েল প্রসেসর ইন্টেলের জন্য ব্যবসায়িক দিক দিয়ে লাভজনক হবে বলেই মন্তব্য করেছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা। আকারে ছোট হওয়ায় মোবাইল ডিভাইসগুলোতে এর ব্যবহার যেমন বাড়বে, তেমনি শক্তিশালী হওয়ায় কমপিউটিং পণ্য প্রস্ত্ততকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও এটি ব্যবহারে আগ্রহী হবে। ইন্টেল জানায়, ব্রডওয়েল চিপ ট্যাবলেট থেকে শুরু করে টু ইন ওয়ান আল্ট্রাবুক, ডেস্কটপ ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ওয়ার্কস্টেশনে ব্যবহার করা যাবে।
ডিভাইসের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্রডওয়েল প্রসেসর বিভিন্ন কনফিগারেশনে তৈরি করা হবে। এর বল গ্রিড অ্যারে (বিজিএ) প্যাকেজের মধ্যে থাকছে ব্রডওয়েল-ওয়াই, ব্রডওয়েল-ইউ ও ব্রডওয়েল-এইচ। এলজিএ ১১৫০ সকেটের ক্ষেত্রেও ব্রডওয়েল-এইচ সংস্করণটি থাকছে। এ ছাড়া এলজি ২০১১-৩ সকেটের ক্ষেত্রে ব্রডওয়েল-ইপি ও ব্রডওয়েল-ইএক্স নামে প্রসেসর বাজারে ছাড়া হবে।
সিস্টেম অন চিপ, ৪.৫ ওয়াট ও ৩.৫ ওয়াট টিডিপি ক্লাসের ব্রডওয়েল-ওয়াই প্রসেসরটি ট্যাবলেট ও আল্ট্রাবুকের জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এতে জিটি২ জিপিইউ ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এটি সর্বোচ্চ ৮ গিগাবাইটের এলডিডিডিআর৩-১৬০০ র্যা ম সমর্থন করবে। এটিকে প্রথমে ব্রডওয়েল-ওয়াই বলা হলেও একে কোর-এম নামে ব্র্যান্ড করে ইন্টেল।
সিস্টেম অন চিপ, দুটি টিডিপি ক্লাসের ব্রডওয়েল-ইউ প্রসেসরটি মূলত ইন্টেলের আল্ট্রাবুক ও এনইউসি প্লাটফর্মের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ ১৬ গিগাবাইটের ডিডিআর৩এল-১৬০০ র্যা ম অথবা ৮ গিগাবাইটের এলডিডিডিআর৩-১৬০০ র্যা ম সমর্থন করবে।
এর ‘এইচ’ সিরিজটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সিস্টেমের উপযোগী করা হবে ব্রডওয়েল-এইচ ও ৪৭ ওয়াটের পাওয়ার ড্রসহ একটি বা দুইটি চিপ কনফিগারেশন থাকবে। এর কোয়াড-কোর সংস্করণ ৩২ গিগাবাইটের ডিডিআর৩এল র্যা ম সমর্থন করবে। এ ছাড়া ৮ বা ১০ কোরের চিপসেটটি বিশেষ কাজ এবং ওয়ার্কস্টেশনের পিসির জন্য উপযোগী। জানা গেছে, ইন্টেল ১৮ কোর প্রসেসর নিয়ে কাজ করছে, যা ডিডিআর৪ র্যা ম সমর্থন করবে।
ব্রডওয়েল প্রসেসরে আগের প্রসেসরগুলোর তুলনায় গ্রাফিক্সে অনেক উন্নয়ন করা হচ্ছে। এতে ২৪ এক্সিকিউশন ইউনিটসহ জিডি৩ গ্রাফিক্সের কারণে গেমিং অ্যাপ্লিকেশন চালানো আরও আনন্দদায়ক হবে। এতে নতুন ভিডিও ডিকোডার/এনকোডার হার্ডওয়্যার যুক্ত হচ্ছে, যা ভিপি৮ কোডেক সমর্থন করবে। ফলে ভিডিও কোয়ালিটিসহ ভিডিও রেজ্যুলেশন ও ক্রপিং সুবিধা আরও উন্নত হবে। ব্রডওয়েল প্রসেস ৬০ গিগাহার্টজের রিফ্রেশ রেটে কমপক্ষে ৩৮৪০ বাই ২১৬০ পিক্সেল রেজ্যুলেশন সমর্থন করবে। কিছু কিছু মডেল সর্বোচ্চ ৪০৯৬ বাই ২৩০৪ পিক্সেল রেজ্যুলেশনও সমর্থন করবে। ইন্টেল হ্যাশওয়েল প্রসেসরের মতো ব্রডওয়েল প্রসেসর ডিরেক্টএক্স ১১.১ ও ওপেনজিএল ১.২ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস সমর্থন করবে। এ ছাড়া উচ্চ কনফিগারেশনের মডেলগুলো ওপেনজিএল ২.০ ও ওপেনজিএল ৪.২ সমর্থন করবে।
ইন্টেলের দাবি, ব্রডওয়েল প্রসেসর আগের সংস্করণের প্রসেসরগুলোর তুলনায় ৩০ শতাংশ কম পাওয়ার খরচ করবে। বিপরীতে প্রায় একই ধরনের পারফরম্যান্স দেবে। কম পাওয়ার খরচের কারণে ডিভাইসের ব্যাটারির ব্যাকআপ ও লাইফটাইম বাড়বে। এই প্রসেসর ব্যবহারে আইওএস ও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়বে। মাদারবোর্ডের আগের সকেটগুলোতেই ব্রডওয়েল চিপ বসানো যাবে। এটি মূল ডেস্কটপের ক্ষেত্রে এলজিএ১১৫০ সকেট ও মোবাইলের ক্ষেত্রে জি৩ সকেটের ডিজাইনে তৈরি করা হবে
ফিডব্যাক : sohel_sr@yahoo.com