লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
আমেরিকায় ড্রোন এক্সপো অনুষ্ঠিত
বিশ্বে প্রথমবারের মতো আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে গত ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ড্রোন এক্সপো। বাণিজ্যিক ড্রোন নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংগঠন ইউএভিএসএ (আনম্যানড অটোনোমাস ভেহিকল সিস্টেম অ্যাসোসিয়েশন) এই মেলার আয়োজন করে। ডিজেআই, থ্রিডি রোবটিক্স, এরিয়াল মিডিয়া, রোটর ড্রোন ম্যাগাজিন, ইপসন, জিসসহ ড্রোনসংশ্লিষ্ট ৪০টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নেয়। ড্রোনবিষয়ক সেমিনার, ড্রোন ওড়ানো, ড্রোন ব্যবহার করে এরিয়াল ফটোগ্রাফিসহ এক্সপোতে নানা আয়োজন ছিল। লস অ্যাঞ্জেলেস মেমোরিয়াল স্পোর্টস এরিনায় অনুষ্ঠিত এই ড্রোন এক্সপো সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। মেলার প্রবেশ মূল্য ছিল ৩০ ডলার। মেলা দর্শনার্থী, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাসহ নানা উৎসুক মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। আয়োজকেরা বলেন, ড্রোনপ্রযুক্তি ই-কমার্স, ব্যবসায়-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, জননিরাপত্তা, নগর পরিকল্পনা, ফটোগ্রাফি, ভিডিও ধারণ, বিনোদনসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার বাড়াতে এই মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এক সময়ের অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তির ড্রোনের ব্যবহার এখন নানা কাজে ছড়িয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্সে পণ্য ডেলিভারি করতে ব্যাপক সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে ড্রোন। কৃষি খাতেও বর্তমানে বাড়ছে ড্রোনের ব্যবহার। ক্ষেতের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ড্রোনের তোলা ছবি এবং এতে থাকা শনাক্তকরণ যন্ত্রে সংগৃহীত তথ্য থেকে ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নির্ভুলভাবে নেয়া সম্ভব হচ্ছে। মেলায় নানা ডিজাইনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এবং বিভিন্ন কাজের ড্রোন প্রদর্শিত হয়। কিছু ড্রোন ছিল ক্যামেরা ও অন্যান্য যন্ত্রসমৃদ্ধ স্বল্পমূল্যের, দেখতে অনেকটা ছোট উড়োজাহাজের মতো। ছয় বা আট পাখার হেলিকপ্টার ড্রোনের দেখাও মেলে এখানে। এসব ড্রোনে থাকে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) চালিত অটোপাইলট এবং সেই অটোপাইলট নিয়ন্ত্রিত বিশেষ ক্যামেরা, যা ভূমির ছবি তুলতে সক্ষম। বেতার-তরঙ্গ নিয়ন্ত্রিত প্রথাগত একটি ড্রোনকে পরিচালনা করেন ভূমিতে থাকা একজন পাইলট। তবে ড্রোনটি ভূমি থেকে আকাশে ওড়া থেকে শুরু করে আবার অবতরণ করা পর্যন্ত সব কাজই সারে অটোপাইলটের সাহায্যে। আর প্রয়োজনীয় ওড়ার পথ ঠিক করে দেয় ড্রোনে থাকা সফটওয়্যার।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিয়মানুযায়ী, ভূমি থেকে ১২০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত ড্রোন ওড়াতে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয় না। আমেরিকায় কৃষিকাজে ব্যবহৃত ড্রোনের সফটওয়্যারে এই নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করা আছে। সফটওয়্যারটি ক্ষেতের ছবি তুলতে ড্রোনকে ভূমির মাত্র কয়েক মিটার ওপর পর্যন্ত নামিয়ে আনে, আবার সর্বোচ্চ ১২০ মিটার পর্যন্ত ওপরে উঠিয়ে নেয়।
কৃষিকাজে ড্রোন ব্যবহার করে কৃষকেরা তিন ধরনের বিস্তারিত তথ্য পান। প্রথমত, আকাশ থেকে দেখার কারণে ক্ষেতের পানি সেচ থেকে শুরু করে মাটির গুণাগুণের মতো বিষয়গুলো বোঝা সহজ হয়। এমনকি কীটপতঙ্গ ছড়িয়ে পড়া বা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টিও জানা যায়, যা খালি চোখে বুঝতে পারা যায় না। দ্বিতীয়ত, ড্রোনে থাকা ইনফ্রারেড ক্যামেরায় তোলা ছবি দেখে ক্ষেতের ফসলের প্রকৃত অবস্থা (যেমন- কোন গাছটা স্বাস্থ্যবান, কোনটা দুর্দশাগ্রস্ত) বোঝা যায়, যা খালি চোখে দেখা অসম্ভব। তৃতীয়ত, ড্রোন ব্যবহার করে প্রতি ঘণ্টা, প্রতি দিন, প্রতি সপ্তাহ, প্রতি মাস অর্থাৎ যেকোনো সময়ে ক্ষেতের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যায়।
আগে ক্ষেত পর্যবেক্ষণে কৃত্রিম স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি বেশি ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে এই কাজে বাড়ছে নিজস্ব ড্রোনের ব্যবহার। কারণ স্যাটেলাইটের চেয়ে ড্রোনে তোলা ছবি অনেক উন্নত।
এখন অনেক কম দামে ড্রোন কেনা যায়। ড্রোনের দাম কমে যাওয়ার পেছনে বড় কারণ হলো, এতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা ও নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব। বর্তমানে ছোট আকৃতির মাইক্রো ইলেকট্রো মেকানিক্যাল সিস্টেম (এমইএমএস) পাওয়া যায়। এতে একের ভেতরেই গতি পরিমাপক অ্যাক্সিলোমিটার, স্থিতিস্থাপক যন্ত্র জাইরোস, ম্যাগনেটোমিটার ও চাপ শনাক্তকরণ যন্ত্র পাওয়া যায়।
ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক ড্রোন ব্যবহার শুরু করেছে বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন। অ্যামাজন জানিয়েছে, পণ্য পরিবহনে ২৫ কেজি ওজনের বিশেষ ড্রোন কাজ করছে। এটি ২.২৬ কেজি পণ্য পরিবহনে সক্ষম। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আকাশে ড্রোনের পথচলা নিরাপদ করা গেলে ই-কমার্সে এ উদ্যোগ নতুন দিনের সূচনা করতে পারে