লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মোহাম্মদ জাবেদ মোর্শেদ চৌধুরী
মোট লেখা:৫১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী
ইন্টারনেটে বাড়ছে তথ্য নিরাপত্তা ও প্রতিষ্ঠানের চাহিদা
ই-মেইল সেবা ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোর দৌরাত্ম্যে অনলাইন সমুদ্রে জমা হচ্ছে লাখো-কোটি ব্যক্তিগত তথ্য। তবে এসব তথ্যের বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর অজামেত্ম অনলাইনে ছড়িছে পড়ছে, যা তার জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৫ সালের তুলনায় ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে পড়ার হার দ্বিগুণ হয়েছে। তবে ফেসবুকের কর্ণধার জুকারবার্গের দৃষ্টিতে তথ্য উন্মোচনের হার দ্বিগুণ হতে মাত্র এক বছর সময় লেগেছে। তথ্য বাড়ার সাথে সাথে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ডিজিটাল প্রতারণা। প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, তথ্য চুরির হার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ সামাজিক যোগাযোগ সাইট। কেননা, এসব সাইটের ব্যবহারকারীরা বন্ধুদের পাঠানো বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন লিঙ্কে ক্লিক করছে। এর মধ্যে কিছু রয়েছে ক্ষতিকর অ্যাপ্লিকেশন। এই ক্ষতিকর অ্যাপসে ক্লিক করলে তথ্য চলে যাচ্ছে এসব অ্যাপ্লিকেশন নিয়ন্ত্রণকারীদের হাতে। বর্তমানে সাধারণ নাগরিকদের উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইন্টারনেট ব্যবস্থা। কারণ, এ অনলাইন জগতের কোনো না কোনো অজানা পেজে ছড়িয়ে আছে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য, এমনকি ছবি।
সচেতনতাই নিরাপত্তার বাহন
অনলাইন জগতে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি থেকে বাঁচতে হলে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। সামাজিক সাইট হোক আর ই-মেইলে হোক, কখনই অচেনা ব্যক্তির প্রস্তাবে সাড়া দেয়া ঠিক নয়। অজানা কোনো সাইটে নতুন আইডি খোলার বিকল্প হিসেবে ফেসবুক, টুইটার আইডি দিয়ে লগইন না করাই ভালো। সামাজিক যোগাযোগ সাইটে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে অনুমতি দেয়ার আগে সেটি কতটা নিরাপদ হতে পারে, তা যাচাই করে নিতে হবে।
পরিত্রাণের উপায়
পারমাণবিক চেইনের মতো একবার কোনো তথ্য অনলাইনে চলে গেলে মুহূর্তেই সেটা ছড়িয়ে পড়তে পারে অসংখ্য ওয়েবসাইটে। তাই একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে চাইলেই খুঁজে খুঁজে এসব তথ্য মোছা সম্ভব নয়। এ ধরনের সমস্যা থেকে উদ্ধারের জন্য বর্তমানে পেশাগতভাবে কাজ করে যাচ্ছে বেশ কিছু অনলাইন প্রতিষ্ঠান। আর ক্রমবর্ধমান সাইবার হামলার কারণে তথ্য নিরাপত্তাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোরও চাহিদা বাড়ছে। বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানিসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানই তথ্য নিরাপত্তাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। নিরাপত্তাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াচ্ছে।
বেশ কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান টার্গেটের সাইটে হামলা চালায় সাইবার অপরাধীরা। এর মাধ্যমে হ্যাকারেরা প্রতিষ্ঠানটির বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, ই-মেইল ঠিকানা, পাসওয়ার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য হাতিয়ে নেয়। টার্গেট ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠান সাইবার হামলার শিকার হয়। এ হামলার কারণে দিন দিন ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের তথ্যের নিরাপত্তায় বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানগুলোর শরণাপন্ন হচ্ছে।
তথ্য সংরক্ষণের একটি বিশেষ ব্যবস্থা হচ্ছে এনক্রিপশন সিস্টেম। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানের গোপন তথ্যগুলো এনকোড (সঙ্কেতের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ ব্যবস্থা) করে রাখা হয়। ফলে যার তথ্য সে ছাড়া অন্য কেউ হাতিয়ে নিলেও এর মানে বুঝতে পারে না। বিশ্বব্যাপী এ ধরনের এনক্রিপশন কোম্পানিগুলোর চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।
