লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মো: আতিকুজ্জামান লিমন
মোট লেখা:১৮
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - সেপ্টেম্বর
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর যখন পেশা
আপনি কি একজন ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হতে আগ্রহী? এই পেশা কি আপনাকে আকর্ষণ করে? এ লেখায় ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হয়ে ওঠার কিছু ধাপ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কী?
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হয়ে ওঠার আগে সবার আগে ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর (ডিবিএ) আসলে কী, তা জানতে হবে। একজন ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর একটি প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজের সব বিষয় সম্পর্কে দায়িত্বশীল। এরা অনেকগুলো ডাটাবেজের বা নির্দিষ্ট একটি ডাটাবেজের দায়িত্বে থাকেন, এটা অনেকটা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের আকার এবং ডাটাবেজের সংখ্যার ওপর।
একটি প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজ সাধারণত এক বা একাধিক ডাটাবেজ নিয়ে সেট করা হয়। অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ডাটাবেজের উপাত্ত ঠিকভাবে চলছে কি না তা নজরদারিতে রাখেন এবং ডাটা ওভারইউজ হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করেন। তারা ক্লিন-আপ এবং প্যাচিং প্রতিরোধক কাজগুলো বাস্তবায়ন করেন। এছাড়া ডাটাবেজের নকশা ও তথ্যানুসন্ধানের রিপোর্টে কোনো ধরনের উন্নয়ন করার প্রয়োজন আছে কি না, সেটা নিয়ে কাজ করেন। তারা ডাটাবেজের ব্যবহারকারীদের সেটআপ ও অন্যান্য নিরাপত্তা সেটিংয়ের কাজ করেন। তথ্যানুসন্ধান, ডাটাবেজ নকশা করা, নিরাপত্তা, কর্মক্ষমতা ও পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি সব বিষয়ে একজন ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের বিশেষ দক্ষতা থাকতে হয়। সুতরাং, কীভাবে একজন ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হওয়া যাবে- এ লেখায় প্রতিটি ধাপ খুব সহজ ভাষায় তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
প্রযুক্তি নির্বাচন : ওরাকল বা মাইক্রোসফট
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রধানত দুই ধরনের। ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এর মধ্যে একটি। ওরাকল ও মাইক্রোসফট উভয়ই ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরেরা সাধারণত একটিতে বিশেষজ্ঞ।
ওরাকল ও মাইক্রোসফট উভয়ই এসকিউএল চালানোর সময় ছোটখাটো কিছু পার্থক্য দেখা যায়। তবে প্রশাসনের সাইডে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ করা যায়। একজন ওরাকল ডিবিএ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সম্পর্কে যে ধারণা রাখেন, ঠিক মাইক্রোসফট এসকিউএল সার্ভার ডিবিএরাও একই ধারণা রাখেন, তবে বিস্তর পার্থক্যটা বাস্তবায়ন ও সেটআপের ক্ষেত্রে।
যদি কেউ ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে চান, তাহলে ওপরে উল্লিখিত যেকোনো একটি শিখতে পারেন। কোনটি শেখা উচিত এ প্রসঙ্গে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন। তবে যে ল্যাঙ্গুয়েজে যে বেশি পারদর্শী বা পরিচিত তা দিয়ে কাজ করতে পারলে ব্যাপারটি সহজ হয়ে যাবে। যেমন, জাভা অথবা ডটনেট। জাভা ওরাকলের সাথে সম্পর্কিত এবং ডটনেট মাইক্রোসফটের সাথে সম্পর্কিত (তবে এটি বাধ্যতামূলক বা সীমাবদ্ধ নয়)। নিজে নিজেও গবেষণা করে বের করা যায় কোনটি জনপ্রিয় ও বর্তমান সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো কোনটিতে কাজ করে।
ডাটাবেজের ধরন অনুযায়ী এসকিউএল শেখা
ওরাকল ও মাইক্রোসফটের মধ্যে কোনটি ব্যবহার করবেন তা নির্বাচন করে ডাটাবেজের ধরন অনুযায়ী এসকিউএল শিখতে হবে। কেননা, একজন ডিবিএকে এসকিউএল কীভাবে লিখতে হয় তা ভালোভাবে জানতে হবে। হয়তোবা ডিবিএকে অনেকগুলো কমান্ড লিখতে হবে না, কারণ প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজের জন্য আলাদা ডেভেলপার বা স্পেশালিস্ট থাকেন, তাই বেসিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকাটা কাজকে অনেক সহজ করে দেয়।
