• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > হলোগ্রাফিক ডিভাইস আনছে মাইক্রোসফট
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সোহেল রানা
মোট লেখা:৪০
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
মাইক্রোসফট
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
হলোগ্রাফিক ডিভাইস আনছে মাইক্রোসফট
হলোগ্রাফিক প্রযুক্তি উন্মোচন করেছে মাইক্রোসফট। গত ২২ জানুয়ারি আমেরিকার সানফ্রানসিস্কোতে উইন্ডোজ ১০-এর উন্মোচনী অনুষ্ঠানে এটি প্রদর্শন করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠানে উইন্ডোজ ১০-এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফিচারসহ এ সম্পর্কিত কিছু উদ্ভাবন তুলে ধরা হয়। এসবের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত প্রযুক্তি এই হলোলেন্স। অনুষ্ঠানে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সত্য নাদেলা বলেন, হলোলেন্স প্রযুক্তি একটি আশ্চর্য ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যে পরিবেশের ভেতরে থেকেই অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপারেরা কাজ করতে পারবেন। ‘গুগল গ্লাস’ থেকে শুরু করে অন্যান্য এ জাতীয় প্রযুক্তির কয়েক ধাপ অতিক্রম করেছে মাইক্রোসফটের নতুন এ প্রযুক্তি। এই ডিভাইস গবেষণা, রিমোট কানেকশন, প্রকৌশল, নকশা, চলচ্চিত্র, ভিডিও গেমসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। তিনি আরও জানান, মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এর মধ্যেই মঙ্গলগ্রহে গবেষণার কাজে হলোলেন্স ব্যবহার শুরু করেছে। অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত ডেমো থেকে জানা যায়, কমপিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রাম যেমন- স্কাইপে, গেম, অফিস অ্যাপ, ডিজাইন অ্যাপের কাজ চোখের সামনে কোনো মনিটর ছাড়াই করা যাবে। আর এসব প্রদর্শিত হবে ব্যবহারকারীর চারপাশের বস্ত্তকে আশ্রয় করেই।
অন্যান্য ভিআর হেডসেটের মতো হলোলেন্স একটি ভিআর হেডসেট। এতে আছে নিজস্ব সিপিইউ, জিপিইউ। এতে ব্যবহার করা হয়েছে নতুন এক ধরনের চিপ, যার নাম হলোগ্রাফিক প্রসেসিং ইউনিট বা এইচপিইউ। এই হেডসেটের কাজ মূলত চোখের সামনে থাকা সবকিছুর ইনপুট নেয়া এবং সেগুলোকে হলোগ্রাফিক ইমেজে রূপ দেয়া। এর মাধ্যমে পারিপার্শ্বিক সবকিছুর হলোগ্রাফিক সংস্করণ তৈরি করা যাবে, যা ব্যবহার করা হবে অ্যাপ, গেম ও থ্রিডি মুভিতে। এই হেডসেটে থাকা লেন্সের মাধ্যমে চোখের সামনের সবকিছু দেখা যাবে ত্রিমাত্রিক রূপে। আর একই সাথে চলবে সেটি ক্যাপচার করার কাজও। এর জন্য ডিভাইসটি কমপিউটারের সাথে যুক্ত থাকার প্রয়োজন হবে না।
এ প্রযুক্তি ব্যবহারে অতিরিক্ত কোনো যন্ত্রেরও প্রয়োজন পড়বে না। মাইক্রোসফট জানিয়েছে, হলোলেন্স নামে এই ডিভাইসটি প্রথম ‘পূর্ণাঙ্গ’ হলোগ্রাফিক কমপিউটার। অর্থাৎ এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ডিভাইস, যা ব্যবহারের অন্য কোনো কমপিউটার, ফোন বা ডিভাইসের ওপর নির্ভর করবে না। ডিভাইসটি দেখতে চশমার মতো। চশমার কাচ থ্রিডি ইমেজ তৈরি করতে পারে। থ্রিডি ইমেজ যেন ঠিক চোখের সামনে থাকবে এবং এর সাথে ইন্টার্যা ক্ট করতে পারবে। প্রাথমিকভাবে হলোলেন্সকে গুগল গ্লাস বা অকুলাস রিফটের সাথে তুলনা করা যায়। তবে গ্লাস বা রিফট অন্য ডিভাইসের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে। অন্যদিকে মাইক্রোসফটের হলোলেন্স স্বয়ংসম্পূর্ণ। উইন্ডোজ ১০-এর সাথে সিনক্রোনাইজ হয়ে হলোলেন্স কাজ করবে। ব্যবহারকারীরা নিজেরা থ্রিডি অবজেক্ট তৈরি করতে পারবেন হলোস্টুডিও নামের সফটওয়্যার দিয়ে। এই অবজেক্ট হলোলেন্স দিয়ে ডিজাইন করে থ্রিডি প্রিন্ট করা যাবে। পুরো সিস্টেমটিকে বলা হচ্ছে মাইক্রোসফট হলোগ্রাফিক।