সম্প্রতি গুগল ভেঞ্চার আয়োনিক সিকিউরিটি কোম্পানিতে ২ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করে। আয়োনিক সিকিউরিটির বয়স মাত্র তিন বছর। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন তথ্যকে সঙ্কেতের মাধ্যমে প্রকাশ করে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, গুগল তাদের তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করতেই এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছে। তবে সঙ্কেতের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করার এ ব্যবস্থা সাধারণ জনগণের কাছে এখনও তেমন জনপ্রিয় হয়নি বলে দাবি করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেস্টার রিসার্চ। এর কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ গ্রাহকদের অজ্ঞতাকে দায়ী করে। কারণ, অনেকেই এ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানেন না বা জানলেও অভ্যস্ত না হওয়ার কারণে তারা এ ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেন না।
বিশ্বব্যাপী অনেক কোম্পানি এ ব্যবস্থার দিকে ঝোঁকার কারণে এনক্রিপশন কোম্পানিগুলোও তাদের সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়েছে। টরন্টোভিত্তিক পার্সপেকসিস ও স্যান জোস, ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সিফারক্লাউড এরই মধ্যে তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে গ্রাহকদের তথ্য সঙ্কেতে পরিবর্তন করে দেয়।
এ ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো হ্যাকারেরা কোনো প্রতিষ্ঠানের তথ্য হাতিয়ে নিতে সক্ষম হলেও তার অর্থ বুঝতে পারবে না। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশেই কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
বিনিয়োগ বাড়ানো ও এ খাতের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। মাত্র কয়েক বছর আগেই এ ব্যবস্থাটি সাধারণ একটি ব্যাপার ছিল। কিন্তু ক্রমবর্ধমান সাইবার হামলার কারণে এ ব্যবস্থার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিনিয়োগ যে হারে বাড়ছে, তাতে এনক্রিপশন ব্যবস্থা আগামী সময়ে এ খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই এ খাতে বিপ্লব ঘটে যেতে পারে। এ খাতের বিপ্লবই সাইবার হামলার মতো সমস্যা থেকে তথ্যের নিরাপত্তার অন্যতম উপায় হতে পারে।
তবে এতে ভিন্নমতও আছে। অনেকের মতে, এনক্রিপশন ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে খুব ধীরগতিতে। এর অন্যতম কারণ, বিভিন্ন দেশের সরকারের অনিচ্ছা। অনেক দেশই চাইবে না এ ব্যবস্থা সাধারণ জনগণের হাতে চলে যাক। কারণ, তাহলে সাধারণ গ্রাহকেরাই তাদের তথ্য সঙ্কেতের মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে শুরু করবে। ফলে অনেক রাষ্ট্রই তাদের ইচ্ছেমতো সাধারণ গ্রাহকদের তথ্যের ওপর নজরদারি করতে পারবে না।
তবে এ কথা সত্য, সঙ্কেতের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা সাইবার হামলার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানোর একটি অন্যতম উপায় হতে পারে। এ কারণে অদূর ভবিষ্যতে এ খাতের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে, যা খাতটির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।
তবে এনক্রিপশন পদ্ধতিটি তথ্য পাঠানোর আগেই শুধু ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু যেসব তথ্য ইতোমধ্যেই অনলাইনে চলে গেছে, তা উদ্ধার করতে বেশ বেগ পেতে হয়। তবে কেউ যদি অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন- ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, অনাকাঙিক্ষত ছবি অথবা কোনো খারাপ মন্তব্য ছড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি অাঁচ করতে পারেন, তবে অনলাইনে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সহায়তা নিতে পারেন। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান রেপুটেশন ডটকম (reputation.com)। হাজারো ওয়েবসাইটের যে স্থানেই আপনার তথ্য লুকিয়ে থাকুক না কেন, সেগুলোকে মুছে দেয়ার সবচেয়ে কার্যকর ওয়েব প্রতিষ্ঠান রেপুটেশন ডটকম। তবে ব্যবহারকারীকে সেবাটি পেতে নতুন আইডি খুলতে হবে। তথ্য কোন কোন ওয়েবসাইটে এখনও চলে যাচ্ছে, সে খবর জানিয়ে প্রতি মুহূর্তে বার্তা পাঠিয়ে জানান দেবে প্রতিষ্ঠানটি। আর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ারও অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া বিনামূল্যে প্রত্যেক আইডিধারী তাদের নির্ধারিত অপশনে গিয়ে অনলাইন জগতে তার কোনো ব্যক্তিগত তথ্য ইতোমধ্যে চলে গেছে কি না, তা যাচাই করে দেখতে পারবেন। এ সাইটের সেবা পাওয়ার জন্য প্রতি মাসে খরচ হবে ৫ ডলার। এ ছাড়া আছে জালস্নাস ডটকম। প্রতিষ্ঠানটির সেবা মাসিকভিত্তিক না হলেও প্রতি ছয় মাস পরপর একবার প্রোফাইল আপডেট করতে হয়। গুগল, ইয়াহু, এএলও, বিং যেকোনো সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম ও দ্বিতীয় পাতা থেকে তথ্য সরাতে খুবই কার্যকর জালস্নাস ডটকম। এদের সেবা পাওয়ার জন্যও নতুন আইডি তৈরি করতে হয়। আর প্রতি ছয় মাস পরপর এসব আইডি আপডেট করার জন্য ১০০ ডলার খরচ করতে হবে
ফিডব্যাক : jabedmorshed@yahoo.com