প্রযুক্তি নির্বাচনে (ওরাকল অথবা মাইক্রোসফট) যদি কেউ দ্বিধায় থাকেন, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে দুটিই শেখা যেতে পারে। যেকোনো একটি এসকিউএল শেখা সহজ। পরে অন্য কোনো কিছুতে কাজ করা সহজ হয়। কারণ অনেক বিষয় এখানে একই থাকে। ওরাকল ও মাইক্রোসফট এসকিউএল একই সাথে শিখলে পরবর্তী সময়ে কাজের ধরন অনুযায়ী কোনটি বেশি কার্যকর তা নিজেই নির্বাচন করতে পারবেন।
অ্যাডভান্স এসকিউএল ও ডাটাবেজ
যদি কেউ বেসিক এসকিউএল সম্পর্কে জানেন, তবে তিনি আরও অ্যাডভান্স বিষয় শেখা শুরু করতে পারেন। ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের কাজের ক্ষেত্রে অনেক বেশি বিশেষজ্ঞ হতে হয়। সাথে সাথে ডাটাবেজের বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হয়।
যেসব বিষয়গুলো জানতে হয়
কোয়েরি অপটিমাইজেশন : কীভাবে কোয়েরি, সূচি ব্যবহার করা যায়, বিদ্যমান কোয়েরি কীভাবে উন্নত করা যায়।
ডাটাবেজ অবজেক্ট : ট্রিগার সম্পর্কে, ভিউ, ও অন্যান্য অবজেক্ট সম্পর্কে জানতে হবে।
অ্যাডভান্স এসকিউএল : জটিল ফিচারগুলো সম্পর্কে বেশি করে জানতে হবে, যেমন- রিকারসিভ কোয়েরি, সাব কোয়েরি, কার্সরস, টেম্পোরারি টেবিল ও ডাটা ওয়্যারহাউজিং অথবা ইটিএল প্রসেসিং।
ডাটাবেজ ডিজাইন : ডাটাবেজ চালানোর জন্য কার্যকর ডিজাইন করতে হবে এবং ভালোভাবে কাজ করে কি না তা নিশ্চিত করা।
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটশন বিষয়টি একটি ভিন্ন বিষয়। এটি কিছু কোর্সে শেখানো হয়, কিন্তু অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সম্পর্কে ধারণা আর এসকিউএলে কোডিং লেখা একই বিষয় নয়। ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হতে হলে ডাটাবেজের সেটআপ, মনিটর ও উপাত্তের ধরন অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণের জ্ঞান থাকা জরুরি।
যেসব দক্ষতা আপনার থাকতে হবে
ব্যবহারকারী ও নিয়ম : কীভাবে ইউজার তৈরি করতে হয়, বিশেষাধিকার ও নিয়ম, অননুমোদিত ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ডাটাবেজ কতটুকু নিরাপদ তা নিশ্চিত করা।
ইনস্টলেশন : ডাটাবেজের ওপর ভিত্তি করে ইনস্টল, আপগ্রেড ও কনফিগার করা যায়।
মনিটরিং : কোনো সমস্যা ছাড়াই ডাটাবেজ চলছে কি না তা নিশ্চিত করা, কোনো সমস্যা হওয়ার আগেই সেটি চিহ্নিত করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।
এখানে ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের কিছু কাজের তালিকার সংক্ষেপ্ত বিবরণ দেয়া হলো।
ডাটাবেজ ডেভেলপার হিসেবে অভিজ্ঞতা নেয়া
এটি একটি ঐচ্ছিক পদক্ষেপ। ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হওয়ার আগে ডেভেলপার হিসেবে কিছু অভিজ্ঞতা কাজের ক্ষেত্রে খুব কাজে লাগবে।
ডেভেলপার হিসেবে কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতার ফলে ডাটাবেজের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যাবে যে কীভাবে ডাটাবেজে কাজ করে। এ অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হওয়ার ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা পালন করবে।
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের ভূমিকায় কাজ শুরু করা
সবশেষ ধাপে লক্ষ্য অনুযায়ী ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে কাজ শুরু করতে হবে। একজন জুনিয়র ডিবিএ হয়তো একটি নির্দিষ্ট ডাটাবেজ নিয়ে কাজ করেন, কিন্তু একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর একাই অনেকগুলো ডাটাবেজ নিয়ে একসাথে কাজ করেন। তাদের তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন হয় না, কারণ তাদের ইতোমধ্যেই এই দায়িত্বের অভিজ্ঞতা আছে।
অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে সবকিছু বুঝে নিতে প্রতিষ্ঠানভেদে ছয় মাস বা এক বছরের মতো সময় লাগতে পারে। এই পদের জন্য সবসময় আপটুডেট থাকতে হবে। প্রতিনিয়ত যেসব পরিবর্তন ও টেকনোলজি আসছে তার খোঁজ-খবর নিতে হবে। সফল একজন ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের দায়িত্ব অনেক। দায়িত্ব অনুযায়ী এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে এ পেশার কদর সবসময় ছিল ও থাকবে। তাই যদি কেউ এই পেশায় আসতে চান তাহলে প্রস্ত্ততি শুরু করুন আজ থেকেই
ফিডব্যাক : infolimon@gmail.com