হলোগ্রাফিক টিমের প্রধান অ্যালেক্স কিপম্যান তার বক্তব্যে বলেন, ‘উইন্ডোজ হলোগ্রাফিক ভার্চুয়াল জগৎ নিয়ে নয়। এটি তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও গভীর অভিজ্ঞতা নিয়ে, যাকে আমরা হলোগ্রাফ বলি।’ হলোলেন্সে বাস্তব জগতের ওপর থ্রিডি দেখাতে পারে, যা এর সবচেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য। এর জন্য বিশেষ ধরনের হলোগ্রাফিক প্রসেসিং ইউনিট ব্যবহার করা হয়েছে। মাইক্রোসফটের নতুন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট হলোলেন্স শুধু গেমার ও ডেভেলপারদের কাজে আসবে তা নয়। এখন নাসা এই হলোলেন্স ব্যবহার করে মঙ্গলের পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ করবে। হলোলেন্সের ধারণাটা অনেকটাই সায়েন্স ফিকশনের মতো। এর সাথে থাকা সফটওয়্যার অনসাইট ব্যবহার করে মঙ্গলগ্রহ পর্যবেক্ষণে একে কাজে লাগাতে চান নাসার গবেষকেরা। মাইক্রোসফট ও নাসার গবেষকেরা একত্রে এই সফটওয়্যারটি তৈরি করেছেন। এই হেডসেট পরে গবেষকেরা মঙ্গলের একটি হলোগ্রাফিক সিমুলেশন দেখতে পাবেন। এই সিমুলেশন তৈরি হবে নাসার কিউরিওসিটি রোভারের ধারণ করা তথ্য থেকে। একই সময় অনেকে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করলে তারা নিজেদের মধ্যে ও কিউরিওসিটি রোভারের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। এমনকি মঙ্গলের পৃষ্ঠেও এটা-সেটা নড়াচড়া করতে পারবেন। নিজেদের অফিসে বসেই মঙ্গলের পৃষ্ঠে ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতি পাবেন তারা। এর মাধ্যমে মঙ্গলগ্রহকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। ব্যবহারকারীর অঙ্গভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হবে এই সফটওয়্যার। নিজেদের কমপিউটার ব্যবহার না করেই কিউরিওসিটিতে থাকা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিজের ইচ্ছেমতো পরিচালনা করা যাবে।
অ্যালেক্স কিপম্যান আরও বলেন, হলোগ্রাফিক এই ডিভাইস ভার্চুয়াল জগৎকে আরও কাছে নিয়ে আসে। এটি ব্যবহারকারীদের একেবারেই অভিনব অভিজ্ঞতা হবে। এটি উইন্ডোজ ১০-এর সাথে সিনক্রোনাইজ হয়ে কাজ করবে। এতে প্রতিটি বস্ত্তকে জীবন্ত মনে হয়। এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো- এটি ব্যবহার করতে হলে কোনো কমপিউটার বা ডিভাইস লাগে না। আপনি যখন ভার্চুয়াল বিশ্বের পরিবর্তন করতে পারবেন, তখন যে বিশ্ব দেখছেন, তার পরিবর্তনও করতে পারবেন। মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ হলোগ্রাফিক খেলনা, গ্যাজেট, এমনকি নানা ডিভাইস তৈরির জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম দেবে। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি উইন্ডোজ ১০-এর সাথে এটি বাজারে ছাড়া হবে।
সম্প্রতি মাইক্রোসফট হলোগ্রাফিক ডিভাইসের মাধ্যমে আবার উদ্ভাবনের ধারায় ফিরে আসতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। হলোগ্রাফিক ডিভাইস নিঃসন্দেহে পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যের বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। এ ক্ষেত্রে মাইক্রোসফটের উদ্যোগটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞেরা।
এরই মধ্যে ফেসবুক ও গুগল স্মার্টচশমা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। ফেসবুক ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট ওকুলাসের মাধ্যমে স্মার্টচশমার বাজারে নিজেদের আধিপত্য বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। আর এদিকে গুগলের গুগলগ্লাসের কথা সবারই জানা। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি তাদের গুগলগ্লাসের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি গুগলগ্লাস-২ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। অর্থাৎ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই তাদের ডিভাইসের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মাইক্রোসফটের নতুন ডিভাইসটিকে ফেসবুক ও গুগলের মতো কোম্পানির জন্য বড় ধরনের ধাক্কা বলেই বিবেচনা করছেন বাজার বিশ্লেষকেরা
ফিডব্যাক : sohel_sr@yahoo.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস