• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > সংখ্যাব্যবস্থা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গণিতদাদু
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
গণিত
তথ্যসূত্র:
ম্যাথ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
সংখ্যাব্যবস্থা
গণিতের অলিগলি- পর্ব-১১০
সংখ্যা আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সবকিছুর পরিমাপের পেছনে সংখ্যার ভূমিকা রয়েছে। এই সংখ্যা প্রকাশের বা গঠনের বেলায় আমাদেরকে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। এই নিয়মই হচ্ছে সংখ্যাব্যবস্থা। ইংরেজিতে যা পরিচিত ‘নাম্বার সিস্টেম’ নামে। আমরা যে সংখ্যাব্যবস্থা ব্যবহার করি, তাতে রয়েছে দশটি সংখ্যাচিহ্ন বা অঙ্ক। এগুলো হচ্ছে ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯। দশটি অঙ্কে লেখা এ ব্যবস্থায় কোনো অঙ্ক এক ঘর বামে গেলে এর মান দশগুণ বেড়ে যায়, আবার এক ঘর ডানে গেলে এর মান কমে দশ ভাগের একভাগ হয়ে যায়। এ জন্য এ সংখ্যাব্যবস্থার নাম দশমিক সংখ্যাব্যবস্থা। ইংরেজিতে বলা হয় ডেসিমিল নাম্বার সিস্টেম। আবার কোনো কোনো সংখ্যাব্যবস্থায় সংখ্যা লেখার জন্য রয়েছে পাঁচটি অঙ্ক। পাঁচ বা দশ অঙ্কভিত্তিক সংখ্যাব্যবস্থা গড়ে ওঠার পেছনে একটি কারণ হচ্ছে- আমাদের এক হাতের মোট আঙুল পাঁচটি এবং দুই হাতের মোট আঙুল দশটি। কিন্তু এর অনেক ব্যতিক্রমও আছে। পশ্চিম আফ্রিকার বোলানেরা সংখ্যা গণনা করে সাতটি অঙ্কের ওপর ভিত্তি করে। নিউজিল্যান্ডের মাওরিদের সংখ্যাব্যবস্থায় রয়েছে এগারটি অঙ্ক। আর মধ্য আমেরিকার প্রাচীন মায়া সভ্যতার সংখ্যাব্যবস্থায় অঙ্কের সংখ্যা ছিল বিশটি। ব্যবিলনীয়দের সংখ্যাব্যবস্থা ছিল ৬০টি অঙ্কভিত্তিক।
আধুনিক কমপিউটার ব্যবহার করে বাইনারি সিস্টেম, যেখানে রয়েছে শুধু ০ আর ১। এই বাইনারি সিস্টেমে ১-এর মান এক ঘর বামে গেলে প্রতিবার দ্বিগুণ হয়ে যায়। অতএব, এই বাইনারি সিস্টেমে ১ লিখলে বুঝব আসলে লেখা হয়েছে ১, আর ১০ লিখলে বুঝব লেখা হয়েছে ২। ১০০ লিখলে বুঝব লেখা হয়েছে ৪ এবং ১০০০ লিখলে বুঝব লেখা হয়েছে ৮। কমপিউটারগুলো বাইনারি সিস্টেমের ০ ও ১ এই দুইয়ের মাঝখানে মাধ্যমিক পদক্ষেপ হিসেবে হেক্সাডেসিমিল বা হেক্স নামের আরেকটি সিস্টেম ব্যবহার করে, যা ষোল অঙ্কভিত্তিক। হেক্স ০ থেকে ৯ পর্যন্ত অঙ্কগুলোসহ ব্যবহার করে আরও ছয়টি ইংরেজি বর্ণমালা A, B, C, D, E ও F, যা সংখ্যা ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ সংখ্যাকেই কার্যত প্রকাশ করে। এই ১৬ সংখ্যাটি প্রতিনিধিত্ব করে ১০ হিসেবে। কী অবাক করা ব্যাপার!
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ, যিনি আমাদের প্রচলিত দশমিক ব্যবস্থায় সংখ্যা গণনায় অভ্যস্ত, তিনিও নিশ্চিতভাবে অন্যসব ব্যবস্থায় সংখ্যা ব্যবহার করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাবেন। আর কিশোর-তরুণেরা মনে করবে, এটি একটি ছেলেখেলা।
পাঁচ কার্ডের একটি মজার খেলা
এ খেলাটি দক্ষতার সাথে বন্ধুদের দেখিয়ে তাদের তাক লাগিয়ে দিতে পারবেন। বন্ধুরা মনে করবে আপনি সত্যিকারের একজন মাইন্ড রিডার বা মনপাঠক। অন্যের মনের কথা জেনে বলে দিতে পারেন। এ খেলাটি দেখানোর জন্য আপনাকে নিজ হাতে পাঁচটি কার্ড তৈরি করতে হবে। কার্ডটির আকার হবে আপনার সুবিধা মতো। তবে ক্রেডিট কার্ড আকারের কার্ড হলেই ভালো। কার্ড পাঁচটি নিয়ে নিচের মতো করে কার্ডের ওপর যথাক্রমে সাইন পেন ব্যবহার করে কালো কালি দিয়ে লিখে নিন ১, ২, ৩, ৪ ও ৫।

১ ২ ৩ ৪ ৫

এবার এই কার্ডগুলোর উল্টা পৃষ্ঠায় ধারাবাহিকভাবে একে একে করে লাল কালিতে লিখতে হবে ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১০ সংখ্যাগুলো। তবে লক্ষ রাখা চাই, ১-এর উল্টা পিঠে ৬, ২-এর উল্টা পিঠে ৭, ৩-এর উল্টা পিঠে ৮, ৪-এর উল্টা পিঠে ৯ ও ৫-এর উল্টা পিঠে ১০ লিখতে হবে। আবারও বলছি, কার্ডগুলোর একপাশে যথাক্রমে কালো অক্ষরে লেখা থাকবে ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ এবং এর উল্টা পিঠে ওপরে বর্ণিত উপায়ে লাল কালিতে লেখা থাকবে ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১০। কার্ড তৈরির কাজ হলে এবার খেলা দেখানোর পালা। খেলাটি দেখাতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।
০১. একজন বন্ধুর কাছে কার্ড পাঁচটি দিন। এবার তার দিকে পেছন দিয়ে উল্টা দিকে তাকান।
০২. এবার বন্ধুটিকে বলুন সবগুলো কার্ড তার সামনে কোনো টেবিল থাকলে টেবিলে, আর তা না হলে মেঝেতে রাখতে। কার্ডগুলো একটির পাশে আরেকটি থাকতে হবে।
০৩. এবার তাকে বলুন টেবিলে বা মেঝেতে পাঁচটি কার্ডের কয়টির লাল কালির সংখ্যা উপরের দিকে আছে, তা আপনাকে জানাতে।
০৪. আপনাকে তা জানানোর পর, এবার তাকে বলুন কার্ডের উপরের দিকে থাকা সংখ্যা পাঁচটির যোগফল বের করতে। কিন্তু আপনার সেই সংখ্যা পাঁচটির যোগফল আপনাকে জানানোর আগেই তাকে জানিয়ে দিতে পারবেন, এই যোগফলটি কত হবে এবং জোর গলায় তার আগেই বন্ধুটিকে জানিয়ে দিন। আপনার বন্ধুটি যোগফল নিজে বের করে দেখবেন আপনার উত্তর সঠিক। কী করে তা আপনার পক্ষে সম্ভব হলো, তা ভেবে নিশ্চয়ই বন্ধুটি অবাক হবেন। কারণ, কার্ডের উপরের দিকে থাকা সংখ্যা পাঁচটি না দেখেই আপনি এগুলোর যোগফল বলে দিতে পেরেছেন।
রহস্যটি কোথায় : ধরা যাক আপনার বন্ধু আপনাকে জানালেন, কোনো কার্ডের লাল সংখ্যাওয়ালা পিঠ উপরের দিকে ছিল না। এর অর্থ সবগুলো কালো সংখ্যা ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ কার্ডের উপরের দিকে ছিল। অতএব তখন সংখ্যা পাঁচটির যোগফল হবে ১৫। কারণ, ১ + ২ + ৩ + ৪ + ৫ = ১৫।
এখন যতগুলো কার্ডের লাল সংখ্যাওয়ালা পিঠ উপরের দিকে থাকবে, ততগুলো ৫ এই ১৫-এর সাথে যোগ করলে আপনি সহজেই সংখ্যা পাঁচটির যোগফল জেনে যাবেন। যদি দুইটি কার্ডের লাল সংখ্যা উপরে থাকে, তবে (২ ক্ম ৫) বা ১০ সংখ্যাটির সাথে ১৫ যোগ করলেই মোট যোগফল পেয়ে যাবেন। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে কার্ড পাঁচটির সংখ্যাগুলো হবে ১৫ + ১০ = ২৫। যদি কার্ড পাঁচটির সবগুলো লাল সংখ্যা উপরের দিকে থাকে, তবে ১৫-এর সাথে যোগ করতে হবে ৫ ক্ম ৫ = ২৫। এ ক্ষেত্রে কার্ড পাঁচটির সংখ্যাগুলোর যোগফল হবে ১৫ + ২৫ = ৪০।
এ খেলাটি বন্ধুদের দেখানোর আগে দুয়েকবার নিজে নিজে করে নিলে খেলাটি অধিকতর আকর্ষণীয়ভাবে আপনি দেখাতে পারবেন।
ভেবে দেখুন : এ খেলাটি বিভিন্ন সংখ্যার কার্ড নিয়েও দেখানো যেতে পারে। ধরুন, সাতটি কার্ড দিয়ে খেলাটি চান। তবে প্রথম কার্ড সাতটির এক পাশে কালো কালি দিয়ে যথাক্রমে ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ সংখ্যাগুলো লিখুন। অপরদিকে অপর পাশে লাল কালি দিয়ে লিখতে হবে ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪। মনে রাখতে হবে ১-এর উল্টা পিঠে ৮, ২-এর উল্টা পিঠে ৯, ৩-এর উল্টা পিঠে ১০, ৪-এর উল্টা পিঠে ১১, ৫-এর উল্টা পিঠে ১২, ৬-এর উল্টা পিঠে ১৩ ও ৭-এর উল্টা পিঠে ১৪ বসাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবগুলো কালো সংখ্যা উপরের দিকে রাখলে সংখ্যা সাতটির যোগফল হবে ২৮। কারণ, ১ + ২ + ৩ + ৪ + ৫ + ৬ + ৭ = ২৮। এখন যতগুলো লাল সংখ্যা উপরের দিকে থাকবে ততগুলো ৭ এই ২৮-এর সাথে যোগ করলেই সংখ্যা সাতটির কাঙিক্ষত যোগফল পাওয়া যাবে। ধরুন, আপনার বন্ধু এই সাতটি কার্ডের তিনটির লাল সংখ্যা উপরের দিকে রাখলেন। আর বাকি চারটি কার্ডের কালো কালির সংখ্যা উপরের দিকে রাখলে তবে এ ক্ষেত্রে সংখ্যাটির যোগফল হবে : ৩ ক্ম ৭ + ২৮ = ২১ + ২৮ = ৪৯।
আশা করি, কৌশলটি আয়ত্ত করতে পেরেছেন। এও আশা করি, কার্ড সংখ্যা আরও বাড়ালে সংখ্যাগুলোর যোগফল বের করার নিয়মটিও নিজে নিজে তৈরি করে নিতে পারবেন। চেষ্টা করে দেখুন, ৯ কার্ড নিয়ে এ খেলাটি দেখাতে গেলে নিয়মটি কেমন দাঁড়ায়।
গণিতদাদু


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস