লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
অজিত কুমার সরকার
মোট লেখা:৫
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী
বর্ষসেরা আইটি ব্যক্তিত্ব জুনাইদ আহমেদ পলক
জুনাইদ আহমেদ পলক। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-৩ আসন থেকে জয়লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের কনিষ্ঠতম সংসদ সদস্য। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জাতীয় সংসদে ও টেলিভিশন টকশোতে মার্জিত ও যুক্তিনির্ভর বক্তব্য উপস্থাপনের কারণে খুব দ্রুতই তার আলাদা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১২ জানুয়ারি নবগঠিত মন্ত্রিপরিষদে তাকে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। আগের মেয়াদে পাঁচ বছর ও বর্তমান মেয়াদে এক বছর দেশে এবং বিদেশে আইসিটি বিষয়ক নানা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়ে তিনি নিজেকে সমৃদ্ধ করেন। পলক যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিসহ তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রগামী বিভিন্ন দেশ সফর করেন এবং তথ্যপ্রযুক্তির নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে পলক দেশের আইসিটি খাতের দ্রুত বিকাশ-সহায়ক আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন, বিভিন্ন উদ্যোগ, প্রকল্প ও কর্মসূচি নেয়া ও বাস্তবায়নের সাথে সরাসরি যুক্ত। আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর গত এক বছরে তার সবচেয়ে বড় সাফল্য কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ককে মামলা থেকে মুক্ত করে দ্রুত উন্নয়ন কাজ শুরু করা। আইসিটি বিভাগের বাংলাগভনেট ও ইনফো সরকার প্রকল্পের আওতায় নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠার লক্ষে দেশের সব উপজেলায় ফাইবার অপটিক ক্যাবল লাইনের সংযোগ দেয়ার কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করায় তিনি ভূমিকা রাখেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি ফোরাম ও ইভেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে তিনি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। ২০১৪ সালের অক্টোবরে তারই নেতৃত্বেব বাংলাদেশ দলের কূটনৈতিক দক্ষতায় দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) কাউন্সিল সদস্য পদের নির্বাচনে জয়লাভ করে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি ২০১৪ সালের ১০ জুন জেনেভায় ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডবিস্নউএসআইএস) অ্যাওয়ার্ড ২০১৪ ও ৩১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ মেক্সিকোতে ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যালায়েন্স (ডবিস্নউআইটিএসএ) এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশকে এসব পুরস্কার দেয়া হয়। আইসিটি বিভাগের দায়িত্বভার নেয়ার পর আইন ও নীতিমালার যুগোপযোগীকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, অবকাঠামো তৈরি ও শিল্পোন্নয়নে সম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্যোগ, প্রকল্প ও কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ তথা তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে তিনি খুব দ্রুত হয়ে ওঠেন একজন তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব মানুষ। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে তার আন্তরিক প্রচেষ্টা, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদানের মূল্যায়ন করে কমপিউটার জগৎ ২০১৪ সালের বর্ষসেরা আইটি ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাকে ঘোষণা করে।
সংসদীয় রাজনীতিতে আগমন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশ নেয়া
২০১২ সালে প্রকশিত জাতিসংঘের ‘ইয়ুথ, পলিটিক্যাল পারটিসিপেশন অ্যান্ড ডিসিশন মেকিং’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে সংসদ সদস্যদের গড় বয়স ৫৩ বছর। আর ৩০ বছর বয়সীদের সংখ্যা ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গবেষণাধর্মী প্রতিবেদনটিতে আরও বেশি সংখ্যক তরুণের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেলে তরুণ সংসদ সদস্যরা সামগ্রিক উন্নয়নসহ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়ন ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
বাংলাদেশে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে দুটি বড় ঘটনা। ০১. রূপকল্প ২০২১ ঘোষণায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার এবং ০২. উল্লেখসংখ্যক তরুণ ও যুবাকে ওই নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন কার্যক্রমে তাদের সম্পৃক্ত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তারই যেন প্রতিফলন ঘটে উল্লিখিত গবেষণা প্রতিবেদনের মূল প্রতিপাদ্যে। প্রধানমন্ত্রী তরুণ ও যুবাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব তৈরি এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার জন্যই তাদের মনোনয়ন দেন। ফলে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে তরুণ ও যুবাদের নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে কম বয়সী তরুণের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথের ঘটনাটিও ঘটে নবম সংসদে। মাত্র ২৮ বছর বয়সের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য হিসেবে জুনাইদ আহমেদ পলকের সংসদীয় রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে ২০০৯ সালের গঠিত নবম সংসদে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর আইসিটি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির নানা বিষয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন। সরাসরি যুক্ত থাকেন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের নানা পরিকল্পনা, উদ্যোগ, প্রকল্প ও কর্মসূচি নেয়ার সাথে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নেন। তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর।
মন্ত্রী হিসেবে তার এক বছর
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর জুনাইদ আহমেদ পলকের এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। এ সময় তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রাকে মসৃণ করায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেন। অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা, শিল্পোন্নয়ন এবং আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন- এ চার ক্ষেত্রে আইসিটি বিভাগের চলমান বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন দ্রুততর করার উদ্যোগ নেয়া হয়। একই সাথে আগামী দিনে কর্মপরিকল্পনার একটি রূপরেখাও প্রণয়ন করেন তিনি। হাইটেক পার্ক একটি দেশের আইসিটি খাতের জন্য লাইফলাইন। আইসিটি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা প্রথমেই দেখে হাইটেক পার্ক আছে কি না। এ বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়েই ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক নির্মাণ সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ মামলা। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জুনাইদ আহমেদ পলক দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমেই কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ককে মামলা থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেন এবং এতে তিনি সফলও হন। এ পার্কের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ডেভেলাপার নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। দীর্ঘদিন স্থবির হয়ে থাকা হাইটেক পার্ককে মামলার বেড়াজাল থেকে বের করে আনার ঘটনাটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন দেশের আইটি শিল্পসংশ্লিষ্টরা। শুধু কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক নয়, যশোর সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ এবং বিভাগগুলোতে হাইটেক পার্কের জমি অধিগ্রহণের কাজ দ্রুত করার উদ্যোগ নেন তিনি। যশোরে হাইটেক পার্কের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে মার্চে। আগামী চার বছরে হাইটেক পার্কে ৭০ হাজার দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আইসিটি বিভাগ।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, পাঁচ বছরে আইসিটি খাতে রফতানি আয় ১ বলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আইসিটি বিভাগ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নেটওয়ার্কিং গড়ে তোলার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্যই এটা দরকার। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের মধ্যেই দেশের প্রায় সব উপজেলাকে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করে বাংলাগভনেট ও ইনফো সরকার প্রকল্পের আওতায় আইসিটি বিভাগ। এর ফলে এ বছরের মধ্যেই সারাদেশের ১৮ হাজার ১৩২টি সরকারি সংস্থা অভিন্ন নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) থেকে সচিবালয় পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক ক্যাবল সংযোগ দেয়া হয়। প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয় এখন ফ্রি ওয়াইফাই জোনের আওতায়।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি বিভিন্ন কার্যক্রম, তথ্য ও সেবা অনলাইন ভার্সনে রূপান্তর করছে। কিন্তু তাদের এসব তথ্য ও সেবা সংরক্ষণের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। প্রচুর তথ্য ধারণক্ষমতাসম্পন্ন তথ্যভা-ার বা ডাটা সেন্টার নেই। বিসিসিতে একটি টিয়ার-৩ সার্টিফায়েড ডাটা সেন্টার রয়েছে। কিন্তু এ সেন্টারটির ধারণক্ষমতা মাত্র ৭৫০ টেরাবাইট এবং ব্যান্ডউইডথ ক্যাপাসিটি ১ জিবিপিএম। এমনি বাস্তবতায় আইসিটি বিভাগ ডাটা সেন্টারের সম্প্রসারণে কী উদ্যোগ নিয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে পলক বলেন, বিসিসিতে অবস্থিত ডাটা সেন্টারটির ধারণক্ষমতা আগামী বছরের মধ্যে ২ পেটাবাইটে উন্নীত করা হবে। কিন্তু অনলাইনে সেবা দেয়ার কলেবর দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আইসিটি বিভাগ হাইটেক পার্কে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম টিয়ার-৪ সার্টিফায়েড ডাটা সেন্টার গড়ে তুলছে। সেখানে ক্লাউড কমপিউটিং প্রযুক্তি সংযোজন করা হবে এবং জি-ক্লাউড স্থাপন করা হবে। একই সাথে ডাটা সেন্টারের সংরক্ষিত তথ্য বিকল্প স্থানে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার বাইরে যশোরে একটি ডিজাস্ট্রার রিকোভারি সেন্টার (ডিআরসি) স্থাপন করা হচ্ছে। আইসিটি বিভাগ অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে একটি ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার অ্যান্ড ইন্টারঅপারেবিলিটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির জন্য ইতোমধ্যে বিশ্বখ্যাত কোম্পানি আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের সাথে চুক্তি সম্পাদন করেছে। এর ফলে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আমত্মঃসংযোগ এবং পারস্পরিক তথ্য বিনিময় আরও সহজতর হবে বলে জানান পলক। তিনি বলেন, ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার টেস্টিং ল্যাব, নেটওয়ার্ক ল্যাব, রোবটিক ল্যাব, অ্যানিমেশন ল্যাবসহ বিভিন্ন ধরনের ১৫টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন ও ৩৫০০ স্কুলে আবাসিক কমপিউটার ল্যাব করেছে আইসিটি বিভাগ।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমাদের সরকার বিশ্বাস করে, অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। যে কারণে থ্রিজি নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে সব জেলা থ্রিজি নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে। এ বছরের মধ্যে সব উপজেলা থ্রিজি নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসবে এবং আগামী বছরে ফোরজি সেবা চালু করা হবে। একই সাথে ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইডথ চাহিদা মেটানোর আগাম পরিকল্পনা হিসেবে ২০১৪ সালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সিইএ-এমই-ডবিস্নউই-৫ কনসোর্টিয়ামের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ। ফ্রান্সের অ্যালকাটেল এবং জাপানের এনইসি কর্পোরেশন এ সাবমেরিন ক্যাবল লাইন স্থাপনের কাজ সম্পাদন করছে।
বাংলাদেশের আইসিটি খাতের প্রায় এক হাজারের বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু এ শিল্প দ্রুত বিকশিত হতে পারছে না দক্ষ মানবসম্পদের অভাবে। গুণগত মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। এ নিয়ে কী ভাবছে সরকার? এ প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইসিটি খাত মানসম্মত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার সুনির্দিষ্ট প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এলআইসিটি) প্রকল্প বিশ্বমানের প্রশিক্ষণে ৩৪ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি সেবার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং একাই ৩০ হাজার তরুণ-তরুণীকে টপআপ আইটি প্রশিক্ষণ এবং এ মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশকে এরা চাকরি দেবে। বাকি ২০ হাজার তরুণ-তরুণীকে এরা ফাউন্ডেশন ট্রেনিং দেবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাপোর্ট টু হাইটেক পার্ক, ডেভেলাপমেন্ট অব কালিয়াকৈর প্রকল্প আইটি/আইটিইএস সেক্টরে দক্ষ জনবল সৃষ্টির লক্ষে ১০০ জন আইসিটি গ্র্যাজুয়েটকে অ্যাডভান্সড জাভা প্রশিক্ষণ নিতে বিশ্বখ্যাত ইনফোসিস টেকনোলজিস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া স্কিল এনহ্যান্সমেন্ট কর্মসূচির আওতায় ৩ হাজার জনকে ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পলক বলেন, ২০১৪ সালে আমরা ১ হাজার জনের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেছি এবং বাকি ১৪৫০ জনের প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে।
দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার অংশ হিসেবে আইসিটি বিভাগ বিভিন্ন নামে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে। এর মধ্যে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং কর্মসূচিতে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার চালু করা হয়। পরে আইসিটি বিভাগ ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্প গ্রহণ করে এবং এ প্রকল্পের অধীনে দেশে আরও ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা হচ্ছে। ‘বাড়ি বসে বড় লোক’ কর্মসূচিতে ২৬ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১২ হাজার নারীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সাড়ে ৩ থেকে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের মোবাইল অ্যাপস ও গেমের বাজার রয়েছে। এ বাজারের সুবিধা নেয়ার লক্ষে সরকার ৩ হাজার ৫০০ মোবাইল অ্যাপস ডেভেলাপার তৈরি করেছে। পলক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির বহুমুখী খাত থেকে দুটি আত্মনির্ভরশীল মানুষ এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফ্রিল্যান্সার প্রশিক্ষণ নিয়ে মানুষ ঘরে বসে পরিবারের মধ্য থেকে আয় করতে পারে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আউটসোর্সিং উৎস থেকে আয়ের ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৭ লাখ ফ্রিল্যান্সার বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নিবন্ধন করেছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার। সরকার তরুণ-তরুণীদের ফ্রিল্যান্সার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করে নির্ভরশীল আউটসোর্সিংয়ের উৎস থেকে আয়ে উৎসাহিত করছে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সরকারি উদ্যোগে আইসিটি শিল্পের উন্নয়নের বেশ কিছু উদ্যোগের কথা জানান। সাপোর্ট টু ডেভেলাপমেন্ট অব কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের এমপ্লয়ী ইনসেনটিভ প্রোগ্রামের মাধ্যমে চাকরিতে নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা দেয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে। আইটি/আইটিইএস খাতে ৪০টি প্রতিষ্ঠানকে সিএমএম-৩, সিএমএম১-৫, আইএসও:৯০০১, আইএসও:২৭০০১ সার্টিফিকেশন লাভের সহায়তা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থোলনসের সাথে আইসিটি খাতের উন্নয়নের কর্মকৌশল নির্ধারণের লক্ষে এলআইসিটি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পলক বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার ও প্রসারে সময়ে আইন ও পলিসি প্রণয়ন ও সংশোধনের প্রয়োজন হয়। ২০০৯ সালে প্রণীত আইসিটি পলিসি-২০০৯-এ আরও যুগোপযোগী ও কার্যকর করার লক্ষে সংশোধিত আইসিটি পলিসি-২০১৫-এর চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বর্তমানে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ই-সার্ভিসকে আইনী কাঠামো দেয়ার লক্ষে ই-সার্ভিস আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সাইবার ক্রাইম বেড়ে যাওয়ায় সাইবার অপরাধ দমনে বাংলাদেশকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবতে হয়। ইতোমধ্যে সাইবার অপরাধ দমনের লক্ষে সাইবার সিকিউরিটি গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। শিগগিরই একটি পূর্ণাঙ্গ সাইবার সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করা হবে। হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০ সংশোধন করা হয়েছে এবং এ আইনের আওতায় হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বিধিমালা এবং ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইসিটি খাতে গবেষণামূলক কার্যক্রমে উৎসাহিত দেয়ার লক্ষে্য আইসিটি ফেলোশিপ চালু করা হয়েছে ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে অর্থায়নের লক্ষে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সংশোধন করে ইনোভেশন ফান্ডের ঊর্ধ্বসীমা ৫ লাখ থেকে ২০ লাখে উন্নীত করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পলক
বিশ্বব্যাপী ফেসবুকে ১৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ যুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ৮০ লাখ। মার্কেটার, অ্যাপ ডেভেলাপার এবং সংযোগ প্রদানকারীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সার্বিক কাঠামোতে ফেসবুক অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। ইন্টারনেট ছড়িয়ে পড়ার পেছনেও অন্যতম মূল ভূমিকা পালন করছে ফেসবুক। দেশের রাজনৈতিক নেতাদের ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের হার খুব বেশি নয়। আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেয়ার পর অনেকের মাঝে কৌতুহল জাগে- দলীয় নেতারা কতটা ডিজিটাল? তারা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে আদৌ অভ্যস্ত হবেন কি না। কিন্তু পরে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে তরুণ সংসদ সদস্যরা অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় খুবই সক্রিয়। তবে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে ফেসবুকে বেশি যুক্ত থাকতে দেখা যায় জুনাইদ আহমেদ পলককে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে খুবই সক্রিয়। তার নামে রয়েছে আলাদা ওয়েবসাইট, যা ইতোমধ্যে গুগলের ফেসবুক পেজের স্বীকৃতি পেয়েছে। পলক জানান, ফেসবুকে তার প্রায় লক্ষাধিক বন্ধু রয়েছে। ‘মানুষে মানুষে সংযোগে ফেসবুক সারাবিশ্বে জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর পরিপূর্ণ ব্যবহার করে আমি লাখো মানুষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ২০টি পোস্ট আমি ফেসবুকে দেই, যা আমাদের কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত’- পলক বলেন। একে অন্যের আইডিয়া ও অনুভূতি শেয়ার করার এক মাধ্যম ফেসবুক