• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বায়োনিক ব্রেনের অগ্রগতি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সোহেল রানা
মোট লেখা:৪০
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বায়োনিক ব্রেনের অগ্রগতি
অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের মেমরি (স্মৃতি) কোষকে অনুসরণ করে আরও শক্তিশালী মেমরি যন্ত্র তৈরি করতে সফল হয়েছেন। এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট তৈরির অগ্রগতিতে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন গবেষকেরা। বিজ্ঞানীদের দাবি, তারা এমন এক কৃত্রিম সার্কিট তৈরি করেছেন, যা মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করতে সক্ষম হবে। বিশ্বে এ ধরনের আবিষ্কারের ঘটনা এটাই প্রথম। বিজ্ঞানীরা ১০০ কৃত্রিম সিন্যাপসের মাধ্যমে সার্কিটটি তৈরি করেছেন, যা একজন কর্মক্ষম মানুষের সমান কাজ করতে সক্ষম। বিজ্ঞানীদের দাবি, তাদের এই ন্যানোমেমরি সেল মানুষের একটি চুলের প্রস্থের তুলনায় ১০ হাজার গুণ পাতলা। সার্কিটটি একই সময়ের তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণ করতে সক্ষম। ন্যানোমেমরি সেল মানব মস্তিষ্কের অ্যানালগ প্রকৃতিকে বিভিন্ন সময়ে ডাটা সংরক্ষণ করে কপি করে রাখবে। আলজেইমারস ও পারকিনসন রোগের গবেষণায় এই আবিষ্কার প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব সায়েন্স বায়োনিক ব্রেন গবেষণা খাতে কয়েক মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠন করেছে। বায়োনিক ব্রেন নিয়ে গবেষণায় আগামী দশ বছরে ইউরোপের দেশগুলোতে ১৮ কোটি ডলার ব্যয় করবেন বিজ্ঞানীরা। এছাড়া আমেরিকার বিজ্ঞানীরা আগামী দশ বছরে এই খাতে ৩০০ কোটি ডলার খরচের পরিকল্পনা করেছেন।
এই অত্যাধুনিক যন্ত্র আকারে ক্ষুদ্র ও স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি গতিসম্পন্ন। আলাদাভাবে মেমরি যন্ত্রের পাশাপাশি একই প্রযুক্তি দিয়ে কমপিউটার মাদারবোর্ড ও মেমরিকে আরও কার্যকর করা যাবে- জানালেন আরএমআইটির গবেষক ফ্রাঙ্কেনস্টেইন। পুরোপুরি মস্তিষ্কের সিগন্যাল সিস্টেমকে অনুকরণ করে যেকোনো যন্ত্রকে বায়োনিক ব্রেনের কাছাকাছি নিয়ে আসা সম্ভব। আর এ আবিষ্কার সেই সুদূরপ্রসারী যাত্রার একটি মাইলফলক।
মানবজাতির উন্নতি ও কল্যাণ সাধনে বিজ্ঞানীদের নিরন্তর গবেষণা আর প্রচেষ্টার ফলে আবিষ্কৃত হচ্ছে নানা ধরনের প্রযুক্তি। বায়োনিক বা কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে তৈরি যান্ত্রিক মানুষ টিভির পর্দায় আমরা দেখে থাকি। বায়োনিক বা কৃত্রিম চোখ, কান, হৃৎপিন্ড কিংবা ফুসফুসওয়ালা মানুষের দেখা বেশ কয়েক বছর আগেই পাওয়া গিয়েছিল। ইলেকট্রনিক ও জীববিজ্ঞানের উৎকর্ষের কল্যাণে এখন কৃত্রিম বা বায়োনিক ব্রেনওয়ালা মানুষেরও দেখা পাওয়া যাবে হয়তো অচিরেই। এর ফলে মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়া লোকেরা আবার স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারবেন। চিমন্তাকে স্নায়ুর উদ্দীপনা দিয়ে পরিচালিত করতে পারবেন। এজন্য কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, কমপিউটার বিজ্ঞানী, প্রাণিবিজ্ঞানী, বায়োইঞ্জিনিয়ার, চিকিৎসাসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সেরাদের একযোগে কাজ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ মেলাতে হচ্ছে রসায়নবিদ্যা, কমপিউটার প্রযুক্তি এবং জীববিজ্ঞানের সবশেষ অর্জিত জ্ঞানকে।
বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, এ উদ্ভাবনের ফলে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের জীবন বেঁচে যাবে। চলাচলে অক্ষম পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীরাও ফিরে পাবেন চলাফেরার ক্ষমতা। অঙ্গহানি বা মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত এমন যুদ্ধফেরত হাজার হাজার সৈনিকও এর ফলে উপকৃত হবেন। অন্যদিকে এটি মানুষের চিমন্তাশক্তিকে সমৃদ্ধ করার সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত করবে। সমুদ্রের অতল গভীরে যেখানে এখন পর্যন্ত কোনো মানুষের যাওয়া সম্ভব হয়নি, সেখানকার রহস্য উন্মোচনে চিমন্তাশীল রোবট পাঠানো যাবে। এছাড়া মস্তিষ্কের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা নিউরাল স্নায়ুগুলোকে চলাচলের নির্দেশ দেয়া যাবে। এমনকি কমপিউটার, রোবটসহ কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো চলনক্ষম করার জন্য সঙ্কেত গ্রহণ করতে পারবে। তবে বায়োনিক ব্রেনের এসব সুবিধা পেতে কিছু যন্ত্রপাতির দরকার পড়বে। যেমন- শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর, উন্নত শোধকযন্ত্র বা ফিল্টার ও দীর্ঘস্থায়ী কিন্তু ক্ষুদ্র কিছু ব্যাটারি। এ প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানীরা প্রথমেই নিশ্চিত হতে চাচ্ছেন মস্তিষ্কের কোন অংশটি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। যেন খুব সহজেই ওই অংশে স্নায়ুবিক তরঙ্গ উদ্দীপক বা ইলেকট্রডগুলো স্থাপন করা যায়। তবে ব্যাপারটা আদতে খুব সহজ নয়, বেশ জটিল। ফলে গবেষণার ফলাফল পেতে স্বভাবতই বেশি সময় লাগার কথা। আদতে হয়েছেও তাই। বেশ ধীরগতিতে চলছে গবেষণাকর্মটি। বলা চলে, দায়ী অংশটি খুঁজে পেতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়েছে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন, যেটি মস্তিষ্কের একক নিউরন কোষ থেকে আসা সঙ্কেত ধারণ করে। পরে ওই সঙ্কেতকে একজন স্ট্রোক করা রোগীর মস্তিষ্কে পাঠানো হয়। এ পর্যায়ে কমপিউটার সংযোগের মাধ্যমে যেন নেয়া হয় ওই ব্যক্তি কী বলতে চাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টার ফল বায়োনিক ব্রেন মানবদেহে কতখানি নির্ভরযোগ্যতার সাথে কাজ করে এবং এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াগুলো কেমন হবে তা বিস্তারিত জানতে হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - অক্টোবর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস